ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শীত মৌসুমে দর্শনীয় স্থান

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২১ এএম
আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪০ পিএম
শীত মৌসুমে দর্শনীয় স্থান
নিঝুম দ্বীপে হরিণের দেখা মেলে। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে সৌন্দর্য একেক ঋতুতে একেক রকম। তবে পর্যটনের জন্য শীতের সময়টা সবচেয়ে উপযোগী। আর সে কারণে এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। শীতে পর্যটনের কিছু জনপ্রিয় জায়গার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন মোহনা জাহ্নবী

সেন্টমার্টিন

কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। সাগর পাড়ি দিয়ে এই প্রবাল দ্বীপে যাওয়ার পথ শান্ত থাকে বলে শীতের সময় পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যদিও বছরের অন্য সময়ও অনেক পর্যটক এ দ্বীপে ঘুরতে আসেন। এখানে ঘুরতে গেলে অদূরের ছেঁড়া দ্বীপও ঘুরে আসা যায়। সেন্টমার্টিনে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে, এ ছাড়া একটি সরকারি ডাকবাংলোও আছে। পর্যটকদের জন্য এ দ্বীপ যথেষ্ট নিরাপদ।

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। ছবি: সংগৃহীত

নিঝুম দ্বীপ

এর অবস্থান নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায়। স্থানীয়ভাবে এ চর ইছামতীর চর হিসেবেও পরিচিত। প্রচুর গাছপালা থাকার সুবাদে এ দ্বীপটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এখানে প্রচুর কেওড়া গাছ আছে। এ ছাড়া এ দ্বীপটি হরিণের অভয়ারণ্যের জন্যও সুপরিচিত। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে এ দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের খুব আকর্ষণ করে। এখানে পৌঁছানো কিছুটা ঝক্কির ব্যাপার হলেও এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য সভ ক্লান্তি দূর করে দেয়। ক্যাম্পিং করার জন্য এ দ্বীপ উপযুক্ত একটা স্থান।

মনপুরা

মনপুরা ভোলা জেলার একটি দ্বীপ উপজেলা। জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরত্বে এর অবস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ দ্বীপের মাধুর্যতা শীত মৌসুমে আরও বেড়ে যায়। দ্বীপে বসে সূর্যাস্ত উপভোগ করাটা বেশ মনোমুগ্ধকর হয় এই মৌসুমে। এখানে আউশ ও আমন ধানের ফলন হয়। প্রচুর ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। ঘন বনাঞ্চল এবং কিছু দিঘির সন্নিবেশ এ দ্বীপটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

নয়নাভিরাম মনপুরা দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত

কুয়াকাটা

এটি পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। কুয়াকাটা সমুদ্রকন্যা হিসেবে পরিচিত। এখানের সমুদ্রতীর থেকে সূযোর্দয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই দেখার সুযোগ রয়েছে বলে এটি অধিক জনপ্রিয়। প্রায় সারা বছরই এখানে পর্যটকের আনাগোনা থাকে। শীত মৌসুমে সমুদ্র তুলনামুলক শান্ত থাকে বলে অনেকে সমুদ্র দেখার জন্য এ মৌসুমটাকেই বেছে নেয়। সমুদ্র ছাড়াও এখানে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

সাগরকন্যা কুয়াকাটা। ছবি: সংগৃহীত

হাওর

মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ আর সিলেট জেলা নিয়ে গঠিত সিলেট বিভাগ। এসব জেলাজুড়ে রয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর, শনির হাওর প্রভৃতি। শীত মৌসুমে হাওরগুলোতে অনেক অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যায়। সেসব অতিথি পাখি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা।

শীত মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরে অতিথি পাখির দেখা মেলে। ছবি: সংগৃহীত

বিল

সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১০০ হেক্টর জায়গাজুড়ে বাইক্কা বিল রয়েছে। সেই বিলে প্রতি বছর অনেক অতিথি পাখি আসে।  পাখিদের সঠিক পর্যবেক্ষণের জন্য বিলে তিন তলাবিশিষ্ট একটা পর্যবেক্ষণ টাওয়ারও আছে। সারা বছরই বাইক্কা বিলে পাখি দেখা যায়, তবে শীত মৌসুমে তা যেন পাখিদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়। এ বিলের উল্লেখযোগ্য পাখি হচ্ছে, পানকৌড়ি, রাঙ্গাবক, শঙ্খচিল, ধলাবক, দলপিপি ইত্যাদি। শীত মৌসুমে অনেক পর্যটক এই বাইক্কা বিলে অতিথি পাখি দেখতে আসেন।

বাইক্কা বিলে অতিথি পাখি। ছবি: সংগৃহীত

সাভার

সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালে অতিথি পাখি দেখার জন্য প্রতি বছর সেখানে অনেকেই ঘুরতে যায়। এ ছাড়া সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রাম খুব বিখ্যাত। সেখানে শীত মৌসুমে অনেক দর্শনার্থী ঘুরতে যান। বিরুলিয়াতে ১০-১৫ ঘর পুরনো আমলের বাড়িও আছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখি। ছবি: সংগৃহীত

মানিকগঞ্জ

ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জ জেলা। শহরে থেকে হাঁপিয়ে উঠে অনেকে গ্রামের স্বাদ পেতে সেখানে যায়। শীত মৌসুমে সহজে খেজুর রস খেতে এবং গ্রামের শীত উপভোগ করতে সেখানে ছুটে যায় অনেকে। মানিকগঞ্জে বেশ কিছু পুরনো জমিদার বাড়ি রয়েছে।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনা

শীত মৌসুমে সমুদ্র এবং নদী বিধৌত অঞ্চলে শীত তুলনামূলক কম থাকে। তাই পর্যটকরা এ মৌসুমে এসব অঞ্চলে ছুটে যান। নেত্রকোনা জেলায় রয়েছে সোমেশ্বরী নদী, কমলারানীর দিঘি, বিরিসিরি, চিনামাটির পাহাড় প্রভৃতি স্থান। এ ছাড়া এখানে ডিঙ্গাপোতা নামে একটি হাওরও রয়েছে। সারা বছর পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও শীতকালে পর্যটকের আনাগোনা আরও বেড়ে যায়।

