ইউরোপে নির্মিত হয়েছে ‘টেনাশিয়াস’ নামের ক্ষুদ্র চন্দ্র রোভার। এটি তৈরি করেছে জাপানের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইস্পেসের লুক্সেমবার্গভিত্তিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইস্পেস-ইউরোপ। প্রতিষ্ঠানটি ২৫ জুলাই এই রোভার নির্মাণ সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন এই রোভার শিগগিরই জাপানে পাঠানো হবে। যেখানে এটি আইস্পেসের হাকুতো-আর মিশন টু রেজিলিয়েন্স চন্দ্র ল্যান্ডারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। ল্যান্ডার ও রোভারের সমন্বয়টি চলতি বছরের শেষের দিকে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে স্পেস এক্স ফ্যালকন-নাইন রকেটের মাধ্যমে চাঁদের উদ্দেশে উৎক্ষেপণ করা হবে।
এটি হবে আইস্পেসের চাঁদের মাটিতে সফট ল্যান্ডিং করার দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। এর আগে তাদের চেষ্টাটি ২০২৩ সালের এপ্রিলে ব্যর্থ হয়েছিল। টেনাশিয়াস নামের এই চন্দ্র রোভার রেজিলিয়েন্স ল্যান্ডার থেকে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে। রোভারটিতে চাঁদের পৃষ্ঠের ছবি তোলার জন্য সামনের দিকে এইচডি ক্যামেরা রয়েছে। টেনাশিয়াস পৃথিবীর পৃষ্ঠের স্টেশন থেকে ল্যান্ডারের মাধ্যমে যোগাযোগ এবং নির্দেশনা গ্রহণ করবে।
এই যান খুবই কম্প্যাক্ট, উচ্চতা ১০ দশমিক ২৪ ইঞ্চি, প্রস্থ ১২ দশমিক ৪০ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ ইঞ্চি। এটির ওজন প্রায় ১১ পাউন্ড। রোভারটি হালকা ওজনের কার্বন ফাইবার-রিইনফোর্সড প্লাস্টিকের ফ্রেমযুক্ত। এতে বিশেষ ধরনের চাকা থাকায় চাঁদের আঁকাবাঁকা পথে স্বচ্ছন্দে চলতে পারবে। এটি অনেকটা সম্প্রতি চাঁদের দূর প্রান্ত থেকে নমুনা সংগ্রহকারী চীনের চ্যাংই-সিক্স মিশনে ব্যবহৃত ক্ষুদ্র রোভারের মতো। এই রোভার চাঁদের পৃষ্ঠে অনুসন্ধান চালাবে। টেনাশিয়াস ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার একটি চুক্তির আওতায় লুক্সেমবার্গ স্পেস এজেন্সির অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে।
লুক্সেমবার্গে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত তাদাহিরো মাতসুবারা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আজ আমি আনন্দিত। ইউরোপের লুক্সেমবার্গে ডিজাইন করা ও নির্মিত প্রথম রোভার চাঁদে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি লুক্সেমবার্গ সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা মহাকাশ সম্পদের শিল্পায়নকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করছে। আশা করি আইস্পেসের অবিরাম চ্যালেঞ্জ জাপান ও গ্র্যান্ড ডাচি অব লুক্সেমবার্গের মধ্যকার সম্পর্ক আরও গভীর করবে।’
রেজিলিয়েন্স চাঁদের পৃষ্ঠে বাণিজ্যিক ও বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামও বহন করবে। আইস্পেসের মতে, সামগ্রিক মিশনটি নাসার নেতৃত্বাধীন আর্টেমিস প্রোগ্রামে অবদান রাখবে।
আইস্পেস-ইউরোপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়েন লামামি বলেন, ‘টেনাশিয়াস একটি ক্ষুদ্র রোভার। এটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে প্রস্তুত। এটি ইউরোপে নির্মিত প্রথম চন্দ্র রোভার। লুক্সেমবার্গের ২০১৭ সালের স্পেস রিসোর্সেস আইনের অধীনে চাঁদের পৃষ্ঠে পরিবহন এবং মহাকাশ সম্পদ সংগ্রহকারী প্রথম রোভার হবে।’
জাপানভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান তাদের তৃতীয় মিশনের জন্যও কাজ করছে। যেখানে প্রথমবারের মতো এপেক্স ১.০ চন্দ্র ল্যান্ডার ব্যবহার করা হবে। এই মিশন ২০২৬ সালে উৎক্ষেপণের সম্ভাবনা রয়েছে।
আইস্পেসের প্রতিষ্ঠাতা তাকেশি হাকামাদা বলেন, চাঁদ নিয়ে গবেষণার জন্য বিশ্বের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা চাঁদের সম্পদ ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ও লুক্সেমবার্গ স্পেস এজেন্সির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি।