ঢাকা ৯ চৈত্র ১৪৩১, রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫
English

দা ভিঞ্চি ও মন্দ্রিয়ানের শিল্পকর্মে লুকানো গাণিতিক রহস্য

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৫ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
দা ভিঞ্চি ও মন্দ্রিয়ানের শিল্পকর্মে লুকানো গাণিতিক রহস্য
ভারতের আহমেদাবাদে ১৬ শতকে নির্মিত সিদি সাইয়্যেদ মসজিদে শিল্পকর্ম। ছবি: সংগৃহীত

বিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ও পিট মন্দ্রিয়ানের আঁকা গাছের ছবিতে প্রকৃতির স্বাভাবিক শাখা-প্রশাখার বিন্যাসে গাণিতিক নিয়ম লুকিয়ে আছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষকরা বলছেন, এই গোপন গাণিতিক বিন্যাস আমাদের শিল্পকর্মে গাছ চেনার সক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষণাটি সম্প্রতি ‘পিএনএএস নেক্সাস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।  

প্রকৃতির ফ্র্যাক্টাল বিন্যাস  
গাছের শাখা-প্রশাখা বিস্তারে একটি স্বাভাবিক বিন্যাস অনুসরণ করে, যাকে ‘ফ্র্যাক্টাল’ বলা হয়। এতে গাছের গঠন ছোট থেকে বড় আকারে একই ধরনের বিন্যাসে বারবার পুনরাবৃত্তি হয়। 

নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা গাছের চিত্রকর্ম বিশ্লেষণ করে শাখার পুরুত্বের মাত্রা গাণিতিকভাবে পরীক্ষা করেছেন। তারা শাখা-প্রশাখার ব্যাসের মধ্যে অনুপাত ও বিভিন্ন ব্যাসের শাখার আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণের জন্য গাণিতিক নিয়ম তৈরি করেছেন।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ‘আমরা গাছের চিত্রকে ফ্র্যাক্টাল কাঠামো হিসেবে বিশ্লেষণ করেছি এবং চিত্রকলার সঙ্গে জীববিজ্ঞানের শাখার গঠনসংক্রান্ত তত্ত্ব তুলনা করেছি।’  

লিওনার্দো দা ভিঞ্চির গাছের স্কেচ এই নীতিটি তুলে ধরে যে, গাছের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মিলিত পুরুত্ব একই থাকে। ছবি: সংগৃহীত

দা ভিঞ্চির পর্যবেক্ষণ  
ইতালীয় চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি লক্ষ্য করেছিলেন যে, গাছের শাখাগুলো যখন বিস্তৃত হয়, তখন তাদের সম্মিলিত পুরুত্ব মোটামুটি একই থাকে।  তিনি ‘α (আলফা)’ নামের একটি গাণিতিক প্যারামিটার ব্যবহার করে বিভিন্ন শাখার ব্যাসের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করতেন। তিনি দেখিয়েছিলেন, যদি কোনো শাখার সামগ্রিক পুরুত্ব তার দুটি ছোট শাখার পুরুত্বের সমান হয়, তা হলে প্যারামিটার আলফার মান ২ হবে।
 
গবেষকরা ভারতের আহমেদাবাদের ১৬ শতকের সিদি সাইয়্যেদ মসজিদ, এডো যুগের জাপানি চিত্রকর্ম এবং ২০ শতকের বিমূর্ত শিল্পসহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশের শিল্পকর্মে গাছ বিশ্লেষণ করেছেন। তারা দেখেছেন, এই শিল্পকর্মগুলোতে আলফার মান ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৮ পর্যন্ত, যা প্রকৃত গাছের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। 

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘আমরা ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৮-এর মধ্যে আলফার মান খুঁজে পাই, যা প্রাকৃতিক গাছের সীমার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’

পিট মন্দ্রিয়ানের ১৯১২ সালের ‘গ্রে ট্রি’ এর বিমূর্ত চিত্রকর্ম

বিমূর্ত শিল্পেও প্রভাব  
গবেষকরা জানিয়েছেন, পিট মন্দ্রিয়ানের ১৯১২ সালের ‘গ্রে ট্রি’-এর মতো বিমূর্ত চিত্রকর্মে দৃশ্যত গাছের মতো রঙ দেখায় না। যদি আলফার বাস্তবসম্মত মান ব্যবহার করা হয়, তবে গাছ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। 

গবেষকরা বলেন, ‘যদি আলফার মান প্রকৃত গাছের মতো হয়, তবে বিমূর্ত চিত্রকর্মেও গাছ চিনতে পারা যায়। তবে একই চিত্রকর্মে আলফার মান পরিবর্তন করলে এটি আর গাছ বলে বোঝা যায় না।’  

শিল্প ও বিজ্ঞানের সংযোগ  
গবেষকরা মনে করেন, এই গবেষণা গাছের সৌন্দর্য উপলব্ধি ও পুনর্গঠনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দেয়। এটি তুলে ধরে শিল্প ও বিজ্ঞান উভয়ই প্রাকৃতিক এবং মানবজগৎ সম্পর্কে পরিপূরক দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে।

ইগুয়ানার হাজার মাইল মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার রহস্য উন্মোচন

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
ইগুয়ানার হাজার মাইল মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার রহস্য উন্মোচন
ইগুয়ানা। ছবি: সংগৃহীত

হাজার হাজার মাইল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইগুয়ানা কীভাবে ফিজি দ্বীপে পৌঁছাল, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কৌতূহল ছিল। নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, লাখ লাখ বছর আগে ভাসমান উদ্ভিদের ভেলায় চেপে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার (৫ হাজার মাইল) সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ইগুয়ানা ফিজি দ্বীপে পৌঁছেছিল।

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ফিজি। আধুনিক যুগের বেশিরভাগ ইগুয়ানা আমেরিকার বাসিন্দা। তা হলে তারা কীভাবে এত দূরে পৌঁছাল? আগে ধারণা করা হতো, আগ্নেয়গিরির কারণে ফিজি দূরে সরে যাওয়ার আগে এশিয়া বা অস্ট্রেলিয়া হয়ে ইগুয়ানা সেখানে পৌঁছেছিল।

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, লাখ লাখ বছর আগে উপড়ে যাওয়া গাছ ও ছোট উদ্ভিদের ভেলায় চেপে ইগুয়ানা প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটারের এক দীর্ঘ যাত্রা সম্পন্ন করে। এটিই স্থলচর প্রাণীর ইতিহাসে দীর্ঘতম সমুদ্রযাত্রার রেকর্ড বলে মনে করা হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে ইগুয়ানা এভাবে পৌঁছেছিল। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, ফিজি দ্বীপপুঞ্জ হয়তো এই যাত্রার জন্য একটু বেশি দূরে। কিন্তু নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও ফিজির ১৪টি ইগুয়ানা প্রজাতির জিন বিশ্লেষণ করেছেন। তারা আবিষ্কার করেন, ফিজির ইগুয়ানাদের নিকটতম আত্মীয় উত্তর আমেরিকার মরু অঞ্চলের ইগুয়ানা। জিনগত মিল বলছে, প্রায় ৩১ মিলিয়ন বছর আগে এদের পূর্বপুরুষ আলাদা হয়ে যায়।

গবেষকরা এই তথ্য ও ইগুয়ানা কোথায় বাস করে এবং কীভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে, সে সম্পর্কে অন্যান্য তথ্যের সাহায্যে একটি পরিসংখ্যানগত মডেল তৈরি করেন। পরিসংখ্যানিক মডেলেও ফিজিতে ইগুয়ানাদের উত্তর আমেরিকা থেকে ভেসে আসার সম্ভাবনাই সবচেয়ে জোরালো।

গবেষকদের মতে, সাগরে উপড়ে যাওয়া গাছ ও গাছপালার ভেলায় চড়ে কয়েক মাসের যাত্রায় টিকে থাকার ক্ষমতা ছিল এদের। মরু ইগুয়ানারা পানিশূন্যতা সহ্য করতে ও ভেলার গাছপালা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারত।

ইউনিভার্সিটি অব সান ফ্রান্সিস্কোর গবেষক সাইমন স্কারপেটা বলেছেন, ‘সমুদ্রপথে এত দীর্ঘ যাত্রার জন্য ইগুয়ানা সম্ভবত সবচেয়ে উপযুক্ত প্রাণী।’

যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের গবেষক রবার্ট ফিশার জানান, ফিজি দ্বীপপুঞ্জের অনেক ইগুয়ানা প্রজাতি বর্তমানে বিপন্ন এবং সেখানে আগ্রাসী সবুজ ইগুয়ানা ঘুরে বেড়ায়। এই প্রাণীগুলো কোথা থেকে এসেছে, তা জানতে পারলে ভবিষ্যতে সংরক্ষণ কৌশল ঠিক করতে সাহায্য করবে। 

গবেষণাটি গত সোমবার প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির জীববিজ্ঞানী কেভিন ডি কুইরোজের মতে, নতুন এই তথ্য ইগুয়ানাদের বিস্ময়কর অভিযাত্রার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ।

মহাকাশে ৯ মাস : মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১০:১০ এএম
আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম
মহাকাশে ৯ মাস : মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা
মহাকাশ থেকে ফেরার পর নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনীতা উইলিয়ামস। ছবি: সংগৃহীত

মহাকাশ থেকে পৃথিবীর অনন্য দৃশ্য দেখা অনেকের স্বপ্ন। পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানো এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। তবে মানুষের শরীর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে অভ্যস্ত, তাই শূন্য মাধ্যাকর্ষণের পরিবেশে দীর্ঘ সময় কাটানোর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে অনেক বছর লেগে যেতে পারে।

সম্প্রতি নাসার দুই নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর আট দিনের জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) গেলেও, অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের সেখানে ৯ মাস থাকতে হয়। অবশেষে তারা পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। এখন তাদের সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মহাকাশে শরীরের পরিবর্তন 
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ওয়েলসের মানব শরীরতত্ত্বের অধ্যাপক ড্যামিয়ান বেইলি বলেন, ‘মহাকাশ মানুষের জন্য সবচেয়ে চরম পরিবেশগুলোর একটি, যেখানে টিকে থাকার জন্য মানব শরীর বিবর্তিত হয়নি।’

মহাকাশে প্রবেশ করার পর মানব শরীরে কিছু পরিবর্তন আসে, যা প্রাথমিকভাবে আনন্দদায়ক মনে হতে পারে। নভোচারী টিম পিক ২০১৫ সালে আইএসএস সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘মহাকাশে থাকাটা প্রথমে যেন ছুটির মতো মনে হয়। পেশি ও হাড়ের ওপর তেমন চাপ পড়ে না। মহাকাশ স্টেশনে ভারহীন পরিবেশে ভেসে বেড়ানো এক চমৎকার অনুভূতি।’ 

কল্পনা করুন কয়েক সপ্তাহ ধরে বিছানায় শুয়ে আছেন এবং ওঠার প্রয়োজন হচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা ঠিক এভাবে ভারহীনতার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন। 

তবে পেশির ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। দীর্ঘদিন মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব ছাড়া থাকলে পেশি দুর্বল হয়ে যায়। শূন্য মাধ্যাকর্ষণে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কোনো পেশি ব্যবহার করতে হয় না, ফলে তা ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে শুরু করে।

দ্রুত বার্ধক্য 
হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালিগুলোরও একই অবস্থা হয়। মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে রক্ত পাম্প করার প্রয়োজন না হওয়ায় সেগুলো দুর্বল হতে শুরু করে। হাড়ও দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। পুরোনো হাড় ভেঙে নতুন হাড় তৈরির মধ্যে একটি ভারসাম্য থাকা জরুরি। তবে মাধ্যাকর্ষণের অভাবে সেই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। অধ্যাপক বেইলি বলেন, ‘প্রতি মাসে নভোচারীদের প্রায় ১ শতাংশ হাড় ও পেশি ক্ষয় হতে থাকে। এটি এক ধরনের দ্রুত বার্ধক্য প্রক্রিয়া।’ 

পৃথিবীতে ফেরার পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভিডিওতে দেখা যায়, নভোচারীদের ক্যাপসুল থেকে বের করে স্ট্রেচারে শুইয়ে দেওয়ার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হচ্ছে। 

মহাকাশে থাকার সময় নভোচারীদের প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে শরীরচর্চা করতে হয়। তারা দৌড়ানোর জন্য ট্রেডমিল, সাইক্লিং ও ওয়েট লিফটিংয়ের মাধ্যমে যতটা সম্ভব পেশি ও হাড়ের স্বাস্থ্য ধরে রাখার চেষ্টা করেন। 

দীর্ঘ সময় পর পৃথিবীতে ফেরার পর স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সহজ নয়। সুনীতা ও বুচ তাদের হারানো শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পেতে নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। প্রথম ব্রিটিশ নভোচারী ড. হেলেন শারমান বলেন, ‘পেশির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পেতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। আর হাড়ের ঘনত্ব পুনরুদ্ধার হতে কয়েক বছর সময় লাগে। পৃথিবীতে ফিরে আসার পর হাড়ে কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন দেখা যায়, যা কখনো সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না।’ 

শুধু হাড় ও পেশি নয়, মহাকাশে থাকলে পুরো শরীরের গঠন পরিবর্তিত হয়। এমনকি শরীরে বসবাসকারী উপকারী ব্যাকটেরিয়াও পরিবর্তিত হয়ে যায়। মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে শরীরের তরল পদার্থও স্থানান্তরিত হয়। শরীরের তরলগুলো স্বাভাবিকভাবে নিচের দিকে নেমে যায় না, বরং উপরের দিকে উঠে যায়, ফলে মুখ ফুলে যায়। 

মস্তিষ্কে তরল জমে যাওয়ায় মাথাব্যথা ও দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। এমনকি চোখের আকৃতিও পরিবর্তিত হতে পারে। এই ‘স্পেসফ্লাইট-অ্যাসোসিয়েটেড নিউরো-অকুলার সিন্ড্রোম’-এর কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া ও স্থায়ী ক্ষতিও হতে পারে। 

ভারসাম্য হারানোর সমস্যা 
মহাকাশে থাকাকালীন ভারসাম্য রক্ষার সিস্টেম পরিবর্তিত হয়। মাইক্রোগ্র্যাভিটি ভেস্টিবুলার সিস্টেমকেও বিকৃত করে দেয়, যা ভারসাম্য রক্ষা করে এবং উপর ও নিচের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করে। মহাকাশে কোনো উপর-নিচ বা পাশ নেই। উপরে গেলে যেমন দিক হারানোর অনুভূতি হয়, তেমনি পৃথিবীতে ফিরে আসার পরও একই রকম অনুভব হতে পারে। 

নভোচারীরা পৃথিবীতে ফেরার পর প্রথম কয়েক দিন মাথা ঘোরা ও ভারসাম্য হারানোর সমস্যায় ভোগেন। টিম পিক বলেন, ‘মাথা ঘোরা বন্ধ হওয়া, ভারসাম্য ফিরে পাওয়া এবং স্বাভাবিকভাবে হাঁটার শক্তি ফিরে পাওয়ার প্রাথমিক পর্যায়টি মাত্র দুই-তিন দিনের ব্যাপার। পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রথম দুই-তিন দিন সত্যিই কঠিন হতে পারে।’ 

সুনীতা ও বুচের মতো নভোচারীরা পৃথিবীতে ফেরার পর অনেক বেশি শরীরচর্চার মাধ্যমে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা করবেন। তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত চলতে পারে। 

মহাকাশ গবেষণার অগ্রগতির ফলে ভবিষ্যতে দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার প্রভাব কমানোর উপায় বের করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এখনো, মহাকাশ ভ্রমণের পর পৃথিবীতে ফেরার চ্যালেঞ্জ বড় এক বাস্তবতা।

স্ট্রোক ও হৃদরোগ প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কারের দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:০০ এএম
স্ট্রোক ও হৃদরোগ প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কারের দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের
স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নতুন এক ধরনের টিকা আবিষ্কারের দাবি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। ছবি: সংগৃহীত

স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নতুন এক ধরনের টিকা আবিষ্কারের দাবি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এই টিকা ধমনীতে চর্বিযুক্ত প্ল্যাকের জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ধমনীর ভেতরে প্ল্যাক জমাট বাঁধার কারণে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা স্ট্রোক, অ্যানিউরিজম বা হৃদরোগের কারণ হতে পারে। গবেষকরা আশা করছেন, এই টিকা আবিষ্কার বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে মৃত্যুহার কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

ধমনীর ভেতরে চর্বিযুক্ত প্ল্যাক জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে ‘অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস’ বলা হয়। এতে ধমনীর প্রাচীর শক্ত হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। বিশ্বব্যাপী হৃদরোগজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে এই রোগকে বিবেচনা করা হয়। নতুন এক গবেষণায় চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের তৈরি টিকা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ নামের জার্নালে।

গবেষকরা বলছেন, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস মূলত একটি প্রদাহজনিত রোগ, যা শরীরের সহজাত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও অ্যান্টিবডি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমানে ধমনীতে ব্লক ধরা পড়লে সাধারণত এনজিওপ্লাস্টি বা স্টেন্টের মতো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ধমনীর ব্লক অপসারণ করা হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে ধারণা করা হচ্ছে, টিকার মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ সম্ভব।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, এই টিকা তৈরিতে ‘পি২১০’ নামক একটি বিশেষ প্রোটিন ব্যবহার করা হয়েছে, যা প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া রোধ করতে ও অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের অগ্রগতি থামাতে সহায়তা করে। পি২১০ অ্যান্টিজেনকে আয়রন অক্সাইড ন্যানোপার্টিকেলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অ্যাডজুভেন্টকে অন্য ন্যানোপার্টিকেলের সঙ্গে যুক্ত করে টিকা তৈরি করা হয়েছে।

এই ককটেল টিকাটি ইঁদুরের শরীরে প্রবেশের পর অ্যান্টিজেন ও অ্যাডজুভেন্ট গ্রহণে সাহায্য করে, যা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তোলে। এতে ইমিউন সিস্টেমের ‘ডেন্ড্রিটিক সেল’ নামক কোষ সক্রিয় হয় এবং শরীরে পি২১০ প্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকা উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা ইঁদুরের দেহে প্ল্যাক জমাট বাঁধার গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। গবেষকরা মনে করছেন, এই টিকা প্রদাহজনিত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে টিকাটি কতদিন পর্যন্ত ইঁদুরের শরীরে কার্যকর থাকে, তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। মানুষের শরীরে এটি কার্যকর কি না তা নিশ্চিত হতে আরও বিস্তৃত গবেষণা ও পরীক্ষা প্রয়োজন।

চীনের নতুন স্প্যাই স্যাটেলাইট

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম
চীনের নতুন স্প্যাই স্যাটেলাইট
ছবি: সংগৃহীত

চীনের বিজ্ঞানীরা এমন একটি স্যাটেলাইট তৈরি করেছে, যা লেজার-ইমেজিং প্রযুক্তির সাহায্যে ৬০ মাইলেরও (১০০ কিলোমিটার) বেশি দূর থেকে মানুষের মুখের খুঁটিনাটি চিত্র ধারণ করতে সক্ষম। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নতুন প্রযুক্তি স্প্যাই ক্যামেরা এবং প্রচলিত টেলিস্কোপের তুলনায় ১০০ গুণ বা তার থেকেও উন্নত।

