ঢাকা ৫ চৈত্র ১৪৩১, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
English

মিরিঞ্জা ভ্যালির রূপে মুগ্ধ হতে চাইলে

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ পিএম
মিরিঞ্জা ভ্যালির রূপে মুগ্ধ হতে চাইলে
ছবি সংগৃহীত

জেলায় মেঘ-পাহাড়ের খেলা দেখার পাশাপাশি প্রকৃতির সঙ্গে পর্যটকদের অনাবিল আনন্দ দিতে চিরসবুজ সাজে সেজেছে বান্দরবানের লামার মিরিঞ্জা ভ্যালি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এবং বান্দরবান শহর থেকে ৮৬ কিলোমিটার ও চকরিয়া হতে আলীকদম সড়কে ২৭ কিলোমিটার দূরে লামা উপজেলায় অবস্থিত এই মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্র। এখানে সুউচ্চ সবুজ পাহাড়-বনানী ঘেরা আঁকাবাঁকা পথ, আকাশ, মেঘগুলো পর্যটনকেন্দ্রটিকে দিয়েছে নয়নাভিরাম নৈসর্গিক সৌন্দর্য। নির্মল আনন্দের রাজ্যে নগরের যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির বুক চিরে আকাশছোঁয়া চিরসবুজ এক শান্তিধাম। 
মিরিঞ্জা ভ্যালির আকাশ-মেঘ ভ্রমণপিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। এখানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো, পাহাড় আর মেঘের খেলা উপভোগ করা। অবারিত সবুজ প্রান্তর, যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলা। এখানে মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের যেন আজন্ম বন্ধুত্ব। প্রকৃতি এলাকাটিকে সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। এখানে ইচ্ছে করলেই ছোঁয়া যায় মেঘ, আকাশকেও মনে হয় বেশ কাছে। রাতে শহরের আলোতে যেন সৌন্দর্য আরও বৈচিত্র্যময়।
মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্রটি পাহাড়ে দুই একর জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে। লামা শহর থেকে আঁকাবাঁকা সড়ক বেয়ে যেতে হয় এই কেন্দ্রটিতে। লামা শহর থেকে মিরিঞ্জা ভ্যালির দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। পাহাড়ের উঁচুতে পরিবেশবান্ধব ইকো রিসোর্ট হিসেবে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের দুটি মাচাং ঘর। এ ছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্থে রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে কয়েকটি তাঁবুঘর। এসবের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে রাতে চিকেন ফ্রাই, বিরিয়ানিসহ নানা পদের খাবার। কেন্দ্রটির চারপাশে নিরাপত্তা রয়েছে বেশ মোটামুটি। ২০২১ সালে গড়ে তোলার পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়েছে ২০২২ সালে।

 

যেভাবে যাবেন 
ট্রেনে: ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে  রাতে ১১টা ৩০ মিনিটে টুর্না ট্রেনে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে নামতে হবে। টিকিট পড়বে জনপ্রতি ৩৪৫ টাকা। সকাল ৫টা ৩০ মিনিটে বা ৬টার সময় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে নামতে হবে। তারপর অটোরিকশা করে নতুন ব্রিজে আসতে হবে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১৫ টাকা। নতুন ব্রিজ থেকে বাসে করে চকরিয়া আসতে হবে। বাস ভাড়া ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে আসা যাবে। সময় লাগবে মোটামুটি ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট থেকে ৩ ঘণ্টা। নামতে হবে চকরিয়া বাসস্ট্যান্ডে। চকরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে চান্দের গাড়িতে করে মুরুমপাড়া আসতে হবে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৮০ টাকা। এখান থেকে পাহাড়ে ২০ মিনিট ট্রেকিং করে এলেই মিরিঞ্জা ভ্যালি। 
বাসে: ঢাকা থেকে লামায় দুটি বাস ছাড়ে। শ্যামলী ও হানিফ যেকোনো বাসে উঠে গেলেই হলো। মিরিঞ্জাপাড়ায় নেমে গেলে মেইন রোড থেকে মাত্র ১০ মিনিট হাঁটার রাস্তা। তার পরই পেয়ে যাবেন মিরিঞ্জা ভ্যালি।
অথবা কক্সবাজারের যেকোনো বাসে উঠে চকরিয়া নেমে লামার চান্দের গাড়িতে উঠে মিরিঞ্জাপাড়ায় নেমে যাবেন। 

ছবি সংগৃহীত


কোথায় থাকবেন
মিরিঞ্জা ভ্যালিতে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকতে পারেন বা জুমঘরে থাকতে পারবেন। জুমঘরে শুধু ভাড়া ২০০০ টাকা। খাবার আলাদা নিজেদের ব্যবস্থা করে নিতে হবে। যদি ১০ জন বা তারও বেশি গিয়ে থাকেন, তা হলে জুমঘর নিতে পারেন। অথবা দুপুরের খাবার, সন্ধ্যায় নাশতা, রাতে বারবিকিউ, পরদিন সকালের নাশতা, পানি, তাঁবুতে রাতে থাকা- সব মিলিয়ে একটা প্যাকেজ নিতে পারেন, জনপ্রতি ৮৫০ টাকা।

 

ভ্রমণে কী কী দেখবেন
পাহাড়ি রাস্তা বা ঝিরিপথ পেরিয়ে চূড়ায় আরোহণের পর দূরে দেখা যায় মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এবং সাঙ্গু নদীসহ বিশাল পাহাড়জুড়ে বিস্তীর্ণ সবুজ বনভূমি। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য এই চূড়া উপযুক্ত একটি স্থান। এখান থেকে দিগন্তরেখায় কক্সবাজার অংশের বঙ্গোপসাগরের উত্তাল জলরাশি চোখে পড়ে। সেই সঙ্গে দৃশ্যমান হয় লাইট হাউস, যার ক্ষীণ আলোয় সরু রেখায় আলোকিত হয়ে ওঠে পৃথিবীর দীর্ঘতম সৈকত।
মুগ্ধতার পরিসর আরও একটু বাড়িয়ে দিয়ে কখনো কখনো সেই রেখায় ভেসে ওঠে একটি-দুটি জাহাজ। পাহাড়ের দক্ষিণ প্রান্তের টাইটানিক জাহাজের কাঠামোটিও এখানকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। পর্যটনকেন্দ্রের কাছেই উপজেলা শহরে ম্রো, ত্রিপুরা ও মারমাসহ ১১ জনগোষ্ঠীর বসবাস।

 

ভ্রমণের সেরা সময়
বর্ষাকালের শেষ থেকে শরৎকাল পর্যন্ত প্রায় সারা দিনই পরিষ্কার আকাশে শুভ্র মেঘের খেলা দেখা যায়। পাহাড়ের চূড়া থেকে এই দৃশ্য দেখার অনুভূতির কোনো বিকল্প হয় না। তবে এ সময়টাতে পাহাড়ি পথ বেশ পিচ্ছিল থাকে। ট্রেকিং পথ খুব একটা দুর্গম না হলেও উষ্ণ মৌসুমের ফলে পুরো যাত্রাটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই এখানে আসার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে শীতের সময়- তথা নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস। এ সময় পাহাড়ের ওপরে মেঘ-কুয়াশার খেলা ভালোভাবে দেখা যায়।

 

ভ্রমণকালীন সতর্কতা
এই ভ্যালিতে ঘুরতে গেলে অবশ্যই দল বেঁধে যাওয়া উত্তম। সার্বিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে কিছু জায়গায় চেকিং হতে পারে। তাই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, পেশাগত বা ইউনিভার্সিটির পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখা উচিত।
পাহাড়ের ওপর নির্বিঘ্নে চলাফেরা করার জন্য ভালো গ্রিপসহ মজবুত জুতা পরে যাওয়া জরুরি। খাবার পানি, শুকনো খাবার, টর্চলাইট ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সঙ্গে নিতে হবে। তবে খেয়াল রাখা উচিত যে, কাঁধের ব্যাগ যেন খুব বেশি ভারী হয়ে না যায়।
নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন ও হাসপাতালের যোগাযোগের নম্বর সংগ্রহে রাখতে হবে। পরিবেশ ময়লা বা দূষিত করা এড়িয়ে চলতে হবে। সঙ্গে খাবার নিয়ে গেলে সমস্ত উচ্ছিষ্ট এবং মোড়ক যেখানে-সেখানে না ফেলে যথাস্থানে ফেলা উচিত।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, কোনো অবস্থাতেই যেন তাদের সংস্কৃতির প্রতি কোনো অবহেলা বা অশ্রদ্ধার মনোভাব প্রদর্শন না হয়।

 

পরিশিষ্ট
বান্দরবানের মিরিঞ্জা ভ্যালির মেঘ ও পাহাড়ের নিবিড় আলিঙ্গন ভ্রমণপিপাসুদের বারবার মনে করিয়ে দেয় সাজেকের কথা। এখানকার জুমঘরগুলোর যেকোনোটিতে এক রাত কাটানো সারা জীবনের জন্য অবিস্মরণীয় এক স্মৃতি হয়ে থাকবে। সবুজ বনে আচ্ছাদিত সুবিশাল পাহাড় আর সীমান্তরেখায় সমুদ্রের উত্তাল জলরাশি ট্রেকিংয়ের ক্লান্তিকে নিমেষে ভুলিয়ে দেয়। এই অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে এবং সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য বড় দল নিয়ে ভ্রমণ করা আবশ্যক। সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের যোগাযোগের নাম্বার সংগ্রহে রাখা জরুরি।

অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা সেন্টমার্টিন

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:১৬ পিএম
অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা সেন্টমার্টিন

নীল জলরাশি, সাদা বালুর সৈকত আর নির্জন প্রকৃতির মায়াবী স্বপ্নের এক দ্বীপ, যার নাম সেন্টমার্টিন। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমারের উপকূল থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদের মোহনায় এ দ্বীপের অবস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ নারিকেল গাছের সারি, যে কারণে অনেকেই একে এখনো ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ বলে ডাকেন। অনেকে ডাকেন ‘দারুচিনি দ্বীপ’ বলে। 
সম্প্রতি স্বপ্নের দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল আমার। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৮০ জনের একটি দল নিয়ে আমরা যাত্রা করি এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে। আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২৪ জানুয়ারি রাত ১১টায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে রওনা দিয়ে সকালে পৌঁছাই কক্সবাজারে। যেহেতু এটি ছিল একটি ফিল্ড ট্রিপের অংশ, তাই প্রথম দিন আমরা মহেশখালী ভ্রমণ করি এবং এর পরিবেশগত বৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করি। পরদিন ২৬ জানুয়ারি ভোরে আমরা সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। প্রথমে পৌঁছাই নুনিয়াছড়া ঘাটে, সেখান থেকে পূর্বনির্ধারিত এজেন্সির জাহাজে চড়ে সেন্টমার্টিনের পথে রওনা দিই। 
দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে জাহাজে ওঠার ক্লান্তি থাকলেও, একবার জাহাজ ছেড়ে দিলে সেই ক্লান্তি মুহূর্তেই উড়ে যায়। চারপাশে শুধু নীল জলরাশি, হালকা ঠাণ্ডা বাতাসের স্পর্শ, আর ঢেউয়ের ছন্দময় সুর; সমুদ্রপথের এই যাত্রা যেন এক অন্যরকম অনুভূতি জাগায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায় দিগন্তজোড়া জলরাশি আর গাঙচিলের ওড়াউড়ি দেখতে দেখতে। পথিমধ্যে চোখে পড়ে ছোট-বড় অসংখ্য মাছ ধরার ট্রলার, যারা নীরবে প্রকৃতির সঙ্গে তাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টার দীর্ঘ জাহাজ ভ্রমণের পর দূর থেকে ধীরে ধীরে চোখে পড়ে স্বপ্নের সেন্টমার্টিন দ্বীপ, যার প্রথম ঝলকই মনের ভেতর এক অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করে। 
সেন্টমার্টিনে পৌঁছেই নির্ধারিত হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম নিই। সতেজ হয়ে দুপুরের খাবার শেষ করি। তার পরই ছুটে যাই সমুদ্রের পাড়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে। সোনালি আলোয় গোধূলির রঙে রঙিন হয়ে ওঠে সাগর, আর ঢেউয়ের গর্জনের সঙ্গে সূর্য অস্ত যাওয়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, যার সৌন্দর্য চোখে দেখার মাধ্যমেই বোঝা সম্ভব। 
২৭ জানুয়ারি, সকাল সকাল আমরা জেগে উঠলাম। দ্রুত নাশতা সেরে আমাদের টিম রওনা হলো সেন্টমার্টিনের অন্যতম আকর্ষণ ছেঁড়া দ্বীপের উদ্দেশে। সময় বাঁচানোর জন্য আমরা অটো ভাড়া করলাম, যদিও ভাড়ার পরিমাণ ছিল চরম মাত্রায় বেশি। মাটির রাস্তা ধরে এগিয়ে যাওয়ার পথে চোখে পড়ল সারি সারি তরমুজের খেত। খেতের পাশে ছোট টেবিল সাজিয়ে বসে আছেন স্থানীয় কৃষকরা। পর্যটকদের জন্য তাজা তরমুজ পরিবেশনের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এদিকে পর্যটকদের কেউ কেউ সাইকেল বা বাইক নিয়ে দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন নিজেদের মতো করে। ছেঁড়া দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছাতেই নজরে এল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের একটি সাইনবোর্ড। সেখানে স্পষ্টভাবে লেখা- ‘প্রতিবেশ সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত এলাকা, সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ’। সংরক্ষিত এলাকার সীমানার কাছাকাছি ঘুরে কিছু সময় কাটালাম। আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। কেয়া ফল হাতে নিয়ে কিছু ছবি তুললাম।
ফেরার পথে আমাদের দেখা হলো কিছু জেলের সঙ্গে। আড্ডা জমিয়ে শুনলাম তাদের জীবন-জীবিকার গল্প। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে তারা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। আগের মতো আর তেমন মাছ পাওয়া যায় না বলে আক্ষেপ করছিলেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের পরিবর্তিত প্রকৃতি তাদের পেশাকে ক্রমেই কঠিন করে তুলেছে। সেন্টমার্টিনের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে কৃষি, শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ ও মৎস্য পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু পর্যটনের বিকাশের ফলে বেশির ভাগ মানুষ এখন পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা ও কাজে যুক্ত হয়েছেন। সিজন শেষে তারা আবার আগের পেশায় ফিরলেও, পুরোপুরি কৃষির ওপর নির্ভরশীলদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে কৃষিজমিতে রিসোর্ট ও অন্যান্য পর্যটন অবকাঠামো গড়ে ওঠায় অনেক কৃষক তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। পর্যটনশিল্প যেমন স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে, তেমনি কৃষিনির্ভর মানুষের জন্য এটি একটি নতুন সংকট তৈরি করেছে।
পরের দিন আমাদের যাত্রা দারুচিনি দ্বীপ নামে পরিচিত একটি দ্বীপের উদ্দেশে। সেখানে যেতে হলে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা স্পিডবোটের সাহায্য নিতে হয়। যদিও জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ তার উপন্যাসে সেন্টমার্টিনকে ‘দারুচিনি দ্বীপ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের এই গন্তব্য ছিল ভিন্ন একটি দ্বীপ, যা মৃত প্রবাল বা কোরাল দিয়ে পরিপূর্ণ। সেন্টমার্টিনকে ‘প্রবাল দ্বীপ’ নামে ডাকা হয় এর সমুদ্রজুড়ে বিস্তৃত জীবন্ত প্রবাল প্রাচীরের কারণে। এক সময় এর নীলাভ পানির নিচে বিচিত্র রঙের প্রবালরাজি, নানা প্রজাতির মাছ এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের বাসস্থান ছিল, যা সাগরতলের এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত পর্যটন, প্লাস্টিক দূষণ এবং অনিয়ন্ত্রিত মাছ শিকার প্রবালগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলেছে। এক সময়ের উজ্জ্বল, জীবন্ত প্রবাল আজ ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে মৃতপ্রায়।
পরিশেষে, সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য একবার না দেখলে জীবনের অপূর্ণতা থেকেই যাবে। নীল জলরাশি, সাদা বালুর বিস্তীর্ণ সৈকত, সারি সারি নারিকেল গাছ, আর সমুদ্রতীরের কেয়া গাছ মিলে এ যেন প্রকৃতির এক মোহনীয় বিস্ময়। ঠাণ্ডা বাতাসে সমুদ্রের গর্জন হৃদয়ে এক অনন্য অনুভূতি জাগায়, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।


সেন্টমার্টিন কীভাবে যাবেন 
কক্সবাজার হয়ে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন জাহাজে চেপে। সেগুলো হলো- সরাসরি কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন। আরেকটা উপায় হলো- কক্সবাজার থেকে টেকনাফ। সেখান থেকে সেন্টমার্টিন। পারফেক্ট উপায় হচ্ছে সরাসরি টেকনাফ থেকে যাওয়াটা। চট্টগ্রাম টু টেকনাফ বাস পাবেন। টেকনাফের জেটিঘাটে নেমে শিপে উঠে যাবেন। শিপের ভাড়া ৬৫০ থেকে ১৮০০ টাকার আশপাশে হয়। যারা একটু অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় মানুষ, তারা টেকনাফে গিয়ে ট্রলারে করে যেতে পারেন। ট্রলার ভাড়া ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা হয়ে থাকে।

খাবার খরচ
লাঞ্চ-ডিনার খরচ ১৫০-২০০ টাকা হবে। প্রতিটা মাছ ১০০-২০০ এ রকম দামে পাবেন। দামাদামি করতে পারেন। যে দাম বলবে সেই দামে কিনবেন না। রেস্টুরেন্টগুলোতে মাছ সাজানো থাকে। ওখান থেকে পছন্দ করে অর্ডার দেবেন। ওরা রান্না করে আপনাদের দেবে। আবার প্যাকেজ সিস্টেম পাবেন। প্যাকেজে ভর্তা, ডাল, মাছ সবই থাকবে। মাছও আপনার পছন্দমতো হবে।

কোথায় থাকবেন
সেন্টমার্টিনে সস্তা এবং দামি দুই ধরনের হোটেলই পাবেন। এসব হোটেলে এক রাতের জন্য আপনাকে দিতে হবে ১২০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। 

কোথায় ঘুরবেন
সেন্টমার্টিন এত ছোট একটা দ্বীপ যে আপনি একদিন হাতে নিয়ে ঘুরতে বের হলে পুরো দ্বীপ ঘুরে ফেলতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাইসাইকেল নিয়ে ঘোরাই ভালো। ঘণ্টাপ্রতি ৩০-৬০ টাকায় এসব বাইসাইকেল পেয়ে যাবেন। এগুলোর কোয়ালিটি বা বিভিন্ন কারণে দামের তারতম্য হয়। 

লেখক: শিক্ষার্থী, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ

প্রকৃতির টানে বান্দরবানে

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ০১:১৭ পিএম
প্রকৃতির টানে বান্দরবানে
নীলগিরি

নয়নাভিরাম প্রকৃতি আর জীববৈচিত্র্য টানে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। আর জায়গাটি যদি হয় পাহাড়, ঝরনা, জলাধার এবং অরণ্যে ঘেরা বান্দরবান, তা হলে তো কথাই নেই। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বেরিয়ে পড়লাম বান্দরবান ভ্রমণের উদ্দেশে। টিমে আমি ছাড়াও ছিল তাইজুল, রাফিদ, ইয়ানাথ এবং সিফাত। সকাল ৮টার দিকে আমরা বান্দরবান শহরে পৌঁছালাম। প্রথমেই পরের দিন ঢাকা ফেরার টিকিট কাটলাম। তার পর বেরিয়ে পড়লাম হোটেল খুঁজতে। একটু খোঁজাখুঁজির পর আমাদের পছন্দমতো হোটেল পেয়ে গেলাম। 

