
ঈদের দ্বিতীয় দিন ঘুরে বেড়াতে স্ত্রীকে নিয়ে উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে গিয়েছিলেন সিলেট নগরীর নাইওরপুল এলাকার ব্যবসায়ী ওয়াজিহ আহমেদ। সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসে উৎমাছড়া থেকে তাদের চলে যেতে বলেন।
এদিন সেখানে পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন সিলেটের ব্যবসায়ী ওয়াজিহ আহমেদ। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি যেভাবে আমর স্ত্রীকে নিয়ে উৎমাছড়ায় গিয়েছি অন্য পর্যটকরাও তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানে যান। এই জায়গায় কেউ কোনো অশ্লীলতা করেছে এমন দেখিনি। তাই এই পর্যটন স্পটের সুন্দর পরিবেশে কারও অশ্লীলতা করতে মন চাইবে না। কিন্তু হঠাৎ স্থানীয় প্রায় ৭০ জনের মতো হুজুর এসে বলে এখান থেকে চলে যেতে। এটা নাকি পর্যটন স্পট না। তখন আমরা যারা ছিলাম সবাই চলে আসি। কারণ সেখানে আমরা ঘুরতে গিয়েছি কারও সঙ্গে তর্ক করতে যাইনি। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
গত রবিবার (৮ জুন) বিকেলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের চরারবাজার এলাকার ‘উৎমাছড়া’ পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের এভাবেই বাধা দেন স্থানীয় উলামায়ে কেরাম। এই বাধা দেওয়ার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘এটা পর্যটন এলাকা বলে কেউ ছবি ভিডিও আপলোড করবেন না। এটা একটি ছড়া। এটা কোনো পর্যটন এলাকা নয়। এজন্য আমরা আপনাদের কাছে উলামায়ে কেরাম, মুরব্বি ও যুব সমাজের পক্ষ থেকে আমরা আপনাদের অনুরোধ করছি আপনারা চলে যাবেন। আমাদের এলাকার মুরব্বিদের আলেম-ওলামারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই জায়গা পর্যটন স্পট না। এই জায়গায় আপনারা কেউ আসবেন না। এই মেসেজটি আপনারা সবার কাছে পৌঁছে দেবেন। আগামীতে আপনারা আর এই জায়গায় আসবেন না। এটা আলেম ওলামাদের এলাকা। এখানে অনেক মানুষ এসে মদ খায়, অশ্লীলতা করে, যার ফলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এলাকার পরিবেশ সুন্দর রাখতে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।’
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘ঈদের আগের দিন উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের উলামায়ে কেরাম, মুরুব্বি ও যুব সমাজ সকলে মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে উৎমাছড়া এলাকায় পর্যটনের নামে কেউ আসতে পারবে না। আপনাদেরকে আমরা সম্মানের সাথে অনুরোধ করে বলছি আগামীতে কোনদিন আপনার এখানে আসবেন না এবং আপনাদের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন সবাইকে জানিয়ে দিবেন উৎমাছড়াকে পর্যটন হিসাবে বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী।’
অপরদিকে পর্যটন কেন্দ্র যেতে বাধা দেওয়া এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ ও পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের সাথে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনাকে হালকা করে দেখার অবকাশ নেই। পর্যটন করপোরেশন থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন সিলেটে পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কথা বললেও পর্যটকদের সাথে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনায় তাদের তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। উৎমাছড়া নতুন পর্যটন স্পট হিসেবে ইতিমধ্যেই সিলেট ও সিলেটের বাহিরের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এমন অবস্থায় ঈদুল আজহার পরের দিন স্থানীয় একটি মাদরাসার হুজুরদের নেতৃত্বে তথাকথিত এলাকাবাসীর ব্যানারে উপস্থিত পর্যটকদের সেখান থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয় অশ্লীলতার অজুহাতে। ঘটনাটি সিলেটের পর্যটনের জন্যে মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। কারণ পর্যটনশিল্প কোনো এলাকার জন্যেই ক্ষতিকর নয়, বরং সংশ্লিষ্ট এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে সহায়ক। কিন্তু এখানে পর্যটকদের বিদায় করতে এলাকাবাসীর ব্যানারে যারা গিয়েছে তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করছি। কারণ এলাকাটি পাথর সমৃদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় পাথরখেকো চক্র আতংকিত হয়ে পড়েছে। কারণ পর্যটকদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেলে অবৈধভাবে পাথর চুরি করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যাবে না বিধায় এদের পরামর্শেই এমন কাণ্ড ঘটার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলেই মনে করছি। কারণ এর পূর্বে ভোলাগঞ্জের পরিবেশ বিপর্যয়ে উক্ত এলাকার পাথরখেকো গোষ্ঠীর তৎপরতাও এমনই ছিল।’
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার খবরের কাগজকে বলেন, ‘উৎমাছড়ার ঘটনা নিয়ে আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং এরকম ঘটনা আর হবে না বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা পর্যটকদের অনুরোধ করেছেন তারা যেন স্পটে শালীনতা বজায় রাখেন।’
অমিয়/