ঢাকা ১৪ চৈত্র ১৪৩১, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
English
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১

সামরিক শক্তিতে কতটুকু এগিয়ে রাশিয়া! ভবিষ্যত পরিকল্পনাই বা কী

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৭ পিএম
আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
সামরিক শক্তিতে কতটুকু এগিয়ে রাশিয়া! ভবিষ্যত পরিকল্পনাই বা কী
রাশিয়ার সামরিক শক্তি। ছবি: সংগৃহীত

সমসাময়িক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর তালিকায় নজর দিলে একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায়, তা হলো প্রায় প্রত্যেকটি দেশেরই সামরিক শক্তি অভাবনীয়। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে অথবা কথিত সেই দুঃস্বপ্নের মাঝে দাঁড়িয়ে দেখতে পাওয়া যায়, বিশ্বমোড়লরা কীভাবে তাদের সামরিক শক্তির ঝুলি দিনদিন আরও ভারী করছে। তৃতীয় বিশ্বের প্রায় অদৃশ্য এক কোণে বসে বৃহত্তর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের দিকে কিছুটা অর্থপূর্ণ দৃষ্টি রাখার প্রচেষ্টাই ‘সামরিক শক্তির আদ্যোপান্ত’ সিরিজ। এই সিরিজের প্রথম লেখা রাশিয়ার সামরিক শক্তি নিয়ে। 

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর গোড়াপত্তন করেন পিটার দ্য গ্রেট আলেক্সিয়েভিচ। ’১৮ শতকের সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ায় বসে দেশের প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করে সীমানা বাড়ানোর লক্ষ্যেই তিনি সামরিক শক্তির আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তার এই দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফসল কয়েক শতক ধরে পেয়ে আসছে রাশিয়া। ১৮১২ সালে নেপোলিয়নকে হারানোর পাশাপাশি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজয় কাটিয়ে ওঠার পেছনে এক দৃঢ় সামরিক মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।

১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে ‘রেড আর্মি’ নামক শক্তিশালী গণবাহিনী গঠন করে দেশটি। বিপ্লবের স্পৃহা টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে এই বাহিনীতে মূলত সাধারণ মানুষ, কৃষক, কর্মচারীরা যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাৎসি বাহিনীকে হারানোর পেছনে রেড আর্মির আত্মত্যাগের কথা এখনো দেশটিতে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর নবগঠিত রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বেশ কিছু বাধার সম্মুখীন হয়। অর্থ বরাদ্দের ঘাটতি, প্রায় অকেজো হয়ে পড়া অস্ত্রের পাশাপাশি আত্মপরিচয়ের সংকটে পড়ে যখন দেশটির সামরিকক্ষেত্র পর্যুদস্ত ঠিক তখন হাল ধরেন ভ্লাদিমির পুতিন। 

২০০০ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাশিয়ার সামরিক শক্তির এক আশ্চর্য পুনরুত্থান দেখেছে বিশ্ব। ২০০৮ সালে জর্জিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হালের সিরিয়া ও ইউক্রেনে সামরিক অভিযান - এসব ঘটনা থেকে রাশিয়ার সামরিক পেশাদারিত্ব, অস্ত্রের বহরে আধুনিকায়ন এবং বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনার পরিচয় পাওয়া যায়। 

সামরিক গঠন ও মানবশক্তি:
রাশিয়ার সামরিক গঠন বেশ সুসংগত। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনীর পাশাপাশি তাদের রয়েছে স্ট্র্যাটেজিক মিসাইল ট্রুপসের মতো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে দক্ষ বাহিনী। এ ছাড়া ন্যাশনাল গার্ডের মতো আধাসামরিক বাহিনীও রয়েছে। 

বর্তমানে দেশটির সামরিক বাহিনীগুলোতে মোট ৩ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন বা ৩৫ লাখ ৭০ হাজার সদস্য কর্মরত। এর মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ সেনাসদস্য সরাসরি দায়িত্বে আছেন। বাকিদের সংকটাপন্ন অবস্থার জন্য রাখা হয়েছে। 

রাশিয়ার সামরিকবাহিনীর অস্ত্রবহর বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ১২ হাজারেরও বেশি ট্যাঙ্কের পাশাপাশি তাদের রয়েছে প্রায় চার হাজার ২৫৫টি যুদ্ধবিমান। নৌবাবাহিনীতে সাধারণ জাহাজের পাশাপাশি কিছু জাহাজ পারমাণবিক শক্তিচালিত হওয়ায় নৌপথেও বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ রাশিয়া। 

পারমাণবিক শক্তি:
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পারমাণবিক কাঁচামালের মজুদ রাশিয়ার দখলে। মোট পাঁচ হাজার ৮৮৯টি পারমাণিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে রেখেছে দেশটি। এর মধ্যে এক হাজার ৬৭৪টি তাক করা আছে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের দিকে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পারমাণবিক অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ল্যান্ড-বেইজড আইসিবিএমএস, সাবমেরিন-লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল (এসএলবিএমএস) এবং স্ট্র্যাটেজিক বম্বার্স। প্রত্যেকটি ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যাপক শক্তিশালী। 

যুদ্ধ-পরস্থিতিতে সীমানা বাড়ানোর লক্ষ্যে ক্রমাগত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পারমাণবিক নীতিতে বিশ্বাস করে ক্রেমলিন। সম্প্রতি ইউক্রেনে নিক্ষেপিত দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উদাহরণ থেকেই রাশিয়ার যুদ্ধনীতি আন্দাজ করা সম্ভব।

প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও আধুনিকায়ন:
২০০৮ সালে প্রতিরক্ষা খাত সংস্কারের সময় থেকেই সামরিক শক্তির আধুনিকায়নে জোর দিচ্ছে মস্কো। সোভিয়েত যুগের ট্যাঙ্কগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রতিস্থাপনের পাশাপাশি সমসাময়িক আরমাটা টি-১৪ ট্যাঙ্কও রয়েছে রাশিয়ার অস্ত্রবহরে।

এ ছাড়া প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজার ট্যাঙ্ক এবং তিন হাজার সাঁজোয়া যান তৈরি করে দেশটি। 

তবে বেশিরভাগ সময় পুরোনো ধাঁচের ট্যাঙ্কগুলো সারাতে প্রচুর ব্যয় হওয়ায় আরও আধুনিক অস্ত্রের দিকে আগাতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে তারা। একই চিত্র ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনকেন্দ্রগুলোতেও। বিপুল পরিমানে বার্ষিক উৎপাদন সম্ভব হলেও আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রের আমদানীব্যয়ের চাপে কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে।

চলমান সামরিক বিপত্তি:
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা ও দুর্বলতা উভয়ই প্রকাশ পায়। দীর্ঘমেয়াদি আক্রমণের ক্ষেত্রে রাশিয়ার সংগঠিত আক্রমণ কার্যকর বিবেচিত হচ্ছে। তবে নির্দেশনার সমন্বয়ের বিষয়ে দেশটি কিছুটা দুর্বল প্রতিপন্ন হয়েছে বলা যায়। এই যুদ্ধে রাশিয়া কয়েক হাজার ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান হারানোয় পুরোনো মজুদ অস্ত্র দিয়েই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া নতুন করে সামরিক সদস্যগ্রহণের চেষ্টা চললেও সব মিলিয়ে রাশিয়ার বর্তমান সামরিক মনোবল তুলনামুলক কম বললে ভুল হবে না। 

এদিকে প্রতিরক্ষা খাতে রাশিয়া উল্লেখযোগ্য উন্নতি করলেও গোলাবারুদ ও আধুনিক অস্ত্রসংকটের মুখে মস্কো। রাশিয়া যে ধারায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে তার বিপরীতে অস্ত্রের যথেষ্ট যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। 

ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন:
বাধা সত্ত্বেও ইউরোপ, মধ্য-এশিয়া এবং আর্কটিক অঞ্চলে রাশিয়া নিজের প্রতিপত্তি বজায় রেখেছে। গতানুগতিক দুর্বলতা যে খামতি সৃষ্টি করছে, বিভিন্ন ‘গুপ্ত কৌশল’ কাজে লাগিয়ে সেটা পূরণ করে ফেলছে তারা। সাইবার যুদ্ধ, গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার মতো পদ্ধতিতে দেশটি নিজের ক্ষমতায় নূন্যতম ফাটলও তৎক্ষণাৎ সারিয়ে ফেলে। 

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার অস্ত্রের বহরে সংকট দেখা দিয়েছে। ফলস্বরূপ এই মুহুর্তে তৃতীয় কোনো দেশ সরাসরি যুদ্ধক্ষত্রে রাশিয়াকে আক্রমণ করলে বেশ বিপাকেই পড়তে হবে তাদের। তবুও পারমাণবিক ক্ষেত্রে বিপুল বরাদ্দ ও বিশাল সামরিক বাহিনীর ওপর ভর করে বিশ্বমোড়লের তালিকায় নিজেদের শক্ত অবস্থান টিকিয়ে রাখতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে না। 

ভবিষ্যত:
যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকর অস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি আধুনিক যুদ্ধনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার দ্বিমুখী বাধার মুখে দাঁড়িয়ে রাশিয়া। ভবিষ্যতে দেশটির সামরিক নীতি কী হবে এ বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। চলমান যুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক স্নায়ু যুদ্ধে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে হলে রাশিয়াকে সামরিক খাত আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে দেশটির জনগণের মধ্যে পুতিন কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পারেন এটাই দেখার বিষয়।  সূত্র: কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস, বিবিসি ও আল-জাজিরা

নাইমুর/পপি/অমিয়/

৩৪ বছরের মিলির উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি!

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম
আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
৩৪ বছরের মিলির উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি!
ছবি: খবরের কাগজ

'আতা গাছে তোতা পাখি ডালিম গাছে মৌ/ কয় না কথা বৌ' এমন করে ভাঙা গলায় ছড়া পড়তে পারে, খেলনা নিয়ে খেলতে পারে, নিজে ঠোঁটে লিপিস্টিক লাগাতেও পারে। বলছি বাগেরহাটের মিলি আক্তারের (৩৪) কথা।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গুলিশাখালী গ্রামের নজরুল ও ইয়াসমিনের সংসারে দ্বিতীয় সন্তান মিলি আক্তার। 

প্রায় ৩৪ বছর বয়সেও মিলি আক্তারের উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি। এখনো বাচ্চাদের মতো তার খেলার সঙ্গী জুসের খালি বোতল ও প্লাস্টিকের কিছু হাঁড়ি-পাতিলের সামগ্রী। দামি কোনো খেলনা কিনে দেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই তার পরিবারের।

১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। মিলি আক্তারের বয়স এখন প্রায় ৩৪ বছর। মিলি তার মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় বাবা নজরুল ইসলাম নিরুদ্দেশ হয়ে আর ফেরেননি। জীবিকার তাগিদে ছোট্ট মিলিকে দুই বছর বয়সে নানা-নানির কাছে রেখে সৌদি আরব চলে যান মা ফরিদা ইয়াসমিন। সেখানে কাটে তার একটানা ২৭ বছর। বাড়ি ফিরে দেখেন তার মিলির বয়স ঠিক বেড়েছে, কিন্তু শরীরের উচ্চতা বাড়েনি। হরমোনজনিত কারণে টানা প্রায় ৩৪ বছরে মিলি আক্তারের শারীরিক উচ্চতা হয়েছে মাত্র ২ ফুট ৪ ইঞ্চি (২৮ ইঞ্চি) ।

বর্তমানে এ পরিবারের ক্ষুদ্র মিলির প্রতিদিনের জীবনযাপন রাত ১১টার দিকে সবার সঙ্গে ঘুমাতে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই দাঁত ব্রাশ, গোসল সেরে নেয়। তবে বেশিরভাগ সময়ই ছোট ভাইয়ের কাছেই থাকে সে। মিলির মা মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন অসুস্থ- তাও সে বোঝে। তাই সময়-অসময় বিরক্ত করে না। মাঝে মধ্যে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপছন্দের কিছু হলে চট করে রেগে যায়। মোবাইলে গেম খেলা, গান শোনা, নাচ করা তার ইচ্ছা। মিলি মাছ, মাংস, পিঠা, ফলের মধ্যে আপেল ও কমলা খেতে বেশ পছন্দ করে।

মায়ের কাছে বিভিন্ন সময়ে তার দাবি, আমাদের এ রকম ছোট ঘর কেন? সিঁড়ি দিয়ে দোতলা ঘর হবে কবে, সে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করবে, গাড়িতে চড়বে, গবাদিপশু গরুর লালন-পালন করার ইচ্ছা তার। এমনকি বলে 'মা আমার বিয়া হবে না?'

মিলির আক্তারের মা মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'পাঁচ মাস বয়সে মিলিকে গর্ভে রেখে এবং সাড়ে ৩ বছরের বড় মেয়ে পলি আক্তারকে ওর বাবা ফেলে রেখে চলে যায়। অভাবের সংসারে অনেক যুদ্ধ করে বড় মেয়েকে কোনোমতে লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। মিলির জন্ম থেকেই ওকে কোনো চিকিৎসা ও ভালো খাবারও দিতে পারিনি। নিজে পরে আবার বিয়ে করি। এ দুই মেয়েকে নিয়ে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটা উপজেলায় বর্তমান স্বামীর বাড়ি। সেখানেও বসবাস করতে পারিনি। স্বামীকে নিয়ে নিজের জন্মস্থানে ফিরে এসেছি। এ ঘরে একটি মাত্র কলেজপড়ুয়া ছেলে। অর্থের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে ছেলের পড়ালেখা। বসত ভিটাটুকুই এখন আমার সম্বল।'

তিনি বলেন, সরকারি সাহায্য বলতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী কার্ডই একমাত্র ভরসা। মেয়ের গরু আর ছাগল পোষার শখ এখনো মেটাতে পারিনি। প্রত্যন্ত গ্রামে আমাদের বসবাস। তাই কখন কার কাছে গেলে কি সাহায্য পাওয়া যায়, তাও জানি না।

দেশের বিত্তবান এবং সরকারের কাছে আবেদন, আমার মিলির জন্যে আপনারা কিছু করেন। বেঁচে থাকতে মেয়ের জন্য তিনবেলা দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে যেতে পারলে শান্তি পেতাম।

মিলির আক্তারের বড় বোনের স্কুলপড়ুয়া ছেলে মো. রাহাত বলেন, আমার ছোটবেলা থেকেই আমরা একসঙ্গে থাকি। আমাকে মাঝে মধ্যে প্রশ্ন করে, 'তুমি বড় হও কিন্তু আমি বড় হই না কারণ কি? এসব কথা বলতে গেলে তার মন খারাপ হয়ে যায়, তখন চুপ করে বসে থাকে।'

মিলির আক্তারের প্রতিবেশী আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, ছোট থেকেই মিলিকে যেমন দেখছি এখনো তেমনই! এর বয়স এখন প্রায় ৩৪ বছর কিন্তু এখনো সে বাচ্চাদের মতো। এই মিলির ভবিষ্যৎ কি? আমি সরকার এবং ধনী ব্যক্তিদের কাছে প্রতিবেশী হিসেবে আবেদন করছি, মিলির জন্য আপনারা কিছু করেন।

মোরেলগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ বলেন, মিলি আক্তারের জন্যে আমরা যথাসাধ্য সহযোগিতা করব। বিভিন্ন এনজিওর এবং দেশের বিত্তবানদের মিলি আক্তারের জন্যে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।

 
রিফাত/মেহেদী/

এক ইউরোতে বাড়ি মিলছে ইতালিতে!

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৬ এএম
আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম
এক ইউরোতে বাড়ি মিলছে ইতালিতে!
মধ্যযুগীয় ও রেনেসাঁ স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণ সাজানো ইতালির পেন্নে শহর। ছবি: সংগৃহীত

এক মগ কফির বিলের সমপরিমান টাকা দিয়ে ইতালিতে একটি বাড়ি কেনা যাবে। এটি উপহাস নয়, বাস্তবেই সম্ভব। এর আগে মার্কিন নাগরিকদের মাত্র এক ডলারে বাড়ি কেনার সুযোগ দিয়েছিল ইতালির একটি শহর। এবার এক ইউরোতে বাড়ি বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে দেশটির পেন্নে নামে আরও একটি শহর।

এবারের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে- সেখানে বাড়ি কিনতে চাইলে ডাউনপেমেন্ট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু বাড়িটি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেই হবে।

ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের এই শহরটি মূলত আদ্রিয়াটিক সমুদ্র ও গ্রান সাসো পাহাড়ের মাঝামাঝি অবস্থিত। শহরটি একপ্রকার জনমানবশূণ্য। তাই জনসংখ্যা বাড়াতে ২০২২ সালে ইতালির অন্যান্য শহরের মতো এখানেও এক ইউরোতে বাড়ি বিক্রির কর্মসূচি শুরু হয়। তবে সব মিলিয়ে শহরটির মাত্র ছয়টি বাড়ি বিক্রি হয়। তাও এগুলোর বেশির ভাগই কিনেছেন ইতালির নাগরিকরা।

শহরটির মেয়র গিলবার্তো পেত্রুচ্চি জানান, শিগগিরই আরও কয়েকটি বাড়ি বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং ভবিষ্যতে ৪০টির বেশি পরিত্যক্ত ভবন নতুন মালিকের জন্য প্রস্তুত করা হতে পারে।

