ঢাকা ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

চীনে বাদুড়ের দেহে নতুন ভাইরাস শনাক্ত

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১০:১০ এএম
চীনে বাদুড়ের দেহে নতুন ভাইরাস শনাক্ত
চীনের ইউনান প্রদেশে বাদুড়ের দেহে দুটি নতুন ভাইরাস শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।

চীনের ইউনান প্রদেশে বাদুড়ের দেহে দুটি নতুন ভাইরাস শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই নতুন ভাইরাসগুলোর সংক্রমণে মানবদেহে তীব্র মস্তিষ্কজনিত প্রদাহ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ হতে পারে। এসব ভাইরাসকে ঘিরে গবেষকরা ‘জরুরি উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।

গত মঙ্গলবার প্লস প্যাথোজেনস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের ফলের বাগানগুলোতে বসবাসকারী বাদুড়ের মধ্যে এই ভাইরাসগুলোর সঙ্গে আরও কিছু নতুন ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে।

চার বছর ধরে ইউনানের পাঁচটি এলাকার ১০ প্রজাতির ১৪২টি বাদুড়ের কিডনি থেকে সংগৃহীত নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নমুনাগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ২২টি ভাইরাস পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ২০টি সম্পূর্ণ নতুন ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ছিল হেনিপাভাইরাস শ্রেণির, যা নিপাহ ও হেনড্রার মতো একই জেনাসে অন্তর্ভুক্ত। এই ভাইরাসগুলো আগের মহামারিতে মানুষের মধ্যে উচ্চ মৃত্যুহার ঘটিয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, ‘এই ভাইরাসগুলো সাধারণত ফলখেকো বাদুড়ের শরীরে বাস করে এবং তাদের প্রস্রাব বা লালার মাধ্যমে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণের মূল মাধ্যম হতে পারে দূষিত ফল বা খাদ্য।’ এই গবেষণা অঞ্চলটিতে বাদুড় থেকে পশুসম্পদ বা মানুষের মধ্যে অনুরূপ নতুন ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

ইউনান ইনস্টিটিউট অব এন্ডেমিক ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষকদের মতে, এই ভাইরাসগুলো মারাত্মক নিপাহ ও হেনড্রা প্যাথোজেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। নিপাহ ও হেনড্রা মানুষের মধ্যে মস্তিষ্কে গুরুতর প্রদাহ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে। নিপাহ একটি প্রাণঘাতী প্যাথোজেন, যা মানুষের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। নিপাহ ভাইরাসের কারণে মানুষের মধ্যে ৩৫–৭৫ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যু দেখা গেছে। হেনড্রা ভাইরাস ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি অঞ্চলে মানুষ ও ঘোড়ার মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়েছে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া বিজ্ঞানীরা জানান, বাদুড়ের দেহে থাকা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবীর পুরো পরিসর এখনো অজানা। আগের গবেষণাগুলোর বেশির ভাগ বাদুড়ের বিষ্ঠা নিয়ে সীমাবদ্ধ ছিল, তবে প্রথমবারের মতো একাধিক অঙ্গের বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষকরা বলেন, ‘এটি শুধু ভাইরাস চিহ্নিত করা নয়, বরং বাদুড় থেকে মানুষের বা গৃহপালিত প্রাণীতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বোঝার জন্য একটি নতুন পথ উন্মোচন করেছে।’

এ ছাড়া বিজ্ঞানীরা মহামারির ঝুঁকি কমাতে বাদুড়ের দেহের বিভিন্ন অঙ্গে উপস্থিত জীবাণু শনাক্তে পূর্ণাঙ্গ ও পদ্ধতিগত গবেষণার ওপর জোর দিয়েছেন। ইউনান প্রদেশকে বাদুড়ের বৈচিত্র্যের হটস্পট হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।

