ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৩নং ওয়ার্ডভুক্ত বংশালের মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা এলেও সেখানকার ২০০ পরিবার আতঙ্কে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়া কেন অবৈধ হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী ২১ জুলাই এ বিষয়ে পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। এ সময়ের মধ্যে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের জন্য ফাঁকা জায়গার ব্যবস্থা করতে ডিএসসিসিকে বলা হয়েছে। জায়গার ব্যবস্থা হলে তাদের (হরিজন সম্প্রদায়) সেখানে চলে যেতে হবে। এরপর আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
মিরনজিল্লায় চারতলাবিশিষ্ট আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণ করতে চায় ডিএসসিসি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে ডিএসসিসির প্রায় ৩ দশমিক ২৭ একর জমি আছে। হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায় ৪০০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করেন। কলোনির এক পাশে ২৭ শতাংশ জমিতে আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণ করতে হলে সেখানকার কিছু বাসাবাড়ি ভেঙে দিতে হবে। আগে বিদ্যমান কাঁচাবাজারটি ১৭ শতাংশ জমিতে ছিল। বাকি জমি থেকে স্থাপনা সরাতে এই অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার সকালে এই এলাকায় ডিএসসিসির ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ অভিযানে যান। তবে এলাকাবাসী ও শিশুদের সম্মিলিত প্রতিবাদে সে দিন আর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে পারেননি তারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মিরনজিল্লা হরিজন কলোনির মন্দিরে শিশুরা পোস্টার, ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি জারি রাখে।
ডিএসসিসির ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আউয়াল হোসেন জানান, হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য ২টি ১০তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সব পরিবারকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে কিছু সময় লাগবে। যে পরিবারগুলো ফ্ল্যাট পাবে না এখন, তারাই এখন প্রতিবাদ করছেন উচ্ছেদের। ৬০টি পরিবারকে ইতোমধ্যে চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক পরিবার নতুন ফ্ল্যাটে উঠে যাচ্ছেন।
কিন্তু মিরনঝিল্লার হরিজন সেবক সমিতির নেতারা অভিযোগ করছেন, মিরনজিল্লার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা অনেকে ফ্ল্যাট পাননি। রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা ফ্ল্যাট পেয়েছেন তাদের অনেকে হরিজন সম্প্রদায়ের নন। কমপক্ষে ২০০ পরিবার নতুন ফ্ল্যাট পাবে না। এই পরিবারগুলো উদ্বাস্তু হয়ে যাবেন।
সংখ্যালঘু অধিকারবিষয়ক সংগঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও এখন এই ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে এ এলাকায় গিয়ে হরিজনদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সংহতি জানান।
তিনি বলেন, ‘আজ হরিজনদের পাশে থাকার লোক নেই, এদের দিয়ে ব্যবসা করা বা ভালো থাকার লোকের অভাব নেই। এই গরিবদের উচ্ছেদ করে বিল্ডিং করে ভাগবাটোয়ারা করলে তা হবে সবচেয়ে অন্যায় এবং লজ্জার।’
এ দিন হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা। দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে গণসংহতি আন্দোলনের একটি প্রতিনিধিদল এদিন দুপুরে মিরনজিল্লা কলোনিতে যান।