ঢাকা ২৬ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

নান্দনিক স্থাপনা বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০০ পিএম
নান্দনিক স্থাপনা বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ
ছবি সংগৃহীত

ষাট গম্বুজ মসজিদ খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। মসজিদটির কোনো শিলালিপি না থাকায় ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মসজিদের স্থাপত্যশৈলী দেখে খান-ই-জাহান ১৫০০ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এ মসজিদে ব্যবহৃত পাথরগুলো রাজমহল থেকে আনা হয়েছিল। ইউনেসকো ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।


ষাট গম্বুজ মসজিদের গঠন ও বিবরণ
মসজিদটি বাইরের দিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬০ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১০৪ ফুট লম্বা। আর ভেতরের দিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৪৩ ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৮৮ ফুট লম্বা। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় ৮ দশমিক ৫ ফুট পুরু। মসজিদটির পূর্ব দিকের দেয়ালে রয়েছে ১১টি বিরাট খিলানযুক্ত দরজা। অন্য দরজাগুলো থেকে মাঝখানের দরজাটি সবচেয়ে বড়। আর উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে দরজা আছে ৭টি করে ১৪টি। মসজিদের চারকোণে চারটি গোলাকার মিনার আছে। প্রতিটি মিনারের চূড়ায় রয়েছে একটি করে গোলাকার গম্বুজ। ছাদের কার্নিশের চেয়ে মিনারগুলোর উচ্চতা একটু বেশি।
মসজিদের সামনের দিকের দুটি মিনারের একটির নাম রওশন কোঠা এবং অন্যটির নাম আন্ধার কোঠা। মিনারের ভেতরে রয়েছে প্যাঁচানো সিঁড়ি। আগে এই মিনার থেকে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মসজিদের অভ্যন্তরে মোট ষাটটি স্তম্ভ বা পিলার আছে। স্তম্ভগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ছয় সারিতে মোট ১০টি করে বিন্যস্ত আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথরের তৈরি তবে পাঁচটি স্তম্ভ ইট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। স্তম্ভগুলোর চারপাশের ছাদের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। ষাট গম্বুজ মসজিদে ১১টি সারিতে মোট ৭৭টি গম্বুজ রয়েছে। আর মিনারের ওপর চারটি গম্বুজসহ মোট গম্বুজের সংখ্যা ৮১টি। মসজিদের মিহরাবের মধ্যবর্তী সারিতে সাতটি গম্বুজ ছাড়া বাকি ৭৪টি গম্বুজই অর্ধগোলাকার।
মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়ালে মিহরাব আছে ১০টি। মাঝখানের মিহরাবটি বড় ও কারুকার্যপূর্ণ। দক্ষিণ দিকে পাঁচটি এবং উত্তর দিকে চারটি মিহরাব রয়েছে। উত্তর পাশে মিহরাবের বদলে একটি ছোট দরজা আছে। অনেকের মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদকে দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন আর এই দরজা ছিল তার প্রবেশপথ। ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রায় ৫০০ মিটার পেছনে রয়েছে বিবি বেগনির মসজিদ। হাতে সময় থাকলে ফুলের কারুকার্যময় মসজিদটি দেখে আসতে পারেন। বিবি বেগনি মসজিদের ৫০০ মিটার পেছনের দিকে রয়েছে চুনাখোলা নামের আরেকটি মসজিদ। এ ছাড়া মহাসড়কের পাশে রয়েছে সিঙ্গাইর মসজিদ।


প্রবেশের টিকিট মূল্য
ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০ টাকার টিকিট কাটতে হয়। বিদেশি দর্শনার্থীর জন্য টিকিটের মূল্য ২০০ টাকা।

 
ষাট গম্বুজ মসজিদ খোলা ও বন্ধের সময়
রবিবারে পূর্ণ দিন কেল্লা বন্ধ থাকে এবং সোমবার খোলা হয় দুপুর ২টা থেকে। গরমকালে কেল্লা খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। শীতকালে কেল্লা খোলা হয় সকাল ৯টায় থেকে আর বিকেল ৫টায় বন্ধ করা হয়। শীত ও গরমকাল উভয় সময়ই দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত কেল্লা বন্ধ রাখা হয়। তবে শুক্রবারে জুমার নামাজের জন্য ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত কেল্লা বন্ধ থাকে।


কীভাবে যাবেন ষাট গম্বুজ মসজিদ
ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেঘনা, বনফুল, ফাল্গুনী, আরা, পর্যটক, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা পরিবহনের বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সোহাগ, সাকুরা, হানিফ, কমফোর্ট লাইন, দোলা পরিবহন ও ঈগল পরিবহনের গাড়ি ছাড়ে। এই বাসগুলোতে জনপ্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া লাগে। বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টাকা রিকশা ভাড়ায় ষাটগম্বুজ মসজিদে যাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা এসে সেখান থেকে বাসে বা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে ষাট গম্বুজ মসজিদ যেতে পারবেন। খুলনা থেকে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মতো।


কোথায় থাকবেন
বাগেরহাট সদরে বিভিন্ন হোটেল আছে। এ ছাড়া সরকারি গেস্টহাউস আছে। এখানে রেল রোডে অবস্থিত মমতাজ হোটেলে থাকতে পারেন। এই হোটেলে সুযোগ-সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান মোটামুটি ভালো এবং খরচও একটু বেশি। এই হোটেলের আশপাশে থাকার জন্য আরও কিছু হোটেল রয়েছে। খান জাহান আলীর মাজারের সামনে মেইন হাইওয়েতে থাকতে পারবেন হোটেল অভিতে। বাগেরহাটে থাকার জন্য হোটেলের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন সংলগ্ন হোটেল আল আমিন এবং কর্মকার পট্টিতে হোটেল মোহনা আছে। খুলনা থেকে বাগেরহাটে আসতে এক ঘণ্টা লাগার কারণে খুলনাতেও থাকা যায়।


খাবার সুবিধা
এখানে কিছু মোটামুটি মানের খাবার হোটেল রয়েছে তাই খাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ড কিংবা দরগার কাছে হোটেলগুলোতে যেতে পারেন। তবে অবশ্যই খাবারের মান ও দাম সম্পর্কে জেনে নেবেন।


বাগেরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান
সুন্দরবনে বাঘের বাস, দাড়টানা ভৈরব পাশ, সবুজ শ্যামলে ভরা নদী বাঁকে বসত যে হাট তার নাম বাগেরহাট। বাগেরহাট জেলা বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের জন্য বেশ ভূমিকা পালন করে আসছে। খান জাহান আলীর মাজার, সুন্দরবন, মোংলা বন্দর, রেজা খোদা মসজিদ, জিন্দা পীর মসজিদ, ঠাণ্ডা পীর মসজিদ, সিংগাইর মসজিদ, বিবি বেগনি মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, কোদলা মঠ, রণবিজয়পুর মসজিদ, দশ গম্বুজ মসজিদ, সুন্দরবন রিসোর্ট, বারাকপুর, চন্দ্রমহল, রনজিতপুর ইত্যাদি এই জেলার জনপ্রিয় স্থান।


ভ্রমণে যা মেনে চলবেন
আপনি কোথায় ঘুরতে যাচ্ছেন ও সেখানকার আবহাওয়া কেমন থাকবে, সে বিষয়ে আগেই জেনে নিন। আপনি যদি একাই ঘুরতে যান, তাহলে সেখানে পরিচিত কাউকে খুঁজে বের করুন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি। ভ্রমণে আরামদায়ক পোশাক পরার বিকল্প নেই। এ সময় সুতির কাপড়ের বিকল্প নেই। যতটা সম্ভব খোলামেলা পোশাক পরুন। লাগেজে মনে করে প্রয়োজনীয় ফার্স্ট এইড বক্স বা ওষুধ সঙ্গে নিয়ে নেবেন। বিশেষ করে জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, স্যালাইন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন।
মোবাইলের চার্জারসহ পাওয়ার ব্যাংক, ক্যামেরা সঙ্গে নিয়েছেন কি না চেক করে দেখুন। সঙ্গে ভারী কোনো খাবার নয় বরং হালকা খাবার নিন। বিস্কুট, কেক, মুড়ি, চিড়া ইত্যাদি নিতে পারেন। বিশুদ্ধ পানির বোতল সঙ্গে রাখুন।
অচেনা কোনো স্থানে প্রথমবার যাওয়ার ক্ষেত্রে যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিন। প্রয়োজনে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যোগাযোগের নম্বর নিয়ে রাখতে পারেন। ভ্রমণে কত টাকা খরচ করবেন, সে ব্যাপারটি আগে থেকেই হিসাব করে নিন। তারপর বাজেট অনুসারে খরচ করুন। তবে পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা নিয়ে যাওয়া ভালো।

‘মেঘের সমুদ্র’ সাজেকে পর্যটকের ঢল

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১৪ এএম
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১৯ এএম
‘মেঘের সমুদ্র’ সাজেকে পর্যটকের ঢল
রাঙামাটির সাজেক ভ্যালিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। ছবি : খবরের কাগজ

পর্যটকদের নিত্য পদচারণায় মুখর থাকে ‘মেঘের সমুদ্র’ খ্যাত রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পর্যটক আসেন এখানে। ছুটির দিন হওয়ায় গত শুক্রবারও সাজেকে নানা বয়সী পর্যটকের ঢল নামে। তবে আবাসনের সীমাবদ্ধতা থাকায় এবং আগাম কক্ষ বুকিং না দেওয়ায় বিনোদনপ্রিয় অনেক পর্যটকই পড়েন বিপাকে।

শুক্রবার সাজেক ভ্যালিতে প্রায় ছয় হাজার পর্যটক ভ্রমণে যান, যা ধারণক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি। পর্যটকদের এই অতিরিক্ত ভিড় থাকার জায়গার সংকট দেখা দেয়। অনেক পর্যটক বাধ্য হয়ে সাজেক থেকে ফিরে যান। আবার কেউ কেউ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য থেকে যান রিসোর্ট ও কটেজের বারান্দায়, স্থানীয়দের বাড়িঘরে।

মূলত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ, উন্নত খাবার ও পানীয় ব্যবস্থার কারণে সাজেক পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। সাজেকে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কংলাক পাহাড়, ঐতিহ্যবাহী লুসাই ভিলেজ এবং পাহাড়ের ভাজে ভাজে লুকানো সাদা মেঘের মিতালি। আর তাই একটু সুযোগ পেলে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন এখানে।

সাজেকে বর্তমানে ১১৬টি রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ৪ হাজার পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারেন। এসব রিসোর্ট-কটেজ এখন পুরোদস্তুর ভরপুর। বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি পর্যটক অবস্থান করছেন এখানে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সবকটি রিসোর্ট আগাম বুকিং হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সাজেক জিপ সমিতির তথ্য বলছে, সাজেকে শুক্রবার সকালে ও বিকেলে দুই দফায় জিপ, পিকআপ ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রায় ছয় হাজার পর্যটক প্রবেশ করেন। পর্যটকের বিশাল সমাগমের কারণে অনেকেই রিসোর্ট-কটেজ পাননি। যাদের থাকার জায়গা হয়নি, তাদের জন্য সমিতির পক্ষ থেকে সাজেকের স্কুল, ক্লাবঘরসহ অন্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। আবার অনেক পর্যটক গাড়িতেই রাত কাটিয়েছেন।

সাজেকের অবকাশ ইমানুয়েল ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম আসিফ বলেন, ‘শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সাজেকে প্রচুরসংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি ছিল। যারা অগ্রিম বুকিং দিয়ে আসেননি তারা রুম পাননি। তবে আমরা রিসোর্টের বারান্দায় ও ছাদে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পাশাপাশি কটেজ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে আমাদের শতভাগ বুকিং রয়েছে।’

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, ‘শুক্রবার সাজেকে পর্যটকের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক অনেক বেশি। তাই আমরা অনেক পর্যটককে কক্ষ ভাড়া দিতে পারিনি। আগাম বুকিং না নিয়ে আসায় অনেকেই ফিরে গেছেন। আর যারা থেকে গেছেন তারা মানুষের বাড়িঘরে, হোটেলের বারান্দায়-যে যেভাবে পেরেছেন রাত কাটিয়েছেন।’

এদিকে সাজেকের মতো শুক্রবার রাঙামাটি শহর, কাপ্তাইসহ জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে রাঙামাটি শহর, ঝুলন্ত সেতু, কাপ্তাই হ্রদে নৌভ্রমণ, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক, কাপ্তাইয়ের বিনোদনকেন্দ্রে পর্যটকের ভিড় ছিল বেশি। এতে শহর ও আশপাশের হোটেল, রিসোর্টেও বুকিং ছিল ৮০ থেকে শতভাগ পর্যন্ত।

রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘রাঙামাটি শহরে সব হোটেল, রিসোর্টে ৮০ থেকে শতভাগ বুকিং হয়েছে। পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। রোজার আগে পর্যটকদের উপস্থিতি ভালো থাকবে আশা করছি।’

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ‘শুক্রবার পর্যটকদের ভালো উপস্থিতি ছিল। পর্যটন মোটেলে শুক্র ও শনিবার ৮০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়ে আছে। আর ছয় হাজারের বেশি পর্যটক শুক্রবার ঝুলন্ত সেতু ভ্রমণ করেছেন।’ 

হেঁটে টেকনাফ-তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করলেন তাহুরা সুলতানা

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৪ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৩ পিএম
হেঁটে টেকনাফ-তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করলেন তাহুরা সুলতানা
তাহুরা সুলতানা

হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করেছেন তাহুরা সুলতানা নামের ২৫ বছরের এক তরুণী। 

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টে গিয়ে তার ভ্রমণযাত্রা শেষ হয়। 

বিষয়টি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন এ ভ্রমণকন্যা।

জানা যায়, তাহুরা সুলতানা গত বছর ২৯ নভেম্বর সকাল ৬টায় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জিরো পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু করেন। ৫১ দিন হেঁটে হেঁটে তেঁতুলিয়ায় এসে শেষ করেন ভ্রমণ। এ যাত্রায় তিনি পাড়ি দিয়েছেন ১ হাজার ১ কিলোমিটার। একা হাঁটা শুরু করলেও ফেসবুকের কল্যাণে পথে পথে তাকে সঙ্গ দিয়েছেন পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই।

তাহুরা সুলতানা চট্টগ্রামের বাঁশখালী গন্ডামারা ইউনিয়নের রশিদ আহমেদ ও তৈয়বা খাতুন দম্পতির মেয়ে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।

তাহুরা সুলতানা বলেন, ‘পরিবারে আমি সবার ছোট। ছোট থেকেই ঘোরাঘুরি পছন্দ করি। চ্যালেঞ্জিং কোনো বিষয় গ্রহণ করতে আমার ভালো লাগে। এসব কারণেই হেঁটে দেশ ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে যাত্রা শুরু করি। এ যাত্রায় যেখানে বিরতি নিয়েছি, সেখানে মানুষের ভালোবাসা ও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ায় আমি অভিভূত।’

