
যশোর জেলা ভ্রমণের জন্য একটি চমৎকার গন্তব্য, যেখানে ইতিহাস, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির অপূর্ব সংমিশ্রণ রয়েছে। এখানে রয়েছে মাইকেল মধুসূদনের জন্মভিটা, প্রাচীন জমিদার বাড়ি, পুরাকীর্তি ও মসজিদ-মন্দির। কপোতাক্ষ নদী ও বিস্তীর্ণ বিল-ঝিল পর্যটকদের মন জয় করে নেয়। শীতকালে অতিথি পাখির আগমন প্রকৃতিপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। বেনাপোল স্থলবন্দর ঘুরে সীমান্ত অভিজ্ঞতাও নেওয়া যায়। শহরের বিভিন্ন পার্ক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিবারসহ ঘুরে দেখার উপযোগী। ভোজনপ্রেমীদের জন্য রয়েছে স্থানীয় খাবারের স্বাদ। সার্বিকভাবে যশোর শান্তিপূর্ণ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি পর্যটন জেলা। আসুন দেখে নেই যশোর জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।
◉ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের স্মৃতিসৌধ (মহেশপুর, ঝিনাইদহ সীমান্ত): ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নূর মোহাম্মদের স্মৃতিচিহ্ন।
◉ চাঁচড়া জমিদার বাড়ি (যশোর সদর): ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি, বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
◉ নওয়াপাড়া জমিদার বাড়ি (অভয়নগর): ব্রিটিশ আমলের জমিদারদের তৈরি স্থাপনা।
◉ রানী কোঠা (ঝিকরগাছা): প্রাচীন একটি রাজপ্রাসাদ, স্থানীয়ভাবে রানী কোঠা নামে পরিচিত।
◉ বারান্দীপাড়া মসজিদ (চৌগাছা): মুঘল আমলের নিদর্শনবাহী একটি প্রাচীন মসজিদ।
◉ পূর্ব পুটখালি শিবমন্দির (শার্শা): পুরনো হিন্দু মন্দির, ধর্মীয় এবং স্থাপত্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
◉ রাজার দিঘি (মণিরামপুর): প্রাচীন কালের একটি দিঘি, স্থানীয় কিংবদন্তির সাথে জড়িত।
◉ মণিরামপুর রাজবাড়ি: জমিদারদের বসতবাড়ি ও দালানকোঠা।
◉ শামসুল হক টঙ্ক (যশোর শহর): শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিশ্রামের জায়গা।
◉ উপবন পার্ক (যশোর শহর): শিশু ও পরিবারের জন্য উপযোগী পার্ক।

◉ জয়নগর পার্ক: স্থানীয়দের বিশ্রাম ও প্রাতঃভ্রমণের স্থান।
◉ চৌগাছা ইকোপার্ক: প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য মনোমুগ্ধকর স্থান।
◉ ভেকুটিয়া বিল (কেশবপুর): শীতকালে অতিথি পাখির আগমনের জন্য পরিচিত।
◉ হাকিমপুর বিল (ঝিকরগাছা): মাছ ধরার ও পাখি দেখার সুযোগ থাকে।
◉ বড়খোলা বিল (মনিরামপুর): স্থানীয়দের অন্যতম মাছ ধরার জায়গা।
◉ বনবাড়িয়া খাল: নৌকা ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় একটি খাল।
◉ ভৈরব নদী: শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গুরুত্বপূর্ণ নদী।
◉ কপোতাক্ষ নদ (কেশবপুর): কাব্যিক খ্যাতির অধিকারী নদী, মাইকেল মধুসূদনের স্মৃতি বিজড়িত।
◉ তালতলা দিঘি (শার্শা): ঐতিহাসিক দিঘি, ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও ব্যবহৃত হয়।
◉ বড়দল বিল (চৌগাছা): গ্রামীণ জীবনধারার অন্যতম প্রাকৃতিক জলাধার।
◉ বারোবাজার শাহী মসজিদ (ঝিনাইদহ সীমান্ত): ৭০০ বছরের পুরনো মসজিদ, পুরাকীর্তি।
◉ মণিরামপুর বড় মন্দির: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান।
