চট্টগ্রামের অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়া এলাকায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস ডিপোতে আগুন দেওয়ার জন্য দুই শ্রমিক লীগ নেতার মধ্যে ৪ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছিল।
বুধবার (২৪ জুলাই) চট্টগ্রামে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তি দেন শ্রমিক লীগ নেতা মো. সোহেল। ৪ লাখ টাকার চুক্তিতে সোহেলকে এই কাজে নিয়োগ দিয়েছিলেন আরেক শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল আলম। চুক্তি অনুসারে বাস ডিপোতে আগুন দেওয়ায় চারটি বাস পুড়ে যায়। এই কাজের জন্য সোহেল অগ্রিম হিসেবে পান মাত্র ৫০০ টাকা।
গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন মোহাম্মদ জুনায়েদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সোহেল। আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে সোহেল বলেছেন, নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা শ্রমিক লীগ সভাপতি দিদারুল আলমের নির্দেশেই অক্সিজেনের বিআরটিসি বাস ডিপোতে আগুন দেন তিনি। এর আগে গত সোমবার বিআরটিসি বাস ডিপোর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সোহেলকে গ্রেপ্তার করে হাটহাজারী থানা পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরের দিন গ্রেপ্তার করা হয় শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল আলমকে।
বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়ার বিআরটিসি ডিপোতে ৯৬টি সরকারি বাস রয়েছে। গত শনিবার (২১ জুলাই) রাত ১২টার দিকে ডিপোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শেডসংলগ্ন চারটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে একটি বিআরটিসি বাসের ১৬টি আসন এবং আরেকটির ৮টি পুড়ে যায়। বাকি দুটি বাসের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় রবিবার চট্টগ্রাম বিআরটিসি ডিপোর ম্যানেজার মো. জুলফিকার বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডিপোর সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করে কালো শার্ট ও লুঙ্গি পরিহিত এক যুবকের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। সেই বাসে আগুন দিয়েছে। পরে অভিযান চালিয়ে আমরা তাকে নগরের বায়েজীদ বোস্তামী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করি। তার বাসস্থান থেকে একটি কালো শার্ট ও লুঙ্গিও জব্দ করা হয়। এগুলো মামলার আলামত হিসেবে কাজে আসবে।’
ওসি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল স্বীকার করেছেন, গত শুক্রবার বিকেলে নতুনপাড়া সিএনজি স্টেশনের সামনে দিদারুল আলম তার সঙ্গে দেখা করেন। একপর্যায়ে তাকে আগুন দেওয়ার চুক্তি করে অগ্রিম ৫০০ টাকা দেন এবং বাকি টাকা অর্থাৎ ৪ লাখ টাকা কাজের পর দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
জানা যায়, গ্রেপ্তার দুই শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল ও সোহেলকে গত মঙ্গলবার আদালতে পাঠায় পুলিশ। দিদারুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, দিদারুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা আছে। ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর নতুনপাড়া এলাকায় আবদুল হালিম ওরফে রুবেল নামের একজনকে ছুরিকাঘাতে খুন করার অভিযোগে দিদারুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে আছে। বিআরটিসি বাসে সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়ার দ্বন্দ্বে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে জানা গেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ এবং সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। সারা দেশে নির্বিচারে বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। অথচ বিআরটিসি বাস ডিপোতে আগুন দিয়েছে শ্রমিক লীগের নেতা। যার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।