সিংগাইর, হরিরামপুর ও সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে মানিকগঞ্জ-২ আসন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ভোটের যুদ্ধে লড়বেন মমতাজ বেগম। এই আসন থেকে তিনিসহ মোট ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
তবে বিগত সময়ের চেয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন মমতাজ বেগম। এই আসনেই তার বিপরীতে আছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র চার প্রার্থী। তারা হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ টুলু, সদ্য পদত্যাগকারী সিংগাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ চঞ্চল।
নৌকা প্রতীকের ভোটের বড় একটি অংশ ভাগাভাগি হওয়ার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মমতাজ বেগম অনেকটা অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মতে, মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র চার প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। ফলে দলের ভোট ভাগাভাগি হবে। কমে যাবে দলীয় প্রার্থীর ভোট। এ আসনটিতে মমতাজ বেগমের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু। কারণ স্থানীয় দলীয় রাজনীতিবিদ, ইউপি চেয়ারম্যানের একটা অংশ তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনসহ নানা সহযোগিতা করে আসছেন।
দলীয় এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যার যার অবস্থান থেকে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় রাজনীতি করে আসছেন। নির্বাচনের আগে থেকেই তারা সংসদীয় আসন চষে বেড়িয়েছেন। এর মধ্যে দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ টুলু, দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল ও মুশফিকুর রহমান খানের সাধারণ মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ছাড়া এই আসনের হরিরামপুর উপজেলার একমাত্র প্রার্থী সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ। অঞ্চলভিত্তিক ভোটারের দৃষ্টি তার ওপরও থাকবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মুশফিকুর রহমান খান বলেন, ‘আমি জনগণের ভোটের মাধ্যমে দুবার সিংগাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমার সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা অনেক আগে থেকেই। প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই এই সংসদীয় আসনে আমার নেতা-কর্মীরা প্রচার শুরু করেছেন। এ ছাড়া হরিরামপুরে যারা রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্ব দেন, সবার সঙ্গেই আমার ওঠাবসা আছে। আশা করি, নির্বাচনে সমস্যা হবে না। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ বলেন, ‘এই আসনের ভোটাররা আমাকে পছন্দ করেন। আমি গত ১৯ বছর ধরে এলাকায় সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছি। সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ সর্বস্তরের মানুষ আমার পাশে আছেন। আমি আমার জনপ্রিয়তা দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনব।’
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্যের যেসব গুণাবলি ও যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন তার সবটুকুই আমার আছে।’ দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জনগণের পাশে থেকেছেন বলে জনগণই তাকে মূল্যায়ন করবেন বলে তিনি জানান।
নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগম বলেন, ‘প্রার্থী যত বেশি হবে নির্বাচনও তত বেশি জমে উঠবে। নির্বাচন মানেই চ্যালেঞ্জ। বিগত সময়ে এই সরকারের আমলে মানিকগঞ্জ-২ আসনে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে। গত দুই মেয়াদে নির্বাচনী আসনে ব্যাপক উন্নয়ন করায় এবারও সাধারণ জনগণ আমাকে এমপি নির্বাচিত করবেন। এই নির্বাচনে সকল জনগণের সম্পৃক্ততা থাকবে এবং সবাই ভোট দিতে আসবেন।’