অনন্য রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে বাদুড় অসংখ্য অণুজীবের একটি প্রাকৃতিক আধার। এর মধ্যে মানুষের মধ্যে সংক্রমণকারী উল্লেখযোগ্য প্যাথোজেনও রয়েছে। যদিও কোভিড-১৯ মহামারির সঠিক উৎস এখনো অস্পষ্ট। করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য উৎস হিসেবেও বাদুড়ের একটি প্রজাতি ‘হর্সশু ব্যাট’-কে দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করা হচ্ছে। নতুন এই গবেষণা সেই সন্দেহকে আরও জোরদার করল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই ফলাফলগুলো বাদুড়ে থাকা অণুজীবের বৈচিত্র্য বোঝার জন্য একটি বহু-অঙ্গ স্ক্রিনিং পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বাদুড় থেকে ছড়ানোর ঝুঁকি আরও ভালোভাবে মূল্যায়নের জন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গভিত্তিক পূর্ণ স্পেকট্রাম অণুজীব বিশ্লেষণের আহ্বান জানিয়েছেন। গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ভাইরাসগুলো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট

পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলা আবিষ্কারের দাবি বিজ্ঞানীদের

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩১ পিএম
পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলা আবিষ্কারের দাবি বিজ্ঞানীদের
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শিলা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শিলা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। কানাডার কুইবেকের হাডসন উপসাগরের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এই প্রাচীন শিলাস্তর। গবেষকরা বলছেন, এখানকার নুভুয়াগিতুক গ্রিনস্টোন বেল্ট নামের অঞ্চলটিতে পাওয়া গেছে পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলা, যার বয়স হতে পারে প্রায় ৪.১৬ বিলিয়ন বছর।

এই অঞ্চলের শিলাগুলো বহুদিন ধরে বিজ্ঞানীদের নজরে থাকলেও বয়স নিয়ে বিতর্ক ছিল। দুই দশক আগের গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছিল এই শিলাগুলো ৪.৩ বিলিয়ন বছর পুরোনো হতে পারে। তবে কিছু বিজ্ঞানী সে দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, নমুনায় দূষণ থাকায় ফলাফল বিকৃত হয়েছে এবং প্রকৃত বয়স সম্ভবত ৩.৮ বিলিয়ন বছর।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দুই ধরনের তেজস্ক্রিয় উপাদান বিশ্লেষণের মাধ্যমে নমুনার নতুন পরীক্ষা চালান। এই দুটি পদ্ধতি থেকে পাওয়া ফলাফল নির্দেশ করে যে শিলাগুলো প্রায় ৪.১৬ বিলিয়ন বছর পুরোনো। এই সংখ্যা আগের অনুমানগুলোর মধ্যে ব্যবধান পূরণ করে। এটি প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক বিস্ময়গুলোর জন্য একটি আরও সুনির্দিষ্ট সময়রেখা দেয়।

এই আবিষ্কার কেবল নুভুয়াগিতুক গ্রিনস্টোন বেল্টের বয়স সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে পরিমার্জন করে না, বরং পৃথিবীর গঠনের প্রাথমিক অধ্যায়গুলো ম্যাপ করার বৃহত্তর বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টাতেও উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোনাথন ও’নিল বলেছেন, ‘দুই পদ্ধতি একই ফলাফল দিয়েছে, যা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।’ নতুন গবেষণাটি গত ২৭ জুন সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে মহাকর্ষীয় ধসের মাধ্যমে গ্যাস ও ধুলার মেঘ থেকে পৃথিবীর জন্ম। তবে সেই প্রাচীন শিলাগুলো সচরাচর টিকে থাকে না। টেকটোনিক প্লেটের চলাচলের ফলে তারা গলে গিয়ে নতুন শিলায় রূপ নেয়। ফলে এ ধরনের প্রাচীন শিলা আজকের দিনে খুবই বিরল।

এর আগে কানাডার আরেকটি অঞ্চলে আকাস্টা গ্নাইস কমপ্লেক্সে ৪ বিলিয়ন বছরের পুরোনো শিলা পাওয়া গেছে। তবে নুভুয়াগিতুক অঞ্চলটির শিলা আরও প্রাচীন হতে পারে। গবেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের শিলা বিশ্লেষণ করলে পৃথিবীর প্রাথমিক ম্যাগমা মহাসাগর থেকে শুরু করে টেকটোনিক প্লেট গঠনের ইতিহাস, এমনকি জীবনের সূচনা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

