ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ০২:০৬ পিএম
আপডেট: ১৩ মে ২০২৫, ০২:১৭ পিএম
সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান
জাফলং, সিলেট।

সিলেট জেলা ভ্রমণের জন্য একটি অসাধারণ গন্তব্য। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়, ঝরনা, চা বাগান ও হাওর পর্যটকদের মন জয় করে। জাফলং, রাতারগুল, লালাখাল, মাধবকুণ্ড ও বিছনাকান্দি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য নিদর্শন। শাহজালাল ও শাহ পরানের মাজারসহ ধর্মীয় স্থানগুলো আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি করে। চা-বাগানের সবুজ মাঠ ও পাহাড়ি রাস্তা ভ্রমণে রোমাঞ্চ যোগ করে। এখানকার আতিথেয়তা ও সিলেটি সংস্কৃতি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। সিলেট শহরে থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা থাকায় ভ্রমণ সহজ হয়। সব মিলিয়ে সিলেট ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ গন্তব্য। আসুন দেখে নেই সিলেট জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান —

▶ জাফলং: ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা, নদী, পাহাড় ও পাথর উত্তোলনের জন্য বিখ্যাত।

▶ বিশ্বনাথের রামকৃষ্ণ আশ্রম: ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক স্থান, শান্ত পরিবেশ।

▶ ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর: পরিষ্কার পানির ঝরনা, সাদা পাথর ও নীল জলরাশি মিলিয়ে স্বর্গীয় দৃশ্য।

 

বিছনাকান্দি

 

▶ লালাখাল: সিলেটের সারি নদীর অংশ; নীলাভ পানির জন্য জনপ্রিয়।

▶ পান্তুমাই জলপ্রপাত: ভারতের সীমান্তঘেঁষা গ্রামে অবস্থিত; প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি।

▶ বিছনাকান্দি: পানি, পাথর আর পাহাড়ের একত্র মেলবন্ধন। বর্ষাকালে সবচেয়ে মনোরম।

▶ হাকালুকি হাওর: বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর; পাখি ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর।

▶ তামাবিল: সীমান্তবর্তী এলাকা, পাহাড়ি দৃশ্য এবং পাথরের নদী।

 

জৈন্তাপুর রাজবাড়ি

 

▶ মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত: দেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাত, চা-বাগান ও পাহাড়বেষ্টিত।

▶ হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার: সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে, ইসলামী ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

▶ হযরত শাহ পরান (রহ.) এর মাজার: শাহজালাল (রহ.)-এর ভ্রাতুষ্পুত্র, পাহাড়চূড়ায় অবস্থান।

▶ গোলাপগঞ্জের চন্দ্রনাথ পাহাড়: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান, দর্শনীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ।

▶ ফাতেমা রাজিয়া মাজার: পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত, ধর্মীয় পর্যটন স্থান।

 

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

 

▶ আলী আমজদের ঘড়ি: সিলেট শহরের প্রাচীনতম ঘড়ি, ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।

▶ জৈন্তাপুর রাজবাড়ি: জৈন্তা রাজ্যের স্মৃতি বহনকারী প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।

▶ শ্রীহট্ট মিউজিয়াম: সিলেটের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষিত।

▶ ইতিমাদ খান মসজিদ: মুঘল আমলের ঐতিহাসিক মসজিদ, কারুকাজে সমৃদ্ধ।

▶ চরারবন্দর দরগাহ: আধ্যাত্মিক স্থান ও ধর্মীয় কেন্দ্র।

 

মালনীছড়া চা বাগান

 

▶ হামহাম জলপ্রপাত (লাউয়াছড়া সংলগ্ন): গহীন অরণ্যের মাঝে গোপন জলপ্রপাত, অ্যাডভেঞ্চারের জন্য আদর্শ।

▶ কালা পাহাড় ও মাজার: ধর্মীয় ইতিহাস ও প্রকৃতির মিশেল।

▶ মালনীছড়া চা বাগান: উপমহাদেশের প্রাচীনতম চা বাগান, সিলেট শহরের নিকটে।

▶ লাক্কাতুরা চা বাগান: সিলেট শহরের একদম কাছেই, সবুজে মোড়া প্রাকৃতিক পরিবেশ।

 

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

 

▶ জিনেরগাছ চা বাগান (ফেঞ্চুগঞ্জ): অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শ্রমজীবী সংস্কৃতির মিলনস্থল।

▶ ভোলাগঞ্জের পাহাড়ি ট্রেই: হাইকিং ও ট্রেকিংয়ের জন্য আদর্শ।

▶ নাজিরের বাজার চা বাগান: দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত, নিরিবিলি পরিবেশ।

▶ টেকেরঘাট: চুনাপাথরের খনি ও পাহাড়ঘেরা অঞ্চল, প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোমুগ্ধকর।

▶ হাইল হাওর: বিপুল পাখির আবাস, বিশেষ করে শীতকালে।

▶ সাতছড়ি উদ্যান (আংশিক সিলেটে): গহীন বনের মাঝে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা।

 

পান্তুমাই জলপ্রপাত

 

▶ রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট: দেশের একমাত্র মিঠা পানির বন, বর্ষাকালে নৌকাভ্রমণের জন্য জনপ্রিয়।

▶ বড় হাওর (সুনামগঞ্জ সীমানা সংলগ্ন): মাছ ও পাখির আধার; কৃষি নির্ভর জনজীবনের প্রতিচ্ছবি।

▶ সোনারগাঁও গ্রাম (সিলেট সদর): কৃষ্টিবান সিলেটি সংস্কৃতির চিত্র।

▶ পাখির দ্বীপ (হাকালুকি হাওরে): দেশি-বিদেশি পাখির অভয়ারণ্য।

 

লালাখাল

 

▶ গোয়াইনঘাটের মাছের বাজার: স্থানীয় জীবনধারা পর্যবেক্ষণের জায়গা।

▶ আলীরগাঁও পাহাড় ও গ্রাম: গ্রামের ছায়াঘেরা পরিবেশ ও পাহাড়ি সৌন্দর্য।

▶ চিলাউড়া-হলদিপুর রেলস্টেশন: সিলেটের পুরনো স্থাপত্য নিদর্শন।

▶ ড্রিমল্যান্ড পার্ক (সিলেট শহর): শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় থিম পার্ক।

 

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

 

▶ মেরিনা পার্ক: শহরের মাঝে আধুনিক পার্ক, পরিবারসহ সময় কাটানোর উপযুক্ত স্থান।

▶ কাজীটুলা বিনোদন কেন্দ্র: স্থানীয় পর্যটকদের জন্য পারিবারিক সময়ের জায়গা।

▶ কাজলশাহ পার্ক: প্রাকৃতিক ছায়াঘেরা পরিবেশে হাঁটার সুযোগ।

▶ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা: সংস্কৃতি ও ইতিহাস মিলিয়ে স্থানীয়দের মিলনমেলা।

সমুদ্রপাড়ে শুরু হচ্ছে ডিসকোর্স বাই দ্য শোর: ট্যুরিজম আর্কিটেকচার সামিট

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১০:১৩ এএম
সমুদ্রপাড়ে শুরু হচ্ছে ডিসকোর্স বাই দ্য শোর: ট্যুরিজম আর্কিটেকচার সামিট
ছবি: খবরের কাগজ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকতের নগরী কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘ডিসকোর্স বাই দ্য শোর: ট্যুরিজম আর্কিটেকচার সামিট-২০২৫’।

আগামী ১১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতের পরিবেশবান্ধব মারমেইড বিচ রিসোর্টে এই সম্মেলন শুরু হবে। শেষ হবে ১২ জুলাই। এই সম্মেলনে মূলত পরিবেশবান্ধব পর্যটন এবং জলবায়ু নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সম্মেলনের আয়োজক প্রতিষ্ঠান মারমেইড বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, সম্মেলনে উপকূলীয়, সাংস্কৃতিক এবং টেকসই প্রসঙ্গে কাজ করা স্থপতিরা অংশ নেবেন। তারা পর্যটননির্ভর উন্নয়নে স্থাপত্যের ভূমিকা পুনর্নির্মাণ করবেন। কক্সবাজার এখনো বিকাশমান একটি অঞ্চল, পরিবেশবান্ধব কক্সবাজার গড়তে এই সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কক্সবাজারে ইতোমধ্যে অপরিকল্পিতভাবে পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস, কটেজ ও কয়েকশ রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরের প্রধান সড়ক, সৈকত সড়কসহ অলিগলি ডুবে যায়। হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে সমুদ্র ও নদীর পানিতে। তাতে পরিবেশ-প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা কক্সবাজারের প্রাকৃতিক পরিবেশও নানা কৌশলে ধ্বংস হচ্ছে। ভ্রমণে আসা পর্যটকদের বিনোদনে নতুন ক্ষেত্রও তৈরি হচ্ছে না।

দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে স্থাপত্যের মাধ্যমে কীভাবে টেকসই পর্যটনকে সমর্থন করা যায় এবং পরিবেশগত ভারসাম্য ও সাংস্কৃতিক ঐহিত্য তুলে ধরা যায়- এর একটা উপায় বের করা হবে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম, খোন্দকার হাসিবুল কবির ও এহসান খান। বিকেলে সাতজন স্থপতি তাদের প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করবেন। পরে একটি গাইডেড সান-সেট মেডিটেশনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশে নকশা তৈরি করা হবে।

দ্বিতীয় দিনে আরও ১০ জন স্থপতি দুটি সেশনে তাদের ধারণাগুলো তুলে ধরবেন। সম্মেলন শেষ হবে একটি ওপেন ফ্লোর প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে, যার মডারেটর হিসেবে থাকবেন মাহমুদুল আনওয়ার রিয়াদ ও নাহাস খলিল। সমাপনী বক্তব্যে সম্মেলনের সারমর্ম তুলে ধরবেন মেরিনা তাবাসসুম।

মুহিবুল্লাহ/সুমন/

টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউজবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১০:০২ এএম
টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউজবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
ছবি: খবরের কাগজ

দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট (আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি) হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ারের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ এবং প্রতিবেশগত ক্ষতি রোধ করতে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও এর আশেপাশে হাউজবোট চলাচল বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন।

রবিবার (২২ জুন) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করীম এ নির্দেশনা জারি করেন।

জানা যায়, সম্প্রতি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটক অনেক বেড়েছে। পর্যটকদের নিয়ে হাউজবোট, ট্রলার সরাসরি ওয়াচ-টাওয়ারের গিয়ে এর পাশে হিজল, করচের বাগানে অবাধে ঘুরাফেরা করা, ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে যত্রতত্র চলাচল করায় মাছের অভয়াশ্রমের ক্ষতি করা, বড় বড় হাউজবোটগুলো হিজল ও করচ গাছের সঙ্গে বেঁধে গাছের ক্ষতি করা ছাড়াও পর্যটকদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য হাওরের মারাত্মক ক্ষতি করছে। সেইসঙ্গে হাওরে উচ্চস্বরে গান বাজানোসহ নানা অভিযোগ পাওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই নির্দেশনা জারি করা হয়।

