রাজস্ব নীতি সংস্কারসংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করে জারি করা ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, দুটি নতুন বিভাগের জন্য অ্যালোকেশন অব বিজনেস (কার্যপরিধি নির্ধারণ) এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এসব আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন হবে। এ কাজগুলোও সময়সাপেক্ষ। এ কাজগুলো সম্পাদন না করে কোনোভাবে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখনই বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ১২ মে জারি করা রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, সড়ক বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, রাজস্ব নীতি সংস্কারসংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির ৫ জন সদস্য এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দুজন প্রতিনিধি, রাজস্ব নীতি সংস্কারসংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। উপদেষ্টারা সবার বক্তব্য ধৈর্যসহকারে শোনেন এবং তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
আলোচনায় উত্থাপিত সব বিষয় অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত দেন যে, ‘রাজস্ব নীতি সংস্কারসংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করে জারি করা অধ্যাদেশটি প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর বাস্তবায়ন করা হবে।’
এমন ফলপ্রসূ আলোচনার পর বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। কিন্তু তা মেনে না নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ পুনরায় অসহযোগ আন্দোলনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অধ্যাদেশটি জারি করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ যেমন, দুইটি বিভাগের নতুন করে সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন, পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, সচিব কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন ইত্যাদি সম্পাদন করতে হবে- যা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ বিষয়।
তাছাড়া, দুটি নতুন বিভাগের জন্য অ্যালোকেশন অব বিজনেস এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এসব আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। এ কাজগুলোও সময়সাপেক্ষ। যেহেতু এই কাজগুলো সম্পাদন না করে কোনোভাবে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনই বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আজ রাজস্ব বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত দুজন সদস্যের মধ্যস্ততায় দিনব্যাপী দফায় দফায় আলোচনার একপর্যায়ে তাদের পাঠানো সমঝোতা প্রস্তাব সম্পূর্ণ মেনে নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেহেতু অধ্যাদেশটি প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বাস্তবায়ন করার কাজটি অনেক সময়সাপেক্ষ, সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কার্যক্রম আগের মতো অব্যাহত থাকবে এবং কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থায় সব কার্যক্রম সম্পাদন করবেন।
বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে প্রণীত হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও গুরুত্বপূর্ণ সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এনবিআরের সব কার্যক্রম আগের ন্যায় অব্যাহত থাকবে।
কাস্টমস ও কর ক্যাডারের সদস্যদের কোনো পদ-পদবি কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই, বরং সংস্কারকাজ সম্পাদন হলে তাদের পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সচিব পদে নিয়োগসহ পদোন্নতির সুযোগ আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থবছরের শেষ সময়ে জাতীয় বাজেট কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস সময়ে দপ্তরে উপস্থিত থেকে তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালু রেখে এবং করদাতাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে।