ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

বাঁশখালী ইকোপার্ক সময় কাটানোর দারুণ জায়গা

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম
সময় কাটানোর দারুণ জায়গা
সংগৃহীত

চট্টগ্রামের একটি উপজেলা বাঁশখালী। এখানে অবস্থিত প্রাকৃতিক ইকোপার্ক। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত উঁচু-নিচু পাহাড়, লেকের স্বচ্ছ পানি, বনাঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরের বিস্তৃত তটরেখা নিয়ে গঠিত হয়েছে ইকোপার্কটি। ২০০৩ সালে ১ হাজার হেক্টর বনভূমি নিয়ে বাঁশখালী ইকোপার্ক গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম শহর থেকে ৫০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় শীলকূপ ইউনিয়নে বামেরছড়া ও ডানেরছড়া এলাকার সমন্বয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি জলদি অভয়ারণ্য রেঞ্জের জলদি ব্লকে অবস্থিত।
যাই হোক অফিস শেষে আমরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রওনা দিই। সবাই প্রথমে কর্ণফুলী ব্রিজে এসে এক হলাম। সেখান থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা দিয়ে ব্রিজ পার হয়ে মইজ্জারটেক আসি। মইজ্জারটেক থেকে অটোরিকশায়  উঠলাম। এখান থেকে জলদি পর্যন্ত জনপ্রতি ১২০ টাকা। আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাই বাঁশখালীর জলদিতে। জলদিতে আমার খালার বাড়ি। সেখানেই হবে আমাদের রাত যাপন।
সবাই খালার বাড়িতে উঠে গ্রামের শাকসবজি আর তাজা মাছ দিয়ে রাতের খাবার খেলাম। পরদিন শুক্রবার সকালে আমাদের গন্তব্য হচ্ছে ইকোপার্ক। সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠে খেজুরের রস দিয়ে খেলাম ভাপা পিঠা। এরপর রওনা দিলাম ইকোপার্কের উদ্দেশে।
এর মাঝে এ ইকোপার্কের ইতিহাসটাও জেনে রাখা ভালো। বাংলাদেশ সরকার বন্যপ্রাণী ও বনজসম্পদ রক্ষার্থে ১৯৮৬ সালে প্রায় ৭ হাজার ৭৬৪ হেক্টর বনভূমি নিয়ে ‘চুনতি অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করে। পরে বামেরছড়া ও ডানেরছড়া প্রকল্প দুটিও চুনতি অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ অভয়ারণ্যে ছোট-বড় অনেক পাহাড়, খাল ছড়া রয়েছে। ১৯৯৩ সালে এলজিইডির প্রকৌশল বিভাগ কৃষি জমিতে সেচ প্রকল্পের জন্য পাহাড়ের ঢালুতে বাঁধ নির্মাণ করে ডানের ও বামেরছড়ায় ৮০ হেক্টর নিম্নাঞ্চলের ধানি জমি চাষ উপযোগী করে। বাংলাদেশ সরকার ওই বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়ন, শিক্ষা, গবেষণা, ইকো ট্যুরিজম ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাঁশখালী ইকোপার্ক গড়ে তোলে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিনোদনপ্রেমীদের কথা চিন্তা করে ২০০৩ সালে এ ইকোপার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আমরা জলদি থেকে অটোরিকশার মাধ্যমে সরাসরি ইকোপার্কের গেটে এসে নামি। অটোরিকশার ভাড়া ছিল ৫০ টাকা। এরপর ৩০ টাকা করে আমরা টিকিট কেটে ইকোপার্কের ভেতর প্রবেশ করি। ইকোপার্কে প্রবেশ করেই আমাদের সবার ভেতর এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব হলো। শহরের কাছাকাছি এত সুন্দর একটা প্রাকৃতিক ইকোপার্ক আছে অনেকেই জানে না।
সম্প্রতি করা এক জরিপ মতে, এ ইকোপার্কে ৩১০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। ধীরে ধীরে যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ১৮ প্রজাতির দীর্ঘ বৃক্ষ, ১২ প্রজাতির মাঝারি বৃক্ষ, ১৬ প্রজাতির বেতসহ অসংখ্য অর্কিড, ইপিফাইট ও ঘাসজাতীয় গাছ। এ এলাকা গর্জন, গুটগুটিয়া, বৈলাম, সিভিট, চম্পাফুল এবং বিবিধ লতাগুল্মসমৃদ্ধ চিরসবুজ বনাঞ্চলে ভরপুর ছিল। পার্ক এলাকার ৬৭৪ হেক্টর বনভূমিতে বিভিন্ন ধরনের (বাফার, ভেষজ, দীর্ঘমেয়াদি) মনোমুগ্ধকর বাগান তৈরি করা হয়েছে। আছে সুন্দর একটি লেক। এ লেকে নৌকায় করে পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারেন।
ইকোপার্কে বিচরণ করে কয়েক হাজার বন্য প্রাণী। ইকোপার্কের চারপাশেই পাহাড় আর পাহাড়। তবে এখানে আরও একটি বিষয় পর্যটকদের বেশ আকর্ষণীয় করে তুলে। সেটা হচ্ছে ঝুলন্ত ব্রিজ। ইকোপার্কে এলেন অথচ ঝুলন্ত ব্রিজে উঠে ছবি তুললেন না তা হয় না। একই সঙ্গে এ ঝুলন্ত ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এখানেই খুঁজে পাবেন।
পার্কের উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে পিকনিক স্পট, দ্বিতল রেস্ট হাউজ, হিলটপ কটেজ, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, দীর্ঘতম ঝুলন্ত ব্রিজ, ওয়াচ টাওয়ার এবং মিনি চিড়িয়াখানা। পার্কের দুটি সুবিশাল লেকে রয়েছে মাছ ধরার যাবতীয় সুব্যবস্থা। বাঁশখালী ইকোপার্কে বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের তথ্য সংবলিত একটি তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্র আছে।


এ ছাড়া এখানে মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, চিত্রা বিড়াল, বাঘ, মেছো বাঘ ও পাখির প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে। শীতকালে অতিথি পাখির কলরবে সরব হয়ে উঠে এই ইকোপার্কের সবুজ প্রকৃতি। ইকোপার্কের সুউচ্চ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের অথই জলরাশি, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা ঝর্ণাধারা আর বিকাল বেলায় সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের মোহিত করে।
বিকেল হতেই আমাদের ফেরার প্রস্তুতি শুরু হলো। যেভাবে এসেছিলাম ঠিক সেভাবেই ফিরলাম। ফেরার সময় মনে হলো প্রকৃতির খুব কাছ থেকে যেন আমরা ফিরে যাচ্ছি আবারও কোলাহলপূর্ণ শহরে। যেখানে বিশুদ্ধ বাতাসের বড় অভাব।

শিক্ষাকেন্দ্র
ইকোপার্কে বিচরণরত কয়েক হাজার বন্যপ্রাণী ও বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সম্পর্কে পর্যটকরা যাতে খুব সহজেই জানতে পারেন সেজন্য ২০১১ সালের ২১ আগস্ট নির্মিত হয় তথ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র।

কীভাবে যাবেন
বাঁশখালী ইকোপার্কে যেতে হলে প্রথমে চট্টগ্রাম শহরে আসতে হবে।  বাঁশখালী থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাঁশখালী ইকোপার্ক অবস্থিত। চট্টগ্রাম থেকে বাস বা সিএনজিতে বাঁশখালী যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল বা আকাশপথে চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। সড়কপথে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সৌদিয়া, ইউনিক, টিআর ট্রাভেলস, গ্রিনলাইন ও হানিফ এন্টারপ্রাইজের বিভিন্ন বাস চট্টগ্রামের পথে যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সুবর্ণ, তূর্ণা-নিশিথা, মহানগর কিংবা চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। আর কম সময়ে যেতে চাইলে শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্সে মাত্র ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন
চট্টগ্রামের স্টেশন রোড, জেএসসি মোড় বা আগ্রাবাদ এলাকায় বিভিন্ন মানের হোটেল খুঁজে পাবেন। আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল স্টার পার্ক, হোটেল ডায়মন্ড পার্ক, হোটেল মিসখা, হোটেল হিল টন সিটি, এশিয়ান এসআর হোটেল, হোটেল প্যারামাউন্ট, হোটেল সাফিনা ও হোটেল সিলমন উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন
বাঁশখালীতে সাধারণ মানের বেশ কিছু হোটেল ও মনছুড়িয়া বাজারে খুচরা চা-নাশতার দোকান আছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরে বাঙালি, চাইনিজ বা ফাস্টফুডের বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট আছে। আর সুযোগ থাকলে অবশ্যই চট্টগ্রামের জনপ্রিয় মেজবানি খাবার ও কালা ভুনা খেয়ে দেখবেন।

চট্টগ্রামের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রামের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে ওয়ার সিমেট্রি, ফয়’স লেক, মহামায়া লেক, জাম্বুরি পার্ক, চন্দ্রনাথ পাহাড়, হাজারিখিল অভয়ারণ্য ছাড়াও বেশকিছু আকর্ষণীয় ঝরনা রয়েছে।

ভ্রমণ পরামর্শ
সমুদ্রসৈকতে দোকানপাট তেমন নেই, তাই শুকনো খাবার ও পানি সঙ্গে রাখুন। ফেরার সময় যানবাহনের সংকট হতে পারে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে নিতে পারেন। সমুদ্রে নামার সময় সতর্ক থাকুন এবং স্থানীয় লোকজনের পরামর্শ নিন।

স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্ন জল্লাদখানা বধ্যভূমি

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম
স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্ন জল্লাদখানা বধ্যভূমি
জল্লাদখানা বধ্যভূমি

মিরপুর-১০, ডি ব্লক, মাঝখান দিয়ে প্রশস্ত রাস্তা চলে গেছে কালশীর দিকে। রাস্তার দুই পাশে ঝুটের (গার্মেন্টস কাটপিস) বাজার। ছোট ছোট টিনের দোকান তাতে ঝুটভর্তি, কোলাহল, দরদাম চলছে হরদম। এ পথে সোজা চলে গেলে, রাস্তার শেষ মাথায় একটি স্থাপনা পত পত করে উড়ছে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। তোরণের দুই দিকে লাল জমিনে সাদা রঙ্গে লেখা ‘একাত্তরের গণহত্যা ও শহিদদের কথা বলবে শতকণ্ঠে জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ’ ও ‘কান পেতে শুনি কী বলিতে চাইছে জল্লাদখানা বধ্যভূমি’।
একটা সিঁড়ি নেমে গেছে মূল স্থাপনার দিকে, সিঁড়ি ভেঙে ভেতরে ঢুকতেই কানে এল ঘণ্টার ধ্বনি। তিন থেকে চারজন স্কুলপড়ুয়া ছেলে ঘণ্টা বাজাচ্ছে। হাতের ডান দিকে প্রথমেই চোখে পড়বে একটা খোলামেলা ঘর। ঘরের মাঝখানে দুটি সিমেন্টের বেঞ্চ ও একটা টেবিল। চারকোনায় আরও চারটি টেবিল। কর্নার টেবিলগুলোতে বিভিন্ন ফাইলে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাঙালি হত্যার কালো ইতিহাস। মূল টেবিলে মন্তব্য খাতা।
দুজন লোককে বসে থাকতে দেখে তাদের পরিচয় জানতে চাইলাম। একজন এখানকার গার্ড আর অন্যজন মালি। তাদেরই পরম মমতায় বেড়ে উঠেছে এখানকার প্রত্যেকটি গাছ ও লতাপাতা।
জানতে চাইলাম, ‘এখানে ঘণ্টা কেন? ঘণ্টা দিয়ে কী বোঝায়?’
‘ঘণ্টা বাজিয়ে শহিদদের স্মরণ করা হয়, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত করা হয়। প্রকাশ পায় সত্য ও ন্যায়ের বাণী, চেতনার ঘণ্টা বলতে পারেন’, গার্ড উত্তর দিলেন।
তিনিই জাদুঘরটি ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন। ভেতরের দেয়ালের চারপাশের বেদিতে মর্মর পাথরে খোদাই করা হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বধ্যভূমির নাম। ছয়টি কাচের বক্সে রাখা আছে ছয়টি বিভাগের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমিগুলোর মাটি। মাঝখানের দেয়ালে রফিকুন নবী ও মুনিরুজ্জামানের তৈরি ভাস্কর্য ‘জীবন অবিনশ্বর’ এতে মৃত্যু ও ভীতির অমানিশা থেকে নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ব্যাপারটিকে তারা ফুটিয়ে তুলেছেন দক্ষ হাতে, পরম আবেগে।
ডানে শেষ কোনায় কাচে ঘেরা একটি ২০ ফিট প্রশস্ত স্তূপ। এটিই সেই এককালের অত্যন্ত প্রশস্ত ভয়াল মৃত্যুকূপ- পাকিস্তান আমলের ওয়াটার সেপটিক ট্যাংক! মুক্তিযুদ্ধকালীন পুরো ৯ মাস এখানে ধরে এনে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে অসংখ্য অসহায় মানুষকে।
১৫ নভেম্বর, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের সহযোগিতায় এর খনন কাজ শুরু হয়। ২৩ নভেম্বর খনন কাজ শেষ হওয়ার পর এখান থেকে তিন ট্রাক হাড়গোড় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্ধার করা হয় ৭০টি মাথার খুলি ও ৫ হাজার ৩৯২টি অস্থি। এই হাড়গুলোর মালিকদের এই জল্লাদখানায় এনে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালে। 
পাশের ঘরটির সামনে লেখা ‘জুতা খুলে প্রবেশ করুন’। ভেতরে আরেকটি কাচে ঢাকা কূপ, ভয়াবহ ‘ওয়াটার সেফটি ট্যাঙ্ক’টির আরেকটি অংশ। কাচে ঢাকা একটি শোকেসে সাজানো আছে জামা, তসবিহ, স্যান্ডেলসহ কিছু নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র। এগুলো সেসব হতভাগ্য মানুষের ব্যবহার্য জিনিসপত্র যাদের ধরে আনা হতো ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে। হয়তো গভীর রাতে ঘুমন্ত কোনো শিশুর আলিঙ্গন থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছিল তার বাবা কিংবা মাকে, হয়তোবা তাকেও। ভারী মন নিয়ে বাইরে আঙিনায় বের হয়ে আসলাম, তখনো দিনের আলো নেভেনি।

ইতিহাস
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মিরপুরের বিহারি অধ্যুষিত এলাকাগুলো সাধারণত বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙালিদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর বিহারি, রাজাকার, আলবদর, আল-শামস, তাদের ট্রেনিংপ্রাপ্ত জল্লাদ দিয়ে গলা কেটে বড় বড় সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে ফেলে রাখত।
এ বধ্যভূমি থেকে ৭০টি মাথার খুলি, ৫ হাজার ৩৯২টি অস্থিখণ্ড, মেয়েদের শাড়ি, ফ্রক, ওড়না, অলংকার, জুতা, তসবিসহ শহিদদের ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছিল।

বর্তমান অবস্থা
১৯৯৮ সালে তৎকালীন সরকার দেশের বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিতকরণ ও সংস্কারের প্রকল্প গ্রহণ করে এবং ১৯৯৯ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের সহযোগিতায় মিরপুরের দুটি জায়গায় খননকাজ চালায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আবিষ্কৃত হয় দুটি বধ্যভূমি। এরপর এ দুটিসহ পুরো মিরপুরে মোট চারটি বধ্যভূমি চিহ্নিত করা হয়।
২০০৮ সালে তৎকালীন সরকার পুনরায় জল্লাদখানা কর্মসূচি শুরু করে এবং স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইনের সার্বিক পরিকল্পনায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রচেষ্টায় তৈরি করা হয় জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ। এর পূর্বপাশে রয়েছে টেরাকোটা ইট ও লোহার সমন্বয়ে তৈরি শিল্পী রফিকুন নবী ও মুনিরুজ্জামানের যুগ্মভাবে করা একটি ভাস্কর্য ‘জীবন অবিনশ্বর’। ২০০৭ সালের ২১ জুন এই স্থাপনাটির দ্বার উন্মোচন করা হয়।
প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ দর্শনার্থী এই স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ এখানে এসেছেন। নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে এবং সেই সময়ের বর্বরতার সাক্ষ্য প্রত্যক্ষ করতে সবার, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের এই বধ্যভূমি পরিদর্শন করা উচিত। এই বধ্যভূমি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাধীনতার মূল্য কত বড় এবং এই স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য।


জল্লাদখানা বধ্যভূমি যাওয়ার উপায়
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জল্লাদখানা বধ্যভূমি যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে সহজেই এই স্থানে যাওয়া যায়। গোলচত্বর থেকে ১১ নম্বর সেকশনের দিকে যেতে বেনারসি পল্লির পাশেই এর অবস্থান। আপনি বাস, রিকশা, অটোরিকশা অথবা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে যেকোনো রিকশা বা অটোরিকশাওয়ালাকে জল্লাদখানা বধ্যভূমি বললেই তারা আপনাকে সেখানে নিয়ে যাবে। বাসে করে যেতে চাইলে, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে যেসব বাস ১১, ১২ নম্বর সেকশনের দিকে যায় সেগুলোতে উঠতে পারেন। বেনারসি পল্লিতে নেমে কিছুটা হাঁটলেই জল্লাদখানা বধ্যভূমি পৌঁছে যাবেন। গাড়িতে করে গেলে, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ১১ নম্বরের দিকে রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলেই বেনারসি পল্লির পাশে জল্লাদখানা বধ্যভূমি দেখতে পাবেন।

ঢাকায় আরও দর্শনীয় স্থান
ঢাকা জেলা বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের প্রাণকেন্দ্র এবং দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই জেলা তার ঐতিহাসিক স্থাপনা, আধুনিক স্থাপত্য এবং শহুরে জীবনের বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। ঢাকার সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে লালবাগ কেল্লা, যা মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন; জাতীয় সংসদ ভবন, টাকা জাদুঘর, চিড়িয়াখানা এবং আহসান মঞ্জিল, যা ঢাকার জমিদার আমলের স্মৃতিচিহ্ন। এছাড়া, সদরঘাট, ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঢাকার ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিলিত রূপকে তুলে ধরে।

ঘুরে আসুন দার্জিলিং টিলা

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৪ পিএম
ঘুরে আসুন দার্জিলিং টিলা
ছবি সংগৃহীত

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের একেক চা বাগানের সৌন্দর্য একেক রকম। নয়নাভিরাম সেই সৌন্দর্যের টানে বছরজুড়েই পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে এই চায়ের রাজধানীতে। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলে পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এমআর খান চা বাগানের ‘দার্জিলিং টিলা’।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে এমআর খান চা বাগানের অবস্থান। বাগানের ৭ নম্বর সেকশনটি অনেকটাই ভারতের দার্জিলিংয়ে অবস্থিত চা বাগানের মতো। সাজানো-গোছানো জায়গাটি তাই সবার কাছে পরিচিতি পাচ্ছে দার্জিলিং টিলা নামে। 
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমের কারণে কয়েক মাস ধরে পর্যটকদের কাছে জায়গাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছুটির দিনগুলোয় এই জায়গায় স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। একসময় জায়গাটিতে যেতে অনুমতির প্রয়োজন হলেও এখন লোকজন বেশি হওয়ায় চা বাগান কর্তৃপক্ষও জায়গাটি প্রায় উন্মুক্ত করে দিয়েছে। চা বাগানে প্রবেশের সময় নাম-ঠিকানা লিখে ভেতরে যেতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
এমআর খান চা বাগানের দার্জিলিং টিলায় গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে এসেছেন পর্যটকরা। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে। ছবির মতো সাজানো চা বাগানে ঘুরে ঘুরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন তারা। শ্রীমঙ্গলের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রের চেয়ে এখন এই জায়গায় ভিড় একটু বেশিই দেখা যায়। মোটরসাইকেল, জিপ ও অন্যান্য যানবাহনে করে লোকজন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে যাওয়া-আসা করছেন।
খুলনা থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে এর আগেও কয়েকবার এসেছি। এই জায়গার খোঁজ পাইনি। এবার আসার সময় ফেসবুকে দেখে এসেছি দার্জিলিং টিলাটি। শ্রীমঙ্গল এসেই এখানে এলাম। বেশ মনোমুগ্ধ কর জায়গা। চা গাছগুলো খুবই সুন্দর করে লাগানো। টিলার ওপর থেকে দেখতে খুব ভালো লাগে।’ এদিকে ঘুরতে আসা মানুষের অনেকেই প্লাস্টিকের বোতল, খাবারের প্যাকেটের মতো ময়লা-আবর্জনা ফেলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ চা গাছের পাতা ছিঁড়ে জায়গাটি নষ্ট করছেন।
এমআর খান চা বাগানের স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, বাগানের মধ্যবর্তী স্থানের ৭ নম্বর সেকশনটি দেখার জন্য আগেও বিভিন্ন সময় মানুষ আসতেন। এখন কয়েক মাস ধরে প্রচুর মানুষের ভিড় হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের পর্যটকরা আসছেন। এখানে লোকজন আসাতে ভালো লাগছে, আবার ক্ষতিও হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অনেকে ময়লা ফেলে যাচ্ছেন। গাছের পাতা তুলে নিচ্ছেন। ক্ষতি হলেও কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। সবাই ইচ্ছেমতো আসছেন, দেখছেন, ছবি তুলছেন। এই জায়গায় পর্যটকদের জন্য কিছু স্থাপনাও করা হয়েছে। যারা এখানে আসছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, জায়গাটা নষ্ট করতে কেউ আসবেন না।

দার্জিলিং টিলার অবস্থান এবং বিশেষত্ব
দার্জিলিং টিলা শ্রীমঙ্গলের এমআর খান চা বাগানের ৭ নম্বর সেকশনে অবস্থিত। এটি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে রাধানগর এলাকায়। এলাকাটি চা বাগানের সবুজ সমারোহে ঘেরা এবং টিলাটি দার্জিলিংয়ের চা বাগানের আদলে তৈরি। স্থানীয়রা তাই একে দার্জিলিং টিলা নামে ডাকে। দার্জিলিং টিলায় প্রকৃতির অপূর্ব মেলবন্ধন। চারদিকে সবুজ চা গাছের সারি, উঁচু-নিচু টিলা এবং আঁকাবাঁকা পথ এক নজরেই মন জয় করে। স্থানটির পরিবেশ অত্যন্ত শান্ত, যেখানে পর্যটকরা প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য অনুভব করতে পারেন। শীতল বাতাস, পাখির কিচিরমিচির এবং টিলার ওপরে দাঁড়িয়ে চা বাগানের চমৎকার দৃশ্য পর্যটকদের স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে।

দার্জিলিং টিলায় করণীয়
টিলার সৌন্দর্য উপভোগ: টিলার ওপরে উঠে চারপাশের সবুজ চা বাগান এবং পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হোন।
ছবি তোলা: সবুজ চা বাগান এবং আঁকাবাঁকা পথের পাশে দাঁড়িয়ে স্মৃতির ফ্রেমে ধরে রাখুন আপনার মুহূর্তগুলো।
হাঁটাহাঁটি: টিলার আঁকাবাঁকা পথ ধরে হাঁটুন এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে যান।
পিকনিক: পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব নিয়ে দিন কাটানোর জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
চা বাগানের জীবনধারা পর্যবেক্ষণ: স্থানীয় চা শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখুন এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন।

দার্জিলিং টিলা যাওয়ার উপায়
দার্জিলিং টিলায় যেতে হলে প্রথমে আপনাকে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছাতে হবে। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার জন্য ট্রেন, বাস বা ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করা যায়।
ট্রেন: ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের জন্য পারাবত এক্সপ্রেস এবং উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন সহজলভ্য। ট্রেনে ভ্রমণ করলে সময় লাগে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা।
বাস: ঢাকার সায়েদাবাদ বা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। জনপ্রিয় বাস সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন এবং সৌদিয়া। ভ্রমণের সময় লাগে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা।
শ্রীমঙ্গল শহরে পৌঁছানোর পর স্টেশন রোড থেকে পেট্রল পাম্প এলাকায় যেতে হবে।
সিএনজি অটোরিকশা: পেট্রল পাম্প এলাকা থেকে মোহাজেরাবাদগামী সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে এমআর খান চা বাগানের প্রবেশপথে নামতে হবে। সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে অথবা রিজার্ভ সিএনজি বা মোটরসাইকেলে সরাসরি দার্জিলিং টিলায় পৌঁছানো যায়।
ব্যক্তিগত যানবাহন: প্রাইভেট গাড়ি বা মোটরসাইকেল ব্যবহার করলে সরাসরি টিলার চেকপোস্ট পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে। তবে চা বাগানে প্রবেশের জন্য পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে হতে পারে।

শ্রীমঙ্গলে কোথায় থাকবেন
শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আবাসনের ব্যবস্থা। এখানে আপনি বাজেট-বান্ধব হোটেল থেকে শুরু করে বিলাসবহুল রিসোর্ট পর্যন্ত সবই পাবেন।

কক্সবাজারে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড়

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৬ পিএম
কক্সবাজারে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড়
ছবি : খবরের কাগজ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পুরো রমজান মাস ছিল প্রায় সুনসান। হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্টগুলো ছাড় দিয়েও অতিথি পায়নি। বন্ধ ছিল পর্যটক-নির্ভর রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য ব্যবসা। সেই নীরবতা ভেঙেছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। এই ছুটিতে মানুষের ভিড় বেড়েছে। ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজারের ৫১৬টি হোটেল-মোটেলের ৮০ শতাংশই অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়।

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দুপুরে সৈকতের লাবনী, কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে মানুষ আর মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণে এসেছেন সবাই। কেউ সমুদ্রে স্নানে ব্যস্ত আবার কেউ ছাতার নিচে নেচে-গেয়ে উদযাপন করছেন ঈদের আনন্দ।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, এই পাঁচ দিনে গড়ে দেড় লাখ করে সাড়ে সাত লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তারা বলছেন, এবারের ঈদে ৯ দিনের ছুটিতে চাকরিজীবীদের বড় একটি অংশ সপরিবারে বেড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। আর লম্বা ছুটি বা বিশেষ দিনে ভ্রমণপিপাসুদের বরাবরই পছন্দের জায়গা কক্সবাজার। এখানে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও পাহাড়, নদী, ছড়া, ঝিরি-ঝরণাসহ প্রকৃতির অপরূপ সব সৌন্দর্য দেখার সুযোগ রয়েছে।

হোটেল-মোটেল মালিকরা জানান, রমজান মাসের আগের চার মাসে বিপুলসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ঘুরতে এসেছেন। প্রতি সপ্তাহে গড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ পর্যটক এসেছিলেন। আর গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অন্তত ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছিল। এবার অনেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনলাইন বা ফোনে যোগাযোগ করে কক্ষ বুকিং দিয়েছেন। ২ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে। কক্সবাজার শহর ও মেরিন ড্রাইভের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্টে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

কক্সবাজার হোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আবহাওয়া যেমনই থাকুক, ঈদুল ফিতরে পর্যটন আবারও চাঙা হবে। তবে, বন্ধের ১১ দিনই ব্যবসা জমলে ব্যবসায়ীরা আরও লাভবান হতো। 

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, পরিচ্ছন্ন ভ্রমণপিপাসুরা ভোগান্তি এড়িয়ে নিরাপদ অবকাশ যাপনে পছন্দের হোটেল-মোটেল-কটেজে এরইমধ্যে বুকিং দিয়েছেন। এতে গরমেও পর্যটন ব্যবসা চাঙা হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ২৬ মার্চের পর বন্ধে রমজানেরও কিছু বুকিং আছে জেনেছি, তবে তা উল্লেখ করার মতো নয়। কিন্তু ১ থেকে ৫ এপ্রিলের জন্য বুকিং তুলনামূলক ভালো হয়েছে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, অতীতেও ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে কক্সবাজারে। এবারও এমনটি হতে পারে। এই সময়ে বৃষ্টি হলে সৈকতের চিত্র আরও মোহনীয় হয়ে উঠবে। ঈদ উপলক্ষে পর্যটকের ঢল নামবে এই বেলাভূমিতে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। 

সি সেফ লাইফগার্ডের সিনিয়র লাইফগার্ড জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রমজানে কক্সবাজারে পর্যটক ছিল না বলেই চলে। এ সুযোগে লাইফগার্ড কর্মীরা দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেদের ট্রেনিং কার্যক্রমও চালিয়েছেন। এখন ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের সেবা দিতে সবাই প্রস্তুত।’

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের অতিরিক্ত চাপ বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক টুরিস্ট পুলিশের টহল রয়েছে। টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর রয়েছে।

মুহিববুল্লাহ মুহিব/অমিয়/

দিনাজপুরের পর্যটনকেন্দ্র দর্শনার্থীর অপেক্ষায়

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০১:১৫ পিএম
দিনাজপুরের পর্যটনকেন্দ্র দর্শনার্থীর অপেক্ষায়
দিনাজপুর রাজবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

ঈদ-পরবর্তী দিনাজপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোকে দর্শনার্থীদের জন্য নানা সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। দিনাজপুরের উল্লেখযোগ্য বিনোদন স্পটের মধ্যে রয়েছে স্বপ্নপুরী, দ্য গ্র্যান্ড দাদুবাড়ি রিসোর্ট, চঞ্চল রিসোর্ট, রামসাগর, সুখসাগর, মাতাসাগরের বিশাল জলরাশির মতো বিনোদন কেন্দ্র। এ ছাড়া দিনাজপুরের সিটি পার্কসহ বেশ কিছু বিনোদন কেন্দ্র দর্শনার্থীদের আগমন ঘিরে অপেক্ষার প্রহর গুনছে।

নবাবগঞ্জের আফতাবগঞ্জে জেলার সবচেয়ে বৃহত্তম পিকনিক বা বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা স্বপ্নপুরী। স্বপ্নপুরীর ভেতর দর্শনার্থীদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে দ্য গ্র্যান্ড দাদুবাড়ি রিসোর্ট। রিসোর্টটি নিজস্ব মহিমা ও প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত বলে সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে। দর্শনার্থীদের থাকার জন্য এখানে রয়েছে আবাসিক হোটেল। 

একইভাবে দিনাজপুরের বিরলের চঞ্চল রিসোর্টটি দর্শনার্থীদের আগমনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া দিনাজপুরের উল্লেখযোগ্য পর্যটন এলাকার মধ্যে রয়েছে রামসাগরের বিশাল পুকুর, রাজবাড়ী, সুখসাগর, মাতাসাগরের মতো বিনোদনপিপাসুদের ঐতিহাসিক স্থান। কান্তজির মন্দির ও নয়াবাদ মসজিদও আকর্ষণীয় বিনোদন এলাকা হিসেবে খ্যাত। এখানে ছুটির সময়ে অনেকেই বেড়াতে আসেন এবং সে উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিনোদন স্পটগুলো সাজানো হয়েছে। দিনাজপুরের সবগুলো পর্যটন কেন্দ্র ও স্থান এখন দর্শনার্থীদের অপেক্ষায় রয়েছে।

দিনাজপুর পুলিশ সুপার মারাফাত হোসেন মারুফ বলেন, দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীরা যাতে নির্ভয়ে-নিরাপদে বেড়াতে পারেন সে ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। 

কুয়াকাটায় বুকিং হয়ে গেছে ৮০ শতাংশ হোটেলের কক্ষ

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১১:১৭ এএম
আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১১:১৯ এএম
কুয়াকাটায় বুকিং হয়ে গেছে ৮০ শতাংশ হোটেলের কক্ষ
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত পর্যটন নগরী কুয়াকাটা ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত হয়েছে। সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছরই ঈদের ছুটিতে দেশ-বিদেশের হাজারও পর্যটক এখানে ভিড় জমান। তাদের জন্য আবাসন, নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

এবার ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটিকে কাজে লাগাতে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসবেন কুয়াকাটায়। তাই তাদের বরণে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পর্যটকদের সেবা দেওয়া ১৬টি পেশার ব্যবসায়ীরা। এই লম্বা ছুটিকে সামনে রেখে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে অগ্রিম হোটেল বুকিং। শুধু হোটেলই নয়, নিজেদের সার্বিকভাবে প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

এদিকে রমজান মাসে পর্যটক কম থাকায় সৈকতজুড়ে তৈরি হয়েছে ভিন্নতা। শীত মৌসুমের শেষে বর্ষার শুরুতে সৈকতে উঁচু ঢেউ, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, বর্ষার একটি আমেজ উপভোগে অনেকেই ছুটে আসবেন কুয়াকাটায়।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০০টি হোটেল ও রিসোর্ট এবার ঈদ উপলক্ষে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে। হোটেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই ৮০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। আর বাকিগুলো ঈদের ছুটির প্রথম দিনেই পূর্ণ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতালেব শরীফ বলেন, ‘রমজান মাসজুড়ে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা মন্দাভাবের মধ্যে থাকলেও এবার ঈদে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। পাশাপাশি পর্যটকদের বরণ করতে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।’

হোটেল ব্যবসায়ী মাসুদ পারভেজ সাগর বলেন, ‘রমজান মাসে আমাদের হোটেলগুলো প্রায় পর্যটকশূন্য থাকে। মাঝে মাঝে পর্যটক এলেও তা দিয়ে স্টাফদের বেতনও হয় না। তবে এবার ঈদে অগ্রিম বুকিং ভালো হয়েছে। ঈদের দুই-এক দিন আগেই সব কক্ষ পূর্ণ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করেছে। কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, সৈকত এলাকায় নিয়মিত টহল ব্যবস্থা থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া লাইফগার্ড ও উদ্ধারকারী দলের সদস্যদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু বলেন, ‘পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা এবং যেকোনো হয়রানি বন্ধে আমরা প্রস্তুত। প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের ট্যুর গাইডের সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপত্তা ও ভ্রমণ সহযোগিতায় কাজ করবেন।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।’

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছি। সন্দেহজনক কিছু দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’