
তান্ত্রিক, শাস্ত্রিক, জৈনপুরী মা ফাতেমার দরবারের নামে প্রতারণা করে দেশের হাজারো মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
দীর্ঘদিন ধরে চালানো তদন্তের পর ভোলার বোরহানউদ্দিন, তজুমুদ্দিন ও লালমোহন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রাকিব (২০), মো. রাকিব মোল্লা (২৯) ও মো. আলাউদ্দিন (২৬)। তাদের সবার বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ফুলকাচিয়া এলাকায়।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন, ৩টি প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনের ভিডিও, ১০টি ভয়েস রেকর্ড, ৭টি বিজ্ঞাপনের ছবি, ১৫০ পাতার বিকাশ স্টেটমেন্ট এবং কোটি টাকার লেনদেনে ব্যবহৃত ৫টি বিকাশ অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।
রবিবার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন তদন্তকারী সংস্থার অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ঢাকা মেট্রো উত্তর) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।
তিনি বলেন, তেজগাঁওয়ের গৃহবধূ রহিমা বেগমের (৩৪) সৌদি প্রবাসী স্বামী ১৭ জন বাংলাদেশির জন্য ভিসার ব্যবস্থা করতে গিয়ে কফিলকে ৩৫ লাখ টাকা দিলেও কোনো ভিসা মেলেনি। এমন অবস্থায় হতাশাগ্রস্ত রহিমা বেগম ইউটিউবে ‘জিনের বাদশা’ ও ‘জৈনপুরী মা ফাতেমার দরবার’-এর নামে দেওয়া লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারণার ফাঁদে পা দেন। ধাপে ধাপে বিভিন্ন কৌশলে তার কাছ থেকে দশ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি। এ ঘটনায় তিনি গত বছরের ২২ এপ্রিল তেজগাঁও থানায় একটি মামলা (নম্বর-১৬) করেন। পরে তদন্তে নামে পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর। ধারাবাহিক অভিযানে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার মো. রাকিব ও মো. রাকিব মোল্লা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, ২০১৯ সাল থেকে তারা ‘তান্ত্রিক-শাস্ত্রিক জৈনপুরী মা ফাতেমা দরবার শরীফ’, ‘হাবিবুল্লাহ হুজুর’ ও ‘জিনের বাদশা’ নাম ব্যবহার করে হাজার হাজার মানুষকে প্রতারিত করেছেন এবং কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
প্রতারণার অভিনব কৌশল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ প্রতারণার চিত্র। ইউটিউব ও টেলিভিশনে চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে তারা দাবি করতেন, জৈনপুরী মা ফাতেমা জিন-পরীর মাধ্যমে যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে পারেন। বিজ্ঞাপন অনুযায়ী, মা ফাতেমা নাকি শবেবরাতের রাতে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করেন এবং অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন। প্রেম, পারিবারিক সমস্যা, বিদেশ যাত্রার বাধা, পাওনা আদায়, চাকরির প্রমোশন থেকে শুরু করে লটারি জেতানো পর্যন্ত সব কিছুতেই সমাধান মিলবে বলে প্রলোভন দেখানো হতো ওই বিজ্ঞাপনে।
এর পর চক্রটি প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রথমে আগরবাতি, গোলাপজল, সিঁদুর, ভুটানি গরুর দুধ, আগুন মোয়া শাড়ি, আংটি ও পাঁঠা বলির জন্য টাকা দাবি করত। পরে ‘জিনেরা’ নানা সমস্যায় পড়েছে এমন গল্প বলে আবারও টাকা আদায় করত। চক্রের এসব আবদার না মানলেই ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করা বিভৎস জিন-পরীর ছবি পাঠিয়ে সন্তানের মৃত্যু বা পরিবারের অঙ্গহানির ভয় দেখানো হতো। চক্রের পুরুষ সদস্যরা নারীকণ্ঠে ‘মা ফাতেমা’ সেজে কথা বলতেন, আবার কণ্ঠ পাল্টে ‘জিনের’ কণ্ঠ দিতেন।
এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রলোভনে পা না দিতে সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা।
জাহাঙ্গীর/মেহেদী/