নুভুয়াগিতুক অঞ্চলটি ইনুকজুয়াক আদিবাসীদের ভূমিতে অবস্থিত। অতীতে কিছু গবেষকের সফরের পর শিলার বড় অংশ হারিয়ে গেছে এবং কিছু টুকরা অনলাইনে বিক্রি হতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ কারণে স্থানীয় ইনুইট সম্প্রদায় সাময়িকভাবে গবেষকদের জন্য শিলা সংগ্রহ নিষিদ্ধ করেছে। সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি টমি পালিসার জানান, তারা এখন একটি প্রাদেশিক উদ্যান গঠনের চেষ্টা করছেন, যেখানে শিলাগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ রাখা হবে।
পালিসার বলেন, ‘এই শিলার প্রতি অনেক আগ্রহ রয়েছে, আমরা বুঝতে পারি। আমরা শুধু আর কোনো ক্ষতি চাই না।’ সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট 

জলবায়ু সংকট বন্ধ হচ্ছে বরফ পর্যবেক্ষণের স্যাটেলাইট ডেটা

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১০:১৫ এএম
বন্ধ হচ্ছে বরফ পর্যবেক্ষণের স্যাটেলাইট ডেটা
দ্য গার্ডিয়ান। ছবি: সংগৃহীত

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্তে সমুদ্রের বরফের অবস্থান ও পরিবর্তন বিশ্লেষণকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার চলতি মাসের শেষে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ স্যাটেলাইট তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সরবরাহ বন্ধ করতে যাচ্ছে, যা বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এতে উভয় মেরুতে দ্রুত পরিবর্তনগুলো ট্র্যাক করা আরও কঠিন হবে।

সমুদ্রের বরফের অবস্থা ট্র্যাক করা বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বৈশ্বিক উষ্ণতা কীভাবে গ্রহকে প্রভাবিত করছে তা বুঝতে সাহায্য করে। সমুদ্রের বরফ সূর্যের শক্তিকে মহাকাশে প্রতিফলিত করে ফিরিয়ে দেয়। তবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি রেকর্ড হওয়ায় গ্রহের আরও বেশি অংশ সূর্যের শক্তির সংস্পর্শে আসছে। এর ফলে আরও উষ্ণতা বাড়ছে।

ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোতে অবস্থিত ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার (এনএসআইডিসি) বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের বরফের পরিমাণ প্রায় রিয়েলটাইমে ট্র্যাক করার জন্য ‘সি আইস ইনডেক্স’ রক্ষণাবেক্ষণ করে। গত সপ্তাহে দুটি আপডেটে কেন্দ্রটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিরক্ষা বিভাগ ৩১ জুলাই থেকে স্যাটেলাইটগুলোর ডেটা প্রক্রিয়াকরণ ও সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।

জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে আসছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যয় কমানোর নীতিতে সরকারের বিভিন্ন স্তরে জলবায়ুবিষয়ক কার্যক্রম প্রভাবিত হয়েছে। তাদের আশঙ্কা ছিল, সমুদ্রের বরফের ডেটা লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

এ সিদ্ধান্তে বৈশ্বিক জলবায়ু গবেষণায় এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। অস্ট্রেলিয়ান অ্যান্টার্কটিক প্রোগ্রাম পার্টনারশিপের গবেষক ড. অ্যালেক্স ফ্রেজার বলেন, ‘এই ডেটা হলো আমাদের পৃথিবীর বরফের হৃদস্পন্দন। এটি আমাদের সতর্ক সংকেত দেয়। এখন আমরা সেই ধারাবাহিকতা হারাতে বসেছি।’

এনএসআইডিসি জানিয়েছে, তারা বিকল্প উচ্চ-রেজুলেশনের স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহারের চেষ্টা করছে। তবে তা বর্তমান তথ্যের সঙ্গে সরাসরি তুলনীয় নাও হতে পারে।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের চারপাশে বরফের রেকর্ড পরিমাণ হ্রাসের কারণে আরও বেশি হিমশৈল ছুটে যাচ্ছে। এর ফলে বরফের স্তর দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং তা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়াতে পারে। যদিও সমুদ্রের বরফ গললে সরাসরি সমুদ্রপৃষ্ঠ বাড়ে না, তবে ভাসমান বরফস্তরের ক্ষয় জীবাশ্মভিত্তিক বরফের ওপর প্রভাব ফেলছে।

গ্লাসিয়োলজিস্ট ড. সু কুক বলেন, ‘বরফস্তরগুলো যেন বোতলের কর্কের মতো কাজ করে। এরা মূল ভূখণ্ডের বরফকে আটকে রাখে। কিন্তু সেগুলো ভেঙে গেলে অভ্যন্তরীণ বরফ দ্রুত সমুদ্রে চলে যেতে পারে।’

রেকর্ড পরিমাণ বরফ হ্রাসের প্রভাব পড়েছে জীববৈচিত্র্যের ওপরও। ২০২২ সালে বরফের হঠাৎ ভাঙনের ফলে প্রায় ৭ হাজার এম্পেরর পেঙ্গুইন ছানা মারা যায়। কারণ তাদের তখনও জলরোধী পালক গজায় নাই।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, ডিফেন্স মেটিওরোলজিক্যাল স্যাটেলাইট প্রোগ্রামের (ডিএমএসপি) তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ৩১ জুলাই বন্ধ হবে, যা ২০২৬ সালে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, ‘পুরোনো সেন্সরগুলোর কার্যকারিতা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আইটি আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারছে না বলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এলো যখন অ্যান্টার্কটিকার বরফ হার নতুন রেকর্ড গড়ছে। এনএসআইডিসির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ওয়াল্ট মেয়ার জানান, ‘আমরা একটি মানসম্মত বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব। তবে দীর্ঘমেয়াদি রেকর্ডের ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হবে।’

সমুদ্রের বরফ পর্যবেক্ষণ শুধু বৈজ্ঞানিক তথ্য নয়, বরং এটি আমাদের ভবিষ্যৎ পরিবেশের এক প্রকার পূর্বাভাস। এই পর্যবেক্ষণ বন্ধ হলে তা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: দ্য গার্ডিয়াণ

বিশ্বের বৃহত্তম ক্যামেরায় মহাবিশ্বের দুর্লভ দৃশ্য

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩৭ পিএম
বিশ্বের বৃহত্তম ক্যামেরায় মহাবিশ্বের দুর্লভ দৃশ্য
ছবি: সংগৃহীত

চিলির কোকিম্বো অঞ্চলে ভেরা সি. রুবিন মানমন্দিরে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ডিজিটাল ক্যামেরা প্রথমবারের মতো এই মানমন্দির ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে মহাকাশের ছবি তুলে প্রকাশ করেছে বিশাল এই ক্যামেরা মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা জাগিয়েছে

চিলির পাহাড়ি সেরো প্যাচোন হিলে অবস্থিত এই টেলিস্কোপ . মিটার বা প্রায় ২৮ ফুট উঁচু এতে সংযুক্ত ৩২০০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা প্রতিরাতে হাজারখানেক ছবি তুলতে পারে প্রতিটি ছবি বিশাল পরিমাণ তথ্য সরবরাহ করে, যা বিশ্লেষণ করে সৌরজগতের গঠন গ্রহাণুর গতিপথ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে

ভেরা সি. রুবিন মানমন্দিরের ডেটা প্রকল্প ব্যবস্থাপক উইলিয়াম মুলেন বলেন, ‘এটি সত্যিই মানুষের ডেটা নিয়ে কাজ করার পদ্ধতিকে বদলে দেবে এবং চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে

মাত্র ১০ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে এই মানমন্দির আকাশের একটি ক্ষুদ্র অংশ থেকে হাজার ১০০টির বেশি নতুন গ্রহাণু শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে এই সংখ্যা বার্ষিক বিশ্বব্যাপী শনাক্ত হওয়া গ্রহাণুর ১০ শতাংশেরও বেশি তথ্য মহাকাশে পৃথিবীর জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি শনাক্ত করতেও সহায়ক হবে উইলিয়াম মুলেন বলেন, এই মানমন্দিরটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দ্রুত বিপুল পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ করতে এবং অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে

উইলিয়াম মুলেন আরও বলেন, ‘এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাজের ধরন বদলে দেবে আমরা কয়েকটি পর্যবেক্ষণের ওপর গবেষণার পরিবর্তে একসঙ্গে কোটি কোটি তারকা গ্যালাক্সির তথ্য উপস্থাপন করবতার মতে, ‘২০ বিলিয়নের বেশি গ্যালাক্সির ডেটা এখন তাদের হাতে

প্রতিদিন রাতে দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশের প্রায় পুরোটা স্ক্যান করবে প্রতিটি তিন থেকে চার দিন অন্তর একই আকাশ আবার পর্যবেক্ষণ করা যাবে চিলির আকাশ সবচেয়ে ঘন অন্ধকার, আর আতাকামা মরুভূমির শুষ্ক পরিবেশ একে জ্যোতির্বীক্ষণের জন্য আরও উপযোগী করে তুলেছে

চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট ফ্রান্সিসকো ফোস্টার বলেন, ‘প্রতিদিন যে পরিমাণ ডেটা তৈরি হবে, তা ৮৩ হাজার মানুষের ইমেইল ইনবক্সের সমান মানুষের পক্ষে একে একে তা দেখা সম্ভব নয় সে জন্য আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে হবে

এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের নামকরণ করা হয়েছে মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেরা সি. রুবিনের নামে তিনিই প্রথমডার্ক ম্যাটারেরঅস্তিত্বের বাস্তব প্রমাণ দিয়েছিলেন তার নামে নামকরণ করা এই টেলিস্কোপ শুধু মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন নয়, বরং ভবিষ্যতে মহাকাশে পৃথিবীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন। সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট

‘এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড’র ২০তম আসর শুরু হচ্ছে

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০১:০৯ পিএম
‘এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড’র ২০তম আসর শুরু হচ্ছে
ছবি: বিজ্ঞপ্তি

বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে দেশের সবচেয়ে বড় অ্যাস্ট্রোনমি প্রতিযোগিতা-‘এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড ২০২৫’-এর ২০তম আসর শুরু হতে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানীর আফতাব নগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক শামস রহমান এবং এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রায়হান কবির।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মশহুরুল আমিন।

১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সি স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত এ ‘এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড‘ এ বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলোতে প্রথম রাউন্ড থেকে বাছাই করা ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড বা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা ও সর্বশেষ তৃতীয় রাউন্ড বা ক্লোজড ক্যাম্প। 

ক্লোজড ক্যাম্পের শেষ দিন অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষা থেকে প্রথম পাঁচ প্রতিযোগীকে বাছাই করা হবে।

ওই পাঁচ প্রতিযোগী আগামী ২০-২৭ সেপ্টেম্বরে রাশিয়াতে হতে যাওয়া ওপেন ওয়ার্ল্ড অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। এ ছাড়া ২৯তম আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াড ও এশিয়ান-প্যাসিফিক অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের আসরেও তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবার সুযোগ পাবে।

‘এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড‘র জন্য আবেদন করার নিয়ম-

১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সি স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী, যাদের জন্ম (২০১০-২০১১ সাল) এর মধ্যে তারা জুনিয়র গ্রুপ।

১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সি স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী, যাদের জন্ম (২০০৭-২০০৯ সাল) এর মধ্যে তারা সিনিয়র গ্রুপ।

প্রাথমিক বাছাই বা প্রথম রাউন্ড পরীক্ষা ১১-২১ জুলাইয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

১. নিবন্ধন ফি: একশত টাকা।

২. নিবন্ধন ফি পাঠাতে হবে ০১৯১৫-৬৫৩৬০৭ (বিকাশ নম্বর) নম্বরে।

গতবারের মতো এবারের আয়োজনেও টাইটেল স্পন্সর হিসেবে যুক্ত হয়েছে এপেক্স। সে কারণে এ আয়োজনটির নাম ‘এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড’।

বিজ্ঞপ্তি/পপি/

নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে ব্যাকটেরিয়া প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ব্যথানাশক ওষুধ