দেবতাখুম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
হোটেলে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাশতা করে বেরিয়ে পড়লাম দেবতাখুমের উদ্দেশে। গাড়ি চলছে উঁচু-নিচু সরু পাহাড়ি পথ দিয়ে। যেখানেই চোখ যায় কেবল উঁচু-উঁচু পাহাড়। আমাদের গাড়ি যখন যাচ্ছিল, শিশুরা হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল। আমরাও তাদের দিকে হাত নাড়ালাম। দেখলাম পাহাড়িরা কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস।
গাড়ি এগিয়ে চলছে আর আমরা চারদিকের সবুজ প্রকৃতি দেখছি। পাহাড়ের গায়ে জন্মেছে আমগাছ, কলাগাছ, শালগাছ, বাঁশ আর নানা প্রজাতির বৃক্ষ। প্রায় দুই ঘণ্টার পথ পেরিয়ে ১২টার আগে আমরা চলে এলাম কচ্ছপতলিতে। সেখানে গাইড ঠিক করলাম। প্রত্যেকের এনআইডির দুই কপি করে জমা দিতে হলো। পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটার জন্য বাঁশের লাঠি নিলাম। আমরা পাঁচজন হওয়ায় আমাদের দলে আরও পাঁচজনকে যুক্ত করলাম। গাইডসহ আমরা মোট ১১ জনের একটি দল। দেবতাখুম ঘুরে এসে খাওয়ার জন্য স্থানীয় মারমা হোটেলে অগ্রিম অর্ডার করে গেলাম। হোটেলের ক্যাশ কাউন্টারে বসা মারমা মেয়ের শুদ্ধ বাংলা শুনে আমরা মুগ্ধ হলাম। বেলা বেশি হওয়ায় সেখান থেকে দেবতাখুমের উদ্দেশে আমরা চান্দের গাড়ি নিলাম। ১০ মিনিট পর গাড়ি থেকে নামলাম। এর পর প্রায় ৩০ মিনিট উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ পেরিয়ে চলে এলাম দেবতাখুমে। বেলা তখন দুপুর ২টা। প্রথমে একটা ছোট্ট নৌকায় আমাদের পার করা হলো। গাইড সিরিয়াল নিলেন। ভেলা দিয়ে খুমের ভেতরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। নৌকার সিরিয়াল আগে পাওয়া যায়। কিন্তু অধিকাংশ ভ্রমণকারীই ভেলায় করে খুম ঘুরতে চান। পর্যটকদের তুলনায় ভেলার সংখ্যা কম হওয়ায় সিরিয়াল পেতে দীর্ঘ সময় লাগল। যখন পৌঁছালাম তখন সিরিয়াল ছিল ৪২। আমাদের সিরিয়াল পড়ল ৯১। পাথরের ওপর বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কেউ কেউ পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে লাগল। 
দুই পাশে বিশাল উঁচু পাহাড়। মাটি নেই, পাথর। পাথরের ফাঁকে ফাঁকেই গাছ জন্মেছে। দেখছিলাম আর ভাবছিলাম- এসব পাহাড় কীভাবে তৈরি হলো? এদিকে ভেলার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বেশ বিরক্ত লাগছিল। মনে হচ্ছিল এত কষ্ট করে আসা যৌক্তিক কি না। দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমরা ভেলার সিরিয়াল পেলাম। রাফিদ আর আমি একই ভেলায় চড়লাম। বাঁশ দিয়ে পানি বেয়ে বেয়ে ভেতরে যাচ্ছি। খুমের ভেতরে ঢুকতেই আমাদের শরীর যেন হিমশীতল হয়ে উঠল। দুই পাশে খাড়া পাহাড়ের মাঝখানে স্বচ্ছ পানির জলাধার। এটাকেই খুম বলে। মাঝপথে বড় পাথরের কারণে সেখানে পানি কম। একজন লোক দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন যাতে কেউ পাথরের ওপর নামতে না পারে। এর একটু সামনে যেতেই দেখলাম পথ আরও সরু হয়ে গেছে। পথ সরু হওয়ায় সেখানে অনেকে ভেলা নিয়ে অপেক্ষা করছে। এর পর সরু পথ পেরিয়ে আরও সামনে গেলাম। 
খুমের ভেতরে ঠাণ্ডা আর ভূতুরে পরিবেশ। যত ভেতরে যাই ততই মুগ্ধ হই। শেষ প্রান্তে গিয়ে পাথরের ওপর নামতে চাইলাম কিন্তু সেখানেও একজন লোক বসে আছেন। আমরা নামতে চাইলে তিনি বারণ করলেন। কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করলাম আর প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগলাম। ঠাণ্ডা পানিতে পা ভেজালাম। কিছুক্ষণ থাকার পর আমরা ধীরে ধীরে ফিরতে লাগলাম। আমরাই সবশেষে খুম থেকে ডাঙ্গায় উঠলাম। সুয্যিমামা ততক্ষণে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকিয়েছে। পশ্চিম আকাশে একটিমাত্র তারা জ্বলজ্বল করছে। 
              
চিম্বুক পাহাড় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
বেলা সাড়ে ১১টায় হোটেল থেকে বের হলাম শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড় এবং নীলগিরি যাওয়ার জন্য। ৩০০০ টাকায় একটি মাহিন্দ্রা ঠিক করলাম। শুরু হলো ভ্রমণ। যেতে যেতে রাস্তার দুই পাশের পাহাড় দেখলাম। দেখলাম পাহাড়ি নারীরা কাঁধে বয়ে কী যেন নিয়ে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর শৈলপ্রপাত ঝরনায় গাড়ি থামল। 
সেখানে কিছুক্ষণ থেকে চলে এলাম চিম্বুক পাহাড়ে। টিকিট কেটে আমরা পাহাড়ের চূড়ায় গেলাম। সেখানে পর্যটকদের বসার ব্যবস্থা আছে। আছে থাকা ও খাওয়ার হোটেলও। যখন চিম্বুক পাহাড়ে উঠলাম, তখন আমরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ ফুট উঁচুতে। দূরে দেখলাম পাহাড়। চারপাশের চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য মনকে প্রশান্ত করল। সেখানে পাথরের চেয়ার ও টেবিলে বসে বন্ধুরা মিলে মজা করলাম। তার পর ফিরে এলাম গাড়িতে। 

নীলগিরি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
আবার চলতে শুরু করল আমাদের গাড়ি। শেষ গন্তব্য নীলগিরি। গাড়ি এগিয়ে চলছে আর আমরা দুই দিকের পাহাড় দেখে বিস্মিত হচ্ছি। নিচের দিকে যখন তাকাই তখন ভয় করে। গাড়ি যখন নীলগিরি গিয়ে থামল, তখন বিকেল ৫টা বাজে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তখন আমরা ২২০০ ফুট উঁচুতে। শীতল বাতাস শরীর, মন ঠাণ্ডা করে দিচ্ছে। চারপাশে হালকা হালকা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আমরা মেঘের ওপরে আর মেঘ আমাদের নিচ দিয়ে যাচ্ছে। এজন্যই বুঝি নীলগিরিকে বাংলার দার্জিলিং বলা হয়। 
দূরে সবুজ পাহাড় যেন মিশে গেছে আকাশের সঙ্গে। চারপাশের হালকা মেঘ আর দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ দেখে মুগ্ধ হলাম। সূর্য তখন অস্ত যাচ্ছে। সিফাত, রাফিদ আর তাইজুল সূর্য খাচ্ছে আর আমি ওদের সূর্য খাওয়ার ছবি তুলছি। ভাবলাম আমিও সূর্য খাওয়ার একটা ছবি তুলি। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই সুয্যিমামা কোথায় যেন চলে গেল- তার আর দেখা পেলাম না! এত তাড়াতাড়ি সূর্য অস্ত যায়, আগে দেখিনি। নীলগিরিতে রিসোর্টের পর্যটক বাদে সবাইকে ৬টার মধ্যে চলে আসতে হয়। তাই এবার ফেরার পালা। আমরা গাড়িতে উঠলে বান্দরবান শহরের দিকে চলতে শুরু করল। 

