
রাত পোহালেই মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কোটি বাঙালি পেয়েছিল বিজয়ের আনন্দ। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর এদিন বিজয় কেতন ওড়ায় জাতি। ৫৪তম মহান বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য প্রস্তুত সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ধোয়া-মোছা থেকে শুরু করে সৌন্দর্যবর্ধনের সব কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে গণপূর্ত বিভাগ। তিন বাহিনীর সশস্ত্র কুচকাওয়াজ, মহড়া আর বিউগলে বাজছে যেন বিজয়ের সুর।
মহান বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা ঘিরে এক মাস ধরেই জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় চলছে নানা কর্মযজ্ঞ। সৌধ প্রাঙ্গণে ঘুরে দেখা যায়, শহিদ বেদি থেকে সৌধের প্রধান ফটক পর্যন্ত পুরো এলাকা ধুয়ে-মুছে চকচকে করে তোলা হয়েছে। পায়ে হাঁটার লাল ইটের পথগুলোতে সাদা রঙের আঁচড়ে শুভ্র করে তুলেছেন চিত্রশিল্পীরা। বাগানগুলোতে লাগানো হয়েছে গাদাসহ বাহারি ফুলের চারা। শোভাবর্ধনকারী গাছ ও ঘাস ছেঁটে পরিপাটি করে তোলা হয়েছে। পরিষ্কার লেকের স্বচ্ছ পানিতে শোভা পাচ্ছে রক্তিম লাল শাপলা। সৌধ প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে লাল-সাদা ফুলগাছের টব শোভা বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার আগমন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারে পুরো সৌধ এলাকায় সিসিটিভি স্থাপনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে।
সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে নিয়োজিত হায়দার আলী বলেন, প্রতিবছর বিজয় ও স্বাধীনতা দিবস এলেই আমরা যারা এখানে কাজ করি তাদের ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যায়। অর্ধশতাধিক শ্রমিক মিলে পুরো সৌধ এলাকা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করি। এবার বিজয় দিবস উপলক্ষে এক মাস ধরে আমরা স্মৃতিসৌধে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। মালিরা বাগানগুলোতে নতুন ফুলগাছের চারা লাগিয়ে সুন্দর করে তুলছেন। একদল শ্রমিক মেশিনের মাধ্যমে পুরো সৌধ চত্বর ধোয়ার কাজ করছেন। লেকগুলোর ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে পানি স্বচ্ছ করা হচ্ছে। কেউবা আবার রং-তুলির কাজ করে যাচ্ছেন এখনো। সৌধের প্রাচীরসহ ভেতরে বাহারি আলোকবাতি বসিয়ে সজ্জার কাজ প্রায় শেষ। ইলেক্ট্রিশিয়ানরা বৈদ্যুতিক লাইন সংস্কারের পাশাপাশি আলোকবাতি লাগাচ্ছেন। সব মিলিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে সব ধরনের কাজ প্রায় শেষ।
সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবধনের জন্য গত ৮ ডিসেম্বর থেকে স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এক মাস ধরেই সৌধের কর্মচারীরা দিনরাত সৌধ এলাকা প্রস্তুত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে সৌধ প্রাঙ্গণ।
ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধের নিরাপত্তায় গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকবে। এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে কয়েকটি স্তরে পুরো নিরাপত্তাব্যবস্থাকে সাজানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, ভিআইপি, ভিভিআইপিসহ তাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই আমরা পুরো ব্যবস্থাটা গ্রহণ করেছি। তারা চলে যাওয়ার পরও যাতে স্মৃতিসৌধ এলাকায় সুশৃঙ্খল পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা থাকে সেই ব্যবস্থাও আমরা রেখেছি।
এদিকে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনে আসেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিকতা ঘিরে ১০ দিন আগে থেকেই নিরাপত্তায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকাসহ রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইলে নিরাপত্তাবলয় জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৫ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকেই ডিএমপিসহ এ এলাকায় ট্রাফিক কার্যক্রম চালু থাকবে। এ সময় কোনো হুমকি নেই উল্লেখ করে সবাই নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।