
দ্বিতীয় অধ্যায় : সমাজকর্মের শাখা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-১
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
জুয়েল বর্তমানে ক্লাসে অমনোযোগী। সে মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়েও যায় না। শ্রেণিশিক্ষক বিষয়টি উপলব্ধি করে একজন সমাজকর্মীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। এখন সে পড়াশোনায় মনোযোগী এবং প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসে।
ক. বাংলাদেশে কোন হাসপাতালে প্রথম চিকিৎসা সমাজকর্ম চালু হয়?
খ. প্রবীণ কল্যাণের একটি উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে সমাজকর্মের কোন বিশেষায়িত শাখার জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ওই শাখার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক. বাংলাদেশে প্রথম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সমাজকর্ম কার্যক্রম শুরু হয়।
খ. প্রবীণ কল্যাণের একটি উদ্দেশ্য হলো- প্রবীণদের মর্যাদার উন্নয়ন ঘটানো। অতীতে প্রবীণরা যৌথ পরিবারে সবার কাছ থেকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও মর্যাদা পেতেন। তাদের পরিবারে বিভাজন হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু একক পরিবারব্যবস্থা আসার পর প্রবীণরা আজ মর্যাদাহীন, পরিবারের বোঝায় পরিণত হয়েছেন।
আরো পড়ুন : সমাজকর্মের শাখা অধ্যায়ের ৬টি অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর,৮ম পর্ব
গ. উদ্দীপকে সমাজকর্মের বিশেষায়িত শাখা বিদ্যালয় সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিবেশে সমাজকর্ম অনুশীলনের একটি প্রায়োগিক শাখা হলো- বিদ্যালয় সমাজকর্ম। সমাজকর্মের এ শাখায় শিশুর বিদ্যালয়ে গমন এবং বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদান নিরূপণ করে তা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজকর্মীরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। শিক্ষার্থীর স্কুল-পরিবেশে খাপ খাওয়াতে অসামঞ্জস্যতা, পাঠে অমনোযোগিতা, অস্বাভাবিক আচার-আচরণ, স্কুল পালানো, পারস্পরিক বিদ্বেষমূলক মনোভাব প্রভৃতি সমস্যা সমাধানে বিদ্যালয় সমাজকর্মী সহায়তা করে। উদ্দীপকে জুয়েলের ক্লাসে অমনোযোগিতা বিদ্যালয় সমাজকর্মীর কর্মক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। তাই বলতে হয়, জুয়েলের সমস্যা সমাধানে বিদ্যালয় সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত বিদ্যালয় সমাজকর্মের গুরুত্ব সর্বাধিক। মানুষের সুপ্ত প্রতিভা এবং সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশে শিক্ষার বিকল্প কল্পনা করা যায় না। শিক্ষা হলো মানবসম্পদ উন্নয়নের সর্বোত্তম কৌশল। তাই বিদ্যালয় পরিবেশকে যথাসম্ভব শিশুবান্ধব ও সৃজনশীল করে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিদ্যালয় সমাজকর্ম ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার পরিবেশে বাধা সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর মূলোৎপাটন ও উন্নয়নই বিদ্যালয় সমাজকর্মের মূল দর্শন। শিক্ষার্থী এবং তার পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগত ও দলীয় কাউন্সেলিং সেবা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মনোরম করে তোলে বিদ্যালয় সমাজকর্ম। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের কারণে শিক্ষার্থীরা অস্বাভাবিক আচরণ করে। এক্ষেত্রে সামাজিক ও মানসিক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া দরিদ্র শিশু-কিশোরদের বিদ্যালয়ের পথ সহজ করে তোলে। শিক্ষার্থীর মধ্যে অসংলগ্নতার কারণ উদঘাটন করে তা সমাধান করার মাধ্যমে তাদের স্কুলমুখী করা হয়। স্কুলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধকল্পে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। মোটকথা, সমাজকর্ম বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখে।
লেখক : প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ
শের-ই-বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
কবীর