
পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের রিয়েল টাইমে কথা বলার সুযোগ করে দিতে নতুন এক ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) তৈরি করেছেন গবেষকরা। এই উদ্ভাবন গুরুতর পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের রিয়েল টাইমে কথা বলতে সাহায্য করবে বলে দাবি করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে ও সান ফ্রান্সিসকোর একদল গবেষক এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। সম্প্রতি ‘নেচার নিউরোসায়েন্স’ জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, এই নতুন প্রযুক্তি স্বাভাবিক উচ্চারণের মতো কথোপকথনের সুযোগ করে দিচ্ছে, যা আগে সম্ভব ছিল না।
গবেষকরা দাবি করেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তারা একটি স্ট্রিমিং পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যা মস্তিষ্কের সংকেতকে মুহূর্তে শ্রবণযোগ্য শব্দে রূপান্তর করে। এটি অনেকটা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যালেক্সা বা সিরি যেভাবে কথা বুঝে প্রতিক্রিয়া জানায়, তেমনই দ্রুত কাজ করে। গবেষণার অন্যতম লেখক চেওল-জুন চো জানান, পদ্ধতিটি মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স থেকে স্নায়বিক ডেটা সংগ্রহ করে, যা মুখ ও বাকসংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর এআই মডেলের মাধ্যমে সেই সংকেত ডিকোড করে শব্দে রূপান্তর করে।
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা ১৮ বছর ধরে বাকশক্তিহীন ৪৭ বছর বয়সী অ্যান নামের এক নারীর ওপর এটি পরীক্ষা করেছেন। তার মস্তিষ্কের পৃষ্ঠে ইলেকট্রোড স্থাপন করা হয়। যখন তিনি স্ক্রিনে কোনো বাক্য উচ্চারণের চেষ্টা করেন, তখন সেই স্নায়ু সংকেত সংগ্রহ করে সেগুলোকে শ্রবণযোগ্য ভাষায় রূপান্তর করা হয়। বিশেষ বিষয় হলো, এআই মডেলটি অ্যানের আগের কণ্ঠস্বর নকল করে, যা তার নিজস্ব কণ্ঠের মতো শোনায়।
ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তি বেশ কিছুদিন ধরে প্রচলিত থাকলেও, এই গবেষণার অন্যতম প্রধান অগ্রগতি হলো চিন্তাগুলোকে প্রায় রিয়েল টাইমে অডিওতে রূপান্তর করা। আগের তৈরি বিসিআই মডেলগুলোতে একটি বাক্য সম্পূর্ণ শব্দে রূপ নিতে যেখানে ৮ সেকেন্ড পর্যন্ত সময় লাগত, সেখানে নতুন প্রযুক্তিতে সেই সময় অনেক কমে এসেছে। নতুন এই প্রযুক্তি এএলএস বা স্ট্রোক-জনিত পক্ষাঘাতের মতো অবস্থার শিকার ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।