দুই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এসএসসির ফলাফলে স্বমহিমায় ফিরে এসেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হারে বোর্ডটি দেশের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এবার যশোর বোর্ডের পাসের হার ৯২.৩৩ শতাংশ। এর আগে ২০২২ সালে ৯৫.১৭ শতাংশ পাসের হার নিয়ে দেশসেরা সাফল্য অর্জন করেছিল বোর্ডটি। এর মধ্যে দিয়ে এই বোর্ডের ফলাফল অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছিল। তবে ২০২২ সালের চেয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা এবার কমেছে। ওই বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩০ হাজার ৮৯২ শিক্ষার্থী, এ বছর পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ জন। আর করোনাকালে ২০২১ সালে পাসের হার ছিল ৯৩.০৩ শতাংশ। তবে ওই বছর খুবই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু স্বাভাবিক পরীক্ষায় এর আগে রেকর্ড ছিল ২০১৩ সালে ৯২ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমন্বিত উদ্যোগকে পাসের হারে দেশের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রধান কারণ জানিয়ে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহীন আহমেদ বলেন, ‘গত বছর বোর্ডের ফলাফল আগের তুলনায় খারাপ হওয়ার বিষয়টি মাথায় নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের নিয়ে বিশেষ ইতিবাচক কর্মসূচি নেওয়া হয়। বোর্ডের উদ্যোগে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালা করানো হয়। বিশেষ করে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উন্নতমানের প্রশ্ন ব্যাংকের মাধ্যমে অর্ধবার্ষিকী ও নির্বাচনি পরীক্ষা নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়। শিক্ষার্থীদের জাগিয়ে তোলা হয়। ফলে তাদের মূল বইয়ের প্রতি নির্ভরতা বাড়ে। শিক্ষার্থীদের জাগরণের কারণে আজকের এই সাফল্য। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের বিশেষ কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
যশোর বোর্ডের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারে সারাদেশে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। সারাদেশে এবার গড়ে ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। কিন্তু ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ পাসের হার নিয়ে শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে যশোর বোর্ড। এর মধ্যে ছেলেদের পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও মেয়েদের ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত বছর এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এদিকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে যশোর বোর্ডে গতবছরের তুলনায় বেড়েছে। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৪৩১ ও ছাত্র ৯ হাজার ৩৩০ শিক্ষার্থী রয়েছে। গত বছর এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২০ হাজার ৬১৭ জন শিক্ষার্থী। তবে ২০২২ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩০ হাজার ৮৯২ জন শিক্ষার্থী।
যশোর বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছরের মতো এবারও যশোর বোর্ডে অন্য বিভাগের তুলনায় তাক লাগানো ফলাফল করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এই বিভাগ থেকে ৪১ হাজার ৪৬৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ৩৯ হাজার ৮৬৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭ হাজার ৪৭৬ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে মেয়েরা। সর্বোচ্চ এ ফলাফল অর্জনকারীদের মধ্যে ৮ হাজার ৬২৮ জন ছাত্র ও ৮ হাজার ৮৪৮ জন ছাত্রী রয়েছে। পাসের হার ৯৬ দশমিক ১৪ শতাংশ।
বোর্ডে পাসের হারে বিজ্ঞানের পরেই রয়েছে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ। এই বিভাগ থেকে ১৭ হাজার ৯৬৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৬ হাজার ৯৮০ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৫০ ভাগ। ব্যবসায় বিভাগ থেকে এবছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪৮ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ৩৪৮ ও ছাত্রী ৭০০।
মানবিক বিভাগ থেকে এক লাখ ১ হাজার ৪৯১ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৯১ হাজার ৭৩০ জন। পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৮ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৩৭ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ৩৫৪ ও ছাত্রী ১ হাজার ৮৮৩ জন।
খুলনা বিভাগে শীর্ষে সাতক্ষীরা, তলানীতে মেহেরপুর
যশোর শিক্ষা বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে এবারও শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরা জেলায় পাসের হার ৯৬ দশমিক ১২ শতাংশ। এবং সবচেয়ে কম পাসের হার মেহেরপুর ৮৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বোর্ডে দ্বিতীয় অবস্থানে খুলনা। এ জেলায় পাসের হার ৯৪ দশমিক ৬০। আর যশোর জেলা ৯৪ দশমিক ২২ শতাংশ পাসের হার নিয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।
এছাড়া নড়াইল জেলায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ২৪, কুষ্টিয়ায় পাসের হার ৯১ দশমিক ৩৫, বাগেরহাট জেলায় পাসের হার ৯১ দশমিক ২৭, মাগুরা জেলায় পাসের হার ৯১ দশমিক ০৯, চুয়াডাঙ্গা জেলায় পাসের হার ৯০ দশমিক ৮২ ও ঝিনাইদহ জেলায় পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৯ ভাগ।
এইচআর তুহিন/অমিয়/