
২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ পাঠপুস্তকের গ্রাফিতিতে সংযোজন করা ‘আদিবাসী’ পরিভাষা বাতিল করার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ নিজেকে নিরুপায় মনে করেন। তাহলে কার কাছে সারেন্ডার করলেন? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমতার চেয়ার ছেড়ে এসে জনগণের কাতারে দাঁড়ান।’
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেণের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয় স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা এখন একটি ভয় ও অজানা আতঙ্কের মধ্য দিয়ে চলছি। পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনের ঘটনার মধ্য দিয়ে আতঙ্ক আরও বাড়ল।’
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আজকে যারা অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন, তারাও আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন। তাদের বলছি, কেউ একজন এসে বলল আর পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন হয়ে গেল? তাহলে আগের চেয়ে পার্থক্য কী রইল?’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকও তার বক্তব্যে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনের নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারেন না। কেবল সংখ্যার ভিত্তিতেও যদি আমরা পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের সংখ্যালঘু বলি, তবে তাদের রাজনৈতিক-সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের কথা একপাশে রেখে দিলে কখনো অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে না।’
এদিকে আজ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ পাঠ্যপুস্তকের গ্রাফিতিতে সংযোজন করা ‘আদিবাসী’ পরিভাষা বাতিল করা হয়েছে। সেখানে যুক্ত হচ্ছে নতুন একটি গ্রাফিতি।
এর আগে গতকাল রবিবার ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ পাঠ্যপুস্তকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা উল্লেখ করে ‘আদিবাসী’ পরিভাষা বাতিল এবং রাষ্ট্রদ্রোহী এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে এনসিটিবি ঘেরাও করে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র ব্যানারে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভের একদিনের মাথায় ‘আদিবাসী’ লেখা গ্রাফিতিটি বাদ দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের পিডিএফ ভার্সনে নতুন গ্রাফিতি যুক্ত করেছে এনসিটিবি। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, ওই পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ পরিভাষা যুক্ত থাকা গ্রাফিতিটি পরিবর্তন করে ‘বল বীর/ চির উন্নত/ মম শির’ লেখা নতুন গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে।
স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নিজেরা করি-র নির্বাহী পরিচালক খুশী কবির, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, এলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি বিচিত্রা তির্কি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন।
শুরুতে রবীন্দ্রনাথ সরেণের কর্মময় জীবনের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক পাভেল পার্থ।
জয়ন্ত/সালমান/