
দেশের জনপ্রিয় মিউজিশিয়ান মিঠুন চক্র। বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্ট বাজানোর দক্ষতার পাশাপাশি গানও গেয়ে থাকেন এই শিল্পী। কিছুদিন আগে ইউনেসকোর হেডকোয়ার্টারে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দেশে ফিরেছেন তিনি। এসব বিষয় ও অন্যান্য পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদ শাকিল-
সম্প্রতি ইউনেস্কোর হেডকোয়ার্টারে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। সে সম্পর্কে বলুন-
আমাদের ট্যুরটি হয়েছিল ইউনেসকোর আন্ডারে, যেখানে আমি প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে বাজানোর আমন্ত্রণ পাই। তাও আবার ইউনেসকোর আমন্ত্রণে ফ্রান্সে, যেখানে বাংলাদেশ হাইকমিশন জড়িত ছিল এবং এটার নেতৃত্বে ছিলেন আমাদের কাছের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী ভাই। সেখানে আমি ছাড়াও বিখ্যাত বংশীবাদক জালাল আহমেদ, নীরব, টুনটুন বাউল, পালাকার ভাই, পারসা, পিংকি এবং সেজান গিয়েছিলাম। খুব সুন্দর এক অভিজ্ঞতা ছিল। আমরা অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেছিলাম ২১ তারিখ। সেদিন আমরা দুবার বাজিয়েছিলাম।
অনুভূতি কেমন ছিল?
পারফর্মের অনুভূতি ছিল অভূতপূর্ব। ইউনেসকোর মতো এত বড় একটি সংস্থায় গিয়ে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করা, সেটাও আবার ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনে, অসাধারণ এক অনুভূতি। তার ওপর সেদিন সকালবেলায় শুধু আমরাই এককভাবে বাংলাদেশের সংগীত পারফর্মের সুযোগ পেয়েছিলাম। আর রাতে তো সবাই মিলে গ্রুপ পারফরমেন্স ছিলই। এটা প্রাপ্তির মধ্যে সবচেয়ে উপরের স্থান দখল করে রেখেছে। যদিও খুব নার্ভাস ছিলাম, তবে সবকিছু খুব ভালো হয়েছে। যেখানে আমরা বলতে পেরেছি ‘উই আর অল ওয়ান সাউন্ড, উই আর অল ওয়ান টুগেদার।
এআর রহমানের সঙ্গেও আপনি একই মঞ্চে পারফর্ম করেছেন। এই অভিজ্ঞতাটা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য কতটা গুরুত্ববহ?
২০১৩ সালে টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এআর রহমান বাংলাদেশে এসেছিলেন। তার সঙ্গে আমার পারফর্ম করাটাও বেশ নাটকীয় ছিল। আমার গুরুজি আনন্দ শিবামনী যিনি দীর্ঘদিন যাবৎ এআর রহমানের সঙ্গে বাজাচ্ছেন, তিনিই আমাকে এ সুযোগটা করে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের একমাত্র মিউজিশিয়ান হয়ে তাদের সঙ্গে বাজানো, দুই-তিন দিন একসঙ্গে প্র্যাকটিস করে ফাইনালি স্টেজ শেয়ার করার ব্যাপারটা এখনো আমার মাথায় রয়ে গেছে। এটা আমাকে আরও বেশি প্রফেশনাল হতে সাহায্য করেছে।
অনেকেরই কৌতূহল, আপনি আসলে কি কি ইনস্ট্রুমেন্ট বাজাতে পারেন?
আমি ছোটবেলা থেকেই যে ইনস্ট্রুমেন্টগুলো ছন্দ সৃষ্টি করে, সেগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। তবলা বাজানো শুরু করি আড়াই বছর বয়সে। তার পর থেকে আমি যা পাই তাই বাজাতাম। এখনো বিভিন্ন কন্টিনেন্টের বিভিন্ন ছন্দযন্ত্র যা আছে, সেগুলো বাজানোর টুকিটাকি চেষ্টা করি। তবে সুরের যন্ত্রে আমি অতটা পারদর্শী নই। আমি সব সময়ই বলি, আমার দেহটাই একটা যন্ত্র আর এটাকেই বাজানোর চেষ্টা করছি।
কোক স্টুডিও বাংলার সর্বশেষ সিজনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। এর বাকি অংশেও কি আপনাকে দেখা যাবে?
কোক স্টুডিওর সিজনটা একটা জার্নির মতো। দেখতে থাকুন, যখন সব (গান) আসবে, তখন তো জানতে পারবেনই। এটা সারপ্রাইজই থাকুক।
ইনস্ট্রুমেন্টের পাশাপাশি আপনি গায়ক হিসেবেও পরিচিত। সামনে গান নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
গান আসলে আমার জীবনে একটি বড় আশীর্বাদ। কারণ আমি কখনো গান শিখিনি, আমি গায়ক নই। তবে যতটুকুই গাইতে পারি এর পুরো কৃতিত্ব আমার মায়ের। গান নিয়ে সামনে অবশ্যই অনেক প্ল্যান আছে। নিজের সলো কিছু গান, চট্টগ্রামের গান এবং সিনেমার জন্য মুখিয়ে আছি। আমি গত বছর প্রথম ‘দেয়ালের দেশ’ সিনেমায় ইমন চৌধুরীর সুরে বিসর্জনের ব্যথা গানটি গেয়েছিলাম। গানটি বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। ও রকম আরও গান গাইতে চাই, দেখা যাক কি হয়।
এই সময়ে অনেকেই একটা/দুইটা গান করে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছেন, অনেকে আবার খুব চেষ্টার পরও স্ট্রাগল করছেন। বর্তমানে এই যে ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
প্রতিটি যুগে প্রতিটি রেভ্যুলুশনের মতো এটাও একটা রেভ্যুলুশন। আগেও একটি গান গেয়ে অনেকে ফেমাস হয়েছেন, ওই গানটিই গেয়ে গেছেন। শত শত বছর ধরে এ রকম ইতিহাস আছে, এটা নতুন কিছু নয়। সো এটা হতেই থাকবে। এ বিষয়ে আমার তেমন কোনো মন্তব্য নেই। সবকিছুকেই সাধুবাদ, ধন্যবাদ।
/শাকিল