
বগুড়া জেলা বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থান। এখানে প্রাচীন ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, ধর্মীয় নিদর্শন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সমন্বয় রয়েছে। মহাস্থানগড় ও গোকুল মেধ প্রাচীন বাংলার সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাক্ষ্যবহন করে। এগুলো পর্যটকদের ইতিহাসচর্চা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
করতোয়া ও যমুনা নদীর পাড়, সারিয়াকান্দি ঘাট, ধুনট ও শিবগঞ্জ এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের বিমোহিত করে। সেই সঙ্গে, বগুড়ার বিভিন্ন মন্দির, মসজিদ, মাজার ও জমিদার বাড়ি ধর্মীয় ও স্থাপত্যিক গুরুত্ব বহন করে। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পার্ক, খেলার মাঠ ও যাত্রাবিরতির জায়গাগুলোও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আকর্ষণীয়।
বগুড়ার খাবার, বিশেষ করে দই ও চিতই পিঠা, ভোজনরসিক পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। সড়ক ও রেলপথে সহজ যোগাযোগ এবং শহরের নিরাপদ পরিবেশও পর্যটনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। সব মিলিয়ে বগুড়া ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক অনন্য মিশ্রণে পর্যটকদের জন্য একটি সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা উপহার দিতে সক্ষম।
আসুন দেখে নেই বগুড়া জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান —
▶ মহাস্থানগড়: বাংলার প্রাচীন রাজধানী পুণ্ড্রনগরের অবশেষ। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীর ঐতিহাসিক দুর্গনগরী।
▶ গোকুল মেধ (বেহুলার বাসর ঘর): মহাস্থানগড়ের কাছে অবস্থিত প্রাচীন একটি পুরাকীর্তি। এটি মহাভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি ঐতিহাসিক স্থান।
▶ ভাসুবিহার: বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীন বিহার। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বহু মূল্যবান নিদর্শন উদ্ধার হয়েছে।
▶ জলেশ্বরীতলা মন্দির: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি ঐতিহাসিক পূজাস্থল। মহাস্থানগড়ের কাছে অবস্থিত।
▶ পরশুরাম প্যালেস: নবাব আমলের জমিদার বাড়ি, ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।

▶ কাহালু রাজবাড়ি: জমিদার আমলের একটি প্রাচীন রাজবাড়ি, এখন ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিদর্শন।
▶ বারভিপি মসজিদ: মুঘল স্থাপত্যশৈলীর প্রাচীন মসজিদ। দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে পরিপূর্ণ।
▶ শিবগঞ্জ জমিদার বাড়ি: শিবগঞ্জ উপজেলার একটি দৃষ্টিনন্দন পুরনো জমিদার বাড়ি।
▶ মহাস্থান হাইস্কুল: উপমহাদেশের প্রাচীনতম স্কুলগুলোর একটি, স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের সাক্ষী।
▶ সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন: ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন। ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যচিহ্ন।

▶ করতোয়া নদী: বগুড়ার প্রধান নদী, মহাস্থানগড় ও আশপাশের এলাকার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
▶ শাহ সুলতান বলখী (রহ.) মাজার: একজন মুসলিম সাধকের মাজার, স্থানীয়দের কাছে পবিত্র স্থান।
▶ সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর পাড়: নদীভ্রমণ ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য উপযুক্ত স্থান।
▶ আড়িয়াবাড়ি জমিদার বাড়ি: ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি, এখন ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় থাকলেও ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়।
▶ কাহালুর মসজিদ: প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম উদাহরণ, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন।

▶ গাবতলী ফিসারিজ: মৎস্য খামার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র; প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশ্রাম ও ভ্রমণের জায়গা।
▶ নন্দীগ্রাম সেচ প্রকল্প: সেচ কার্যক্রম দেখার পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য উপযোগী।
▶ নওদাপাড়া বটগাছ: প্রায় শতবর্ষী বটগাছ, এলাকার অন্যতম আকর্ষণ।
▶ ধুনটের পল্লী জীবনের দৃশ্য: প্রকৃতি ও গ্রামীণ জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণের সুযোগ।
▶ ফাঁপোড় খাল: অবসর সময় কাটাতে একটি শান্তিপূর্ণ জায়গা।
▶ খান্দার রাজবাড়ি: ইতিহাস ঘেরা এক জমিদার বাড়ি, স্থাপত্যে প্রাচীনতার ছাপ।
▶ শিবগঞ্জ নীলকুঠি: ইংরেজ শাসনামলের নীলচাষ কেন্দ্র।

▶ চেলোপাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভ: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত।
▶ বগুড়া শহীদ খোকন পার্ক: বাচ্চাদের খেলার উপযোগী পার্ক, পরিবারের জন্য আদর্শ।
▶ মাটিডালি বিমানঘাঁটি: পূর্বে ব্যবহৃত ছোট বিমানঘাঁটি, এখন পরিত্যক্ত হলেও দর্শনীয়।
▶ ঠেঙ্গামারা জুট মিল: একটি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান, শিল্পায়নের সাক্ষী।
▶ সরকার পুকুর: বড় পুকুর যা স্থানীয়দের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত।
▶ রাণীরপুকুর: একসময়ের রাজ পরিবার দ্বারা খননকৃত পুকুর।
▶ করতোয়া সেতু: নদীর ওপর নির্মিত পুরনো সেতু, স্থাপত্য ও প্রকৃতির সংমিশ্রণ।

▶ ফুলবাড়ী জমিদার বাড়ি: পুরনো জমিদার প্রাসাদ, বর্তমানে ঐতিহ্যচিহ্ন।
▶ নলডাঙ্গা রাজবাড়ি: ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ জমিদার বাড়ি।
▶ চাঁদপুর ঘাট: যমুনা নদীর পাড়ে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ঘাট।
▶ গোকুল চৌধুরীর বাড়ি: এক সময়ের ধনী ব্যবসায়ীর ঐতিহ্যবাহী বাড়ি।
▶ ভাটকান্দি বিল: প্রাকৃতিক জলাশয়, মাছ ধরা ও পাখি দেখার স্থান।
▶ আমরুল ইউথ পার্ক: বগুড়া শহরতলিতে অবস্থিত বিনোদন কেন্দ্র।
▶ কালীতলা মন্দির: প্রাচীন হিন্দু মন্দির, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

▶ শাজাহানপুর কৃষি খামার: কৃষিভিত্তিক গবেষণা ও দেখার উপযুক্ত স্থান।
▶ আদমদীঘি শালবন: প্রাকৃতিক শালগাছের বনভূমি, প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়।
▶ আমরুল মডেল পার্ক: পরিবারসহ ঘোরাঘুরির জন্য জনপ্রিয় পার্ক।
▶ বারপুর নবাব বাড়ি: বগুড়ার এক ঐতিহাসিক নবাব পরিবারের বাসভবন।
সতর্কতা
বগুড়া ভ্রমণের সময় আনন্দদায়ক ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন —
❏ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে রওনা দিন: বর্ষাকালে নদী ভ্রমণ বা প্রাচীন স্থানে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আগে থেকে আবহাওয়ার খবর জেনে নিন।
❏ ঐতিহাসিক স্থানে সাবধানে চলাফেরা করুন: মহাস্থানগড়, গোকুল মেধসহ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোতে অনেক জায়গায় খোলা গর্ত বা ভাঙা গঠন থাকতে পারে। ছবি তোলার সময় সতর্ক থাকুন।

❏ স্থানীয় নিয়ম ও সংস্কৃতি সম্মান করুন: ধর্মীয় স্থান বা মাজারে প্রবেশের সময় পোশাক ও আচরণে শালীনতা বজায় রাখুন।
❏ অজানা খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন: পথের পাশে বিক্রি হওয়া খাবার খাওয়ার আগে বিশুদ্ধতা যাচাই করুন। পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি এড়াতে বোতলজাত পানি পান করুন।
❏ নদী বা খালে নামার সময় সতর্ক থাকুন: সারিয়াকান্দি, যমুনা নদী বা বিল এলাকায় স্রোতের গতি বা গভীরতা বুঝে নামুন।
❏ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও ওষুধ সঙ্গে রাখুন: পরিচয়পত্র, জরুরি ওষুধ এবং মোবাইল চার্জারসহ প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে রাখুন।
❏ রাতের বেলায় অজানা জায়গায় ঘোরাফেরা এড়িয়ে চলুন: অজানা বা নির্জন জায়গায় নিরাপত্তা বিবেচনায় রাতে না যাওয়াই ভালো।
এসব সতর্কতা মেনে চললে বগুড়া ভ্রমণ হবে আনন্দদায়ক, নিরাপদ এবং স্মরণীয়।