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন, এস আলম, হানিফ, ইউনিক, শ্যামলী ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি ভাড়া নন-এসি ৯০০ টাকা ও এসি ১৫০০-১৮০০ টাকা। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সেখান থেকে বাসে বান্দরবান যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে প্রতিদিনই পর্যটক এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, সুবর্ণ, মহানগর ইত্যাদি ট্রেন চট্টগ্রাম যায়। শ্রেণিভেদে ট্রেনের টিকিটের মূল্য ৪০৫-১৪০০ টাকা পর্যন্ত।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাসস্টেশন থেকে বান্দরবানে যাওয়া যায়। পূর্বাণী, পূবালী নামের বাস বান্দরবান যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা ভাড়া লাগে।

কোথায় থাকবেন
বান্দরবানে থাকার জন্য অনেক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল প্লাজা, হোটেল হিল ভিউ, রিভার ভিউ, পর্যটন, নাইট হ্যাভেন, হোটেল স্কাই ব্লু ইত্যাদি। এসব হোটেলে ১৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে রুম ভাড়া পাবেন। যেখানে ৪/৫ জন এক রুমে থাকতে পারবেন।

খাওয়া-দাওয়া
দেবতাখুম যাওয়ার পথে কচ্ছপতলিতে খাবার অর্ডার করে যেতে পারেন। কারণ খুম ভ্রমণ করে এসে হয়তো আপনি খাবার পাবেন না বা অনেক দেরি হবে। কী কী খাবেন, কতজন খাবেন তা আগে থেকে বলে গেলে তারা আপনার জন্য রান্না করে রাখবে। ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যেই আপনি খেতে পারবেন। আর শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরির পথে যখন যাবেন, তখন সঙ্গে করে শুকনো খাবার নিয়ে যেতে পারেন। তবে সেখানেও খাবারের ব্যবস্থা আছে।

সতর্কতা
দেবতাখুমে যেতে হলে অবশ্যই দুপুর ১২টার মধ্যে কচ্ছপতলিতে থাকতে হবে। কারণ ১২টার পর আর্মি দেবতাখুমে যাওয়ার অনুমতি দেয় না। আর বিকেল ৪টার পর দেবতাখুমে কোনো পর্যটক থাকেন না। এ ছাড়া শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি এই পথে বিকেল ৪টার পর আর কোনো গাড়ি যায় না। নীলগিরিতে রিসোর্টে যদি না থাকেন, তা হলে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ফিরে আসতে হবে। পাহাড়ি এসব 
উঁচু-নিচু রাস্তা বৃষ্টির দিনে বিপজ্জনক। তাই এসব বিষয়ে সতর্ক থাকুন।

প্রয়োজনীয় ভ্রমণ পরামর্শ
পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথে হাঁটতে হাঁটতে ডিহাইড্রেট (পানিশূন্যতা) হয়ে যেতে পারেন। তাই এসব পাহাড়ি পথে ভ্রমণের সময় অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি সঙ্গে নেবেন। সঙ্গে শুকনো খাবার নিয়ে যেতে পারেন। দেবতাখুম যেতে হলে গাইডকে এক হাজার টাকা দিতে হয়। একজন গাইডের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১০ জন যেতে পারবেন। তাই লোক বেশি হলে খরচ কমবে। গাইড ঠিক হয়ে গেলে ৫০ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। এর পর আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ২ কপি জমা দিতে হবে। তাই সঙ্গে করে এনআইডির ফটোকপি নিয়ে নিবেন। 
নীলগিরি যেতে আর্মির চেকপোস্ট আপনার এনআইডি দেখতে চাইবে। এসব স্থান ভ্রমণের সময় মোবাইলে পর্যাপ্ত চার্জ দিয়ে নিয়ে যান। যদিও সব জায়গায় আপনি নেটওয়ার্ক পাবেন না। ট্রেকিংয়ের জন্য বুট, প্লাস্টিক বা রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন। দেবতাখুমে বাঁশের ভেলার সিরিয়াল আগে পেতে হলে আগে যেতে হবে। ভেলা বা নৌকা যেটাতেই চড়েন না কেন, অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরে যাবেন। পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন। অনুমতি না নিয়ে কারও ছবি তুলবেন না।

এক দিনে সিলেট ভ্রমণ করতে চাইলে

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম
এক দিনে সিলেট ভ্রমণ করতে চাইলে
পিয়াইন নদী জাফলং

সিলেটের কথা মনে পড়লেই সবার আগে আকর্ষণীয় সব পর্যটন স্পটের কথা আসে। পাথুরে নদীর স্বচ্ছ পানি, ঝরনা, জলপ্রপাত, উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড় আর চা বাগান মানেই সিলেট। বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতি সিলেটকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পূর্ণতা দিয়েছে। এসব সুন্দর স্থান দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে! নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিচরণক্ষেত্র সিলেটে রয়েছে বেড়ানোর অনন্য সব স্থান। আর সে কারণেই সিলেটকে নিয়ে ভ্রমণপিপাসুদের কৌতূহলের অন্ত নেই। সিলেটের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিছনাকান্দি, পান্থুমাই ঝরনা, রাতারগুল, লালাখাল, জাফলং, ভোলাগঞ্জ, বিভিন্ন নদীসহ নজরকাড়া সব স্পট। তবে এক দিনের সিলেট ভ্রমণে আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিলে স্বল্প সময়ে অনেক বেশি পর্যটন স্পট ভ্রমণ করতে পারবেন। শুরুটা করতে পারেন রাতারগুল দিয়ে।

রাতারগুল
রাতে ঢাকা থেকে বাসে বা মাইক্রো রিজার্ভ নিয়ে সিলেট এসে নাশতা করে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হবে রাতারগুলের উদ্দেশে। সিলেটের সুন্দরবনখ্যাত রাতারগুলের অবস্থান জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায়। সিলেট শহর থেকে রাতারগুল পৌঁছাতে ২২ কিলোমিটারের দূরত্বে সময় লাগবে প্রায় ৪৫ মিনিটের মতো। বর্ষা মৌসুমে পানিতে টইটম্বুর থাকলেও শুকনো মৌসুমে এখানে পানি কম থাকে। মিঠাপানির জলারবনখ্যাত এই বন স্থানীয় ভাষায় রাতা গাছ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। বর্ষার সময় হিজল-করচের রাতারগুল অসম্ভব মোহনীয় লাগে। অন্য সময় আসলে এত সুন্দর নাও লাগতে পারে! বর্ষার সময় সরাসরি ঘাট থেকে ডিঙি নৌকায় ওঠা গেলেও শুকনো মৌসুমে পানি কম থাকায় বনের কিছুটা ভেতরে গিয়ে নৌকা ভাড়া নিতে হয়। বর্ষা মৌসুমে পানির গভীরতা ২০ ফুটের ওপরে হলেও শুকনো মৌসুমে তা ৮ ফুটের কাছাকাছি চলে আসে।

লালাখাল ও সারি নদ
রাতারগুল থেকে তামাবিল সড়ক হয়ে লালাখালের দূরত্ব প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। সময় লাগবে এক ঘণ্টার একটু বেশি। লালাখালের অবস্থান জৈন্তাপুর উপজেলায়। লালাখাল মানেই চা বাগান, সুউচ্চ সবুজ পাহাড়, হরেক রকমের বৃক্ষরাজি আর সারি নদের স্বচ্ছ নীল পানি। অনেকে সারি নদের নীল পানিতে মুগ্ধ হয়ে সারি নদকে ‘বাংলার নীল নদ’ বলে থাকে। মূলত সারি নদই লালাখাল নামে পরিচিত। শীতকালই লালাখাল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। চারপাশে সবুজ আর নীল পানির মায়ায় হারিয়ে যেতে চাইলে লালাখাল ভ্রমণ করতে হবে! চাইলে তামাবিল নেমে সারিঘাট থেকে নৌকা নিয়ে নৌ-ভ্রমণ উপভোগ করতে করতে লালাখাল যাওয়া যাবে। 

ডিবির হাওরের শাপলা বিল
লালাখাল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান ডিবির হাওরের শাপলা বিল। যেতে সময় লাগবে ৩০ মিনিটেরও কম। ডিবি, ইয়াম ও হরফকাটা- এই তিনটি বিল নিয়েই ডিবির হাওর। সুউচ্চ পাহাড় আর হাওরজুড়ে লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। হাওরে ডিঙি নৌকা নিয়ে ঘুরারও ব্যবস্থা আছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিলে শাপলা থাকে। 

শ্রীপুর লেক, চা বাগান, খাসিয়া পল্লি ও রাংপানি নদ

ডিবির হাওরকে বিদায় জানিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যাবে জৈন্তাপুর উপজেলার আকর্ষণীয় স্পট শ্রীপুর লেক, চা বাগান, খাসিয়া পল্লি ও রাংপানি নদে। দুই পাশের চা-বাগান ও খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে প্রকৃতিপ্রেমীরা মুগ্ধ হবেই। শ্রীপুর লেকের বিপরীত পাশেই রয়েছে পাথুরে নদ রাংপানি। নদের স্বচ্ছ পানিতে দাঁড়িয়ে চারপাশের সবুজ পাহাড় দেখার মজাই আলাদা। সময় থাকলে পাশের সুপারি বাগানও দেখা যেতে পারে।

জাফলং, ঝুলন্ত ডাইকি ব্রিজ, সংগ্রামপুঞ্জি টিলা, পিয়াইন নদী
শ্রীপুর লেক থেকে জাফলংয়ে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩৫ মিনিটের মতো। জাফলংয়ের অবস্থান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। সিলেটে যাওয়া পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে জাফলং। জাফলং মূলত সবুজ পাহাড়ের পাদদেশ, ঝুলন্ত ডাইকি ব্রিজ ও পিয়াইন নদীর জন্য বিখ্যাত। জাফলংকে বলা হয় প্রকৃতির কন্যা। জাফলংয়ে দাঁড়িয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশ ও শিলংয়ের প্রবেশদ্বারখ্যাত ডাইকি শহর দেখা যায়। জাফলংয়ে গাড়ি যেখানে থামবে তথা উঁচু স্থান থেকে পিয়াইন নদী, পাথরের সৌন্দর্য দেখতে হলে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে নিচে যেতে হবে। পাথরের ওপর লম্বা রশি টাঙিয়ে ভাগ করা হয়েছে দুদেশের প্রান্ত ভাগ। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুদেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষ যে যার মতো করে প্রকৃতির সৃষ্টিকে উপভোগ করছে। জাফলংয়ে সীমান্ত রেখায় দুই দেশের পতাকা পত পত করে উড়ছে। পাহারা দিচ্ছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। জিরো পয়েন্ট থেকে দেখা যাবে ঝুলন্ত ডাইকি ব্রিজ। এর নিচ দিয়ে বয়ে গেছে পিয়াইন নদী। শুকনো মৌসুমে নৌকা না নিয়েই স্বচ্ছ পানি ও পাথরের ওপর হেঁটে আনন্দ উপভোগ করা যাবে। পাশেই রয়েছে নজরকাড়া সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা। বলে রাখা ভালো, শীত তথা শুষ্ক মৌসুমে ঝরনায় পানি থাকে না। জাফলংয়ের আরেক আকর্ষণীয় বিষয় হলো সেখানকার আদিবাসীদের জীবনধারা। পিয়াইন নদী পার হলেই দেখা যাবে খাসিয়াপুঞ্জি গ্রাম।

যেভাবে আসবেন
ঢাকা থেকে বা দেশের যেকোনো স্থান থেকে রাতে রওনা হয়ে সকালে সিলেটে নেমে ফ্রেশ হয়ে নাশতা করে বেরিয়ে পড়তে হবে। সারা দিনের জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিলে ১৫০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাবে। এ ছাড়া সংখ্যায় বেশি থাকলে লেগুনা নিলে সুবিধা হবে। তবে ঢাকা থেকে একটা মাইক্রো রিজার্ভ নিয়ে আসলে বেশি ভালো হয়। এক দিনের দলগতভাবে ভ্রমণ করলে জনপ্রতি খরচ অনেক কম পড়বে। ভ্রমণের শেষ স্থান জাফলং হলে ওখানে পৌঁছে লাঞ্চ করে নেওয়া যেতে পারে। যেহেতু এক দিনের ভ্রমণ সেহেতু স্পটে কতক্ষণ অবস্থান করবেন সেটা আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। শুক্র-শনিবার বাদে অন্যদিন ভ্রমণ করলে ভিড় এড়ানো যাবে। সারা দিন পরিকল্পনামতো সময় ধরে ভ্রমণ করে সন্ধ্যায় ফিরতি পথের বাস বা ট্রেন ধরতে হবে।

লেখক: জলবায়ু ও পরিবেশকর্মী, সদস্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