হেঁটে ভ্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে তাহুরা বলেন, ‘সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটা জরুরি। তাই এই পদযাত্রার মাধ্যমে মানুষও যেন হাঁটায় উদ্বুদ্ধ হয়, সেটি আমি চাই। একই সঙ্গে হেঁটে হেঁটে আমার প্রিয় জন্মভূমির সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি মানুষকে হাঁটায় উদ্বুদ্ধ করতেই আমার এই যাত্রা। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এ জার্নির খরচ আমার নিজেরই। বিশেষ করে zoom wild নামে ট্রাভেল অ্যাজেন্সির সঙ্গে ট্রাভেলিংয়ের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে দোকান আছে। সেখান থেকে অর্জিত টাকা জমিয়ে আমি এ জার্নি করেছি।’

বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টের জিরোফলকে পৌঁছেই তাহুরা বলেন, ‘১ হাজার কিলোমিটার মাইলফলক শেষ হলো, তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টে এসে। আমি স্পেশাল ধন্যবাদ জানাতে চাই বিজিবিকে, বর্ডার গার্ডকে। আমি আসলে খুব লেটে চলে আসছি, আসলে আমারই এটা মিসটেক। কারণ আজকে (শুক্রবার) শেষ করতে গিয়ে আমার সন্ধ্যা ৫টা বা ৬টা হয়ে যায়। সময় শেষ হয়ে  যাওয়ার পরেও আমাকে এখানে আসতে দেওয়া হয়েছে। এটার জন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ ও ধন্যবাদ।’

এ দীর্ঘ জার্নিতে যারা পাশে ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার এ জার্নির সঙ্গে এই মুহুর্তে যারা জড়িত আছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে যারা আমার এ জার্নির সঙ্গে ছিল সবার প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ ও ভালবাসা সবাইকে। আর আমার পুরো জার্নিতে পুরো বাংলাদেশের ১ হাজার কিলোমিটার হাইকিং, সঙ্গে যমুনা নদী সাতরানো, সঙ্গে হিমালয়ের তিনটা পাহাড়ের যে অর্জনগুলো ছিল এই জায়গায় শেষ হলো। জার্নিটা শেষ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।’

রনি/পপি/

ঘুরে আসুন চাঁদপুরের মিনি কক্সবাজার

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৩ পিএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৬ পিএম
ঘুরে আসুন চাঁদপুরের মিনি কক্সবাজার
মিনি কক্সবাজারে প্রতিদিন ভিড় করে শত শত দর্শনার্থী

ভ্রমণ সব সময়ের জন্য আনন্দের। সেটা যেখানেই হোক। জীবনকে উপভোগ করতে হলে মাঝে মধ্যে ভ্রমণ করা অনেক জরুরি। অন্যথায় জীবনে চলার ক্ষেত্রে জীবনের মানে হারিয়ে ফেলবে। আপনি যদি কোথাও ভ্রমণ করার উদ্দেশে রওনা হন-তাহলে দেখবেন, ভ্রমণের সময় অনেক ছোট ছোট বিষয় আপনার কাছে আনন্দদায়ক মনে হবে। ভ্রমণ করলে আপনি একটি আলাদা অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। কারণ, ভ্রমণ করলে আপনি যে দৈনিক রুটিনের মধ্যে চলাফেরা করেন, তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
ভ্রমণটা হতে পারে আপনার আশপাশে অথবা দেশ ও দেশের বাইরে যেকোনো জায়গায়। নিজেকে সবার মাঝে খুঁজে পেতে ঘুরে আসতে পারেন দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে। এর মধ্যে রয়েছে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের মিনি কক্সবাজারে। বালুচরে খেলাধুলা, নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটা এবং প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতে পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে মিনি কক্সবাজার। যেন সেই ডাকে সাড়া দিয়েই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সেখানে থাকছে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড়।
বাংলাদেশে পদ্মা-মেঘনার একমাত্র মিলনস্থল চাঁদপুরে। এই নদীর বুকে জেগে উঠেছে মিনি কক্সবাজারখ্যাত বালুর চর। পদ্মা-মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীকে ঘিরে নাম দেওয়া হয় চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেড। আর এই তিন নদীর মোহনা থেকে খুব সহজই যাওয়া যায় দৃষ্টিনন্দন মিনি কক্সবাজারে।
মেঘনার চর বাংলাদেশের চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত মিনি কক্সবাজার পর্যটনকেন্দ্রটি। এটি নদীকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটনকেন্দ্র। এর চারদিকে নদী হওয়ায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের মতো দেখায়। তাই পর্যটকরা এই নাম দিয়েছেন। স্থানীয়ভাবে বালু চর, পদ্মার চর ও মেঘনার চর নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। বেসরকারিভাবে ‘স্বপ্ন ট্যুরিজম’ নামক প্রতিষ্ঠান পর্যটনকেন্দ্রটি পরিচালনা করে।


মিনি কক্সবাজারে প্রতিদিন ভিড় করে শত শত দর্শনার্থী। ডিসেম্বর থেকে চলমান এই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা এই স্থানে ঘুরতে আসেন। এমনকি পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজারের ফিল পেতে চাঁদপুরের মানুষের একমাত্র জায়গা এটি। অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন না থাকলেও স্বল্প খরচ আর কম সময়ের মধ্যে ঘুরে দেখা যায় এ স্থানটি। চাঁদপুর বড় স্টেশন থেকে জনপ্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ট্রলার নিয়ে ঘুরে আসা যায় মিনি কক্সবাজারখ্যাত পদ্মার বালুর চর থেকে। জানুয়ারিতে এখানে রয়েছে আরও একটি সৌন্দর্য। স্থানীয় কৃষকরা এই চরে সরিষার চাষ করেন। হলুদের সমারোহে সরিষা ফুলে মন জুড়িয়ে যায় যেকোনো পর্যটকের। দলবেঁধে কিংবা পিকনিক স্পটের জন্য খোলামেলা এ স্থানটি হতে পারে বিনোদন স্পট।
এক দিনে চাঁদপুর মিনি কক্সবাজার ঘুরে দেখা ছাড়াও রয়েছে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া- এই তিন নদীর মিলনস্থল দেখার সৌন্দর্য। রয়েছে পদ্মা-মেঘনার ভিন্ন রঙের পানি ও সূর্যাস্ত দেখার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এর পাশেই রয়েছে মাছঘাট। এখানে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাইকারি ও খুচরা মূল্যে কেনা যায়। এ ছাড়া ভ্রমণের তালিকায় এই চাঁদপুরে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ফরিদগঞ্জের রূপসা জমিদারবাড়ি ও লোহাগড়া মঠ, দেশের সর্ববৃহৎ মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম দৃষ্টিনন্দন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ, চাঁদপুর সদরের ফারিসা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, মতলব উত্তরের মোহনপুর পর্যটনকেন্দ্র, চাঁদপুর শহরে রয়েছে অঙ্গীকার ভাস্কর্য, বড় স্টেশন মোলহেডে রয়েছে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত রক্তধারা ভাস্কর্য ও জাতীয় মাছ ইলিশের আদলে নির্মিত ইলিশ ভাস্কর্য। যদিও শহরের প্রবেশদ্বার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রয়েছে ইলিশ চত্বর।


কীভাবে যাবেন
দেশের যেকোনো স্থান থেকে সড়ক, রেল ও নৌপথে খুব সহজেই যাওয়া যায় চাঁদপুরে। সড়কপথে যেতে হলে কুমিল্লা হয়ে চাঁদপুর জেলা শহরে আসা যায়। এ ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকা থেকে বিআরটিসি ও পদ্মা বাস পাওয়া যায়। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া স্বল্প সময়ে আসতে চাইলে ঢাকা থেকে গৌরীপুর বা শ্রী রায়েরচর থেকে মতলব হয়ে বাবুরহাট দিয়েও চাঁদপুর জেলা শহরে আসা যায়। নৌপথে আসতে চাইলে ঢাকা সদরঘাট থেকে সকাল ৬টা থেকেই চাঁদপুরের উদ্দেশে বিভিন্ন লঞ্চ ছেড়ে যায়। জনপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে আসনভেদে বিভিন্ন ভাড়ায় চাঁদপুর লঞ্চঘাটে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে অটোরিকশায় ১০ টাকায় বড় স্টেশনে আসতে পারবেন। তা ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের লাকসাম রেলওয়ে জংশন থেকেও বেলা ১১টায় সাগরিকা এবং রাত ৮টায় আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়ায় চাঁদপুর বড় স্টেশনে এসে নামা যায়।


কোথায় থাকবেন
শহরে রয়েছে চাঁদপুর সার্কিট হাউস, হোটেল হিলশাসহ বিভিন্ন বাজেটের আবাসিক হোটেল। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে অন্যান্য হোটেলের বিষয়ে জানা যাবে। 


কোথায় খাবেন
চাঁদপুর লঞ্চঘাট কিংবা চাঁদপুর মাছঘাটে রয়েছে তাজা ইলিশ ভেজে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা। এ ছাড়া চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় রয়েছে অসংখ্য চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এবং হোটেল। 


সতর্কতা
চাঁদপুর ভ্রমণে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে আপনার সিদ্ধান্ত নিয়ে চলতে হবে। ব্যতিক্রম কিছু দেখলে বা অনুভব করলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে পারেন। 
সাঁতার না জানলে গোসলের সময় নদীর বেশি গভীরে যাবেন না। ট্রলার চলাকালে ট্রলার এর কিনারে বসবেন না। ট্রলারে ওঠার সময় সাবধানে মই ব্যবহার করে উঠবেন। বেশি সময় থাকার পরিকল্পনা করলে সঙ্গে শুকনো খাবার, মিনারেল ওয়াটার, সানগ্লাস, টুপি নিয়ে আসবেন।

বাঁশখালী ইকোপার্ক সময় কাটানোর দারুণ জায়গা

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম
সময় কাটানোর দারুণ জায়গা
সংগৃহীত

চট্টগ্রামের একটি উপজেলা বাঁশখালী। এখানে অবস্থিত প্রাকৃতিক ইকোপার্ক। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত উঁচু-নিচু পাহাড়, লেকের স্বচ্ছ পানি, বনাঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরের বিস্তৃত তটরেখা নিয়ে গঠিত হয়েছে ইকোপার্কটি। ২০০৩ সালে ১ হাজার হেক্টর বনভূমি নিয়ে বাঁশখালী ইকোপার্ক গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম শহর থেকে ৫০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় শীলকূপ ইউনিয়নে বামেরছড়া ও ডানেরছড়া এলাকার সমন্বয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি জলদি অভয়ারণ্য রেঞ্জের জলদি ব্লকে অবস্থিত।
যাই হোক অফিস শেষে আমরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রওনা দিই। সবাই প্রথমে কর্ণফুলী ব্রিজে এসে এক হলাম। সেখান থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা দিয়ে ব্রিজ পার হয়ে মইজ্জারটেক আসি। মইজ্জারটেক থেকে অটোরিকশায়  উঠলাম। এখান থেকে জলদি পর্যন্ত জনপ্রতি ১২০ টাকা। আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাই বাঁশখালীর জলদিতে। জলদিতে আমার খালার বাড়ি। সেখানেই হবে আমাদের রাত যাপন।
সবাই খালার বাড়িতে উঠে গ্রামের শাকসবজি আর তাজা মাছ দিয়ে রাতের খাবার খেলাম। পরদিন শুক্রবার সকালে আমাদের গন্তব্য হচ্ছে ইকোপার্ক। সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠে খেজুরের রস দিয়ে খেলাম ভাপা পিঠা। এরপর রওনা দিলাম ইকোপার্কের উদ্দেশে।
এর মাঝে এ ইকোপার্কের ইতিহাসটাও জেনে রাখা ভালো। বাংলাদেশ সরকার বন্যপ্রাণী ও বনজসম্পদ রক্ষার্থে ১৯৮৬ সালে প্রায় ৭ হাজার ৭৬৪ হেক্টর বনভূমি নিয়ে ‘চুনতি অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করে। পরে বামেরছড়া ও ডানেরছড়া প্রকল্প দুটিও চুনতি অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ অভয়ারণ্যে ছোট-বড় অনেক পাহাড়, খাল ছড়া রয়েছে। ১৯৯৩ সালে এলজিইডির প্রকৌশল বিভাগ কৃষি জমিতে সেচ প্রকল্পের জন্য পাহাড়ের ঢালুতে বাঁধ নির্মাণ করে ডানের ও বামেরছড়ায় ৮০ হেক্টর নিম্নাঞ্চলের ধানি জমি চাষ উপযোগী করে। বাংলাদেশ সরকার ওই বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়ন, শিক্ষা, গবেষণা, ইকো ট্যুরিজম ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাঁশখালী ইকোপার্ক গড়ে তোলে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিনোদনপ্রেমীদের কথা চিন্তা করে ২০০৩ সালে এ ইকোপার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আমরা জলদি থেকে অটোরিকশার মাধ্যমে সরাসরি ইকোপার্কের গেটে এসে নামি। অটোরিকশার ভাড়া ছিল ৫০ টাকা। এরপর ৩০ টাকা করে আমরা টিকিট কেটে ইকোপার্কের ভেতর প্রবেশ করি। ইকোপার্কে প্রবেশ করেই আমাদের সবার ভেতর এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব হলো। শহরের কাছাকাছি এত সুন্দর একটা প্রাকৃতিক ইকোপার্ক আছে অনেকেই জানে না।
সম্প্রতি করা এক জরিপ মতে, এ ইকোপার্কে ৩১০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। ধীরে ধীরে যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ১৮ প্রজাতির দীর্ঘ বৃক্ষ, ১২ প্রজাতির মাঝারি বৃক্ষ, ১৬ প্রজাতির বেতসহ অসংখ্য অর্কিড, ইপিফাইট ও ঘাসজাতীয় গাছ। এ এলাকা গর্জন, গুটগুটিয়া, বৈলাম, সিভিট, চম্পাফুল এবং বিবিধ লতাগুল্মসমৃদ্ধ চিরসবুজ বনাঞ্চলে ভরপুর ছিল। পার্ক এলাকার ৬৭৪ হেক্টর বনভূমিতে বিভিন্ন ধরনের (বাফার, ভেষজ, দীর্ঘমেয়াদি) মনোমুগ্ধকর বাগান তৈরি করা হয়েছে। আছে সুন্দর একটি লেক। এ লেকে নৌকায় করে পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারেন।
ইকোপার্কে বিচরণ করে কয়েক হাজার বন্য প্রাণী। ইকোপার্কের চারপাশেই পাহাড় আর পাহাড়। তবে এখানে আরও একটি বিষয় পর্যটকদের বেশ আকর্ষণীয় করে তুলে। সেটা হচ্ছে ঝুলন্ত ব্রিজ। ইকোপার্কে এলেন অথচ ঝুলন্ত ব্রিজে উঠে ছবি তুললেন না তা হয় না। একই সঙ্গে এ ঝুলন্ত ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এখানেই খুঁজে পাবেন।
পার্কের উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে পিকনিক স্পট, দ্বিতল রেস্ট হাউজ, হিলটপ কটেজ, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, দীর্ঘতম ঝুলন্ত ব্রিজ, ওয়াচ টাওয়ার এবং মিনি চিড়িয়াখানা। পার্কের দুটি সুবিশাল লেকে রয়েছে মাছ ধরার যাবতীয় সুব্যবস্থা। বাঁশখালী ইকোপার্কে বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের তথ্য সংবলিত একটি তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্র আছে।