নতুন এই লেজার-ইমেজিং প্রযুক্তি ৬০ মাইলেরও বেশি দূর থেকে মিলিমিটার আকারের বস্তুর চিত্র ধারণ করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অপারেটররা বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নজরদারি করতে পারবে, যা আগে কখনো সম্ভব হয়নি।

চীনের একাডেমি অব সায়েন্সেসের অ্যারোস্পেস ইনফরমেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ‘চাইনিজ জার্নাল অব লেজার্স’-এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন।

নতুন এই সিস্টেমটি সিনথেটিক অ্যাপারচার লিডার (এসএএল) নামের প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা এক ধরনের লেজার রাডার। এটি দ্বি-মাত্রিক বা ত্রি-মাত্রিক ছবি তৈরি করতে সক্ষম। এসএএল অন্য বিম-স্ক্যানিং রাডার ইমেজিং সিস্টেমের তুলনায় আরও সূক্ষ্ম রেজল্যুশনের ছবি সরবরাহ করতে স্যাটেলাইটের মতো চলমান বস্তুর গতির ওপর নির্ভর করে। আগের এসএআর সিস্টেমগুলোতে মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন ব্যবহার করা হতো, যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য দীর্ঘ হওয়ায় ছবির রেজল্যুশন কম ছিল।

তবে এই নতুন সিস্টেমটি অপটিক্যাল তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করে, যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য মাইক্রোওয়েভের তুলনায় অনেক ছোট এবং আরও স্পষ্ট ছবি তৈরি করতে সক্ষম। যদিও মাইক্রোওয়েভ দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কারণে বস্তুর ভেতর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে, এসএএল সিস্টেম এটি করতে সক্ষম নয়।

গবেষকরা চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কুইংহাই হ্রদের ওপর নতুন এই প্রযুক্তির পরীক্ষা চালান। পরীক্ষায় লিডার সিস্টেমটি ১০১ দশমিক ৮ কিলোমিটার (৬৩.৩ মাইল) দূরে রাখা প্রতিফলক প্রিজমের সারি লক্ষ্য করে। এই পরীক্ষায় সিস্টেমটি ১ দশমিক ৭ মিলিমিটার (০.০৭ ইঞ্চি) পর্যন্ত ছোট চিত্র শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং দূরত্ব মাপতে ১৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার (০.৬১ ইঞ্চি) দূরত্বের মধ্যে পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছে।

আগের কিছু পরীক্ষার তুলনায় এটি অনেক বেশি কার্যকর। ২০১১ সালে ডিফেন্স ফার্ম লকহিড মার্টিনের একটি পরীক্ষা মাত্র ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার (১ মাইল) দূর থেকে ০.৭৯ ইঞ্চি (২ সেন্টিমিটার) রেজল্যুশন অর্জন করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া চীনের আরেকটি পরীক্ষায় ৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার (৪.৩ মাইল) দূর থেকে ৫ সেন্টিমিটার (১.৯৭ ইঞ্চি) রেজল্যুশন অর্জন করে।

এই নতুন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গবেষকরা লিডার সিস্টেমের লেজার বিমকে ৪x৪ মাইক্রো-লেন্স অ্যারের মাধ্যমে বিভক্ত করেছেন। এর ফলে সিস্টেমটির অপটিক্যাল অ্যাপারচার বা আলোর প্রবেশের পরিমাণ ১৭ দশমিক ২ মিলিমিটার থেকে ৬৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার (০.৬৮ ইঞ্চি থেকে ২.৭১ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি কার্যকরভাবে ফিল্ড অব ভিশন বনাম অ্যাপারচারের আকারের মধ্যকার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে সহায়তা করেছে।

তবে এটি উল্লেখযোগ্য যে, এই পরীক্ষা আদর্শ আবহাওয়া ও বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতিতে পরিচালিত হয়েছে। মেঘলা আবহাওয়া বা দৃষ্টিশক্তি বিঘ্নিত হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে সিস্টেমটির নির্ভুলতা ও কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হতে পারে।