নিঝুম দ্বীপে হোটেলে সিট না পেয়ে পর্যটকরা থাকছেন বাসা-বাড়িতে

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৫০ পিএম
আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম
নিঝুম দ্বীপে হোটেলে সিট না পেয়ে পর্যটকরা থাকছেন বাসা-বাড়িতে
ছবি: খবরের কাগজ

নোয়াখালী জেলার বিছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার প্রাকৃতিক সোন্দর্যের লীলাভূমি নিঝুম দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের বুকে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা এই চরটি হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। চর ওসমান, বাউল্লারচর, কামলার চর, ও মৌলভীর চর নিয়ে পুরো নিঝুম দ্বীপ।

হরিণের অবয়ারণ্য, বিশাল বিচ, কেউড়া বাগান, সবুজে ঘেরা এই দ্বীপে সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে পর্যটকদের। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে মানুষ কোলাহলমুক্ত এই সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসেন দ্বীপে। এতে করে এখানে গড়ে উঠেছে হোটেল-মোটেল জোন। গত কয়েক বছরে এখানে দৃশ্যমান উন্নয়ন না হলেও মানুষের থাকার মতো আধুনিক অনেক স্থাপনা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় পর্যটকদের চাপ বেড়েছে নোয়াখালী হাতিয়ার পর্যটন সম্ভাবনাময় এই দ্বীপে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিঝুম দ্বীপের মূল কেন্দ্রবিন্দু নামার বাজারে পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতি। এই বাজারে ২০টি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। তাতে শতভাগ বুকিং থাকায় অনেক পর্যটককে দেখা গেছে তাবুতে রাত যাপন করতে। আবার কেউ কেউ তাবুতেও থাকার সুযোগ পায়নি। তারা বাজারের পাশে বিভিন্ন বাসা-বাড়ির সামনের অংশে গাদাগাদি করে রাত যাপন করছেন। 

প্রায় ১৪ হাজার ৫০ একরের এই দ্বীপটি সাগরের মাঝখানে জেগে ওঠে ১৯৪০ সালে। তারও প্রায় এক দশক পর গড়ে ওঠে জনবসতি। দ্বীপটিকে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল। ২০১৩ সালে হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র একটি ইউনিয়নের মর্যাদা পায় নিঝুম দ্বীপ।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে দেখা যায়, ফরিদপুর ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত ৭০ জনের একটি টিম এসেছে নিঝুম দ্বীপে। তাদের থাকার জায়গা হয়েছে সোহেল-রিসর্টে। কিন্তু ৭০ জনের সবার থাকার ব্যবস্থা এই হোটেলে ছিল না। অন্য কোনো হোটেলে সিটও খালি নেই। পরে হোটেলের মালিক বাজারের পাশে তার বাসায় নারী-পুরুষসহ ১০-১২ জনকে থাকতে দেন। 

তাদের একজন কামরুল হাসান খবরের কাগজকে জানান, হোটেলে সিট খালি না থাকায় মহাবিপদের মধ্যে পড়েছেন। বিশেষ করে তাদের সঙ্গে থাকা নারী সহকর্মীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। তবে, হোটেলের মালিকের সহযোগিতায় তাদের রাত ভালোই কেটেছে।

একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা চার বন্ধু একই সমস্যার পড়েছেন। তাদের একজন আব্দুল আলিম জানান, গত দুই দিন ধরে তারা নিঝুম দ্বীপে অবস্থান করছেন। প্রথমদিন তারা হোটেলে থাকলেও দ্বিতীয় দিন বুকিং না থাকায় হোটেল ছেড়ে দিতে হয়েছে। অন্য কোনো হোটেলে সিট পায়নি তারা। ভাড়া দেওয়া তাবুতেও থাকার ব্যবস্থা করতে পারেননি। পরে হোটেলের ম্যানেজারের সহযোগিতায় পাশের একটি বাড়িতে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে রাত যাপন করেন। তাতে খুবই ভালোভাবে রাত কেটেছে তাদের।

তিনি আরও জানান, প্রচুর লোক এসেছেন নিঝুম দ্বীপে। যে পরিমান হোটেলে থাকার ব্যবস্থা আছে তার দ্বিগুন মানুষ নিঝুম দ্বীপে অবস্থান করছেন। তাদের মতো অনেকের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে মানুষের বাসা-বাড়িতে।

নিঝুম দ্বীপ সি-প্লাস রিসর্টের মালিক মামুন হোসেন খবরের কাগজকে জানান, নিঝুম দ্বীপে নামার বাজারের আশেপাশে ছোট-বড় ২০টি হোটেল রয়েছে। এতে তিন শতাধিক লোক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আবার অনেকে তাবু ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তাতেও শতাধিক লোক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু নিঝুম দ্বীপে বর্তমানে ছয়-সাত শ লোক অবস্থান করছেন। তাতে থাকার সংকট দেখা দিয়েছে। গত রাতে নামার বাজারের পাশে সবকটি বাড়িতে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয়রা নিজেদের বসবাসের ঘর ছেড়ে দিয়েছেন পর্যটকদের জন্য। সবাই সহযোগিতা করছেন। কোথাও নিরাপত্তার সামান্যটুকু সমস্যা হয়নি।

ঢাকা থেকে আসা আবদুল রহমান খবরের কাগজকে জানান, এখানে রেস্টোরেন্ট অনেক কম। সকালে ও রাতে রেস্টোরেন্টে লাইন ধরতে হয়েছে। 

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা খবরের কাগজকে বলেন, 'একজন ভিআইপির প্রটোকল দেওয়ার জন্য তিনি নিঝুম দ্বীপে অবস্থান করছেন। ভোরে এসে দেখেন এখানে কোনো হোটেলে সিট খালি নেই। একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তাকে বনবিভাগের অফিসে অবস্থান করতে হয়েছে। প্রচুর পর্যটক এখানে অবস্থান করছেন। অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। নিরাপত্তায় কারও কোনো সমস্যা হয়নি।'

হানিফ সাকিব/জোবাইদা/অমিয়/

কুঠিবাড়ির পরতে পরতে বিশ্বকবির ছোঁয়া

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:১৫ পিএম
আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:১৭ পিএম
কুঠিবাড়ির পরতে পরতে বিশ্বকবির ছোঁয়া
কুঠিবাড়িতে বসেই কবি গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন

সাহিত্য ও সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে পরিচিত কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রাম শিলাইদহ। প্রমত্তা পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা গ্রামটির পূর্ব নাম খোরশেদপুর। এখানেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ির অবস্থান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনন্য সাহিত্যকর্ম সৃষ্টিতে কুঠিবাড়ির রয়েছে বিশেষ অবদান।

মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আবৃত এই কুঠিবাড়ি এবং পদ্মা নদী ও পদ্মার বুক থেকে বেরিয়ে আসা গড়াই নদীর বুকে রচিত হয়েছে বিশ্বনন্দিত কবির সাহিত্যকর্মের শ্রেষ্ঠাংশ। স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহকে তার ‘যৌবন ও পৌঢ় বয়সের সাহিত্যরস সাধনার তীর্থস্থান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। শিলাইদহে বসবাস ও জমিদারি পরিচালনাকালে তিনি তার বিপুল সৃষ্টির দ্বারা বাংলা সাহিত্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে কুষ্টিয়া অঞ্চলের জমিদারি পান। পরে ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে আসেন। বন্যার সময় পদ্মার ভাঙনে পুরোনো কুঠিবাড়ির নিকটবর্তী এলাকা পর্যন্ত বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে এই পুরোনো কুঠিবাড়িটি ভেঙে ফেলা হয় এবং পুরোনো ভবনসামগ্রী দিয়েই নতুন কুঠিবাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ১৯০১ সাল পর্যন্ত তিনি অনিয়মিত বিরতিতে এখানে জমিদারি পরিচালনা করেন। এই কুঠিবাড়ি থেকে তিনি নওগাঁর পতিসর ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের জমিদারি দেখাশোনা করতেন। রবীন্দ্রনাথের অবস্থানকালে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু (আচার্য), দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, লোকেন্দ্রনাথ পালিতসহ তৎকালীন বঙ্গের অনেক খ্যাতনামা বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী শিলাইদহে আসেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে এসে জমিদারির পাশাপাশি মশগুল ছিলেন কাব্য ও সাহিত্য সাধনায়। এই কুঠিবাড়ি ও পদ্মার বুকেই রচিত হয় রবীন্দ্র-সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফসল সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়ার বেশির ভাগ কবিতাসহ অনেক গল্প, নাটক, উপন্যাস, পত্রাবলী ও গীতিমাল্য। এখানে বসেই কবি গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন। যা তাকে এনে দিয়েছে বিশ্বখ্যাতি এবং বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছে সুমহান উচ্চতায়। আর তিনি হয়েছেন বিশ্বকবি। কবি হিসেবেই ১৯১৩ সালে তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়, যা কবিগুরুর পর বাংলা সাহিত্যের আর কোনো কবি-সাহিত্যিকের ভাগ্যে জোটেনি!
১৯৫৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িটি গৌরবময় স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত আছে। ৩২ বিঘা জায়গা ঘিরে পৌনে চার বিঘা জমির ওপর ঢেউ আকৃতির বেষ্টনী প্রাচীর দিয়ে ঘেরা বাড়িটির দক্ষিণ দিকে আছে একটি আকর্ষণীয় প্রবেশ তোরণ। তিনতলা বাড়িটির নিচ ও দ্বিতীয় তলায় ১৬টি কক্ষেই কবি রবীন্দ্রনাথ, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, কৃষকবন্ধু রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ নানা বয়সের বিচিত্র ভঙ্গির রবীন্দ্রনাথের ছবি। বাল্যকাল থেকে মৃত্যুশয্যার ছবি পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে। তা ছাড়াও রয়েছে শিল্পকর্ম এবং তার ব্যবহার্য আসবাবপত্র। কবিগুরুর ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলোর মধ্যে আছে চঞ্চলা ও চপলা নামের দুটো স্পিডবোট, আট বেহারার পালকি, কাঠের চেয়ার, টি-টেবিল, সোফা সেট, ইজিচেয়ার, পালংক ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস।
মনোরম কুঠিবাড়িটিকে ঘিরে রয়েছে আম, কাঁঠাল ও অন্যান্য সবুজ বৃক্ষের সমারোহ। কুঠিবাড়ির পশ্চিম দিকে এগোলে দেখা মেলে শান বাঁধানো বকুলতলার পুকুর ঘাট। যেখানে বসে কবিগুরু লিখেছিলেন ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’ গানটি। পুকুর ধারে বসে এই গানটি গেয়ে কবিগুরুর সময়কার আবহ তৈরি করে আপনার ভ্রমণপিপাসু সত্তাকে দিতে পারবেন কবিগুরুর নিবিড় ছোঁয়া- যেন কুঠিবাড়ির পরতে পরতে বিশ্বকবির স্মৃতি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। ভ্রমণপিপাসু যে কেউই মুহূর্তের জন্য ১৯ শতকের শেষদিকে ফিরে যেতে বাধ্য!

যেভাবে যাবেন কুঠিবাড়ি
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস ও ট্রেনযোগে কুষ্টিয়া যাওয়া যায়। বাসে গেলে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নিউ এসবি সুপার ডিলাক্স, শ্যামলী, হানিফ বাসে কুষ্টিয়ার মজমপুর গেটে নেমে যেতে হবে। অন্যদিকে ট্রেনে যেতে চাইলে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা ও বেনাপোল এক্সপ্রেসে যেতে পারবেন। কুষ্টিয়া শহর থেকে অটোরিকশা, সিএনজি, ইজিবাইক ও অন্যান্য বাহনযোগে সহজে এবং কম খরচে কুঠিবাড়ি যাওয়া যায়।

টিকিটের মূল্য ও প্রবেশের সময়সূচি
গ্রীষ্মকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি জাদুঘর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর শীতকালে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে প্রতিদিন বেলা ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জাদুঘর সাময়িক বিরতিতে বন্ধ থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি জাদুঘরটি সপ্তাহের প্রতি রবিবার পূর্ণ দিন বন্ধ থাকে এবং সোমবার বেলা ২টা থেকে খোলা থাকে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি জাদুঘরের প্রবেশ টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রবেশ টিকিটের মূল্য ৫ টাকা। সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের ৫০ টাকা এবং অন্যান্য বিদেশি পর্যটকের জন্য টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন
কুষ্টিয়া শহরে মোটামুটি মানের বেশকিছু আবাসিক হোটেল আছে। আপনার পছন্দমতো যেকোনো হোটেল ঠিক করে নিতে পারবেন। একটু ভালো মানের মধ্যে রয়েছে হোটেল রিভার ভিউ, হোটেল নূর ইন্টারন্যাশনাল। এ ছাড়া মজমপুর ও এনএস রোডে বেশকিছু মধ্যম মানের হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন
খাওয়া-দাওয়ার জন্য বেশকিছু ভালো মানের হোটেল-রেস্টুরেন্ট আছে। কোর্ট স্টেশন এলাকার হোটেল শফিতে খেয়ে দেখতে পারেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর হোটেল, শিল্পী হোটেল, খাওয়া-দাওয়া হোটেলগুলোতে খেতে পারেন। আর কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা ও কুলফি মালাই অবশ্যই খাবেন।

কুষ্টিয়া জেলার আরও দর্শনীয় স্থান
কুষ্টিয়া জেলার দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে অন্যতম হলো- ফকির লালন সাঁইজির মাজার, মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা, লালন শাহ সেতু, জিউর মন্দির ইত্যাদি।