পেন্নের ঐতিহাসিক কেন্দ্র অনেক পুরোনো স্থাপত্যের নিদর্শন বহন করে। বেশ কিছু ভবন মধ্যযুগ ও রেনেসাঁ যুগের। কিছু আবার ১৯০০ সালের শুরুর দিকে নির্মিত। বাড়িগুলো সাধারণত তিনতলা বিশিষ্ট এবং ৭৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ বর্গফুট আয়তনের।

বেশিরভাগ এই পুরনো বাড়িগুলোতে একসময় স্থানীয় কৃষক পরিবারগুলো বসবাস করত। পরে তারা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সন্ধানে অন্যত্র চলে যায়। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বোমা হামলায় শহরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

১৯৭০-এর দশকে অভিবাসীদের একটি বড় অংশ সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম এবং ভেনেজুয়েলা-সহ কাছাকাছি বড় শহরগুলোতে কাজের সন্ধানে চলে যায়।

এই অঞ্চলে গম, বার্লি ও ভুট্টার চাষ হয়। পাশাপাশি বিখ্যাত ডুরুম গম থেকে তৈরি হয় স্বনামধন্য পাস্তা। খাদ্যপ্রেমীদের জন্য রয়েছে- আরোস্টিচিনি (ভেড়ার মাংসের গ্রিলড কাবাব), টিম্বালো (ইতালিয়ান লাসাগনার মতো একটি খাবার) এবং মাক্কারনি আল্লা কিতারা (হাতে তৈরি গিটার আকৃতির পাস্তা)।

পেন্নের প্রধান ঐতিহ্যের মধ্যে আছে ‘প্যালিও’ নামে এক ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। এটি বিখ্যাত সিয়েনা শহরের প্যালিও রেসের অনুকরণে আয়োজিত হয়। আর পেন্নে শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রকে ‘খোলা আকাশের জাদুঘর’ বলা হয়। এখানে মধ্যযুগীয়, গথিক ও রেনেসাঁ স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণ রয়েছে।

মেয়র পেত্রুচ্চির ভাষায়, ‘আমরা শহরের এই পুরোনো অংশকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। এটি আমার কাছে এক গভীর ক্ষতের মতো।’

বেশির ভাগ এক ইউরোর বাড়ি বিক্রির প্রকল্পে ২ থেকে ৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত জামানত জমা দিতে হয়। তবে সংস্কার শেষ হলেই এই অর্থ আবার ফেরত দেওয়া হয়। কিন্তু পেন্নে এবার এই নিয়ম শিথিল করেছে। এখানে ক্রেতাকে কেবল তিন বছরের মধ্যে বাড়ি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। কোনো অগ্রিম টাকা লাগবে না।

এ ছাড়া একটি বিশেষ সংস্থা ক্রেতাদের সংস্কার কাজে সহযোগিতা করবে। তারা স্থপতি, নির্মাণকর্মী ও পরিদর্শক খুঁজে দিতে সাহায্য করবে এবং ডিজিটাল রেন্ডারিং দেখিয়ে বুঝিয়ে দেবে, সংস্কার শেষে বাড়িটি কেমন হবে।

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (১৭ মার্চ) সিএনএন জানায়, একটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের বাড়ি মেরামতের প্রাথমিক খরচ ২০ হাজার ইউরোর মতো হতে পারে। যদি কোনো বাড়ির জন্য একাধিক ক্রেতা আগ্রহী হন, তাহলে যিনি সবচেয়ে ভালো ও দ্রুত সংস্কার পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন, তিনিই ওই বাড়িটির মালিক হতে পারবেন।

ইতালিতে এক ইউরোর বাড়ির বিক্রয় কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু হলো সিসিলি দ্বীপ। সেখানকার মুসোমেলি ও সামবুকা শহর ইতোমধ্যে বহু বিদেশি ক্রেতাকে আকৃষ্ট করেছে। সার্ডিনিয়া দ্বীপেও বর্তমানে এক ইউরোর বাড়ির কর্মসূচি চলছে। সূত্র: সিএনএন

দিনা/অমিয়/

গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব!

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৭ পিএম
আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫, ০১:২৪ পিএম
গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব!
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী এবং মহাকাশ প্রকৌশলী ড. উইলি সুন। ছবি: সংগৃহীত

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী এবং মহাকাশ প্রকৌশলী ড. উইলি সুন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের দাবি করেছেন। তার দাবি, গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করা সম্ভব।

সম্প্রতি এই বিখ্যাত বিজ্ঞানী তার একটি সূত্র উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি জানান, মহাবিশ্বের গোপন রহস্য কেবল তারার মধ্যেই লিখিত নাও থাকতে পারে, বরং গণিতের কাঠামোতেও লিখিত থাকতে পারে।

ড. সুনের এই গবেষণা পদার্থ বিজ্ঞানের ‘ফাইন-টিউনিং/সূক্ষ্ম সুরকরণ যুক্তি’ বা সূক্ষ্ম সামঞ্জস্য তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রকাশ করা হয়েছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো এতটাই নিখুঁতভাবে সাজানো যে, তা কেবল দৈবক্রমে বা কাকতালীয়ভাবে হতে পারে না। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায়, ফাইন-টিউনিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একটি মডেলের পরামিতিগুলোকে নির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে সামঞ্জস্য সৃষ্টি করতে হয়।

তবে পদার্থবিজ্ঞানে ফাইন টিউনিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় তত্ত্বগুলোকে অনেক সময় সমস্যাযুক্ত বলে মনে করা হয়। তাছাড়া এটির প্যারামিটারগুলোতে কেন পর্যবেক্ষণ করা মানগুলো সঠিকভাবে ফিরে আসে তা ব্যাখ্যা করার জন্য পরিচিত প্রক্রিয়ার অভাব রয়েছে। কারণ হিউরিস্টিক নিয়ম অনুযায়ী, মৌলিক ভৌত তত্ত্বের প্যারামিটারগুলো খুব বেশি সূক্ষ্ম হওয়া উচিত নয় এমনটাই স্বাভাবিক মনে করা হয়।

তার গবেষণায় বলা হয়, মহাকর্ষ, আলোর গতি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক নিয়মগুলো সামান্যতম পরিবর্তন হলে জীবনের অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব হয়ে যেত। এত নিখুঁতভাবে সবকিছু সাজানো থাকার কারণ হতে পারে সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা।

ড. সুন তার গবেষণায় ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত কেমব্রিজের বিখ্যাত পদার্থবিদ পল ডিরাকের একটি তত্ত্বকে অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসেবে ধরেছেন। যেখানে পল ডিরাক বলেছিলেন, মহাবিশ্বের নিয়মগুলো এতই নিখুঁত ও গাণিতিকভাবে সংগঠিত যে, এটি কোনো বুদ্ধিমান সত্তার পরিকল্পনার ফল হতে পারে। এই গণিতবিদের প্রথম প্রস্তাবিত সূত্রটি কীভাবে কিছু মহাজাগতিক ধ্রুবক শ্বাসরুদ্ধকরভাবে নির্ভুলভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ –সেটি তুলে ধরে। যা কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে আসছিল। 

ডিরাক বলেছিলেন, মহাবিশ্বের ভৌত নিয়মের নিখুঁত ভারসাম্যকে মহান সৌন্দর্য এবং শক্তির গাণিতিক তত্ত্বের পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এটি বোঝার জন্য উচ্চমাত্রার বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন।

ড. সুন তার সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, ‘আমাদের পৃথিবী ও মহাবিশ্বের নিয়মগুলো এতটাই নিখুঁত যে, এটি মনে করিয়ে দেয়- সৃষ্টিকর্তা অত্যন্ত দক্ষ একজন গণিতবিদ, যিনি উন্নত গাণিতিক সূত্র দিয়ে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন।’

যদিও ড. সুনের গবেষণা নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি ধর্ম ও দর্শনের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করা কঠিন।

তবে ড. সুন বিশ্বাস করেন, আমাদের অস্তিত্ব কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং এটি সুপরিকল্পিত সৃষ্টি।

আর বিজ্ঞান ও ধর্মের সম্পর্ক নিয়ে ড. উইলি সুনের গবেষণা নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। তবে এটি কি সত্যিই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ, নাকি শুধু একটি দার্শনিক ব্যাখ্যা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: উইকিমিডিয়া এবং দ্য ইকোনোমিক টাইমস

দিনা/অমিয়/

বিমান চালনায় রান্নার তেল ব্যবহার নিয়ে গবেষণা

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১০:২৮ এএম
আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
বিমান চালনায় রান্নার তেল ব্যবহার নিয়ে গবেষণা
ছবি: সংগৃহীত

রান্নার কাজে ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া তেল বিমান চালাতে ব্যবহার করা যায় কি না তা নিয়ে এবার গবেষণা শুরু করেছে স্পেন। আর এই গবেষণায় সহায়তা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

স্পেনের বিমানসংস্থা আইবেরিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের ১০ শতাংশ ফ্লাইট এই তেল দিয়ে চালাতে চায়।

এ প্রসঙ্গে এয়ারলাইন সাস্টেইনেবিলিটি পরিচালক টেরেসা পারেখো বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, স্পেনে টেকসই জ্বালানি শিল্পখাত গড়ে তোলার বিপুল সম্ভাবনা আছে। বিমান চলাচল খাত পরিবেশবান্ধব করা আমাদের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ভাজাপোড়ার তেল থেকে টেকসই কেরোসিন তৈরিতে এখন তিন গুণ বেশি খরচ হচ্ছে। তবে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।’

এছাড়া স্পেনের আন্দালুসিয়ায় আরেকটি নতুন রিফাইনারি তৈরি হচ্ছে। সেখানে অন্যান্য আরও কয়েক ধরণের বর্জ্যকে জ্বালানিতে পরিণত করা হবে। ইউরোপে এটিই এ ধরণের সবচেয়ে বড় রিফাইনারি। 

তাছাড়া এখানকার গবেষণাগারে রেপসল কোম্পানি বিমান খাতে অপরিশোধিত তেল ছাড়া আর কী ব্যবহার করা যায় তা নিয়েও গবেষণা চলছে।

স্পেনের এই জ্বালানি খাত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বড় ভূমিকা রয়েছে। তারা মনে করে, বিমানে অবশ্যই দুই শতাংশ টেকসই জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। তবে ইইউ ২০৩০ সালে এই সংখ্যাটি ছয় শতাংশ ও ২০৫০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ করতে চায়।

সম্প্রতি জার্মান এরোস্পেস সেন্টার ভাজাপোড়া তেলের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে কাজ করছে। দুইটি গবেষণা বিমান ব্যবহার করে তারা বাণিজ্যিক বিমানের ধোঁয়া পর্যবেক্ষণ করেছে। এক একটিতে সাধারণ জ্বালানি এবং অন্যটিতে রান্নার তেল থেকে তৈরি পুরোপুরি নতুন বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করা হয়।

জার্মান এরোস্পেস সেন্টারের ক্রিস্টিয়ানে ফোইগ্ট বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি টেকসই জ্বালানি ব্যবহারের কারণে কম ধোঁয়া নির্গত হয়েছে। এর ফলে বরফের স্ফটিক কমে এবং উষ্ণতা কমায়।’ সূত্র: দ্য মর্নিং নিউজ

দিনা/অমিয়/

মৃত ঘোড়া তত্ত্ব আসলে কী?

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৫ পিএম
আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৫, ০২:৩১ পিএম
মৃত ঘোড়া তত্ত্ব আসলে কী?
ছবি: সংগৃহীত

গল্পটি শুরু করা যায় বার্লিন ব্র্যান্ডেনবার্গ বিমানবন্দরের গল্প দিয়ে। প্রায় ১৫ বছরের পরিকল্পনা এবং ৫ বছরের নির্মাণকাজ শেষে ২০১১ সালের অক্টোবরে উদ্বোধনের দিন নির্ধারিত হয়। কিন্তু কিছু গুরুতর নির্মাণজনিত ত্রুটির কারণে বিমানবন্দরের উদ্বোধন পিছিয়ে যায় আরও তিন বছর। শুধু তাই নয়, সব সমস্যা সমাধান করে প্রকল্পটি জীবিত রাখার জন্য ব্যয় করা হয় আরও কয়েক বিলিয়ন ইউরো। 

২০১৪ সালে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডের পোস্টিলন এক রিপোর্টে জানায়, একেবারে নতুন বিমানবন্দরটি আবার ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ধারণা করা হয়, এটির কাঠামো মেরামত করার চেয়ে ভেঙে পুনর্নির্মাণ করাটাই বেশি সাশ্রয়ী ছিল।

২০১৮ সালে যখন পুরো বিমানবন্দরটি সম্পূর্ণরূপে পুনর্নির্মাণের কথা ভাবা হয় তখন এই বাস্তবতা নিয়ে বিদ্রুপের ঝড় শুরু হয়।

জার্মানরা তাদের এ জাতীয় লজ্জাকে ডেড হর্স থিওরি বা মৃত ঘোড়া তত্ত্বের একটি নিখুঁত উদাহরণ হিসেবে আজও মনে করেন। আমাদের দেশেও সরকারি বা বেসরকারি খাতে লাইফ সাপোর্টে চলমান এমন অনেক প্রকল্প বেশ পরিচিত।

মৃত ঘোড়া তত্ত্ব আসলে কী?
ব্যবসা এবং আমলাতন্ত্রের প্রেক্ষাপটে মৃত ঘোড়া তত্ত্ব বলতে বোঝায়- যখন কোনো ব্যর্থ প্রকল্পকে ইচ্ছাকৃত অজ্ঞ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জীবিত রাখা হয়।

ডেড হর্স থিওরিতে বলা হয়েছে- যখন আপনি আবিষ্কার করেন যে, আপনি একটি মৃত ঘোড়ায় চড়ছেন, তখন সবচেয়ে ভাল কৌশল হলো প্রথমে সেই ঘোড়া থেকে নেমে আসা।

তবে, আধুনিক ব্যবসা, শিক্ষা এবং সরকারব্যবস্থায় অনেক বেশি উন্নত কৌশল ব্যবহার করেও প্রায়ই সেটি না করে নিচে উল্লেখ করা কাজগুলো করা হয়ে থাকে। যেমন-

১) আরও শক্তিশালী চাবুক কেনে।
২) আরোহী পরিবর্তন করে।
৩) ঘোড়াটিকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়।
৪) ঘোড়াটিকে আরও ভালোভাবে অধ্যয়নের জন্য একটি কমিটি নিয়োগ করে।
৫) অন্যরা কীভাবে মৃত ঘোড়ায় চড়ে তা দেখার জন্য অন্যান্য দেশ ভ্রমণের ব্যবস্থা করে।
৬) নিজদের কাজের মান কমিয়ে আনে যাতে মৃত ঘোড়াকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
৭) মৃত ঘোড়াকে ‘জীবিত-প্রতিবন্ধী’ হিসেবে পুনঃশ্রেণিবদ্ধ করে।
৮) মৃত ঘোড়ায় চড়ার জন্য বাইরের ঠিকাদার নিয়োগ করে।
৯) মৃত ঘোড়ার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত তহবিল অথবা প্রশিক্ষণ প্রদান করে।

আমাদের নিজের ব্যক্তিগত জীবনেও আমরা কখনও কখনও মৃত ঘোড়া তত্ত্ব মিলিয়ে ফেলি। ফলে এখানেও শুরু হয় হতাশা, আবেগ এবং নিজের উপর অবিশ্বাসের গল্প।

এই যে জার্মানির বিশাল বিমানবন্দর দুর্ঘটনার প্রিমর্টেম বিশ্লেষণ না করে মৃত ঘোড়ার জীবন বাঁচানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। 

তাই কী ঘটেছে তা বোঝার জন্য মৃত ঘোড়াটির একটি সংক্ষিপ্ত ময়নাতদন্ত করি-

মৃত ঘোড়ার ময়নাতদন্ত
মৃত ঘোড়া তত্ত্বের প্রথম অন্তর্নিহিত ধারণা হলো, ঘোড়াটি আসলে তার স্রষ্টার সঙ্গে দেখা করেছে। ফলে এটিকে মৃত ঘোষণা করা একটি বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত হতে পারতো। এর অর্থ হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে সরে যাওয়া এবং সেটি পরিত্যাগ করা। অমীমাংসিত সমাধানের জন্য পরিকল্পনার নিশ্চয়ই কোনো অভাব নেই।

বলা হয়ে থাকে, মোট চার ধরণের ঘোড়া আছে- উৎকৃষ্ট ঘোড়া, ভালো ঘোড়া, খারাপ ঘোড়া এবং সবচেয়ে খারাপ ঘোড়া।

উৎকৃষ্ট ঘোড়াটি চাবুকের ছায়া দেখার আগেই চালকের ইচ্ছানুযায়ী দৌড়াবে। ভালো ঘোড়াটি চাবুকের আঘাত পাওয়ার আগেই, প্রথমটির মতো দৌড়াবে। তৃতীয়টি যখন তার শরীরে ব্যথা অনুভব করবে তখন দৌড়াবে। আর চতুর্থটি ব্যথা তার হাড়ের মজ্জায় প্রবেশ করার পরে দৌড়াবে।

তাহলে এবার আপনি কল্পনা করতে পারেন- চতুর্থ ঘোড়াটির জন্য দৌড়াতে শেখা কতটা কঠিন! 

সূত্র: দ্য মাইন্ড কালেকশন

দিনা/অমিয়/