কলম্বিয়ার রেইনফরেস্টে বিরল প্রজাতির বিছে আবিষ্কার

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১১:১০ এএম
কলম্বিয়ার রেইনফরেস্টে বিরল প্রজাতির বিছে আবিষ্কার
নতুন প্রজাতির বিছে ‘টিটিয়াস অ্যাকিলিস’। ছবি: সংগৃহীত

কলম্বিয়ার রেইনফরেস্টে বিজ্ঞানীরা একটি বিরল প্রজাতির বিছে আবিষ্কার করেছেন, যা কয়েকগুণ দূরত্বে বিষ ছুড়তে পারে। নতুন এই প্রজাতির নাম ‘টিটিয়াস অ্যাকিলিস’। সম্প্রতি ‘জুলজিক্যাল জার্নাল অব দ্য লিনিয়ান সোসাইটি’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই বিছের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এটি প্রায় ৩৬ সেন্টিমিটার (১ ফুট) দূরত্বে বিষ ছুড়তে পারে। এটি শিকারি প্রাণীর চোখে বিষ নিক্ষেপ করে আঘাত করতে সক্ষম।

গবেষণার প্রধান লেখক লিও ল্যাবোরিউক্স জানিয়েছেন, শিকারিদের প্রতিহত করতে এই বিষ ছুড়ে মারার কৌশল বিছের মধ্যে বিকশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিছেটি দুই ধরনের পদ্ধতিতে বিষ ছুড়ে মারে।
প্রথমত এটি স্পিটিং কোবরার মতো জোরালোভাবে বিষ স্প্রে করে। দ্বিতীয়ত এটি লেজের দ্রুত নড়াচড়ার মাধ্যমে বিষের ফোঁটা ছুড়ে দেয়।

এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ প্রজাতির বিছের মধ্যে মাত্র দুটি প্রজাতি বিষ স্প্রে করতে সক্ষম বলে নথিভুক্ত করা হয়েছে। একটি প্রজাতি উত্তর আমেরিকায় ও অন্য প্রজাতিটি আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছিল। দক্ষিণ আমেরিকায় এই ধরনের প্রজাতি এই প্রথম আবিষ্কৃত হলো।

আবিষ্কারের পেছনের গল্প
জার্মানির লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখের মাস্টার্সের ছাত্র ল্যাবোরিউক্সের প্রথমে কলম্বিয়ার সেন্ট্রাল রেইনফরেস্টে বিছে নিয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা ছিল না। মথ ধরার প্রাথমিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে, তিনি বিছে নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তার পাত্রে ধরা পড়া বিছে বিষ স্প্রে করে। পরে ল্যাব পরীক্ষায় ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি সত্যিই বিষের ফোঁটা স্প্রে করছে।

গবেষকদের ধারণা, এই বিষ মূলত শিকার ধরার জন্য নয়; বরং ইঁদুরের মতো শিকারিদের প্রতিহত করার অভিযোজন হিসেবে বিকশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, টিটিয়াস অ্যাকিলিস প্রজাতির বিছেটি সাধারণত কম ক্ষতিকর ‘প্রিভেনম’ ব্যবহার করে স্প্রে করে। তবে যখন বিপদ বেশি হয় তখন এটি আরও শক্তিশালী ও বিষাক্ত তরল ছোড়ে।

গবেষক ল্যাবোরিউক্স বলেছেন, ‘এই প্রজাতি বিষ স্প্রে করার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে বেশি পরিমাণ প্রিভেনম ব্যবহার করে, যা অন্যান্য বিষ স্প্রে করা বিছার তুলনায় বেশ ব্যতিক্রমী।’ তবে গবেষকরা এখনো নিশ্চিত নন যে, এই বিষ মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে। আফ্রিকান প্রজাতি ‘প্যারাবুথাস ট্রান্সভালিকা’-এর বিষ মানুষের চোখে লাগলে সাময়িক অন্ধত্ব সৃষ্টি করতে পারে। তবে টিটিয়াস অ্যাকিলিসের বিষের প্রভাব সম্পর্কে অস্পষ্টতা রয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা চলছে।