
বিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ও পিট মন্দ্রিয়ানের আঁকা গাছের ছবিতে প্রকৃতির স্বাভাবিক শাখা-প্রশাখার বিন্যাসে গাণিতিক নিয়ম লুকিয়ে আছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষকরা বলছেন, এই গোপন গাণিতিক বিন্যাস আমাদের শিল্পকর্মে গাছ চেনার সক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষণাটি সম্প্রতি ‘পিএনএএস নেক্সাস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকৃতির ফ্র্যাক্টাল বিন্যাস
গাছের শাখা-প্রশাখা বিস্তারে একটি স্বাভাবিক বিন্যাস অনুসরণ করে, যাকে ‘ফ্র্যাক্টাল’ বলা হয়। এতে গাছের গঠন ছোট থেকে বড় আকারে একই ধরনের বিন্যাসে বারবার পুনরাবৃত্তি হয়।
নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা গাছের চিত্রকর্ম বিশ্লেষণ করে শাখার পুরুত্বের মাত্রা গাণিতিকভাবে পরীক্ষা করেছেন। তারা শাখা-প্রশাখার ব্যাসের মধ্যে অনুপাত ও বিভিন্ন ব্যাসের শাখার আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণের জন্য গাণিতিক নিয়ম তৈরি করেছেন।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ‘আমরা গাছের চিত্রকে ফ্র্যাক্টাল কাঠামো হিসেবে বিশ্লেষণ করেছি এবং চিত্রকলার সঙ্গে জীববিজ্ঞানের শাখার গঠনসংক্রান্ত তত্ত্ব তুলনা করেছি।’

দা ভিঞ্চির পর্যবেক্ষণ
ইতালীয় চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি লক্ষ্য করেছিলেন যে, গাছের শাখাগুলো যখন বিস্তৃত হয়, তখন তাদের সম্মিলিত পুরুত্ব মোটামুটি একই থাকে। তিনি ‘α (আলফা)’ নামের একটি গাণিতিক প্যারামিটার ব্যবহার করে বিভিন্ন শাখার ব্যাসের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করতেন। তিনি দেখিয়েছিলেন, যদি কোনো শাখার সামগ্রিক পুরুত্ব তার দুটি ছোট শাখার পুরুত্বের সমান হয়, তা হলে প্যারামিটার আলফার মান ২ হবে।
গবেষকরা ভারতের আহমেদাবাদের ১৬ শতকের সিদি সাইয়্যেদ মসজিদ, এডো যুগের জাপানি চিত্রকর্ম এবং ২০ শতকের বিমূর্ত শিল্পসহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশের শিল্পকর্মে গাছ বিশ্লেষণ করেছেন। তারা দেখেছেন, এই শিল্পকর্মগুলোতে আলফার মান ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৮ পর্যন্ত, যা প্রকৃত গাছের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘আমরা ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৮-এর মধ্যে আলফার মান খুঁজে পাই, যা প্রাকৃতিক গাছের সীমার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’

বিমূর্ত শিল্পেও প্রভাব
গবেষকরা জানিয়েছেন, পিট মন্দ্রিয়ানের ১৯১২ সালের ‘গ্রে ট্রি’-এর মতো বিমূর্ত চিত্রকর্মে দৃশ্যত গাছের মতো রঙ দেখায় না। যদি আলফার বাস্তবসম্মত মান ব্যবহার করা হয়, তবে গাছ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
গবেষকরা বলেন, ‘যদি আলফার মান প্রকৃত গাছের মতো হয়, তবে বিমূর্ত চিত্রকর্মেও গাছ চিনতে পারা যায়। তবে একই চিত্রকর্মে আলফার মান পরিবর্তন করলে এটি আর গাছ বলে বোঝা যায় না।’
শিল্প ও বিজ্ঞানের সংযোগ
গবেষকরা মনে করেন, এই গবেষণা গাছের সৌন্দর্য উপলব্ধি ও পুনর্গঠনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দেয়। এটি তুলে ধরে শিল্প ও বিজ্ঞান উভয়ই প্রাকৃতিক এবং মানবজগৎ সম্পর্কে পরিপূরক দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে।