ঢাকা ১৪ চৈত্র ১৪৩১, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
English
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১

সামরিক সক্ষমতায় বিশ্বে পাকিস্তানের অবস্থান কততম?

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
সামরিক সক্ষমতায় বিশ্বে পাকিস্তানের অবস্থান কততম?
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কিছু ছবি। সংগৃহীত

সমসাময়িক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর তালিকায় নজর দিলে একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায় তা হলো, প্রায় প্রতিটি দেশেরই সামরিক শক্তি অভাবনীয়। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে অথবা কথিত সেই দুঃস্বপ্নের মাঝে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, বিশ্ব মোড়লরা কীভাবে তাদের সামরিক শক্তির ঝুলি দিন দিন আরও ভারী করছে। তৃতীয় বিশ্বের প্রায় অদৃশ্য এক কোণে বসে বৃহত্তর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের দিকে কিছুটা অর্থপূর্ণ দৃষ্টি রাখার প্রচেষ্টাই ‘সামরিক শক্তির আদ্যোপান্ত’ সিরিজ। এই সিরিজে আজ থাকছে পাকিস্তানের সামরিক শক্তির বিস্তারিত-

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের দখল থেকে ভারতবর্ষের মুক্তির পর পাকিস্তানের সামরিক শক্তির উত্থান ঘটে। স্বাধীনতাপরবর্তী দাঙ্গা ও আঞ্চলিক সহিংসতা ঠেকাতে সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরপর প্রায় সাত যুগ পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে বেশ শক্তিশালী সামরিক অবস্থান দাঁড় করিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তির এই দেশ। দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জাতীয় সুরক্ষানীতি সংরক্ষণে তাদের সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পাকিস্তান প্রথম সামরিক দ্বন্দ্বে জড়ায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের বিরুদ্ধে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ১৯৪৭-৪৮ সালের দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই ভারত-পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূত্রপাত। এরপর ১৯৬৫ সালে ভারতের বিরুদ্ধে এবং ১৯৭১ সালে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশটির সামরিক বাহিনী সরাসরি অংশ নেয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের সামরিক নীতিতে ব্যাপক রদবদল ঘটে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৯৯ সালে সংঘটিত কার্গিল যুদ্ধে। এই যুদ্ধে পাকিস্তান গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে সামরিক সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে।
 
বৈশ্বিক স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত জোট সিয়াটো (SEATO) এবং সেন্টোতে (CENTO) যোগ দিয়ে সামরিক খাতে বিশেষ সুবিধা অর্জন করে তারা।

এ ছাড়া ১৯৮০ সালের সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার মাধ্যমে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে নিজদের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী পর্যায়ে নিয়ে গেছে দেশটি। 

বর্তমান সামরিক সক্ষমতা
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সের (জিএফপিআই) তথ্য অনুযায়ী, ১৪৫টি দেশের মধ্যে সামরিক শক্তির দিক দিয়ে পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থান নবম। সেনা, বিমান ও নৌ - এই তিন বাহিনীর সাহায্যে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে সমীহ কুড়াচ্ছে দেশটি।

এ ছাড়া দেশটির অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ও সংকট মোকাবিলায় রয়েছে রেঞ্জারস ও ফ্রন্টিয়ার কর্পসের মতো আধাসামরিক বাহিনী। আঞ্চলিক ও জাতীয় প্রতিরক্ষা খাতেই পাকিস্তান বেশি প্রাধান্য দেয়। 

দেশটিতে বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ সামরিক সদস্য সরাসরি কর্মরত। সংকটাপন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আছে আরও ৫ লাখ সদস্য। বার্ষিক জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেয় দেশটির সামরিক খাত। এই বরাদ্দের পরিমাণ অর্থের হিসাবে প্রায় ১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সেনাবাহিনী
পাকিস্তানের সামরিক খাতের সবচেয়ে বড় শাখা দেশটির সেনাবাহিনী। তাদের অস্ত্রের বহরে আছে ৩ হাজার ৭০০টির বেশি ট্যাংক। এই ট্যাংকগুলোর মধ্যে দেশের উৎপাদিত আল-খালিদ এবং টি-৮০ইউডিও রয়েছে। 

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত দল স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি) দেশের যেকোনো সংকটে কার্যকর অবদান রাখে। জঙ্গি ও দেশদ্রোহী তৎপরতা ঠেকাতে বেশ সক্ষম তারা।

বিমানবাহিনী
প্রায় ১ হাজার ৪০০টি সামরিক বিমান থাকায় দেশটির বিমানবাহিনী সহজেই তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারে। তাদের বিমানের বহরে রয়েছে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, মিরাজ ৩/৫ এবং জে-১৭ থান্ডারের মতো যুদ্ধবিমান। এর মধ্যে জে-১৭ থান্ডার আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে শত্রুঘাঁটিতে উল্লেখযোগ্য আঘাত করতে সক্ষম।

নৌবাহিনী
আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের নৌবাহিনী কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আরব সাগরের পাকিস্তানসংলগ্ন অঞ্চলের প্রতিরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি পারমাণবিক কর্মকাণ্ডের প্রতিরোধে দেশটির নৌবাহিনী অত্যন্ত তৎপর। 

পাকিস্তানের নৌবহরে রয়েছে - আগস্টা ৯০বি-ক্লাসের মতো শক্তিশালী সাবমেরিন। সাবমেরিন-লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইলসের (এসএলবিএমএস) মাধ্যমে পারমাণবিক বোমা ছুড়তে সক্ষম এই নৌযান। এটি সম্প্রতি আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। 
চীন থেকে আমদানি করা টাইপ ০৫৪এ/পি ফ্রিগ্রেটগুলো পাকিস্তানের নৌসক্ষমতা আরও বাড়িয়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

পাকিস্তানের সামরিক নীতি
বিশ্বের যে ৯টি দেশের অস্ত্রের বহরে পারমাণবিক বোমা আছে তার মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম। ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কূটনৈতিক উত্তরে এই খাতে গবেষণা শুরু করে দেশটি। দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করতেই পরমাণু খাত শক্তিশালী করা হয়েছে বলে সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

তবে ১৯৯৮ সালের পরীক্ষার পর পারমাণবিক শক্তি প্রদর্শনের বিপরীতে অবস্থান নেয় দেশটি। 

পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের বহরে আছে শাহিন-৩-এর মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। শাহিন-৩ প্রায় ২ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানতে সক্ষম। 

এ ছাড়া নাসর মিসাইল নামের ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন (টিএনডব্লিউ) ভারতের বিরুদ্ধে স্নায়ুযুদ্ধে খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। 

এদিকে পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে এ শক্তি প্রত্যাহারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে পাকিস্তান।

তবে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে (এনপিটি) নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার কারণ দেখিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দেশটি।

সামরিক আধুনিকায়ন প্রচেষ্টা 
গত এক দশকে পাকিস্তানের সামরিক খাতে ব্যাপক আধুনিকায়ন ঘটেছে। চীনের সঙ্গে শক্তিশালী কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে জেএফ-১৭-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সম্পন্ন করেছে দেশটি।

এ ছাড়া তুর্কির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে আধুনিক ড্রোন এবং অস্ত্র আমদানি করেছে তারা। 

এদিকে জার্ব-ই-আজব এবং রাদ-উল-ফাসাদের মতো জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সাইবার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও আধুনিক নজরদারি প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর যুদ্ধের ময়দানে শক্তিশালী জায়গা দখল করে রেখেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ।

সামরিক বাধা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
পাকিস্তানের সামরিক খাতে সবচেয়ে বড় বাধা অর্থনৈতিক চাপ। প্রতিরক্ষা খাতে বার্ষিক বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করতে হয় বলে আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এদিকে ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের পাশাপাশি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের চলমান দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ছে পাকিস্তানের সামরিক খাতে।

এ ছাড়া দেশের জঙ্গি তৎপরতা ও ধর্মভিত্তিক সহিংসতা ঠেকাতেই অনেকটা সামরিক শক্তি ক্ষয় হয়ে যায় দেশটির। 

বাধা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সামরিক খাতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় বলা যায়। সামনের এক দশকে পাকিস্তান নিজের পারমাণবিক খাতকে আরও শক্তিশালী করবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। 

এই খাতে ইতোমধ্যেই সেকেন্ড-স্ট্রাইক প্ল্যাটফর্ম ও প্রিসিশন-গিল্ডেড সিস্টেমের (পিজিএস) মতো আধুনিক প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে।
ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে দেশটির প্রভাব অনস্বীকার্য। আফগান শান্তি প্রস্তাবে সরাসরি অংশগ্রহণ এবং আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক মেলবন্ধন আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে পাকিস্তানের বাড়তে থাকা প্রভাবকেই আরও স্পষ্ট করে।

এ ছাড়া আধুনিক যুদ্ধনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সাইবার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও উন্নত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী।

অদমনীয় জাতিসত্তা ও শক্তিশালী সুরক্ষানীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পাকিস্তান। উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বাধার সম্মুখীন হয়েও গতানুগতিক যুদ্ধ প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অত্যাধুনিক যুদ্ধনীতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে দেশটি। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশটির শান্তিপূর্ণ অবস্থান বর্তমান সময়ে এসে আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স (জিএফপিআই), দ্য ন্যাশন: পাকিস্তানস্ মিলিটারি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্টস, এস আইপিআরআই আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন, আল-জাজিরা: অ্যানালাইসিস অব পাকিস্তানস কাউন্টার-টেররিজম অপারেশনস।

নাইমুর/পপি/অমিয়/

৩৪ বছরের মিলির উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি!

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম
আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
৩৪ বছরের মিলির উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি!
ছবি: খবরের কাগজ

'আতা গাছে তোতা পাখি ডালিম গাছে মৌ/ কয় না কথা বৌ' এমন করে ভাঙা গলায় ছড়া পড়তে পারে, খেলনা নিয়ে খেলতে পারে, নিজে ঠোঁটে লিপিস্টিক লাগাতেও পারে। বলছি বাগেরহাটের মিলি আক্তারের (৩৪) কথা।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গুলিশাখালী গ্রামের নজরুল ও ইয়াসমিনের সংসারে দ্বিতীয় সন্তান মিলি আক্তার। 

প্রায় ৩৪ বছর বয়সেও মিলি আক্তারের উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি। এখনো বাচ্চাদের মতো তার খেলার সঙ্গী জুসের খালি বোতল ও প্লাস্টিকের কিছু হাঁড়ি-পাতিলের সামগ্রী। দামি কোনো খেলনা কিনে দেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই তার পরিবারের।

১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। মিলি আক্তারের বয়স এখন প্রায় ৩৪ বছর। মিলি তার মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় বাবা নজরুল ইসলাম নিরুদ্দেশ হয়ে আর ফেরেননি। জীবিকার তাগিদে ছোট্ট মিলিকে দুই বছর বয়সে নানা-নানির কাছে রেখে সৌদি আরব চলে যান মা ফরিদা ইয়াসমিন। সেখানে কাটে তার একটানা ২৭ বছর। বাড়ি ফিরে দেখেন তার মিলির বয়স ঠিক বেড়েছে, কিন্তু শরীরের উচ্চতা বাড়েনি। হরমোনজনিত কারণে টানা প্রায় ৩৪ বছরে মিলি আক্তারের শারীরিক উচ্চতা হয়েছে মাত্র ২ ফুট ৪ ইঞ্চি (২৮ ইঞ্চি) ।

বর্তমানে এ পরিবারের ক্ষুদ্র মিলির প্রতিদিনের জীবনযাপন রাত ১১টার দিকে সবার সঙ্গে ঘুমাতে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই দাঁত ব্রাশ, গোসল সেরে নেয়। তবে বেশিরভাগ সময়ই ছোট ভাইয়ের কাছেই থাকে সে। মিলির মা মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন অসুস্থ- তাও সে বোঝে। তাই সময়-অসময় বিরক্ত করে না। মাঝে মধ্যে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপছন্দের কিছু হলে চট করে রেগে যায়। মোবাইলে গেম খেলা, গান শোনা, নাচ করা তার ইচ্ছা। মিলি মাছ, মাংস, পিঠা, ফলের মধ্যে আপেল ও কমলা খেতে বেশ পছন্দ করে।

মায়ের কাছে বিভিন্ন সময়ে তার দাবি, আমাদের এ রকম ছোট ঘর কেন? সিঁড়ি দিয়ে দোতলা ঘর হবে কবে, সে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করবে, গাড়িতে চড়বে, গবাদিপশু গরুর লালন-পালন করার ইচ্ছা তার। এমনকি বলে 'মা আমার বিয়া হবে না?'

মিলির আক্তারের মা মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'পাঁচ মাস বয়সে মিলিকে গর্ভে রেখে এবং সাড়ে ৩ বছরের বড় মেয়ে পলি আক্তারকে ওর বাবা ফেলে রেখে চলে যায়। অভাবের সংসারে অনেক যুদ্ধ করে বড় মেয়েকে কোনোমতে লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। মিলির জন্ম থেকেই ওকে কোনো চিকিৎসা ও ভালো খাবারও দিতে পারিনি। নিজে পরে আবার বিয়ে করি। এ দুই মেয়েকে নিয়ে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটা উপজেলায় বর্তমান স্বামীর বাড়ি। সেখানেও বসবাস করতে পারিনি। স্বামীকে নিয়ে নিজের জন্মস্থানে ফিরে এসেছি। এ ঘরে একটি মাত্র কলেজপড়ুয়া ছেলে। অর্থের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে ছেলের পড়ালেখা। বসত ভিটাটুকুই এখন আমার সম্বল।'

তিনি বলেন, সরকারি সাহায্য বলতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী কার্ডই একমাত্র ভরসা। মেয়ের গরু আর ছাগল পোষার শখ এখনো মেটাতে পারিনি। প্রত্যন্ত গ্রামে আমাদের বসবাস। তাই কখন কার কাছে গেলে কি সাহায্য পাওয়া যায়, তাও জানি না।

দেশের বিত্তবান এবং সরকারের কাছে আবেদন, আমার মিলির জন্যে আপনারা কিছু করেন। বেঁচে থাকতে মেয়ের জন্য তিনবেলা দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে যেতে পারলে শান্তি পেতাম।

মিলির আক্তারের বড় বোনের স্কুলপড়ুয়া ছেলে মো. রাহাত বলেন, আমার ছোটবেলা থেকেই আমরা একসঙ্গে থাকি। আমাকে মাঝে মধ্যে প্রশ্ন করে, 'তুমি বড় হও কিন্তু আমি বড় হই না কারণ কি? এসব কথা বলতে গেলে তার মন খারাপ হয়ে যায়, তখন চুপ করে বসে থাকে।'

মিলির আক্তারের প্রতিবেশী আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, ছোট থেকেই মিলিকে যেমন দেখছি এখনো তেমনই! এর বয়স এখন প্রায় ৩৪ বছর কিন্তু এখনো সে বাচ্চাদের মতো। এই মিলির ভবিষ্যৎ কি? আমি সরকার এবং ধনী ব্যক্তিদের কাছে প্রতিবেশী হিসেবে আবেদন করছি, মিলির জন্য আপনারা কিছু করেন।

মোরেলগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ বলেন, মিলি আক্তারের জন্যে আমরা যথাসাধ্য সহযোগিতা করব। বিভিন্ন এনজিওর এবং দেশের বিত্তবানদের মিলি আক্তারের জন্যে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।

 
রিফাত/মেহেদী/

এক ইউরোতে বাড়ি মিলছে ইতালিতে!

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৬ এএম
আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম
এক ইউরোতে বাড়ি মিলছে ইতালিতে!
মধ্যযুগীয় ও রেনেসাঁ স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণ সাজানো ইতালির পেন্নে শহর। ছবি: সংগৃহীত

এক মগ কফির বিলের সমপরিমান টাকা দিয়ে ইতালিতে একটি বাড়ি কেনা যাবে। এটি উপহাস নয়, বাস্তবেই সম্ভব। এর আগে মার্কিন নাগরিকদের মাত্র এক ডলারে বাড়ি কেনার সুযোগ দিয়েছিল ইতালির একটি শহর। এবার এক ইউরোতে বাড়ি বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে দেশটির পেন্নে নামে আরও একটি শহর।

এবারের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে- সেখানে বাড়ি কিনতে চাইলে ডাউনপেমেন্ট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু বাড়িটি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেই হবে।

ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের এই শহরটি মূলত আদ্রিয়াটিক সমুদ্র ও গ্রান সাসো পাহাড়ের মাঝামাঝি অবস্থিত। শহরটি একপ্রকার জনমানবশূণ্য। তাই জনসংখ্যা বাড়াতে ২০২২ সালে ইতালির অন্যান্য শহরের মতো এখানেও এক ইউরোতে বাড়ি বিক্রির কর্মসূচি শুরু হয়। তবে সব মিলিয়ে শহরটির মাত্র ছয়টি বাড়ি বিক্রি হয়। তাও এগুলোর বেশির ভাগই কিনেছেন ইতালির নাগরিকরা।

শহরটির মেয়র গিলবার্তো পেত্রুচ্চি জানান, শিগগিরই আরও কয়েকটি বাড়ি বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং ভবিষ্যতে ৪০টির বেশি পরিত্যক্ত ভবন নতুন মালিকের জন্য প্রস্তুত করা হতে পারে।

পেন্নের ঐতিহাসিক কেন্দ্র অনেক পুরোনো স্থাপত্যের নিদর্শন বহন করে। বেশ কিছু ভবন মধ্যযুগ ও রেনেসাঁ যুগের। কিছু আবার ১৯০০ সালের শুরুর দিকে নির্মিত। বাড়িগুলো সাধারণত তিনতলা বিশিষ্ট এবং ৭৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ বর্গফুট আয়তনের।

বেশিরভাগ এই পুরনো বাড়িগুলোতে একসময় স্থানীয় কৃষক পরিবারগুলো বসবাস করত। পরে তারা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সন্ধানে অন্যত্র চলে যায়। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বোমা হামলায় শহরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

১৯৭০-এর দশকে অভিবাসীদের একটি বড় অংশ সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম এবং ভেনেজুয়েলা-সহ কাছাকাছি বড় শহরগুলোতে কাজের সন্ধানে চলে যায়।

এই অঞ্চলে গম, বার্লি ও ভুট্টার চাষ হয়। পাশাপাশি বিখ্যাত ডুরুম গম থেকে তৈরি হয় স্বনামধন্য পাস্তা। খাদ্যপ্রেমীদের জন্য রয়েছে- আরোস্টিচিনি (ভেড়ার মাংসের গ্রিলড কাবাব), টিম্বালো (ইতালিয়ান লাসাগনার মতো একটি খাবার) এবং মাক্কারনি আল্লা কিতারা (হাতে তৈরি গিটার আকৃতির পাস্তা)।

পেন্নের প্রধান ঐতিহ্যের মধ্যে আছে ‘প্যালিও’ নামে এক ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। এটি বিখ্যাত সিয়েনা শহরের প্যালিও রেসের অনুকরণে আয়োজিত হয়। আর পেন্নে শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রকে ‘খোলা আকাশের জাদুঘর’ বলা হয়। এখানে মধ্যযুগীয়, গথিক ও রেনেসাঁ স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণ রয়েছে।

মেয়র পেত্রুচ্চির ভাষায়, ‘আমরা শহরের এই পুরোনো অংশকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। এটি আমার কাছে এক গভীর ক্ষতের মতো।’

বেশির ভাগ এক ইউরোর বাড়ি বিক্রির প্রকল্পে ২ থেকে ৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত জামানত জমা দিতে হয়। তবে সংস্কার শেষ হলেই এই অর্থ আবার ফেরত দেওয়া হয়। কিন্তু পেন্নে এবার এই নিয়ম শিথিল করেছে। এখানে ক্রেতাকে কেবল তিন বছরের মধ্যে বাড়ি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। কোনো অগ্রিম টাকা লাগবে না।

এ ছাড়া একটি বিশেষ সংস্থা ক্রেতাদের সংস্কার কাজে সহযোগিতা করবে। তারা স্থপতি, নির্মাণকর্মী ও পরিদর্শক খুঁজে দিতে সাহায্য করবে এবং ডিজিটাল রেন্ডারিং দেখিয়ে বুঝিয়ে দেবে, সংস্কার শেষে বাড়িটি কেমন হবে।

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (১৭ মার্চ) সিএনএন জানায়, একটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের বাড়ি মেরামতের প্রাথমিক খরচ ২০ হাজার ইউরোর মতো হতে পারে। যদি কোনো বাড়ির জন্য একাধিক ক্রেতা আগ্রহী হন, তাহলে যিনি সবচেয়ে ভালো ও দ্রুত সংস্কার পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন, তিনিই ওই বাড়িটির মালিক হতে পারবেন।

ইতালিতে এক ইউরোর বাড়ির বিক্রয় কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু হলো সিসিলি দ্বীপ। সেখানকার মুসোমেলি ও সামবুকা শহর ইতোমধ্যে বহু বিদেশি ক্রেতাকে আকৃষ্ট করেছে। সার্ডিনিয়া দ্বীপেও বর্তমানে এক ইউরোর বাড়ির কর্মসূচি চলছে। সূত্র: সিএনএন

দিনা/অমিয়/

গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব!

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৭ পিএম
আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫, ০১:২৪ পিএম
গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব!
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী এবং মহাকাশ প্রকৌশলী ড. উইলি সুন। ছবি: সংগৃহীত

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী এবং মহাকাশ প্রকৌশলী ড. উইলি সুন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের দাবি করেছেন। তার দাবি, গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করা সম্ভব।

সম্প্রতি এই বিখ্যাত বিজ্ঞানী তার একটি সূত্র উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি জানান, মহাবিশ্বের গোপন রহস্য কেবল তারার মধ্যেই লিখিত নাও থাকতে পারে, বরং গণিতের কাঠামোতেও লিখিত থাকতে পারে।

ড. সুনের এই গবেষণা পদার্থ বিজ্ঞানের ‘ফাইন-টিউনিং/সূক্ষ্ম সুরকরণ যুক্তি’ বা সূক্ষ্ম সামঞ্জস্য তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রকাশ করা হয়েছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো এতটাই নিখুঁতভাবে সাজানো যে, তা কেবল দৈবক্রমে বা কাকতালীয়ভাবে হতে পারে না। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায়, ফাইন-টিউনিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একটি মডেলের পরামিতিগুলোকে নির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে সামঞ্জস্য সৃষ্টি করতে হয়।

তবে পদার্থবিজ্ঞানে ফাইন টিউনিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় তত্ত্বগুলোকে অনেক সময় সমস্যাযুক্ত বলে মনে করা হয়। তাছাড়া এটির প্যারামিটারগুলোতে কেন পর্যবেক্ষণ করা মানগুলো সঠিকভাবে ফিরে আসে তা ব্যাখ্যা করার জন্য পরিচিত প্রক্রিয়ার অভাব রয়েছে। কারণ হিউরিস্টিক নিয়ম অনুযায়ী, মৌলিক ভৌত তত্ত্বের প্যারামিটারগুলো খুব বেশি সূক্ষ্ম হওয়া উচিত নয় এমনটাই স্বাভাবিক মনে করা হয়।

তার গবেষণায় বলা হয়, মহাকর্ষ, আলোর গতি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক নিয়মগুলো সামান্যতম পরিবর্তন হলে জীবনের অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব হয়ে যেত। এত নিখুঁতভাবে সবকিছু সাজানো থাকার কারণ হতে পারে সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা।

ড. সুন তার গবেষণায় ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত কেমব্রিজের বিখ্যাত পদার্থবিদ পল ডিরাকের একটি তত্ত্বকে অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসেবে ধরেছেন। যেখানে পল ডিরাক বলেছিলেন, মহাবিশ্বের নিয়মগুলো এতই নিখুঁত ও গাণিতিকভাবে সংগঠিত যে, এটি কোনো বুদ্ধিমান সত্তার পরিকল্পনার ফল হতে পারে। এই গণিতবিদের প্রথম প্রস্তাবিত সূত্রটি কীভাবে কিছু মহাজাগতিক ধ্রুবক শ্বাসরুদ্ধকরভাবে নির্ভুলভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ –সেটি তুলে ধরে। যা কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে আসছিল। 

ডিরাক বলেছিলেন, মহাবিশ্বের ভৌত নিয়মের নিখুঁত ভারসাম্যকে মহান সৌন্দর্য এবং শক্তির গাণিতিক তত্ত্বের পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এটি বোঝার জন্য উচ্চমাত্রার বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন।

ড. সুন তার সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, ‘আমাদের পৃথিবী ও মহাবিশ্বের নিয়মগুলো এতটাই নিখুঁত যে, এটি মনে করিয়ে দেয়- সৃষ্টিকর্তা অত্যন্ত দক্ষ একজন গণিতবিদ, যিনি উন্নত গাণিতিক সূত্র দিয়ে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন।’

যদিও ড. সুনের গবেষণা নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি ধর্ম ও দর্শনের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করা কঠিন।

তবে ড. সুন বিশ্বাস করেন, আমাদের অস্তিত্ব কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং এটি সুপরিকল্পিত সৃষ্টি।

আর বিজ্ঞান ও ধর্মের সম্পর্ক নিয়ে ড. উইলি সুনের গবেষণা নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। তবে এটি কি সত্যিই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ, নাকি শুধু একটি দার্শনিক ব্যাখ্যা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: উইকিমিডিয়া এবং দ্য ইকোনোমিক টাইমস

দিনা/অমিয়/

বিমান চালনায় রান্নার তেল ব্যবহার নিয়ে গবেষণা

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১০:২৮ এএম
আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
বিমান চালনায় রান্নার তেল ব্যবহার নিয়ে গবেষণা
ছবি: সংগৃহীত

রান্নার কাজে ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া তেল বিমান চালাতে ব্যবহার করা যায় কি না তা নিয়ে এবার গবেষণা শুরু করেছে স্পেন। আর এই গবেষণায় সহায়তা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

স্পেনের বিমানসংস্থা আইবেরিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের ১০ শতাংশ ফ্লাইট এই তেল দিয়ে চালাতে চায়।

এ প্রসঙ্গে এয়ারলাইন সাস্টেইনেবিলিটি পরিচালক টেরেসা পারেখো বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, স্পেনে টেকসই জ্বালানি শিল্পখাত গড়ে তোলার বিপুল সম্ভাবনা আছে। বিমান চলাচল খাত পরিবেশবান্ধব করা আমাদের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ভাজাপোড়ার তেল থেকে টেকসই কেরোসিন তৈরিতে এখন তিন গুণ বেশি খরচ হচ্ছে। তবে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।’

এছাড়া স্পেনের আন্দালুসিয়ায় আরেকটি নতুন রিফাইনারি তৈরি হচ্ছে। সেখানে অন্যান্য আরও কয়েক ধরণের বর্জ্যকে জ্বালানিতে পরিণত করা হবে। ইউরোপে এটিই এ ধরণের সবচেয়ে বড় রিফাইনারি। 

তাছাড়া এখানকার গবেষণাগারে রেপসল কোম্পানি বিমান খাতে অপরিশোধিত তেল ছাড়া আর কী ব্যবহার করা যায় তা নিয়েও গবেষণা চলছে।

স্পেনের এই জ্বালানি খাত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বড় ভূমিকা রয়েছে। তারা মনে করে, বিমানে অবশ্যই দুই শতাংশ টেকসই জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। তবে ইইউ ২০৩০ সালে এই সংখ্যাটি ছয় শতাংশ ও ২০৫০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ করতে চায়।

সম্প্রতি জার্মান এরোস্পেস সেন্টার ভাজাপোড়া তেলের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে কাজ করছে। দুইটি গবেষণা বিমান ব্যবহার করে তারা বাণিজ্যিক বিমানের ধোঁয়া পর্যবেক্ষণ করেছে। এক একটিতে সাধারণ জ্বালানি এবং অন্যটিতে রান্নার তেল থেকে তৈরি পুরোপুরি নতুন বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করা হয়।

জার্মান এরোস্পেস সেন্টারের ক্রিস্টিয়ানে ফোইগ্ট বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি টেকসই জ্বালানি ব্যবহারের কারণে কম ধোঁয়া নির্গত হয়েছে। এর ফলে বরফের স্ফটিক কমে এবং উষ্ণতা কমায়।’ সূত্র: দ্য মর্নিং নিউজ

দিনা/অমিয়/

মৃত ঘোড়া তত্ত্ব আসলে কী?

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৫ পিএম
আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৫, ০২:৩১ পিএম
মৃত ঘোড়া তত্ত্ব আসলে কী?
ছবি: সংগৃহীত

গল্পটি শুরু করা যায় বার্লিন ব্র্যান্ডেনবার্গ বিমানবন্দরের গল্প দিয়ে। প্রায় ১৫ বছরের পরিকল্পনা এবং ৫ বছরের নির্মাণকাজ শেষে ২০১১ সালের অক্টোবরে উদ্বোধনের দিন নির্ধারিত হয়। কিন্তু কিছু গুরুতর নির্মাণজনিত ত্রুটির কারণে বিমানবন্দরের উদ্বোধন পিছিয়ে যায় আরও তিন বছর। শুধু তাই নয়, সব সমস্যা সমাধান করে প্রকল্পটি জীবিত রাখার জন্য ব্যয় করা হয় আরও কয়েক বিলিয়ন ইউরো। 

২০১৪ সালে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডের পোস্টিলন এক রিপোর্টে জানায়, একেবারে নতুন বিমানবন্দরটি আবার ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ধারণা করা হয়, এটির কাঠামো মেরামত করার চেয়ে ভেঙে পুনর্নির্মাণ করাটাই বেশি সাশ্রয়ী ছিল।

২০১৮ সালে যখন পুরো বিমানবন্দরটি সম্পূর্ণরূপে পুনর্নির্মাণের কথা ভাবা হয় তখন এই বাস্তবতা নিয়ে বিদ্রুপের ঝড় শুরু হয়।

জার্মানরা তাদের এ জাতীয় লজ্জাকে ডেড হর্স থিওরি বা মৃত ঘোড়া তত্ত্বের একটি নিখুঁত উদাহরণ হিসেবে আজও মনে করেন। আমাদের দেশেও সরকারি বা বেসরকারি খাতে লাইফ সাপোর্টে চলমান এমন অনেক প্রকল্প বেশ পরিচিত।