চিনামাটির পাহাড়। ছবি: সংগৃহীত

শেরপুর

শেরপুরে রয়েছে ঘোরার জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট গজনী অবকাশ কেন্দ্র। প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা এ অবকাশকেন্দ্রে গেলে যেকোনো পর্যটকই মুগ্ধ হবে।

গজনী অবকাশ কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

রংপুর

পায়রাবন্দ, দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি, তাজহাট জমিদার বাড়ি- রংপুর গেলে এসব স্থান অবশ্যই ঘুরে আসা উচিত। পায়রাবন্দ হচ্ছে মিঠাপুকুর উপজেলার একটি গ্রাম, যেখানে মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার সম্মানার্থে পায়রাবন্দ গ্রামে ৩.১৫ একর জমিতে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার ভেতর রয়েছে নান্দনিক বাগান, ডরমেটরি ভবন, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি, গেস্ট হাউস প্রভৃতি। দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়িটি রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় অবস্থিত। ৩২০ বছর আগে ২৮ একর জায়গার ওপর খাল, পুকুর এবং ফসলি জমি বেষ্টিত এ জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে এ বাড়িটি খুব সমাদৃত। কেননা, ইতিহাসে দেবী চৌধুরানী এক বহুল সুপরিচিত নাম। রংপুর জেলার কথা ভাবলেই প্রথম যে চিত্র চোখে ভেসে ওঠে, তা তাজহাট জমিদার বাড়ি। শ্বেতশুভ্র এই বিশাল বাড়িটি সদর উপজেলাতেই অবস্থিত। রংপুর ভ্রমণে গেলে অবশ্যই এ জায়গাটি ঘুরে আসা উচিত।

তাজহাট জমিদার বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়

শীতের প্রারম্ভ পঞ্চগড় ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অক্টোবর-নভেম্বরে পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় বলে এ সময়টায় এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। উল্লেখ্য যে, পঞ্চগড়ের ডাকবাংলো থেকে কাঞ্চজঙ্ঘার দৃশ্য সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। এ ছাড়া পঞ্চগড়ে আরও আছে কাজী টি এস্টেট, জিরো পয়েন্ট, ভিতরগড় দুর্গনগরী, মহারাজার দিঘি, রকস মিউজিয়াম, আটোয়ারী ইমামবাড়া, জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি, গোলকধাম মন্দির প্রভৃতি স্থান।

পঞ্চগড় থেকে শীত মৌসুমে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে। ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাট

এ জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান হচ্ছে- তুষভাণ্ডার জমিদার বাড়ি, কাকিনা জমিদার বাড়ি, শালবন, তিন বিঘা করিডোর, তিস্তা ব্যারেজ, বুড়িমারি স্থলবন্দর ও জিরো পয়েন্ট, ভূমি গবেষণা জাদুঘর ইত্যাদি। তুষভাণ্ডার জমিদার বাড়িটি কালীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি, যা ৪০০ বছরের পুরনো। কালীগঞ্জ উপজেলারই আরেকটি জমিদার বাড়ি হচ্ছে কাকিনা জমিদার বাড়ি। এটি কাকিনা গ্রামে অবস্থিত এবং এটিও ৪০০ বছরের পুরনো। লালমনিরহাটে রয়েছে অনেক শালবন। অনেক পর্যটক শুধুমাত্র শালবন দেখার জন্যেও লালমনিরহাটে যায়। পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তে রয়েছে একটি স্বতন্ত্রভূমি, যা তিন বিঘা করিডোর নামে পরিচিত। এটি ঠিক পর্যটন স্থান না হলেও অনেকে কৌতূহলবশত এখানে ঘুরতে যায়, স্বচক্ষে দেখে আসে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা।

তুষভাণ্ডার জমিদার বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রাম

এ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- উলিপুর মুন্সিবাড়ি, নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি, চান্দামারী মসজিদ, পাঙ্গা জমিদার বাড়ি, ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি, জয়মনিরহাট জমিদার বাড়ি প্রভৃতি। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার উলিপুর মুন্সিবাড়িটির নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী পর্যটকদের আকর্ষণ করে। নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ির অবস্থান ফুলবাড়ি উপজেলায়। এ বাড়িটিও বড় পরিসরে নির্মিত। রাজারহাট উপজেলার চান্দামারী মসজিদটি মোগল ও সুলতানী স্থাপত্যকলার আদলে নির্মিত অনন্য এক স্থাপনা।

উলিপুর মুন্সিবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁও

বালিয়া মসজিদ, লোকায়ন জীবন বৈচিত্র জাদুঘর, রাজা টংনাথের বাড়ি এসব হচ্ছে ঠাকুরগাঁও জেলার দর্শনীয় কিছু স্থান। লোকায়ন জীবন বৈচিত্র জাদুঘরটি ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রান্তিক মানুষের জীবনবৈচিত্র ও গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতি তুলে ধরা এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে এখানে।

লোকায়ন জীবন বৈচিত্র জাদুঘর। ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুর

জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে- দিনাজপুর রাজবাড়ি, রামসাগর, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, স্বপ্নপুরী ইত্যাদি। দিনাজপুর রাজবাড়ির অবস্থান দিনাজপুর সদরেই। জেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামসাগর মানবসৃষ্ট দিঘী। স্বপ্নপুরী দিনাজপুর উপজেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় একটি বিনোদন পার্ক। শীত মৌসুমে এখানে বেশ ভিড় হয়।

দিনাজপুর রাজবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

নীলফামারী

চিনি মসজিদ, ক্যাথলিক গীর্জা, হরিশ্চন্দ্রের পাঠ, ধর্মপালের গড় নীলফামারী জেলার উল্লেখযোগ্য স্থান। কলকাতা থেকে মর্মর পাথর ও চিনামাটি এনে নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রের পাঠ মূলত একটি রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ, যা জলঢাকা উপজেলায় অবস্থিত।

চিনি মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী

রাজশাহী হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি শহর। শহরের উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থান হচ্ছে- বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পদ্মা গার্ডেন, মুক্তমঞ্চ, টি বাঁধ, সেন্ট্রাল পার্ক, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি। এছাড়া রাজশাহীর অন্যান্য উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান। শহরের বিভিন্ন জায়গায় সময় কাটানো এবং দেখার জন্য পর্যাপ্ত স্থান রয়েছে। পুঠিয়া উপজেলায় রয়েছে পুঠিয়া রাজবাড়ি, বাগমারা উপজেলাতে আছে হাজারদুয়ারী জমিদার বাড়ি। বাঘা উপজেলায় আছে ঐতিহাসিক বাঘা শাহী মসজিদ।

পুঠিয়া রাজবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

এই জেলা আমের জন্য বিখ্যাত হলেও বিগত কিছু বছর ধরে আলপনা গ্রামের কারণে নতুন করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়েছে। এ জেলায় ঘুরতে গেলে দেখে নিতে পারেন- বাবু ডাইং, আলপনা গ্রাম, নাচোল রাজবাড়ি, কোতোয়ালী দরওয়াজা, ছোট সোনা মসজিদ, তোহাখানা কমপ্লেক্স, দারাসবাড়ি মসজিদ প্রভৃতি। এখানকার বেশ কিছু টিলায় আদিবাসীরাও বসবাস করে। অবারিত গাছপালা, পাখপাখালির ডাকাডাকি, আদিবাসীদের জীবনবৈচিত্র দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। আলপনা গ্রামটি নাচোল উপজেলায় অবস্থিত। গ্রামের প্রতিটি বাড়ি আলপনা দিয়ে সাজানো বলে এটি আলপনা গ্রাম হিসেবে সুপরিচিতি পেয়েছে। এ গ্রামের সৌন্দর্যের টানে সারা দেশ থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা।

আলপনা গ্রাম। ছবি: সংগৃহীত

নাটোর

নাটোরের কিছু দর্শনীয় স্থান হচ্ছে- রানী ভবানীর রাজবাড়ি, উত্তরা গণভবন, চলনবিল ইত্যাদি। রানী ভবানীর রাজবাড়ি নাটোর রাজবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। দিঘাপাতিয়া রাজবাড়িটি বর্তমানে উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটিকে উত্তরা গণভবন নামকরণ করেন। নাটোরের আরো একটি উল্লেখযোগ্য জায়গা হচ্ছে চলনবিল। শীত মৌসুমে চলনবিল জুড়ে আদিগন্ত বিস্তৃত সরিষা ফুল ফুটে থাকে। চলনবিলের এই মোহনীয় রূপের টানে পর্যটকরা এ মৌসুমে চলনবিল দেখতে আসে।

উত্তরা গণভবন। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া

বগুড়া জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হচ্ছে মহাস্থানগড়, খেরুয়া মসজিদ, রানী ভবানীর পৈতৃক নিবাস, ভীমের জাঙ্গাল, ভাসু বিহার, গোকুল মেধ প্রভৃতি। বগুড়া জেলার সবচেয়ে আইকনিক জায়গা হচ্ছে মহাস্থানগড়। করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে মহাস্থানগড়ের অবস্থান। এই মহাস্থানগড়ই ছিলো প্রাচীন বাংলার রাজধানী। এর ভেতর রয়েছে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন বিভিন্ন শাসনকালের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ২০১৬ সালে মহাস্থানগড়কে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মহাস্থানগড়। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ জেলায় ঘুরে আসতে পারেন রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি, নবরত্ন মন্দির, বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক, যমুনা সেতু ইত্যাদি। উল্লাপাড়া উপজেলায় রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নবরত্ন মন্দির।

রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাট

জয়পুরহাটে গেলে যেসব স্থান ঘুরে দেখা যেতে পারে, সেগুলো হচ্ছে লাকমা রাজবাড়ি, পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি, নান্দাইল দীঘি ইত্যাদি। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উপজেলা পাঁচবিবি। সেই উপজেলাতেই লকমা রাজবাড়ির অবস্থান। ৩০০ বছর পূর্বে এই রাজবাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলায় নান্দাইল দীঘির অবস্থান, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটার। ১৬১০ সালে এ দিঘিট খনন করা হয়েছিলো।

লাকমা রাজবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ

নওগাঁ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বলিহার রাজবাড়ি, দুবলহাটি জমিদারবাড়ি, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, কুসুম্বা মসজিদ, রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ি, ভবানীপুর জমিদার বাড়ি ইত্যাদি। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার নওগাঁ জেলার সবচেয়ে দর্শনীয় একটি স্থান। এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার, যা সোমপুর বিহার হিসেবেও পরিচিত এবং এর অবস্থান বদলগাছি উপজেলায়। ১৯৮৫ সালে এটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি লাভ করে।

বলিহার রাজবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

যশোর

যশোর রোড, বেনাপোল স্থলবন্দর, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধিক্ষেত্র, মধুসূদন দত্তের বাড়ি, কালেক্টরেট পার্ক এসব হচ্ছে যশোর জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। মাইকেল মধুসূদন দত্তের সম্মানার্থে সেখানে জাদুঘর, লাইব্রেরি এবং পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে, যা মধুপল্লী নামেও পরিচিত। যশোর রোড ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ঐতিহাসিক সড়ক, যা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উভয়ের মধ্যে বিরাজমান। বেনাপোল স্থলবন্দর বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর। এছাড়া শীত মৌসুমে খেজুর রস খাওয়ার জন্য অনেক দর্শনার্থী যশোরে গিয়ে থাকেন। যশোরের খেজুর রস এবং গুড় সারা দেশে বিখ্যাত।

বিখ্যাত যশোর রোড। ছবি: সংগৃহীত

জাহ্নবী

ভ্রমণের ব্যাগ গোছাতে যে বিষয়গুলো ভুলবেন না

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম
ভ্রমণের ব্যাগ গোছাতে যে বিষয়গুলো ভুলবেন না
ব্যাগ গোছানোর আগে একটি চেকলিস্ট তৈরি করা অত্যন্ত উপকারী। ছবি এআই

ভ্রমণ মানেই আনন্দ, রোমাঞ্চ আর নতুন কিছু দেখার অভিজ্ঞতা। কিন্তু এই অভিজ্ঞতাটি নিখুঁতভাবে উপভোগ করতে হলে যাত্রার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা আবশ্যক। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো ব্যাগ গোছানো। ঠিকঠাকভাবে ব্যাগ গোছানো না হলে যাত্রাপথে নানান রকম বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না থাকলে বা অতিরিক্ত জিনিস বোঝা হয়ে দাঁড়ালে সেই আনন্দযাত্রা এক সময় কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। তাই ব্যাগ গোছানোর সময় কিছু বিষয়ের প্রতি সচেতন দৃষ্টি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভ্রমণের ধরণ ও স্থানের ওপর নির্ভর করে প্যাকিং

প্রথমেই ভাবুন আপনি কোথায় যাচ্ছেন এবং কতদিন থাকবেন। পাহাড়ে, সমুদ্রে, শহরে না-কি বিদেশে? আবহাওয়া শীতল না গরম? জায়গার ধরন অনুযায়ী পোশাক ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করুন। শীতের জায়গায় যাচ্ছেন কিনা সেটা বিবেচনায় নিয়ে মোটা কাপড়, গ্লাভস, হুডি কিংবা জ্যাকেট রাখুন। অন্যদিকে, সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণের জন্য হালকা, বাতাস চলাচল উপযোগী পোশাক ও সানস্ক্রিন ক্রিম নেওয়া দরকার।

 

একটি তালিকা তৈরি করুন

ব্যাগ গোছানোর আগে একটি চেকলিস্ট তৈরি করা অত্যন্ত উপকারী। এতে করে কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তালিকাটি ভাগ করে নিতে পারেন—পোশাক, ওষুধ, কাগজপত্র, ইলেকট্রনিকস, টয়লেট্রিজ ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে। তালিকা অনুসরণ করে একে একে সবকিছু ব্যাগে ঢোকান এবং প্রতিটি আইটেমের পাশে টিক চিহ্ন দিন।

 

হালকা ব্যাগ, সহজ যাত্রা

অতিরিক্ত জিনিসপত্র ব্যাগে না রাখার চেষ্টা করুন। ভ্রমণ যত হালকা হবে, চলাফেরা তত সহজ হবে। অনেকেই ‘যদি দরকার হয়’ ভেবে এমন অনেক কিছু ব্যাগে পুরে ফেলেন, যেগুলোর একটিও শেষ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয় না। তাই ব্যবহারিক ও প্রয়োজনীয় জিনিসের বাইরে অপ্রয়োজনীয় কিছু নিলে তা শুধু জায়গা নষ্ট করবে না, বরং যাত্রা ক্লান্তিকরও করে তুলবে।

 

আবশ্যিক কাগজপত্র নিরাপদে রাখুন

ভ্রমণের সময় পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স কপি, টিকিট, হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণ ইত্যাদি কাগজপত্র এক জায়গায় গুছিয়ে রাখুন। এগুলো পাসপোর্ট হোল্ডার বা ডকুমেন্ট ফোল্ডারে ভরে ব্যাগের এমন জায়গায় রাখুন, যাতে হাতের নাগালে থাকে এবং সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।

 

প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যাগে রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছবি এআই

 

ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী

নিজের প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যাগে রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যদি কোনো নির্দিষ্ট রোগের ওষুধ নিয়মিত নিতে হয়, তাহলে সেগুলোর পর্যাপ্ত মজুত থাকা দরকার। পাশাপাশি ব্যথানাশক, পেটের ওষুধ, স্যালাইন, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, ও ইনহেলার জাতীয় প্রাথমিক চিকিৎসার সামগ্রী রাখলে যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হয়।

 

স্মার্ট ও সংগঠিত প্যাকিং

ব্যাগ গোছাতে চাইলে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। যেমন রোল করে কাপড় গুছিয়ে রাখলে জায়গা কম লাগে এবং কাপড়ে ভাঁজ পড়ে না। শূন্য জায়গা ব্যবহার করতে পারলে অনেক জিনিস সংরক্ষণ করা যায়। জুতার ভেতর মোজা গুঁজে দেওয়া, কসমেটিক্স বা টয়লেট্রিজ আলাদা ছোট ব্যাগে রাখা এগুলো ভালো অভ্যাস।

 

ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও চার্জার

বর্তমানে ভ্রমণে স্মার্টফোন, চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক, হেডফোন, ক্যামেরা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ডিভাইস বহন করা হয়। এসব ডিভাইস ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা আগেই দেখে নেওয়া উচিত। সব ডিভাইসের চার্জার ও অতিরিক্ত মেমোরি কার্ড বা ব্যাটারি নেওয়া হলে পথে প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনা এড়ানো যায়।

 

সতর্কতা ও নিরাপত্তা

ভ্রমণে যাত্রার সময় মূল্যবান জিনিস যেমন গহনা, বেশি নগদ অর্থ কিংবা অতিরিক্ত কার্ড নেওয়া ঠিক নয়। প্রয়োজনে একাধিক জায়গায় অর্থ রাখুন যাতে এক জায়গা থেকে হারিয়ে গেলে পুরোটা না যায়। ব্যাগে একটি ছোট তালা ব্যবহার করলে নিরাপত্তা বাড়ে। এছাড়া, মানিব্যাগে বা মোবাইলে জরুরি যোগাযোগ নম্বর লিখে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

 

অতিরিক্ত জিনিসপত্র ব্যাগে না রাখার চেষ্টা করুন। ছবি এআই

 

টয়লেট্রিজ ও ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী

হোটেলে টয়লেট্রিজ পাওয়া গেলেও নিজের ব্যবহার উপযোগী জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়াই ভালো। যেমন ব্রাশ, পেস্ট, সাবান, শ্যাম্পু, রেজর, টিস্যু, তোয়ালে ইত্যাদি। নারী ভ্রমণকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি পণ্য সঙ্গে রাখা আবশ্যক।

 

পরিশেষে, ভ্রমণের ব্যাগ যেন হয় আপনার সঙ্গী

আপনার ব্যাগটি যেন হয় বহনযোগ্য, টেকসই এবং আরামদায়ক। বিশেষ করে দীর্ঘপথের যাত্রায় ব্যাকপ্যাক বা ট্রলির মধ্যে যেটি আপনি সহজে বহন করতে পারেন, সেটিই বেছে নেওয়া উচিত। ব্যাগের ওজন ৭-১০ কেজির মধ্যে রাখলে চলাফেরা সহজ হয়।

ভ্রমণ সবসময়ই এক ধরনের প্রস্তুতির দাবি করে। আর তার শুরুটা হয় ব্যাগ গোছানো থেকে। ঠিকঠাকভাবে প্রস্তুতি নিলে যাত্রা হয় স্মরণীয় এবং আনন্দদায়ক। তাই ব্যাগ গোছানোর কাজটিকে অবহেলা নয়, বরং গুরুত্ব দিয়েই সম্পন্ন করুন। নিরাপদ ও আনন্দময় হোক আপনার প্রতিটি সফর।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম
সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা
ছবি: খবরের কাগজ

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

শনিবার (৩০ মে) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই তথ্য জানানো হয়।

টানা বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে টানা বর্ষণের ও পাহাড়ি ঢলে ফলে কোম্পানীগঞ্জ ধলাই নদীর পানি বেড়ে তলিয়ে যায় জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা সাদাপাথর। ঢলের পানিতে অস্থায়ী অবকাঠামো এবং স্থানীয় কয়েক শ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মালামাল ভাসিয়ে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।

ঢল নামার সময় কিছু পর্যটক বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্পটে অবস্থান করছিলেন। তবে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই তারা নিরাপদ স্থানে চলে আসেন। এরপর শনিবার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাধীন সাদাপাথর পর্যটন স্পট পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া স্থিতিশীল হলে পরবর্তীতে উক্ত পর্যটনকেন্দ্রটি খুলে দেওয়া হবে।

শাকিলা ববি/রিফাত/

মহাস্থানগড়  ভ্রমণ অতীতকে ছুঁয়ে দেখার এক অনন্য অভিজ্ঞতা

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম
অতীতকে ছুঁয়ে দেখার এক অনন্য অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য যদি আমাদের আত্মপরিচয়ের মূল ভিত্তি হয়, তবে মহাস্থানগড় নিঃসন্দেহে সেই ভিত্তির অন্যতম প্রাচীন গৌরবময় স্তম্ভ। এটি শুধু একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান নয়, বরং আমাদের অতীতের জানালা, যা দিয়ে উঁকি দিলে দেখা যায় হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো সভ্যতা, সংস্কৃতি রাজনীতির চিত্রপট। তাই মহাস্থানগড় ভ্রমণ শুধু একটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নয়, এটি ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মহাস্থানগড় এক সময় প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর রাজধানী ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে শুরু করে পাল সেন শাসনামলের শেষ পর্যন্ত এই শহর ছিল রাজনৈতিক ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যেমন গোকুল মেধ, শীলাদেবীর ঘাট, দুর্গ প্রাচীর এবং পোড়ামাটির ফলকে উৎকীর্ণ চিত্র- সবই এক সমৃদ্ধ অতীতের প্রমাণ বহন করে।

মহাস্থানগড়ে ভ্রমণ ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব সংস্কৃতির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি জীবন্ত শ্রেণিকক্ষ। প্রাচীন স্থাপত্য, প্রাচীন মুদ্রা, মূর্তি অন্যান্য নিদর্শন পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বইয়ের পাতার বাইরের জ্ঞান অর্জন করতে পারে। গবেষকদের জন্য এখানে রয়েছে অজস্র অনুসন্ধানযোগ্য তথ্য নিদর্শন যা এখনো অনেক রহস্য উন্মোচনের অপেক্ষায়।

যে জাতি তার অতীতকে জানে না, সে ভবিষ্যতের পথ হারিয়ে ফেলে। মহাস্থানগড় সেই পরিচয়চিহ্ন, যা আমাদের পূর্বসূরিদের জ্ঞান, দক্ষতা সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তোলে। এটি আমাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে এবং তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে তাদের সংস্কৃতি ইতিহাস জানার আগ্রহ সৃষ্টি করতে।

মহাস্থানগড় হিন্দু, বৌদ্ধ মুসলিম- তিন ধর্মেরই নিদর্শন বহন করে। এটি একটি অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের প্রতীক, যেখানে ধর্মীয় সহাবস্থান সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে স্বাগত জানানো হয়েছে যুগ যুগ ধরে। এই দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান সমাজে সহনশীলতা সংহতির জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে।

মহাস্থানগড় ভ্রমণ মানে শুধুই একটি ভ্রমণ নয়, এটি আত্মজাগরণের একটি রূপ। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমরা একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী। তাই মহাস্থানগড়কে শুধু ভ্রমণকেন্দ্র নয়, বরং একটি জাতীয় শিক্ষাকেন্দ্র, গবেষণাগার পরিচয়ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা উচিত।

আজকের এই দ্রুতগতির পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে আমরা যখন নিজেদের হারিয়ে ফেলি, তখন মহাস্থানগড়ের মতো স্থান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- আমাদের শিকড় কতটা গভীরে, আর ইতিহাস কতটা গৌরবময়।

 

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে গাবতলী বা কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি বগুড়া যাওয়া যায়। বিআরটিসি, এসআর ট্রাভেলস, শ্যামলী, হানিফ এবং ঐশী এক্সপ্রেসসহ বেশ কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির বাস চলে। ভাড়া সাধারণত ৫৫০-৯০০ টাকা (নন-এসি/এসি) সময় লাগে সাধারণত - ঘণ্টা। তবে রাস্তার অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে।

বগুড়া শহর থেকে মহাস্থানগড়ের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। অটোরিকশা, সিএনজি বা লোকাল বাসে সহজেই পৌঁছানো যায়। সময় লাগে ২০-৩০ মিনিট। ভাড়া প্রায় ৫০-১০০ টাকা (যানবাহনের ধরন অনুযায়ী) ট্রেনে ঢাকা থেকে মহাস্থানগড় যেতে চাইলে ঢাকা থেকে সান্তাহার পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তনগর ট্রেন রয়েছে। যেমন- লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস। সান্তাহার থেকে বগুড়া বাসে বা লোকাল ট্রেনে যাওয়া যায়। সময় লাগে - ঘণ্টা। ভাড়া ২০০-৮০০ টাকা (শ্রেণিভেদে)

বগুড়ায় বিমানবন্দর নেই। তবে আপনি চাইলে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর/রাজশাহী হয়ে ফ্লাইটে যেতে পারবেন। সেখান থেকে বগুড়া সড়কপথে (- ঘণ্টা) যেতে হয়।

 

মহাস্থানগড় ভ্রমণে সতর্কতা

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের ঐতিহাসিক গৌরবের এক অমূল্য নিদর্শন। এই প্রাচীন স্থানের সৌন্দর্য ইতিহাস উপভোগ করতে গেলে কিছু সতর্কতা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হওয়ায় এর সংরক্ষণ প্রয়োজন এবং ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হয়।

মহাস্থানগড়ে খাবার পানীয়ের সুবিধা সীমিত, বিশেষ করে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায়। তাই ভ্রমণে পানি হালকা খাবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ভালো। বিশেষ করে গরমকালে ডিহাইড্রেশন এড়াতে পানি অবশ্যই প্রয়োজন। এখানের মাটির পথ ধূলিকণা অনেক সময় হাঁটার জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। তাই চমৎকারভাবে হাঁটার জন্য হালকা, আরামদায়ক কাপড় এবং মজবুত, বন্ধ জুতা পরিধান করুন।

মহাস্থানগড় বিশাল একটি এলাকায় ছড়িয়ে আছে। একটি অভিজ্ঞ স্থানীয় গাইড ভ্রমণকে সহজ, তথ্যবহুল এবং নিরাপদ করে তোলে। গাইড আপনাকে ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে দূরে রাখবে।

পুরোনো স্থাপনা নিদর্শনগুলো সংরক্ষণের অধীনে রয়েছে। সেগুলোতে হাত দেওয়া, ছোঁয়া বা ভাঙচুর করা নিষেধ। ভ্রমণকালে এই বিষয়টি অবশ্যই মেনে চলুন। বড় জায়গায় ভিড় কম থাকার কারণে সুরক্ষার দিক থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। মূল্যবান জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে রাখুন এবং একা দূরবর্তী এলাকায় যাওয়া এড়িয়ে চলুন।

মহাস্থানগড়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘোরার জন্য ভালো করে সময় দিতে হবে। তাড়াহুড়ো করবেন না, কারণ বেশ কিছু অংশ হাঁটাহাঁটি করতে হয়। সকালবেলা বা বিকেলের আগে যাওয়া ভালো, কারণ দুপুরে গরম বেশি থাকে।

বৃষ্টি বা বন্যার সময় সেখানে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে যাওয়া উচিত। মহাস্থানগড়ের মতো ঐতিহাসিক স্থানকে পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের দায়িত্ব। কোনো ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকুন এবং সঠিক স্থানে আবর্জনা ফেলুন।

 

ভ্রমণ পরামর্শ

মহাস্থানগড় ভ্রমণের জন্য শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে উপযোগী সময়। বগুড়া শহরে ভালো মানের হোটেল গেস্ট হাউস রয়েছে থাকার জন্য। জাদুঘর প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ টিকিট নিতে হয় (বাংলাদেশি বিদেশি দর্শনার্থীর জন্য আলাদা হার)

 

বগুড়ার আরও দর্শনীয় স্থান

বগুড়া জেলায় দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। এর মধ্যে আছে রাজার পাহাড়ি মসজিদ, হাটিখাঁড়, পীরগাছা হিল, বগুড়া জাদুঘর, গোকুল মেধ, গাবতলী মসজিদ, শিবগঞ্জ প্রাচীন মন্দির, বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন, মাধবপুর লেক ইত্যাদি।

বর্ষাকালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যেসব সতর্কতা মেনে চলবেন

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম
আপডেট: ২৯ মে ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম
বর্ষাকালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যেসব সতর্কতা মেনে চলবেন
সব জায়গা বর্ষাকালে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত নয়। ছবি এআই

বাংলার প্রকৃতি বর্ষাকালে অনন্য সৌন্দর্যে মোড়া থাকে। নদী, পাহাড়, ঝর্ণা, সবুজ মাঠ, কুয়াশা ঢাকা পথ – সবকিছু যেন নতুন রূপে ধরা দেয় এই ঋতুতে। অনেকেই বর্ষাকালকে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন, বিশেষত যারা প্রকৃতির রোমাঞ্চ খুঁজে বেড়ান। তবে বর্ষাকালে ভ্রমণ যেমন রোমাঞ্চকর হতে পারে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে যদি প্রয়োজনীয় সতর্কতা না নেওয়া হয়। নিচে বর্ষাকালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতার বিষয় তুলে ধরা হলো —

▶ আবহাওয়ার পূর্বাভাস যাচাই
বর্ষাকালে আবহাওয়া অত্যন্ত অনিশ্চিত থাকে। যে কোনো সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে, আবার কোথাও ভারী বর্ষণের ফলে বন্যাও দেখা দিতে পারে। তাই যাত্রার পূর্বে এবং যাত্রাকালে নিয়মিত আবহাওয়ার আপডেট দেখা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ, গুগল ওয়েদার কিংবা টিভি ও সংবাদ মাধ্যমে সহজেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যায়।

 

বর্ষাকালে আবহাওয়া অত্যন্ত অনিশ্চিত থাকে। ছবি এআই

 

▶ সঠিক গন্তব্য নির্বাচন
সব জায়গা বর্ষাকালে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত নয়। পাহাড়ি অঞ্চল, নদীর পার কিংবা দুর্গম এলাকা বর্ষার সময় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ভূমিধস, পাহাড়ি ঢল কিংবা জলাবদ্ধতা ভ্রমণকারীদের জন্য মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। তাই গন্তব্য নির্বাচন করার সময় এলাকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, অতীতের বন্যা বা দুর্যোগের ইতিহাস ও নিরাপত্তা বিষয় বিবেচনা করা উচিত।

 

▶ উপযুক্ত পোশাক ও জুতা পরা
বর্ষাকালে পোশাক নির্বাচনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হালকা, দ্রুত শুকায় এমন কাপড় পরা ভালো। তুলার বা জিন্সের কাপড় ভিজে গেলে শুকোতে সময় নেয় এবং তা ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বাড়ায়। রেইনকোট বা ছাতা অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।
জুতার ক্ষেত্রে পানি নিরোধক (ওয়াটারপ্রুফ) ও ভালো গ্রিপযুক্ত জুতা নির্বাচন করা উচিত। পিচ্ছিল পথে চলতে গেলে হঠাৎ পড়ে গিয়ে আঘাত লাগার ঝুঁকি থাকে। স্যান্ডেল বা খোলা জুতা পরলে পা কাদায় ভরে যেতে পারে বা জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

 

▶ প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রথমিক চিকিৎসার সামগ্রী সঙ্গে রাখা
বর্ষাকালে সর্দি-কাশি, জ্বর, ত্বকে ফুসকুড়ি বা ডায়রিয়া জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ভ্রমণের সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ যেমন: প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড, ব্যান্ডেজ, এন্টিসেপটিক, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বা লবণ-গ্লুকোজ সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। যদি পাহাড়ি বা দুর্গম এলাকায় যান, তাহলে প্রথমিক চিকিৎসার একটি কিট অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন।

 

▶ খাবার ও পানির নিরাপত্তা
বর্ষাকালে খাবার-দাবার খেয়াল করে খেতে হয়। বাহিরের খোলা খাবার খেলে সহজেই পেটের অসুখ হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন ঘরে তৈরি শুকনো খাবার যেমন চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, বাদাম, খেজুর ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে। পানির ক্ষেত্রেও সচেতন থাকতে হবে। অচেনা জায়গার কাঁচা পানি না খেয়ে বোতলজাত পানি বা নিজস্ব ফিল্টার ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে খাওয়াই ভালো।

 

বর্ষাকালে রাস্তায় জলাবদ্ধতা, যানজট অথবা হঠাৎ বন্যার কারণে যাত্রা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ছবি এআই

 

 

▶ ব্যাকআপ পরিকল্পনা রাখা
বর্ষাকালে রাস্তায় জলাবদ্ধতা, যানজট অথবা হঠাৎ বন্যার কারণে যাত্রা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই ভ্রমণের পরিকল্পনায় বিকল্প পথ বা বিকল্প গন্তব্য রাখলে বিপদে পড়লে সহজে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এছাড়া প্রয়োজনীয় নম্বর যেমন: স্থানীয় প্রশাসন, হোটেল, নিকটস্থ হাসপাতাল, আত্মীয়-স্বজন—এসব সংরক্ষিত রাখা জরুরি।

 

▶ ইলেকট্রনিক ডিভাইস সুরক্ষা
বর্ষার ভ্রমণে ফোন, ক্যামেরা, পাওয়ার ব্যাংক ইত্যাদি ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব ডিভাইস ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগে রাখা উচিত। চাইলে জিপলক ব্যাগ বা পলিথিন দিয়েও মোড়ানো যেতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত পাওয়ার ব্যাংক এবং চার্জার সঙ্গে রাখলে দরকারের সময় ডিভাইস বন্ধ হয়ে পড়বে না।

 

▶ স্থানীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকা
যে এলাকায় যাচ্ছেন, সেখানে কোনো ধরনের সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক সমস্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলছে কি না তা জানা অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে কিংবা সংবাদ মাধ্যমে তথ্য যাচাই করা উচিত।

 

 

উপযুক্ত প্রস্তুতি ও সতর্কতা মেনে চললে বর্ষাকাল ভ্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। ছবি এআই

 

▶ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা
বর্ষাকালে পানিবাহিত রোগ যেমন: ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি বেড়ে যায়। তাই মশার প্রতিরোধে রিপেলেন্ট ব্যবহার করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, ও যেখানে-সেখানে ময়লা না ফেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের ক্ষতি না করে প্লাস্টিক বা অন্যান্য বর্জ্য যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে।

 

সবশেষ 
বর্ষাকাল ভ্রমণের জন্য এক অনন্য সময়, কিন্তু এর রূপের মধ্যে যেমন রোমাঞ্চ রয়েছে, তেমনি আছে কিছু ঝুঁকি। উপযুক্ত প্রস্তুতি ও সতর্কতা মেনে চললে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। নিরাপদ ভ্রমণ কেবল আনন্দদায়কই নয়, এটি দায়িত্বশীল ভ্রমণকারীর পরিচয়ও বহন করে।
সুতরাং, এই বর্ষায় প্রকৃতির টানে যদি বেরিয়ে পড়েন, তবে নিরাপত্তার কথাও যেন ভুলে না যান। স্মার্ট পরিকল্পনা আর সচেতনতার মাধ্যমে বর্ষাকালের ভ্রমণ হয়ে উঠুক উপভোগ্য ও ঝুঁকিমুক্ত।

রহস্যঘেরা জুগিরকান্দি মায়াবন: সিলেটের এক জলজ রূপকথা

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
রহস্যঘেরা জুগিরকান্দি মায়াবন: সিলেটের এক জলজ রূপকথা
জুগিরকান্দি মায়াবন বাংলাদেশের বৃহত্তম জলাবনগুলোর মধ্যে অন্যতম।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট অঞ্চল শুধু চা-বাগান আর পাহাড়-নদীর জন্যই বিখ্যাত নয়, এখানকার জলাবনগুলোও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অপার বিস্ময়। তেমনই একটি প্রাকৃতিক রত্ন হলো জুগিরকান্দি মায়াবন—যা স্থানীয়ভাবে শুধু ‘মায়াবন’ নামেই অধিক পরিচিত। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত এই বনটি প্রকৃতি আর রহস্যে মোড়া এক অনন্য জলাবন।
প্রায় এক হাজার একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত জুগিরকান্দি মায়াবন বাংলাদেশের বৃহত্তম জলাবনগুলোর মধ্যে অন্যতম। আয়তনে এটি রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বড়, যদিও এখনও পর্যটকদের কাছে ততটা পরিচিত নয়। এই গহিন জলাবনে সারি-সারি হিজল, জাম, বরুণ, করচসহ বিভিন্ন জলপ্রিয় গাছ সারাবছরই দাঁড়িয়ে থাকে অথই জলের উপর। বনের উত্তর পাশে রয়েছে সারি ও পিয়াইন নদীর মিলনস্থল, যা এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য আরও সমৃদ্ধ করেছে।

কখন যাবেন?
বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) জুগিরকান্দি মায়াবন ঘুরে দেখার সবচেয়ে আদর্শ সময়। এ সময় বনজুড়ে পানি ভরে যায়, গাছগুলো অর্ধনিমজ্জিত হয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। তবে শীতকালেও (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) এই বনে যাওয়া যায়। তখন পানির পরিমাণ কম থাকলেও হাঁটতে কিংবা নৌকা ছাড়াও জায়গাটি উপভোগ করা যায়।

বন ও প্রাণবৈচিত্র্যের রাজ্য
মায়াবনের প্রকৃতি যেন কোনো রূপকথার কাহিনির মতো। সূর্যরশ্মি পাতার ফাঁক গলে জলে প্রতিফলিত হয়ে তৈরি করে এক মায়াবী পরিবেশ। পশ্চিমে রয়েছে হিদাইরখাল (সরকারি নথিপত্রে ‘বাউলিখাল’), যার তীরে অবস্থিত বনবিভাগের মালিকানাধীন দেশের অন্যতম বৃহৎ মূর্তা বাগান। বনটি বিভিন্ন পাখি ও বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল। এখানে দেখা মেলে মাছরাঙা, বক, ডাহুক, ঘুঘু, দোয়েল, ফিঙে, বালিহাঁস, পানকৌড়িসহ অসংখ্য পাখির। এছাড়া বানর, কাঠবিড়ালী, উদবিড়াল, মেছোবাঘ এবং বিভিন্ন প্রজাতির সাপও এই বনের বাসিন্দা।

কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সিলেট বাসে যেতে চাইলে ফকিরাপুল, সায়দাবাদ বা মহাখালী থেকে গ্রীন লাইন, শ্যামলি, এনা, এস আলম বা সৌদিয়া পরিবহনের বাসে যাওয়া যায়। এসি বাসের ভাড়া আনুমানিক ১৫০০ টাকা এবং নন-এসি বাসের জন্য ৭০০ টাকা।
ট্রেনে যেতে চাইলে পারাবত, জয়ন্তিকা, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা করে। ট্রেন ভাড়া ৩৭৫ থেকে ১,৩৩৮ টাকার মধ্যে।
সিলেট শহর থেকে তামাবিল সড়ক ধরে ৩৭ কিলোমিটার দূরের বেখরা ব্রিজ পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকে ছোট নৌকায় বেখরা খাল ধরে দেড় কিলোমিটার উত্তরে গেলেই মায়াবনের দেখা মিলবে।

কোথায় থাকবেন, কী খাবেন?
সিলেট শহরে রয়েছে নানা মানের হোটেল ও রিসোর্ট—যেমন হোটেল স্টার প্যাসিফিক, হোটেল হিলটাউন, হোটেল রোজ ভিউ ইত্যাদি। খাওয়ার জন্য শহরের রেস্টুরেন্টগুলোয় সাত রঙের চা, শুঁটকি ভর্তা, তাজা মাছের তরকারিসহ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গলের নীলকণ্ঠ টি কেবিনে সাত রঙের চা চেখে দেখা যেতে পারে।

জরুরি পরামর্শ
নৌকা ভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন।
প্রকৃতি নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকুন।
আবর্জনা ফেলবেন না—বনের পরিবেশ রক্ষায় সচেতন থাকুন।
স্থানীয় গাইডের সহায়তা নিন, যাতে ভ্রমণ নিরাপদ ও তথ্যবহুল হয়।

শেষ কথা
জুগিরকান্দি মায়াবন এখনো পর্যটকদের ভিড়ে ঘন হয়ে ওঠেনি। তাই এখনই সময়, যখন নির্জনতা আর প্রকৃতির নিস্তব্ধতা একসাথে উপভোগ করা যায়। একটু সচেতনতা আর শ্রদ্ধাবোধ থাকলেই এ সৌন্দর্য দীর্ঘকাল ধরে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।