
ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কেইর স্টারমারের প্রস্তাবকে ‘লোক দেখানো’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ট্রাম্পপন্থি সাংবাদিক টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, স্টারমার ও ইউরোপীয় নেতারা ‘উইনস্টন চার্চিল হওয়ার ভান করছেন’ এবং এটি ‘অতি সরলীকৃত’ একটি ধারণা।
রবিবার (২৩ মার্চ) এই খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সাক্ষাৎকারে উইটকফ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমি পুতিনকে খারাপ ব্যক্তি মনে করি না। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান।’ উইটকফ জানান, তিনি দশ দিন আগে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং রুশ প্রেসিডেন্টকে ‘শিষ্টাচারপূর্ণ’ ও ‘সোজাসাপ্টা’ মনে হয়েছে। পুতিন তাকে বলেছেন, গত বছর ট্রাম্পের ওপর হামলার পর তিনি তার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। এ ছাড়া পুতিন ট্রাম্পকে উপহার দেওয়ার জন্য একটি পোর্ট্রেট তৈরি করেছেন, যা ট্রাম্পকে ‘স্পষ্টভাবে আবেগপ্রবণ’ করেছে।
সাক্ষাৎকারে উইটকফ বেশ কয়েকটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন, যার মধ্যে ইউক্রেনকে ‘একটি মিথ্যা দেশ’ বলা এবং দখলকৃত অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই সংঘাতে সবচেয়ে বড় ইস্যু হলো তথাকথিত চারটি অঞ্চল- দনবাস, ক্রিমিয়া এবং আরও দুটি অঞ্চল, যেগুলোর নাম এখন মনে করতে পারছি না।’ প্রকৃতপক্ষে, ইউক্রেনের পাঁচটি দখলকৃত বা আংশিক দখলকৃত অঞ্চল হলো লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া, খেরসন ও ক্রিমিয়া। দনবাস হলো পূর্ব ইউক্রেনের একটি শিল্পাঞ্চল, লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের বেশির ভাগ জায়গা এর অন্তর্ভুক্ত।
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উইটকফ বলেন, ‘রুশদের দৃষ্টিকোণ থেকে এই অঞ্চলগুলো রাশিয়ার অংশ। ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী তাদের কতটুকু অঞ্চল ছেড়ে দেওয়া সম্ভব, সেটিই মূল প্রশ্ন। রাশিয়ার সেনারা ইতোমধ্যে এই অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে, এখন প্রশ্ন হলো বিশ্ব কি একে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকার করবে?’
পুতিন বারবার দাবি করেছেন, ন্যাটোর সম্প্রসারণ এবং স্বাধীন ইউক্রেনের অস্তিত্বই তার আগ্রাসনের মূল কারণ। উইটকফ বলেন, ‘রাশিয়া কেন ইউক্রেন দখল করতে চাইবে? তাদের কোনো কারণ নেই। তারা ইতোমধ্যে পাঁচটি অঞ্চল দখল করেছে, ক্রিমিয়া নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা যা চেয়েছিল তা পেয়ে গেছে। আর কিছু দরকার নেই।’
কেইর স্টারমারের ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ গঠনের পরিকল্পনার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি এক ধরনের রাজনৈতিক স্টান্ট এবং অতি সরলীকৃত চিন্তা। কিছু লোক মনে করে, আমরা সবাই যেন উইনস্টন চার্চিল হয়ে যাই। রাশিয়া ইউরোপ আক্রমণ করতে যাচ্ছে- এই চিন্তা হাস্যকর। কারণ আমাদের ন্যাটো রয়েছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ছিল না।’
তিনি জানান, কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতি ‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর হবে’ এবং পূর্ণাঙ্গ ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ‘খুব কাছাকাছি’ সময়ে বাস্তবায়িত হবে।
এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রসঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কে না চাইবে যে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে ভালো কিছু করুক? আমরা আর্কটিকে শক্তি নীতি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারি, সমুদ্রপথ ভাগাভাগি করতে পারি, ইউরোপে এলএনজি গ্যাস পাঠাতে পারি এবং এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়েও একসঙ্গে কাজ করতে পারি।’
যুদ্ধবিরতি নিয়ে অগ্রগতি আশা করছে রাশিয়া
একজন রুশ মধ্যস্থতাকারী দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তাসকে বলেছেন, তিন বছরের সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে রাশিয়া আজ সৌদি আরবে শুরু হওয়া আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি আশা করছে। এই বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার উভয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মস্কো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে। এর পরিবর্তে, রাশিয়া শুধু জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর বিমান হামলা বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে। সেই প্রস্তাব সত্ত্বেও, উভয় পক্ষই আলোচনার আগে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া শহরে রাশিয়ার হামলায় একটি পরিবারের তিনজনসহ মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। যা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সূত্র: বিবিসি ও এএফপি