মৃত ঘোড়া তত্ত্ব আসলে কী?
ব্যবসা এবং আমলাতন্ত্রের প্রেক্ষাপটে মৃত ঘোড়া তত্ত্ব বলতে বোঝায়- যখন কোনো ব্যর্থ প্রকল্পকে ইচ্ছাকৃত অজ্ঞ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জীবিত রাখা হয়।

ডেড হর্স থিওরিতে বলা হয়েছে- যখন আপনি আবিষ্কার করেন যে, আপনি একটি মৃত ঘোড়ায় চড়ছেন, তখন সবচেয়ে ভাল কৌশল হলো প্রথমে সেই ঘোড়া থেকে নেমে আসা।

তবে, আধুনিক ব্যবসা, শিক্ষা এবং সরকারব্যবস্থায় অনেক বেশি উন্নত কৌশল ব্যবহার করেও প্রায়ই সেটি না করে নিচে উল্লেখ করা কাজগুলো করা হয়ে থাকে। যেমন-

১) আরও শক্তিশালী চাবুক কেনে।
২) আরোহী পরিবর্তন করে।
৩) ঘোড়াটিকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়।
৪) ঘোড়াটিকে আরও ভালোভাবে অধ্যয়নের জন্য একটি কমিটি নিয়োগ করে।
৫) অন্যরা কীভাবে মৃত ঘোড়ায় চড়ে তা দেখার জন্য অন্যান্য দেশ ভ্রমণের ব্যবস্থা করে।
৬) নিজদের কাজের মান কমিয়ে আনে যাতে মৃত ঘোড়াকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
৭) মৃত ঘোড়াকে ‘জীবিত-প্রতিবন্ধী’ হিসেবে পুনঃশ্রেণিবদ্ধ করে।
৮) মৃত ঘোড়ায় চড়ার জন্য বাইরের ঠিকাদার নিয়োগ করে।
৯) মৃত ঘোড়ার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত তহবিল অথবা প্রশিক্ষণ প্রদান করে।

আমাদের নিজের ব্যক্তিগত জীবনেও আমরা কখনও কখনও মৃত ঘোড়া তত্ত্ব মিলিয়ে ফেলি। ফলে এখানেও শুরু হয় হতাশা, আবেগ এবং নিজের উপর অবিশ্বাসের গল্প।

এই যে জার্মানির বিশাল বিমানবন্দর দুর্ঘটনার প্রিমর্টেম বিশ্লেষণ না করে মৃত ঘোড়ার জীবন বাঁচানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। 

তাই কী ঘটেছে তা বোঝার জন্য মৃত ঘোড়াটির একটি সংক্ষিপ্ত ময়নাতদন্ত করি-

মৃত ঘোড়ার ময়নাতদন্ত
মৃত ঘোড়া তত্ত্বের প্রথম অন্তর্নিহিত ধারণা হলো, ঘোড়াটি আসলে তার স্রষ্টার সঙ্গে দেখা করেছে। ফলে এটিকে মৃত ঘোষণা করা একটি বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত হতে পারতো। এর অর্থ হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে সরে যাওয়া এবং সেটি পরিত্যাগ করা। অমীমাংসিত সমাধানের জন্য পরিকল্পনার নিশ্চয়ই কোনো অভাব নেই।

বলা হয়ে থাকে, মোট চার ধরণের ঘোড়া আছে- উৎকৃষ্ট ঘোড়া, ভালো ঘোড়া, খারাপ ঘোড়া এবং সবচেয়ে খারাপ ঘোড়া।

উৎকৃষ্ট ঘোড়াটি চাবুকের ছায়া দেখার আগেই চালকের ইচ্ছানুযায়ী দৌড়াবে। ভালো ঘোড়াটি চাবুকের আঘাত পাওয়ার আগেই, প্রথমটির মতো দৌড়াবে। তৃতীয়টি যখন তার শরীরে ব্যথা অনুভব করবে তখন দৌড়াবে। আর চতুর্থটি ব্যথা তার হাড়ের মজ্জায় প্রবেশ করার পরে দৌড়াবে।

তাহলে এবার আপনি কল্পনা করতে পারেন- চতুর্থ ঘোড়াটির জন্য দৌড়াতে শেখা কতটা কঠিন! 

সূত্র: দ্য মাইন্ড কালেকশন

দিনা/অমিয়/