সুনামগঞ্জ পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা টাঙ্গুয়ার হাওরের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলে আসছি। আজকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এটিকে সাধুবাদ জানাই। তবে টাঙ্গুয়ার হাওরের মূল সৌন্দর্য ওয়াচ টাওয়ার এলাকা। সেখানে পর্যটকেরা কীভাবে যাবেন তাও নির্দেশনায় বলা দরকার। সেইসঙ্গে স্থানীয়দের এখানে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছি। স্থানীয়দের জীবিকা ঠিক রাখতে তাদের ছোট নৌকা, হাত দিয়ে চালাতে পারে এমন নৌকা বানাতে সরকারকে তাদের পাশে থাকা দরকার বলেও মনে করি। 

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও চলতি দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করীম জানান, পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা রেজোয়ানা হাসানের নির্দেশে সুনামগঞ্জের জীব-বৈচিত্রর আধার টাঙ্গুয়ার হাওরের জীব-বৈচিত্র রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনায় টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও এর আশেপাশের এলাকা হাউজবোট চলাচলেরর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা জারি থাকবে।

দেওয়ান গিয়াস/অমিয়/

ছুঁয়ে এলাম ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
ছুঁয়ে এলাম ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’
ছবি: লেখক

রৌদ্রস্নাত পড়ন্ত বিকেলের নিস্তব্ধতায় অবশেষে পৌঁছুতে পারলাম। এ যেন অনেক দিনের কাঙ্খিত ক্ষণটি এল। গাড়ি থেকেই দেখা যাচ্ছিল চারিদিকে সবুজের সমারোহ। নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা পেতে অপেক্ষায় প্রকৃতি। চা বাগান দর্শন এটিই প্রথম নয়। চা বাগান মানেই যে সবুজের চাদর বিছানো উঁচু-নিচু টিলায় দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দৃশ্য তা মনে গেঁথে আছে তখন থেকেই যখন প্রথমবার শ্রীমঙ্গলের চা বাগান প্রদর্শন করেছিলাম বছর কয়েক আগে। এবারের এই চা বাগান দর্শনে ভিন্নতা আছে। উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ও প্রাচীন প্রতিষ্ঠিত ও সর্ববৃহৎ চা বাগান মালনীছড়া বলে কথা।

সবুজে ঘেরা অনিন্দ্যসুন্দর মালনীছড়া! বাগানটির প্রবেশ পথ দেখতেই ড্রাইভারকে থামাতে বলে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সঙ্গে মিরাক্কেলখ্যাত স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান আবু হেনা রনি ভাই। মজার মানুষ বটে। এ ছাড়াও বাংলা পুঁথি গবেষক, পুঁথি সংগ্রাহক ও পুঁথি শিল্পী এথেন্স শাওন ভাইয়ের পরম ও সরস সান্নিধ্য ছিল।

চোখ যেনো মাটিতে পড়ে না। রূপসীর অতুলনীয় রূপে ডুবে যেতে লাগলাম। ‘পড়ে না চোখের পলক’ স্টাইলে দেখা যাকে বলে। স্যাট স্যাট ছবি তোলার কাজটি চলছে। সমানে চলছে ভিডিও ধারণও। খাদিমনগর ইউনিয়নে বিমানবন্দর সড়কের পাশে অবস্থিত এই চা বাগান। বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান মালনীছড়া। স্থানীয় ভাষায় বলা হয়- ‘মালনীচেরা চা বাগান’। যেখানে চলছে সবুজের চাষাবাদ। ইংরেজি বানানটাও বোধ করি সেখান থেকে লেখা হয়। সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটার। সিলেট শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে লাক্কাতুরা ও মালনীছড়া চা বাগানের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার।

চায়ের দেশ মূলত চীন। প্রাচীন চীনাদের হাত ধরে এগিয়ে যায় চায়ের চাষ। জানা যায়, চীন দেশে ১৬৫০ সালে প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়। চা পান করাকে দেশটির তৎকালীন বুদ্ধিজীবী সমাজ নাকি দৈনন্দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি মনে করতেন। চীনাদের প্রায় ২০০ বছর পরে ১৮৫৪ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের সিলেটে প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়। প্রচলিত আছে, এ সময় ইংরেজরা চা আসক্ত হয়ে পড়েন। চীনের ছোঁয়ায় ভারতবর্ষের আসাম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় চা চাষ শুরু হয়। ব্রিটিশদের তত্ত্বাবধানে ১৮২৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর তীরসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় চা উৎপাদনের চেষ্টা করা হয়। চায়ের ফলন আশানুরূপ হয় না। ব্রিটিশরা হাল ছাড়েনি। ১৮৪৭ সালে মালনীছড়া চা বাগান করে সফলতা আসে। এখান থেকে ধীরে ধীরে চা’র বাণিজ্যিক প্রসার ঘটে।

গবেষকরা বলছেন, চট্টগ্রামের কোদালা চা বাগান দেশের প্রথম চা বাগান। যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৩ সালে। যদিও অন্যান্য গবেষকদের মতে, ১৮৫৪ সালে দেশে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চালু হওয়া চা বাগান মালনীছড়া। মালনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমেই দেশে চা চাষের গোড়াপত্তন। যদিও চা বোর্ডের রেকর্ডপত্রে বাগানের প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৫৬ সালের ১৪ আগস্ট। 

অন্য গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, মালনীছড়া চা বাগানটি মূলত ১৮৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বৃটেনের নাগরিক লর্ড হার্ডসন বাগানটি প্রতিষ্ঠা করেন। শহরের যেকোনো জায়গা থেকে রিকশা কিংবা অটোরিকশায় সহজেই মালনিছড়া চা বাগানে যাওয়া যায়। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ঘুরে আসা যায় যথেচ্ছা।

প্রথম দিকে এই চা বাগান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বহু ইংরেজ। এরপর সময়ের পরিক্রমায় যুক্ত ছিলেন পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি নানান ব্যবস্থাপক। এই চা বাগানের মোট আয়তনের ৭০০ একর জায়গা জুড়ে রাবার ও সাত একর জায়গায় কমলা উৎপাতি হচ্ছে। বাগানে স্থায়ী-অস্থাীয় মিলে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিনই দল বেঁধে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভিড় জমান এই সবুজের মেলায়।

বিভিন্ন প্রতিবেদন মতে, দেশে উৎপাদিত মোট চা’র ৯০ শতাংশই উৎপন্ন হয় সিলেটে। বাংলাদেশের ১৬৩টি চা বাগানের মধ্যে ১৩৫টির অবস্থান বৃহত্তর সিলেটে। এ জন্যেই সিলেটকে ‘দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশ’ বলা হয়। বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি চা বাগান। যার মধ্যে মালনিছড়া, লাক্কাতুরা, তারাপুর, দলদলি, খাদিম, বড়জান, গুলিন, আলী বাহার, হাবিব নগর, আহমদ টি এস্টেট, খান চা বাগান, লালাখাল টি এস্টেট, শ্রীপুর চা বাগান ও মুলাগুল চা বাগান উল্লেখযোগ্য।

নাটক ও সিনেমার ভাল শুটিং স্পটও এই মালনীছড়া চা-বাগানসহ আশপাশের এসব চা-বাগান। ছুটির দিনগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই হাজারো মানুষের ভিড় হয় চা বাগানে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালনীছড়া চা বাগানে চা গাছের পাশাপাশি কাঁঠালগাছই রয়েছে এক লাখের বেশি। এর বাইরে দারুচিনি, গোলমরিচ, জলপাই, হরীতকী, আমলকী, অর্জুন, জাম, আম, লটকন ও বেলসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে এই চা বাগানে। প্রচলিতভাবে এসব গাছের বিভিন্ন ফল নাকি চা-শ্রমিকরা বিনা পয়সাতেই নিজেদের মতো খেতে পারেন! যদিও এর সত্যতা বলার অধিকার শ্রমিকদের।

এক আকাশ মুগ্ধতা নিয়ে সিলেট শহরের খুব কাছেই সবুজ ছড়াচ্ছে চা বাগানটি। মাঝে মাঝে টিলাবেষ্টিত ছোট ছোট জনপদ চোখে পড়বে। পাহাড় ও টিলার পাশ ঘেঁষে নেমে গেছে আঁকাবাঁকা কত মেঠোপথ, তার ইয়ত্তা নেই। বাগানের অভ্যন্তরে কোনো যান্ত্রিক দূষণ বা শহুরে কোলাহল নেই। পিনপতন নিরবতা। চা পাতা তোলার মৌসুম নয় বলে শ্রমিকদের তেমন দেখা যাচ্ছে না। সারা বাগানে মাহসুখে রং-বেরঙের চেনা-অচেনা পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। কোথাও ছুটে চলছে রূপালী ঝর্ণাধারা। যতদূর চোখ যায় কেবলই সবুজ। হাঁটছি। চায়ের সবুজ পাতাগুলো আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছি। চা বাগানের কোনো এক কোন থেকে ভালোবাসার স্পর্শে হেঁটে আসছেন নবদম্পতি। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার দৃশ্যও চোখ এড়ায় না। মনে হতে পারে তারা চা-বাগানের আশেপাশে কোনো জায়গা থেকে একটু আগেই বিয়ের পিঁড়ি থেকে হানিমুনে চলছেন চা-বাগানের অভ্যন্তরে। তারা এই অনিন্দ্যসুন্দর প্রকৃতিকে স্বাক্ষী রাখতে চায়। পেছনে তাদের ক্যামেরাপার্সনের হাঁক-ডাক, ‘দুজন একটু এভাবে দাঁড়ান’।

উঁচু টিলায় উঠছি। নিচে নেমে যাচ্ছি বাঁকে বাঁকে। কতদূরে এর শেষ? কোনো অন্ত পাচ্ছি না। অগত্যা মামার স্মরণাপন্ন হলাম। গুগল মামা বলছে - প্রায় আড়াই হাজার একর ভূমিস্বত্ব সীমানা নিয়ে উঁচু-নিচু টিলার পর টিলায় ভরা চা-বাগান। সুন্দরীর কোলে উঠে নেমে এলাম। আদি-অন্ত পর্যন্ত পৌঁছানো এবার আর হবে না। সময় কম। সন্ধ্যের ডাক। ফেরার ডাক।

দিগন্তে সূর্য নেমে যাচ্ছে। সূর্য ও আকাশের মিলিত গাঢ় লাল রঙ এখন এসে পড়ছে রূপসীর গায়ে। রাত আর যৌবনের হাতছানি পাচ্ছে মালনীছড়া। সন্ধ্যে নেমে আসায় বুকের মধ্যে ধুকধুকানি শুরু হলো। পর্যটকরা ছাড়ছেন। সন্ধ্যে নামছে আর রূপসীর চেহারা কালো হয়ে উঠছে! কিন্তু না! চারপাশের নিয়ন বাতি আর আকাশের গাঢ় লাল রঙ গায়ে মেখে সে তখন আরেক রূপে ফিরে এল। দারুণ এক স্নিগ্ধতায় ভরে উঠছে চারপাশ। এ এক ভিন্ন মায়াবিনী। লাল-নীল-কালো সন্ধ্যের আলোয় রূপবতী মালনীছড়া। এ যেন তার আরেক আবেদনময়ী রূপের প্রকাশ। চিরযৌবনা। তুমি অপেক্ষায় থাকো।

লেখক: ওয়ালটনের জনসংযোগ বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর
[email protected]

অমিয়/

গরমে পর্যটকদের পছন্দ খাগড়াছড়ির রিছাং ঝরনা

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:১৯ এএম
আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:২০ এএম
গরমে পর্যটকদের পছন্দ খাগড়াছড়ির রিছাং ঝরনা
ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়ির রিছাং ঝরনার শীতল পানিতে গা ভেজাচ্ছেন পর্যটকরা সংগৃহীত

খাগড়াছড়িতে এই গরমে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ‘রিছাং ঝরনা’। তাই তো রিছাং ঝরনার শীতল পানিতে গা ভাসাতে প্রতিবছর বিভিন্ন উৎসব পালনে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। 

তবে এবার ঈদুল আজহার ছুটিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের ছুটির সপ্তম দিনে প্রচুর পর্যটক আসেন রিছাং ঝরনার শীতল পানিতে গা ভেজাতে। খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে রিছাং ঝরনা। মূল সড়ক থেকে নেমে এক কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই শোনা যায় ঝরনার কলতান।

ঝরনায় যাওয়ার পথটাও দারুণ রোমাঞ্চকর। দূরের উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়। জুমঘর, বুনো ঝোপসহ নাম না জানা অসংখ্য বুনো ফুল যেন অভ্যর্থনা জানাবে। আর বাড়তি পাওয়া হিসেবে রয়েছে এক কিলোমিটারের সড়কের দুই পাশে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি। পরিবেশটাই এমন যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের সমাহার। পাহাড়ের বিভিন্ন পাখির কিচিরমিচির শব্দ। গাড়ি থেকে নেমে ঝরনায় পৌঁছার আগে পাহাড় থেকে নামতে হবে। পাহাড় নামার পরেই ২৫০ ধাপের বিশাল এক সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই ঝরনার ধ্বনি। সিঁড়ি শেষ না হতেই ঝরনার দেখা পাওয়া যায়। ঝরনার কাছে গেলে এক স্নিগ্ধতায় দেহ-মন ভরে ওঠে। ১২০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে পড়ে ঝরনার পানি। গত 

শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে গিয়ে দেখা যায় ঝরনার স্বচ্ছ জলে হইহুল্লোড় করছেন বেশ কিছু পর্যটক।

জেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার আর খাগড়াছড়ি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়ক ছেড়ে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে রিছাং ঝরনা। মারমা ভাষায় ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি আর ‘ছাং’ শব্দের অর্থ কোনো উঁচু স্থান হতে গড়িয়ে পড়া। অর্থাৎ কোনো উঁচু স্থান থেকে জলরাশি গড়িয়ে পড়া আবার ত্রিপুরা ভাষায় এর অন্য নাম ‘তেরাং তৈকালাই’। অর্থাৎ তেরাংয়ের অর্থ পানি আর তৈকালাই’-এর অর্থ হচ্ছে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পানি। তবে ঝরনাটি ‘রিছাং ঝরনা’ নামে বেশি পরিচিত। খাগড়াছড়ি জেলার বেশ কয়েকটি ঝরনার মধ্যে ‘রিছাং ঝরনা’ অন্যতম আকর্ষণীয়।

২০০৩ সালে ভ্রমণপিপাসুদের নজরে আসে রিছাং ঝরনাটি। সময়ের ব্যবধানে খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে রিছাং ঝরনা। একসময় এই ঝরনায় যাওয়ার রাস্তা না থাকলেও জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে রাস্তা হওয়ায় পর্যটকরা সহজে এ ঝরনায় যেতে পারছেন। প্রায় ৩৫ মিটার উচ্চ পাহাড় থেকে পানি আছড়ে পড়ছে। এমন মনোরম দৃশ্য আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে যাবে, যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা উপভোগ করার মতো। আর আপনি চাইলে রিছাং ঝরনার পানিতে অনায়াসেই শরীর ভিজিয়ে নিতে পারবেন।

রিছাং ঝরনাটি পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে অবস্থান। ঝরনায় যাত্রা পথটাই দারুণ রোমাঞ্চকর। এই ঝরনাকে ঘিরে প্রতিদিন বহুসংখ্যক পর্যটক এসে ভিড় করেন। আর ঝরনার শীতল পানিতে গা ভিজিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হন।

জেলা শহর থেকে চাঁদের গাড়ি, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে ঝরনার পাদদেশে এসে নেমে প্রায় ২০০ গজ পায়ে হাঁটা পথ। এই সামান্য পাহাড়ি রাস্তায় পাড়ি দিলেই দেখতে পাবেন পাহাড়ের বুক বেয়ে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ছে ঝরনার জলরাশি। হয়তো আপনার ইচ্ছে করবে প্রকৃতির মাঝেই কাটিয়ে দিই সারাক্ষণ। ভ্রমণকারীরা যাতে সহজে রিছাং ঝরনায় পৌঁছতে পারেন তার জন্য এখানে পাকা সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। 

ঝরনা উপভোগ করতে সপরিবার এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী বেলাল আহমদ। তিনি বলেন, ‘ঈদের বন্ধের আগেই আমরা ঠিক করেছি খাগড়াছড়ি দেখতে আসব। পাহাড় দেখার জন্যই ছুটি কাটাতে আমরা খাগড়াছড়ি এসেছি। এ গরমে ঝরনাটি দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। যদিও সিঁড়ি বেয়ে নামতে একটু কষ্ট হয়েছে।’ বেলালের মতো আরও অনেক পর্যটক ঝরনা ঘিরে ভিড় জমিয়েছেন। তারা ঝরনাটি উপভোগ করার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, গুহা, তারেং আর জেলা পরিষদ পার্কও ঘুরে দেখেন। 

রামগড় থেকে ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে এসেছেন সাব্বির মাহমুদ, আরমান হোসেনসহ এক দল তরুণ। তারা জানান, বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানোর ইচ্ছে থাকলেও গরমের কারণে ঝরনায় তারা এসেছেন।

রিছাং ঝরনার ব্যবস্থাপক নিপুণ জয় ত্রিপুরা বলেন, ঈদের দিন থেকে পর্যটকের আসা শুরু হয়েছে। ঈদের পর থেকে এ পর্যন্ত দিন ১০ হাজারের বেশি পর্যটক এসেছেন। সামনে আরও পর্যটক বাড়তে পারে। 

জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘ঈদ কেন্দ্র করে আমাদের সব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যাতে পর্যটক এবং স্থানীয়রা নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারেন। সূত্র: বাসস।

ভ্রমণ ঈদে বাড়ি ফেরা

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ০৮:০৭ এএম
আপডেট: ১১ জুন ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম
ঈদে বাড়ি ফেরা
ছবি: লেখক

এই ঈদে আমার বাড়ি ফেরার অভিজ্ঞতাটি ছিল অস্বাভাবিক, রোমাঞ্চে ভরপুর এবং ক্লান্তিকর হলেও মনে রাখার মতো। ছোট একটি আফ্রিকান দ্বীপ দেশ থেকে শুরু করে, নানা ভাষাগত সমস্যা, ট্রানজিট জটিলতা, ট্রেনের ঝামেলা পেরিয়ে অবশেষে খুলনায় আমার গন্তব্যে পৌঁছানো। আফ্রিকার দ্বীপ সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে থেকে গ্যাবনের লিব্রেভিলে, তারপর ক্যামেরুনের দোয়ালায় কিছুটা সময় কাটাই। ফরাসি ভাষার প্রতিবন্ধকতা ও ভ্রমণের ক্লান্তিতে মনে হলো ঈদে ঘরে ফেরা এখনই জরুরি। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সে দোয়ালা থেকে আদ্দিস আবাবায় পৌঁছে এক রাতের জন্য এয়ারলাইন্সের ফ্রি হোটেলে থাকার সুযোগ পাই। সেখান থেকে বোম্বে, তারপর ইমিগ্রেশন ও লাগেজ জটিলতা শেষে হোটেলে বিশ্রাম নেই। বোম্বে থেকে কলকাতা পৌঁছাতে তিনটি ট্রেন, পুলিশের সহায়তা, ভুল স্টেশন, ট্রেনে সিট না পাওয়া, অবহেলা, টাকা দিয়ে বেড ভাড়া করে রাত কাটানো... সবমিলিয়ে এক রোলারকোস্টার রাইড। কিন্তু কিছু ভালো মানুষ ও বন্ধুর সাহায্য এ যাত্রাকে সম্ভব করেছে। হাওড়া পৌঁছানোর পর শিয়ালদহ থেকে বেনাপোল, এবং অবশেষে খুলনা। বর্ডারে বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন অফিসারদের আন্তরিকতা মন ছুঁয়ে যায়। পাসপোর্টের পাতাগুলি শেষ, শরীর ও মন ক্লান্ত, তবুও পরিবারের মুখ দেখে সব ক্লান্তি ভুলে গিয়েছিলাম। এই ঈদের এই যাত্রা আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। ছয় দিনের জন্য ঈদের ছুটি কাটাতে এসে সাত দিন লেগেছে আসতে।

বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়ে ১৫৮টি দেশ ভ্রমণ করার পর সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে (Sao Tome and Príncipe) 159 Cape varde transit জটিলতার কারণে যাওয়া হলো না। হঠাৎ করে ফরাসি ভাষা ও ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে না পারায় অনেকটা হতাশা নিয়ে বাড়ি ফেরা চিন্তা করলাম। আর যেহেতু সামনে ঈদ, মনে হলো এখনই সুন্দর সময় দেশে ফেরার। তাছাড়া পাসপোর্টেরও পাতা শেষ। নতুন দেশের ভ্রমণের সুযোগ না থাকায় ঈদের বাড়ি ফেরার কথা মনে পড়ল। কিন্তু বাড়ি ফেরাও অতোটা সহজ নয়। সাও টোমে প্রথমে থেকে Libreville, Gabon-তে ২৭ মে তারিখে প্রায় ১৮ ঘণ্টা কাটানোর পরে কেভাত্রে যাওয়ার প্রোগ্রাম পরিবর্তন করে ক্যামেরণের বাণিজ্যিক শহর দোয়ালাতে চলে আসলাম। মনে হলো, এখানে দুটো দিন কাটিয়ে যাই। কিন্তু সেই আবারও ফরাসি ভাষা জটিলতা ও তেমন কিছু দেখার না থাকায় আরও মন খারাপ হয়ে গেল। তখন বাড়ি আসার টিকিট কাটলাম।

দোয়ালা থেকে বোম্বাই এবং বোম্বাই থেকে কলকাতা ও কলকাতা থেকে ট্রেনে ও ট্যাক্সিতে বাড়ি। সোজা চিন্তা করলাম। আমি আফ্রিকা থেকে বাড়িতে ফিরব জুনের ২ তারিখে। এ সময় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে অনেক আড্ডা হবে, ফাঁকে আমার নতুন পাসপোর্টও হয়ে যাবে।

দোয়ালা থেকে ৩০ তারিখ রাতে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে চেপে বসলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। একসঙ্গে ইন্ডিয়া থেকে এদের শপিং। খুবই সুন্দরভাবে ক্যামেরুন থেকে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা পৌঁছালাম। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার ফ্লাইটে চমৎকারভাবে চলে আসলাম। আদ্দিস আবাবা এয়ারপোর্টেই এয়ারলাইন্স ফ্রি হোটেল দিয়েছিল। হোটেল থেকে দুরু দুরু মনে ইমিগ্রেশনে গেলাম ইথিওপিয়ায় ঢুকার জন্য। ওরা আমার পাসপোর্ট দেখে কিছু বলল না। আমাকে চেক করে ভিসা ছাড়াই ইথিওপিয়ায় প্রবেশের অনুমিত দিল। আমি তো মহাখুশি।

এয়ারলাইন্সের ট্যাক্সি এসে এয়ারপোর্টে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তারপর রওনা দিলাম। এয়ারপোর্টে হোটেলের নাম ছিল ড্রিম লাইনার। ঘুরে দেখে দেখলাম আদ্দিস আবাবা শহর। আগেও অবশ্য আসা হয়েছে কিন্তু এভাবে ঘুরে দেখা হয়নি। চলে গেলাম ওখানকার মিউজিয়ামে ও আদ্দিস আবাবা ইউনিভার্সিটিতে। ওখানকার রাজা চমৎকারভাবে তার প্রাসাদটি দান করে গিয়েছেন ইউনিভার্সিটির জন্য। যা তার বিশাল প্রাসাদ বাগানবাড়ি সবকিছুই পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন ক্লাসরুম থেকে শুরু করে লাইব্রেরি হয়েছে। দেখতে অনেকটা আমাদের মতোই, তো ভালই লাগে যখনই আসি। 

৩১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইথিওপিয়া থেকে রওনা দেই বোম্বের উদ্দেশ্যে। যদিও এই ফ্লাইটি একটু ডিলে ছিল কিন্তু যথাসময়ে রাত ২টার দিকে বোম্বে এয়ারপোর্টে পৌঁছায়। তারপর বিশাল লম্বা ইমিগ্রেশন। রাত তিনটা নাগাদ ইমিগ্রেশন শেষ করলাম। তারপর লাগেজ খুঁজতে যেয়ে এক বিশাল ঝামেলা। কোনো ব্যাগের জন্য ট্রলি নেই‌। টানা এক ঘণ্টা কাটানোর পরে মিলে টলি। এয়ারপোর্টের বাইরে সিমকার্ড নিতে নিতে পাঁচটা বেজে গিয়েছে। তারপর এয়ারপোর্টে উবারের ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা। সেখান থেকে টেক্সিতে আগে থেকে বুকিং করা হোটেলে চলে যাই।

হোটেলের দুই কিলোমিটারের মধ্যেই এয়ারপোর্টে। হোটেলে গিয়েই একটা ঘুম দিই। দুই দিন পরে ঘুমানো। ঘুমিয়েছি টানা ছয় ঘণ্টা। তারপর আবার এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছাই ৩টা ১৫মিনিটে। কিন্তু ফ্লাইট ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে পৌঁছালেও এয়ার ইন্ডিয়া আমাকে চেক-ইন করতে দেয়নি।‌ কতক্ষণ কথা বললাম ম্যানেজারের সঙ্গে। কোনো সমাধান হলো না। কোনো উপায় না দেখে ওখান থেকে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করলাম। কিন্তু টিকিটের দাম এত বেশি তা কল্পনার বাইরে। তারপরে হোটেলের এক ভদ্রলোককে ফোন করায় উনি ট্রেনের পরামর্শ দিলেন। তারপর ওখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসের উদ্দেশে রওনা করি। পথে ট্যাক্সি ড্রাইভার অন্য রেলস্টেশনে নিয়ে যায়। তারপর পাশে পুলিশ স্টেশন থাকায় ওখানে অভিযোগ করি। তারপর পুলিশের সাহায্যে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসে পৌঁছাই।

পাক্কা তিন ঘণ্টা এই নাটকীয়তা করে সময় কেটে গেছে। তার মধ্যে ফরেন টিকেট কাউন্টার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ৯টায় একটা ট্রেন ছিল, হাওড়া মেইল এক্সপ্রেস। পুলিশের সাহায্যে এটায় উঠে পড়লাম। কিন্তু এই ট্রেনে কোনো জায়গায় নেই। ফার্স্ট ক্লাসের টিটিই (ভ্রমণকালীন টিকিট পরীক্ষক) খুবই খারাপ ব্যবহার করল বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে। এমনকি পুলিশের কথা বলার পরও। ট্রেনে বাঙালি কিছু স্টাফ ছিল, তারা তাদের থাকার জায়গাটা আমাকে দিয়েছিল এক হাজার টাকার বিনিময়। প্রথম রাতে তো আমি ওদের বিছানায় ছিলাম। পরে সকালে আর একজন টিটি আসেন। উনি আমাকে জরিমানা করে একটি টিকেট দেয়। বলে, নাগপুরের পরবর্তী স্টেশনে সিট পাব। কিন্তু সেই স্টেশন অতিক্রম করার পরও সিটের কোনো হদিস নেই। প্রচণ্ড হতাশা আর ক্লান্ত বিকেলের দিকে দূর নামে একটি স্টেশনে ট্রেন থামে। সেখানে নেমে আইসক্রিম কিনতে যাই। কিন্তু আইসক্রিম কিনতে কিনতে ট্রেনটা ছেড়ে দেয়। হাতে দুটো মোবাইল থাকায় ট্রেনটি ধরতে পারিনি। মোবাইল ধরতে গেলে ট্রেনের হাতল ধরে ওঠা মুশকিল। মোবাইল পড়ে যাবে তাই মোবাইল রেখে দিলাম, ট্রেন ছেড়ে দিলাম। 

ওখানকার পুলিশের সাহায্য নিয়ে আমার লাগেজ হাওড়া মেল ট্রেন থেকে নামিয়ে রায়পুর স্টেশনে রাখে। পুরো জার্নিটাই পুলিশ খুব ভালোভাবেই সাহায্য করে। তারপর পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ লিখিয়ে দূর শহরে ঘুরে খাবার খাই। শহরটা ছোট হলেও আমাদের খুলনা শহরের মতোই। তারপর সন্ধ্যায় আরেক ট্রেন ধরে রায়পুর স্টেশনে যাই। সেখানে বিশাল নামে একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়, যিনি আমাকে আমার লাগেজ ও অন্যান্য জিনিসপত্র পেতে সাহায্য করেন। তারপর হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের World Traveler Group-কে পোস্ট করলে আকাশ নামে একটি বন্ধু আসেন দেখা করতে। সাড়ে সাতটার দিকে রায়পুরে নেমে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রায়পুর শহরটি ভালো করে ঘুরে দেখি। ভালোই লাগে বেশ বড় আছে শহরটি।

তারপর, পুলিশ স্টেশন থেকে লাগেজ নিয়ে স্টেশনে যাই। প্রতিটি স্টেশনে খুব ভিড়। এমনকি ট্রেনের বগিতে ঢোকার জায়গাও নেই। সমস্ত জায়গার মানুষের ব্যাগ, বেডিং দিয়ে ভর্তি। অবশেষে রাত দেড়টার শালিমার এক্সপ্রেস ট্রেন আসে, সেটায় উঠি। ট্রেনটি অত্যন্ত স্লো এবং নোংরা। এখানে খুব একটা কষ্ট করা লাগেনি। কেবিন বয়’রা তাদের একটি বেড আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল ৫০০ রুপির বিনিময়ে। টিটিরাও বেশ আন্তরিকতার ছিল তাই কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এটা দ্রুতগামী ট্রেন নয়। খুবই ধীরে চলে। তার পরের দিন বেলা ১১টার দিকে পাশেই আরেকটি ট্রেন আজাদী দাঁড়িয়েছিল। এটা পুনে থেকে এসেছে, হাওড়া যাবে। তাড়াতাড়ি আমি কয়েকজনকে রিকোয়েস্ট করে ওই ট্রেনটিতে উঠে পড়লাম। ওই ট্রেনে একটু পরিষ্কার ছিল আর বেশ কিছু জায়গাও ছিল থাকার জন্য। টিটিকে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি সিট পেয়ে গেলাম। অবশেষে তিন নাম্বার ট্রেনে রাত সাড়ে আটটায় হাওড়া স্টেশনে পৌঁছালাম।

আগে থেকেই হোস্টেল বুক ছিল। তারপর রাতে কোনোরকম হোস্টেলে গেলাম সেখান থেকেই সুপার মার্কেটে দৌড়ালাম কিছু কেনার জন্য। কিন্তু তেমন কিছুই কিনতে পারিনি। পরে অবশেষে চার তারিখ সকাল ১০টার দিকে রওনা দিলাম শিয়ালদা স্টেশনে। দেখি ১২টা ৪০ মিনিটের আগে কোনো ট্রেন নেই। তারপর অনেক কষ্টে বেনাপোলে আসলাম। বেনাপোল এসে তো মহাখুশি। নতুন বন্দর ওপেন করেছে। খুবই সুন্দর। ভারতের ইমিগ্রেশন বেশ কিছুটা জেরা করে তারপর আমাকে বাংলাদেশ বর্ডারে যেতে দিয়েছে। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আমাকে সাহায্য করে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু সাড়ে তিনটায় পৌঁছে কোনোভাবেই পাঁচটার ভিতর খুলনায় পৌঁছাতে পারলাম না।

এদিকে পাসপোর্টের সবগুলো পাতা শেষ হয়ে গেছে। নতুন পাসপোর্ট না করলে মহামুশকিলে পড়ে যাচ্ছি। যাই হোক অবশেষে চার তারিখ সাড়ে সাতটার দিকে বাড়ি ফিরলাম।
 
ঈদে বাড়ি ফেরার অনেক গল্প রয়েছে স্কুল লাইফে। ঢাকা থেকে খুলনায় আসা যাওয়ার। কিন্তু এই আফ্রিকার ছোট দেশ থেকে কয়েকটি দেশ পাড়ি দিয়ে তারপরে ইন্ডিয়া হয়ে তিনটি ট্রেন পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফেরা যেন অন্যরকম অনুভূতি। দেশে মাত্র পাঁচটি দিন পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারলাম। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গ খুবই ভালো লাগলো। আবারও চলে যেতে হবে। নতুন গন্তব্য অপেক্ষা করছে আগে থেকেই।##