
চ্যানেল আইয়ে ঈদের আগের দিন নাটক মানেই রেজানুর রহমান। চ্যানেলটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর এক বছর পর থেকেই টানা ২৫ বছর ধরে ঈদের আগের দিনের নাটক বানাচ্ছেন বিশিষ্ট এই নাট্যকার-পরিচালক। নাটক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খালেদ আহমেদ
চ্যানেল আইয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ঈদের আগের দিন আপনার নাটক প্রচার হয়ে আসছে। আপনার অনুভূতি কেমন?
টানা ২৫ বছর ধরে চ্যানেল আই দুই ঈদে আমার নাটক প্রচার করে আসছে। চ্যানেল আই একটি স্লোগান দেয়- ঈদের আগের দিনের নাটক মানেই রেজানুর রহমানের নাটক। আমার ধারণা, দেশে আর কোনো নাট্যনির্মাতার জন্য কোনো টেলিভিশন চ্যানেল এমন স্লোগান নির্ধারণ করেনি। এজন্য আমি চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশবরেণ্য শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
মূলত তার আন্তরিকতার কারণেই আমি এ স্বীকৃতি পেয়েছি। এত বছর ধরে ঈদের আগের দিনের জন্য নাটক নির্মাণ করতে পারা একজন নাট্যকার-নির্মাতার জন্য ভীষণ আনন্দের।
এবার ঈদের নাটক সম্পর্কে বলুন-
এবার যে নাটকটি প্রচার হবে তার নাম ‘একটি পারিবারিক গল্পের খসড়া’। সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে এ নাটকটি। আমাদের সমাজে যৌথ পরিবারের শক্তি কমে যাচ্ছে। ফলে আমরা পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। একটি পরিবারের গল্প উঠেছে নাটকে। বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্বে ছেলের জীবন যে কতটা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তা বোধকরি সবার জানা।
এবারের নাটকেও এমনই এক কাহিনির মুখোমুখি হবেন দর্শক। অভিনয় করেছেন দিলারা জামান, মোহাম্মদ বারী, মাহবুবা রেজানুর, হাফিজুর রহমান সুরুয, রাজিব সালেহীন, অপ্সরা, রুনি, দীপান্বিতাসহ অনেকে।
আপনার নাটকের গল্পে পরিবার নিয়ে ভাবনার কথাই বেশি উঠে আসে। কেন?
পরিবারই তো সবকিছু। যার পরিবার নেই, তার আসলে কিছুই নেই। বর্তমান যান্ত্রিক যুগে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এজন্য অনেকাংশে দায়ী। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ইদানীং আমাদের টিভি নাটকে পরিবারের সমস্যা, সংকট, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, প্রেরণার কথাগুলো তেমন উঠে আসে না।
বাবা-মা, ভাইবোন, নানা, নানি, ফুপা, ফুপু, খালা, খালু, চাচাতো-মামাতো ভাইবোন, প্রতিবেশী, বন্ধুর চরিত্র অধিকাংশ নাটকে অনুপস্থিত। ফলে পরিবারের বন্ধনগুলো আলগা হয়ে যাচ্ছে। আমি এ আলগা বন্ধনকে মজবুত করতে চাই।
অনেকে বলেন, বর্তমানের চেয়ে আগের টিভি নাটক ভালো ছিল। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
আমি এ কথার সঙ্গে একমত নই। বর্তমান সময়েও অনেক ভালো নাটক হচ্ছে। কিন্তু আমরা অনেকে নাটক না দেখেই বলি ভালো কিছু হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে আমি নিজে একটা জরিপ করেছি। বিভিন্ন বয়সী ২৫ জন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছে প্রথম প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশে টিভি নাটকের মান কেমন? ২০ জনই বলেছেন, নাটকের মান ভালো নয়।
দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল- আপনি কি নিয়মিত টিভি নাটক দেখেন?
১৭ জনই বলেছেন, মাঝে মাঝে দেখেন। তাহলে আমার প্রশ্ন- তারা কী করে বলেন দেশের টিভি নাটকের মান ভালো নয়। তবে হ্যাঁ, একথা স্বীকার করতেই হবে, আমরা বোধকরি কোয়ালিটির চেয়ে কোয়ানটিটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। অথচ কোয়ানটিটি নয়, কোয়ালিটির গুরুত্ব থাকা উচিত।
নতুন প্রজন্মের নির্মাতারা কেমন করছেন?
অনেকে ভালো কাজ করছেন। তাদের জন্য টিভি চ্যানেলগুলোর আন্তরিক ভাবনাটা বেশ জরুরি। মেধাবী তরুণদের প্রতি আস্থার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই ভালো কাজ হবে।
মঞ্চ নাটক ও আপনাদের নাটকের দল নিয়ে কিছু বলুন-
আমাদের নাটকে সংগঠন এথিক দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। সম্প্রতি মঞ্চে এসেছে এথিক-এর নতুন নাটক ‘সুড়ঙ্গ’। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর কাহিনি অবলম্বনে নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন তরুণ নির্দেশক মিন্টু সরদার। আমদের দলের আলোচিত মঞ্চ নাটক রাজদ্রোহী, আয়নাঘর, হাড়ি ফাঁটিবে, নিয়মিত মঞ্চস্থ হচ্ছে। মঞ্চে বৃহৎ পরিসরে একটি নাটকের কথা ভাবছি। পাণ্ডুলিপি লেখার কাজ চলছে। সবার দোয়া চাই।
/এমএস