
মহাসড়ক সরু ও ভাঙাচোরা, পাশে হাট-বাজারসহ ১১টি কারণে উত্তরাঞ্চলের ৫০টি পয়েন্টে এবার ঈদে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হতে পারে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে। তবে সব ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকের প্রায় চার হাজার সদস্য।
হাইওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, যুমনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে বগুড়া রিজিয়নে অন্তত ৩৫টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রংপুর রিজিয়নে চিহ্নিত করা হয়েছে ১৫টি পয়েন্ট। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার এলাকা।
হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রিজিয়ন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহিদ উল্লাহ জানান, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ আটটি পয়েন্ট রয়েছে। ওই থানা এলাকায় এবার যানজটের কারণ হতে পারে ভাঙাচোরা রাস্তা, হাট-বাজার ও অসমাপ্ত ফ্লাইওভার।
তিনি বলেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে আর্মড পুলিশ সদস্যরাও কাজ করবেন। এ ছাড়া স্থায়ী এবং অস্থায়ী টিমের পাশাপাশি বিকল যানবাহন দ্রুত সরিয়ে নিতে রেকারও থাকবে।’
সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আলী আহমেদ হাসমী জানান, বগুড়া রিজিয়নের সাতটি থানা ও পুলিশ ক্যাম্প এলাকায় ৩৫টি পয়েন্টে এবার যানজটের পাশাপাশি সড়কে ডাকাতির বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আলী আহমেদ হাসমী বলেন, ‘চালকদের যানজট ও সড়ক ডাকাতি সম্পর্কে সতর্ক করতে লিফলেট দেওয়া হচ্ছে। জরুরি যোগাযোগের জন্য দেওয়া হচ্ছে কর্মকর্তা ও পুলিশ স্টেশনের সেল নম্বর।’ তিনি বলেন, সড়ককে শৃঙ্খলা ধরে রাখার পাশাপাশি চাঁদাবাজি বন্ধে বিভিন্ন জায়গায় মাইকে সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে হাটিকুমরুল গোলচত্তর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার পথকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ ওই পথে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৩টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। এদিকে যুমনা সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে বলা হয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থায় দিনে গড়ে ২১ হাজার যানবাহন সেতু অতিক্রম করে। কিন্তু ঈদে তা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়। গত ঈদের ছুটিতে এক দিনে ৫৬ হাজার যানবাহন পার হয় যমুনা সেতু।
পুলিশের বিভিন্ন সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলে ঈদের আগে-পরে সড়কে চলাচল নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে পুলিশ, আমর্ড পুলিশ, জেলা পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে প্রায় ৪ হাজার। এর মধ্যে শুধু সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের অন্তত ৪৫০ সদস্য মাঠে থাকবেন ২৪ ঘণ্টা। গত বছর ৭৭১ সদস্য কাজ করেন কিন্তু এবার কিছুটা কমানোর কারণ ঝাউল ব্রিজসহ যানজট প্রবণ কয়েকটি এলাকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।
সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, যেসব এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণসহ অন্যান্য সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে, সেসব এলাকায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন প্রকৌশলী হারুন-অর রশিদ। তিনি জানান, ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য রাস্তার যতটুকু জায়গা নেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে প্রশস্ত করে দুই পাশে চারটি লেন তৈরি করা হয়েছে, এরপরও যানজট হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারলে ঈদে গোবিন্দগঞ্জে যানজট তীব্র হওয়ার আশঙ্কা নেই।’
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ থ্রি-হুইলার চালকদের পাশাপাশি বাসচালকরা রাস্তার ওপরই যাত্রী ওঠা-নামা করেন, ফলে যানজট লেগেই থাকে সারাদিন। কথা হয় গোবিন্দগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোহাই মিনুর সঙ্গে। তার ধারণা রাস্তার ওপরে থাকা থ্রি-হুইলার স্ট্যান্ড সরিয়ে নিলে যানজট কমে যাবে। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে ব্যবস্থা না নিলে ঈদের সময় গোবিন্দগঞ্জ বাজার এলাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি হবে বেশি।’
বগুড়ার বনানী এলাকায় ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন আব্দুস সালাম। তার অভিযোগ রাস্তা প্রশস্ত করার পরও যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না শুধু যানবাহনের বেপরোয়া চালকদের কারণে। তিনি বলেন, ‘বনানীতে রাস্তার মধ্যে যানবাহন চালকরা গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করেন, আবার থ্রি-হুইলার চালকরা উল্টো পথে চলেন, ফলে যানজট সৃষ্টি হয়। বগুড়া শহরের বনানী থেকে মাটিডালী পর্যন্ত অনেক স্থানেই এখন মেরামতের জন্য সড়কেই যানবাহন রাখা হয়। এমনকি ফ্লাইওভারও ব্যবহার করা হচ্ছে এ কাজে।’