এ ছাড়া এখানে মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, চিত্রা বিড়াল, বাঘ, মেছো বাঘ ও পাখির প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে। শীতকালে অতিথি পাখির কলরবে সরব হয়ে উঠে এই ইকোপার্কের সবুজ প্রকৃতি। ইকোপার্কের সুউচ্চ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের অথই জলরাশি, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা ঝর্ণাধারা আর বিকাল বেলায় সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের মোহিত করে।
বিকেল হতেই আমাদের ফেরার প্রস্তুতি শুরু হলো। যেভাবে এসেছিলাম ঠিক সেভাবেই ফিরলাম। ফেরার সময় মনে হলো প্রকৃতির খুব কাছ থেকে যেন আমরা ফিরে যাচ্ছি আবারও কোলাহলপূর্ণ শহরে। যেখানে বিশুদ্ধ বাতাসের বড় অভাব।

শিক্ষাকেন্দ্র
ইকোপার্কে বিচরণরত কয়েক হাজার বন্যপ্রাণী ও বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সম্পর্কে পর্যটকরা যাতে খুব সহজেই জানতে পারেন সেজন্য ২০১১ সালের ২১ আগস্ট নির্মিত হয় তথ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র।

কীভাবে যাবেন
বাঁশখালী ইকোপার্কে যেতে হলে প্রথমে চট্টগ্রাম শহরে আসতে হবে।  বাঁশখালী থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাঁশখালী ইকোপার্ক অবস্থিত। চট্টগ্রাম থেকে বাস বা সিএনজিতে বাঁশখালী যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল বা আকাশপথে চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। সড়কপথে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সৌদিয়া, ইউনিক, টিআর ট্রাভেলস, গ্রিনলাইন ও হানিফ এন্টারপ্রাইজের বিভিন্ন বাস চট্টগ্রামের পথে যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সুবর্ণ, তূর্ণা-নিশিথা, মহানগর কিংবা চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। আর কম সময়ে যেতে চাইলে শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্সে মাত্র ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন
চট্টগ্রামের স্টেশন রোড, জেএসসি মোড় বা আগ্রাবাদ এলাকায় বিভিন্ন মানের হোটেল খুঁজে পাবেন। আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল স্টার পার্ক, হোটেল ডায়মন্ড পার্ক, হোটেল মিসখা, হোটেল হিল টন সিটি, এশিয়ান এসআর হোটেল, হোটেল প্যারামাউন্ট, হোটেল সাফিনা ও হোটেল সিলমন উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন
বাঁশখালীতে সাধারণ মানের বেশ কিছু হোটেল ও মনছুড়িয়া বাজারে খুচরা চা-নাশতার দোকান আছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরে বাঙালি, চাইনিজ বা ফাস্টফুডের বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট আছে। আর সুযোগ থাকলে অবশ্যই চট্টগ্রামের জনপ্রিয় মেজবানি খাবার ও কালা ভুনা খেয়ে দেখবেন।

চট্টগ্রামের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রামের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে ওয়ার সিমেট্রি, ফয়’স লেক, মহামায়া লেক, জাম্বুরি পার্ক, চন্দ্রনাথ পাহাড়, হাজারিখিল অভয়ারণ্য ছাড়াও বেশকিছু আকর্ষণীয় ঝরনা রয়েছে।

ভ্রমণ পরামর্শ
সমুদ্রসৈকতে দোকানপাট তেমন নেই, তাই শুকনো খাবার ও পানি সঙ্গে রাখুন। ফেরার সময় যানবাহনের সংকট হতে পারে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে নিতে পারেন। সমুদ্রে নামার সময় সতর্ক থাকুন এবং স্থানীয় লোকজনের পরামর্শ নিন।

পর্যটকে মুখর রাঙ্গামাটি

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:২০ পিএম
আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫০ এএম
পর্যটকে মুখর রাঙ্গামাটি
রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতুতে পর্যটকদের ভিড়। ছবি: খবরের কাগজ

পর্যটকে মুখর হয়ে ওঠেছে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির দর্শনীয়স্থানগুলো। পর্যটকদের ঘিরে রাঙ্গামাটি শহর, সাজেক ও কাপ্তাই এই তিন পরর্যটনকেন্দ্রে বেড়েছে ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা। আবাসিক হোটেল রিসোর্টে এরইমধ্যে ৮০ থেকে শতভাগ পর্যন্ত বুকিং হয়েছে। সব মিলিয়ে দৈনিক প্রায় দেড় কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে- বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

সারা বছরই পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় রাঙ্গামাটি। বছরে কয়েক লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসেন। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু সড়ক, দীগন্ত বিস্তৃত সবুজ অরণ্য আর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাপ্তাই লেকের নীল জলরাশিতে নৌভ্রমণ উপভোগ করেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

সাধারণত ছুটির দিনগুলোতে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার পর্যটকের উপস্থিতি থাকে রাঙ্গামাটির তিন পর্যটনকেন্দ্রে। আবার বিশেষ দিনগুলোতে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ থেকে ৭০ হাজারে। তবে সবমিলিয়ে ১৫ হাজার পর্যটকের রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে এই তিন পর্যটনকেন্দ্রে। 

এরমধ্যে রাঙ্গামাটি শহরে ৫৬টি আবাসিক হোটেল এবং ১৭টি ইকো রিসোর্ট আছে। যেখানে ১০ হাজার পর্যটকের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া সাজেকে সবমিলিয়ে ১২টি রিসোর্ট কটেজে ৫ হাজার পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারেন। কাপ্তাইয়েও হোটেল রিসোর্টে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরে পর্যটকরা সারাদিন ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যায় গন্তব্যে ফিরে যান।

রাঙ্গামাটি এখন পর্যটনে ভরা মৌসুম পার করছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বিশেষ করে বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে। 

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতু এলাকায় কথা হলে পর্যটকরা তুলে ধরেন তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। 

যশোর থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা কানাডা প্রবাসী বলেন- ‘দেশের মধ্যে কেবল রাঙ্গামাটিতে নদী, পাহাড় পর্বত সবকিছুই একসঙ্গে পাওয়া যায়। এখানকার মানুষগুলোও খুব ভালো। এজন্যই রাঙ্গামাটি অসাধারণ আমার কাছে।’ 

চট্টগ্রামের বাসিন্দা মৈত্রী নন্দী বলছিলেন- ‘চট্টগ্রামের মধ্যে যে কয়টি পর্যটনকেন্দ্র আছে তার মধ্যে রাঙ্গামাটি একেবারেই প্রথম দিকে আছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মধ্যে আমরা খুব সহজেই রাঙ্গামাটি ভ্রমণ করে আনন্দ পেতে পারি।’

আরেক পর্যটক আশিক উল্লাহ বলেন, ‘রাঙ্গামাটির সুন্দর এই পরিবেশ অন্য জায়গায় পাওয়া যায় না। পাহাড়ে ওঠতে পারি, নৌভ্রমণ করা যায়, ঐতিহ্যবাহী ঝুলন্ত সেতু আছে। এই জিনিসগুলো আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। মন ভালো হয়ে যায়।’

৭ম বারের মতো রাঙ্গামাটি ভ্রমণে আসা শাহ আলম বলেন, ‘কলেজে ভর্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। রাঙ্গামাটি এমন একটি জায়গা, যার একপাশে লেক, আরেক পাশে পাহাড়। খুবই মনোরম পরিবেশ। লেকে যখন নৌকায় ঘুরে বেড়াই, তখন মনে হয় আমরা স্বর্গের মধ্যে আছি। না দেখলে বলে বোঝানো যাবে না। এজন্যই বার বার ছুটে আসি।’

সাজেকের ‘অবকাশ’ ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপক নাজমুল হোসেন জানিয়েছেন- সাজেকের প্রায় সব হোটেল রিসোর্টই শতভাগ বুকিং আছে। এটি আগামী ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ পর্যন্ত আগাম বুকিং হয়েছে। 

রাঙ্গামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন- রাঙ্গামাটি শহরে সব হোটেল রিসোর্টে ৮০ থেকে শতভাগ বুকিং হয়েছে। একদিকে চমৎকার আবহাওয়া অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই ছুটির আমেজে আছে। তাই রোজা শুরুর আগেই এই সুযোগে পর্যটকরা পরিবার নিয়ে ভ্রমণে আসছেন। 

রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, আজকে আমাদের মোটেলে ৮০ শতাংশ বুকিং আছে। এছাড়া আগামী ২১ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৮০ ভাগের ওপরে আগাম বুকিং হয়েছে। আশা করছি এই মোসুম ভালো ব্যবসা হবে।

আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট, খাবারের দোকান (রেস্টুরেন্ট), সড়ক ও নৌযান, পাহাড়িদের তৈরি টেক্সটাইল কাপড় এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘিরেই মূলত রাঙ্গামাটির পর্যটন বাণিজ্যের পাঁচ খাত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পাঁচ খাতে দৈনিক বাণিজ্য হয়ে থাকে প্রায় দেড় কোটি টাকা।

জিয়াউর রহমান জুয়েল/মাহফুজ