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ব্যথানাশক ওষুধ
ব্যাকটেরিয়া প্লাস্টিক বর্জ্যকে প্যারাসিটামল-জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধে রূপান্তর করতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের অন্ত্রে থাকা একটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া প্লাস্টিক বর্জ্যকে প্যারাসিটামল-জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধে রূপান্তর করতে পারে। এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা নেচার কেমিস্ট্রি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এই পদ্ধতি ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব রিসাইক্লিং প্রযুক্তির ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
ক্ষুদ্র আকারের প্লাস্টিক কণাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করে হরমোনজনিত সমস্যাসহ ক্যানসারের মতো জটিল রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। ফলে প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ বাড়ছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে প্লাস্টিক বর্জ্য টেকসইভাবে পুনর্ব্যবহারের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। পরীক্ষিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে কাঙ্ক্ষিত ক্ষুদ্র অণু তৈরির জন্য ব্যাকটেরিয়া ও তাদের এনজাইমের ব্যবহার বিশেষভাবে আশাব্যঞ্জক ফল দিয়েছে।

ব্যাকটেরিয়ার রসায়ন
বিজ্ঞানীরা জানান, অণুজীবের মধ্যে থাকা ‘টুলবক্স’-এ অত্যন্ত সক্রিয় রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জৈব যৌগ তৈরি করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, বিভিন্ন শিল্পে প্রয়োজনীয় ছোট অণু উৎপাদনে এই রাসায়নিকগুলো ব্যবহার করা যাবে। অণুজীব ও তাদের বিপাকীয় রাসায়নিক উপাদানগুলো বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহার করলে, বর্তমানে প্রচলিত রাসায়নিক উৎপাদন পদ্ধতির ওপর জীবাশ্ম জ্বালানির নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে।

ই. কোলাই দিয়ে প্যারাসিটামল উৎপাদন
গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ই. কোলাই (E. coli) নামের ব্যাকটেরিয়া, যা সাধারণত মূত্রনালির সংক্রমণ বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য পরিচিত। গবেষকরা দেখেছেন, এই ব্যাকটেরিয়ার কোষে থাকা ফসফেট একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সক্রিয় করে, যা ‘লসেন রি-অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বা ‘লসেন পুনর্গঠন’ নামে পরিচিত। এই প্রক্রিয়ায় নাইট্রোজেনযুক্ত জৈব যৌগ উৎপাদিত হয়, যা কোষের বিপাকে অপরিহার্য।

বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেছেন, ‘এই বিক্রিয়াটি জীবন্ত অবস্থায় স্বাভাবিক পরিবেশে ঘটে, যা ই. কোলাইয়ের জন্য অবিষাক্ত এবং কোষের মধ্যে থাকা ফসফেট দ্বারা অনুঘটিত হয়।’

গবেষকরা পলিইথিলিন টেরেফথ্যালেট (পিইটি) প্লাস্টিকের বোতল পচানোর পরিবর্তে ভাঙার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এতে লসেন পুনর্গঠন রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক অণু তৈরি করা যায়। তারা দেখিয়েছেন, কোষের ভেতরের বিপাক প্রক্রিয়া এর পিইটি-কে পুনরুদ্ধার করতে পারে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই প্লাস্টিক থেকে প্রাপ্ত অণু ই. কোলাইয়ের মধ্যে প্যারাসিটামল উৎপাদনের জন্য প্রাথমিক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যার উৎপাদন হার ছিল ৯২ শতাংশ। এটি প্রথম ঘটনা, যেখানে বর্জ্য পদার্থ ব্যবহার করে ই. কোলাই থেকে প্যারাসিটামল তৈরি করা হয়েছে।

গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, এই পদ্ধতি প্লাস্টিক বর্জ্য বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানোর একটি সম্ভাব্য কৌশল তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে আরও নানা প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া ও প্লাস্টিক থেকে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উৎপাদন সম্ভব হতে পারে।

গবেষকরা মনে করছেন, এই উদ্ভাবন পরিবেশ সুরক্ষা ও ওষুধ উৎপাদনে একযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা আরও জানিয়েছেন, এই গবেষণা ‘স্মল মলিকিউল সিনথেসিস’ বা ক্ষুদ্র জৈব যৌগ তৈরির ক্ষেত্রে মেটাবলিক কেমিস্ট্রির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট