পর্যটকদের নিত্য পদচারণায় মুখর থাকে ‘মেঘের সমুদ্র’ খ্যাত রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পর্যটক আসেন এখানে। ছুটির দিন হওয়ায় গত শুক্রবারও সাজেকে নানা বয়সী পর্যটকের ঢল নামে। তবে আবাসনের সীমাবদ্ধতা থাকায় এবং আগাম কক্ষ বুকিং না দেওয়ায় বিনোদনপ্রিয় অনেক পর্যটকই পড়েন বিপাকে।
শুক্রবার সাজেক ভ্যালিতে প্রায় ছয় হাজার পর্যটক ভ্রমণে যান, যা ধারণক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি। পর্যটকদের এই অতিরিক্ত ভিড় থাকার জায়গার সংকট দেখা দেয়। অনেক পর্যটক বাধ্য হয়ে সাজেক থেকে ফিরে যান। আবার কেউ কেউ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য থেকে যান রিসোর্ট ও কটেজের বারান্দায়, স্থানীয়দের বাড়িঘরে।

মূলত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ, উন্নত খাবার ও পানীয় ব্যবস্থার কারণে সাজেক পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। সাজেকে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কংলাক পাহাড়, ঐতিহ্যবাহী লুসাই ভিলেজ এবং পাহাড়ের ভাজে ভাজে লুকানো সাদা মেঘের মিতালি। আর তাই একটু সুযোগ পেলে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন এখানে।
সাজেকে বর্তমানে ১১৬টি রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ৪ হাজার পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারেন। এসব রিসোর্ট-কটেজ এখন পুরোদস্তুর ভরপুর। বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি পর্যটক অবস্থান করছেন এখানে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সবকটি রিসোর্ট আগাম বুকিং হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সাজেক জিপ সমিতির তথ্য বলছে, সাজেকে শুক্রবার সকালে ও বিকেলে দুই দফায় জিপ, পিকআপ ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রায় ছয় হাজার পর্যটক প্রবেশ করেন। পর্যটকের বিশাল সমাগমের কারণে অনেকেই রিসোর্ট-কটেজ পাননি। যাদের থাকার জায়গা হয়নি, তাদের জন্য সমিতির পক্ষ থেকে সাজেকের স্কুল, ক্লাবঘরসহ অন্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। আবার অনেক পর্যটক গাড়িতেই রাত কাটিয়েছেন।
সাজেকের অবকাশ ইমানুয়েল ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম আসিফ বলেন, ‘শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সাজেকে প্রচুরসংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি ছিল। যারা অগ্রিম বুকিং দিয়ে আসেননি তারা রুম পাননি। তবে আমরা রিসোর্টের বারান্দায় ও ছাদে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পাশাপাশি কটেজ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে আমাদের শতভাগ বুকিং রয়েছে।’
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, ‘শুক্রবার সাজেকে পর্যটকের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক অনেক বেশি। তাই আমরা অনেক পর্যটককে কক্ষ ভাড়া দিতে পারিনি। আগাম বুকিং না নিয়ে আসায় অনেকেই ফিরে গেছেন। আর যারা থেকে গেছেন তারা মানুষের বাড়িঘরে, হোটেলের বারান্দায়-যে যেভাবে পেরেছেন রাত কাটিয়েছেন।’
এদিকে সাজেকের মতো শুক্রবার রাঙামাটি শহর, কাপ্তাইসহ জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে রাঙামাটি শহর, ঝুলন্ত সেতু, কাপ্তাই হ্রদে নৌভ্রমণ, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক, কাপ্তাইয়ের বিনোদনকেন্দ্রে পর্যটকের ভিড় ছিল বেশি। এতে শহর ও আশপাশের হোটেল, রিসোর্টেও বুকিং ছিল ৮০ থেকে শতভাগ পর্যন্ত।
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘রাঙামাটি শহরে সব হোটেল, রিসোর্টে ৮০ থেকে শতভাগ বুকিং হয়েছে। পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। রোজার আগে পর্যটকদের উপস্থিতি ভালো থাকবে আশা করছি।’
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ‘শুক্রবার পর্যটকদের ভালো উপস্থিতি ছিল। পর্যটন মোটেলে শুক্র ও শনিবার ৮০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়ে আছে। আর ছয় হাজারের বেশি পর্যটক শুক্রবার ঝুলন্ত সেতু ভ্রমণ করেছেন।’