◉ যশোর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ: শহরের অন্যতম পুরাতন মসজিদ।
◉ কেশবপুর কালী মন্দির: প্রাচীন মন্দির, বিভিন্ন পূজায় হাজারো ভক্তের সমাগম হয়।
◉ নওয়াপাড়া গির্জা: খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়।
◉ মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান (সাগরদাঁড়ি, কেশবপুর): বিখ্যাত কবির পৈত্রিক ভিটা ও জাদুঘর।
◉ মধুসূদন জাদুঘর (সাগরদাঁড়ি): কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও সাহিত্য সংরক্ষিত আছে।
◉ যশোর ইনস্টিটিউট: সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্র।
◉ টাউন হল ময়দান: বিভিন্ন মেলা ও অনুষ্ঠান আয়োজনের স্থান।
◉ নওয়াপাড়া রেলওয়ে জংশন: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন।
◉ বেনাপোল স্থলবন্দর: বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর।
◉ যশোর বিমানবন্দর: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্র।
◉ গোয়ালহাটি রেলসেতু: ঐতিহাসিক ও কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
◉ ধলগ্রাম মেলা (চৌগাছা): লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব।
◉ সদর উপজেলার নড়াইলঘাটা খাল: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গ্রামীণ দৃশ্যপট।

◉ ছোট আঁচড়া গ্রাম (সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী): ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা ও হস্তশিল্প।
◉ কেশবপুর হস্তশিল্প কেন্দ্র: স্থানীয় নারীদের তৈরি হস্তশিল্পের প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র।
◉ ঝিকরগাছা চিত্রশিল্প গ্রাম: চিত্রশিল্প ও কুমারশিল্পের জন্য বিখ্যাত।
◉ মণিরামপুরের কুমারপাড়া: মৃৎশিল্প তৈরির গ্রাম।
◉ বড় আড়পাড়া পীরের দরগা: ধর্মীয় ও সামাজিক সমাগমস্থল।
সতর্কতা
যশোর ভ্রমণের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে আপনার ভ্রমণ হবে নিরাপদ, আরামদায়ক ও উপভোগ্য। যেমন —
❏ সীমান্ত এলাকা ঘোরার সময় সতর্ক থাকুন, প্রয়োজন হলে স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শ নিন।
❏ রাত্রিকালীন ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন বিশেষ করে অজপাড়াগাঁ বা সীমান্তবর্তী এলাকায়।
❏ জনসমাগমপূর্ণ স্থানে ব্যাগ, মোবাইল ও মানিব্যাগ সতর্কভাবে রাখুন।
❏ বর্ষাকালে গেলে বৃষ্টির উপযোগী পোশাক ও ছাতা রাখুন।
❏ গ্রামীণ বা জলাশয় এলাকাগুলোয় ঘোরার সময় মশার প্রতিরোধক ব্যবহার করুন।
❏ বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং অচেনা জায়গা থেকে খাবার কেনার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যাচাই করুন।
❏ ধর্মীয় স্থানে উপযুক্ত পোশাক পরিধান করুন এবং আচরণে ভদ্রতা বজায় রাখুন।
❏ স্থানীয়দের অনুমতি ছাড়া ছবি তুলবেন না, বিশেষ করে ব্যক্তিগত জায়গা বা মানুষদের।
❏ গুগল ম্যাপ বা লোকাল গাইড সঙ্গে রাখুন। যদি গ্রামে যান, তাহলে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হতে পারে।
❏ প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিন (৯৯৯) বা স্থানীয় টুরিস্ট হেল্পলাইন ব্যবহার করুন।
আপনি যদি পরিবারসহ ভ্রমণ করেন, তাহলে এই সতর্কতাগুলো আরও গুরুত্বের সাথে মানা উচিত।