বিএনপি নেতার পরিচয় দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কালুরঘাট শিল্প এলাকায় বাগান ও ফুটপাত দখল করে অফিস নির্মাণ করেছেন মো. সাইফুল (৩৮) নামে এক ব্যক্তি। তবে বিএনপির নেতাদের দাবি, সাইফুল তাদের দলের কেউ নয়। এদিকে সাইফুল চান্দগাঁও থানা এলাকায় একটি কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের শুরুর দিকে কালুরঘাট শিল্প এলাকায় সড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে চসিক। এরপর সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কারখানামালিকরা বাগান ও ফুটপাত নির্মাণ করেন। তবে গত ৫ আগস্টের পর নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে মো. সাইফুল সেই বাগান ও ফুটপাতের জায়গা দখল করে অফিস নির্মাণ করেন। তার দেখাদেখি সেখানে আরও অনেকেই ১০টি দোকান নির্মাণ করেন। কালুরঘাট শিল্প এলাকার শাহজী চত্বর থেকে পশ্চিম দিকে এগোলে সাইফুলের সেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসটি চোখে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত কারখানার ঝুট, কার্টন, পলি ও স্টকলট, শ্রমিকদের নাস্তার অর্ডারসহ পোশাকশিল্পের নানা ধরনের ব্যবসা নিজের কবজায় নিতে সাইফুল এই অফিস খুলেছেন। দিনে-দুপুরে ফুটপাত ও বাগানের জায়গা দখল করে অফিস নির্মাণ করলেও কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায়নি। যে কারণে তিনি আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এরপর তিনি জমি দখলের কাজেও জড়িয়ে পড়েন। এসব করে তিনি বেশ অর্থও কামিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি হামিদচর একতা আবাসিক এলাকায় জমি কিনে বাড়ি নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছেন।
এ ছাড়া সাইফুল আড়ালে থেকে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেন। তার এই গ্যাংটি পরিচালনা করেন বাবুল (২৮) নামের এক যুবক। এই বাবুলের বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। এই গ্যাং সর্বশেষ হামিদচর এলাকার কর্ণফুলী রিভারভিউ নামের একটি রেস্টুরেন্টে হামলা চালায়। এ সময় গ্যাংয়ের সদস্যদের ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদ রিয়াদ (২৬) নামে এক রেস্টুরেন্ট কর্মচারী নিহত হন। এ ছাড়া তারা আরও ৮ জনকে কুপিয়ে আহত করেন। এই ঘটনার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে গত মার্চ মাসে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭। পরে ওই মামলায় তাকে দুদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
জমি দখলের বিষয়ে মো. সাইফুল খবরের কাগজকে জানান, তিনি রেলওয়ে থেকে অনুমতি নিয়ে অফিস করেছেন। তবে রেলওয়েতে খবর নিয়ে জানা গেছে, সেখানে রেলওয়ের কোনো জমি নেই। এ ছাড়া ফুটপাতের জায়গা রেলওয়ে কাউকে লিজ দেয় না।
সন্ত্রাস, খুন, জমি দখল-বেদখলসহ একাধিক মামলা ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, ‘আমি বিএনপির তৃণমূলের নেতা। বিএনপির রাজনীতি করার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমার বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে।’
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরের মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জানে আলম জিকু খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাইফুল নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিলেও তার কোনো পদ-পদবি নেই। এমনকি বিএনপির কোনো সভা-সমাবেশেও আমরা তাকে সঙ্গে নিই না। কেউ নিজেকে জোর করে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে কোনো অপরাধ করলে তার দায়, দল নেবে না। তবে এই বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত।’
এ বিষয়ে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন খবরের কাগজকে জানান, এই থানায় তিনি নতুন যোগদান করেছেন। তবে সব অপরাধীর বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কেউ ছাড় পাবে না।