
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পলিসি নিয়ে ‘গ্রিন গ্রোথ’ নামের একটি পাইলট প্রকল্প চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি সরকার। ‘একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা, এনে দিবে স্বচ্ছলতা’ জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) বহুল আলোচিত এই স্লোগানটিকে প্রকল্পটির মূল স্লোগান হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রকল্পের গাড়ি, ব্রুশিয়ার, সদস্য ফর্মসহ সব ক্ষেত্রে স্লোগানটি ব্যবহার করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিউজার্সি ইকোনমিক ডিভেলপমেন্ট অথরিটির (এনজেইডিএ) অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ জার্সির (বিএএসজে) তত্ত্বাবধায়নে নিউজার্সির আটলান্টিক সিটিতে দুই বছরের জন্য পাইলট প্রকল্পটি পরিচালিত হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সাউথ জার্সির বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্প কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএএসজে প্রেসিডেন্ট জহিরুল ইসলাম বাবুল, গ্রিন গ্রোথ এর প্রজেক্ট রাইটার ও প্রজেক্ট ইনিশিয়েটর (পিআই) আশিক ইসলাম, বিএএসজে এর সেক্রেটারি জাকিরুল ইসলাম, ট্রাস্টি চেয়ারম্যান মো. রফিক। দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। সিটি মেয়রসহ উপস্থিত সাংবাদিকদের বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশনের নিয়মিত ফুড বিতরণ কার্যক্রম দেখানো হয়।
প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরে জহিরুল ইসলাম বাবুল বলেন, পিছিয়ে পড়া নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আটলান্টিক সিটির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। প্রথম বছরে ৩০ জন নারীকে প্রজেক্টের আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হবে। যারা তাদের বাড়ির আঙিনা, খোলা জায়গা, বারান্দার টব, বাড়ির পেছনে সুবিধা অনুযায়ী জায়গা বেছে নিয়ে সবজি উৎপাদন করবে। পরবর্তী সময়ে নিজ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে সিংহভাগ সবজি গ্রিন গ্রোথের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করা হবে। ফসল উৎপাদনে বিনামূল্যে সার্বিক সহযোগিতা ও সব প্রকার সরঞ্জামাদি সরবরাহ এবং বিপননের দায়িত্ব পালন করবে গ্রিন গ্রোথ। উৎপাদকের বাসা থেকে প্রকল্পের গাড়ি ফসল সংগ্রহ করবে। ফসলের বিক্রয়মুল্যের ৬৫% ভাগ পাবে উৎপাদক এবং ৩৫% ভাগ পাবে গ্রিন গ্রোথ। প্রতি বছর সেরা ৩ জন উৎপাদনকারীর জন্য থাকবে বিশেষ আর্থিক পুরস্কার।
ছবি: সংগৃহীত
তিনি বলেন, আমাদের জানামতে, আমেরিকার অনেক স্টেটেই বাংলাদেশিদের সংগঠন রয়েছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশনই প্রথম যারা এমন একটি কাজের সঙ্গে নিজেদেরকে যুক্ত করতে পেরেছে। যা এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসহ বাংলাদেশিদের জন্য অত্যান্ত গৌরবের। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি সুচারুভাবে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি তবে পরবর্তি ধাপে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।
গ্রিন গ্রোথ প্রকল্পের নেপথ্যের ইতিহাস তুলে ধরে আশিক ইসলাম বলেন, গোটা বিশ্বে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, বাড়ছে খাদ্য মুল্য। দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রও এর বাইরে নয়। সরকার নানা উদ্যোগের পাশাপাশি তিন ধাপে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ৪,১৩ এবং ৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। নিউজার্সির ২১টি কাউন্টির (অনেকটা বাংলাদেশের জেলার মত) মধ্যে প্রাথমিকভাবে আটলান্টিক কাউন্টির আটলান্টিক সিটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে পাইলট প্রকল্পের জন্য। আটলান্টিক সিটি মূলত ক্যাসিনো এবং পর্যটন নির্ভর শহর বিধায় এ অঞ্চলে প্রফেশনাল মানুষের সংখ্যা কম। ৪২ হাজার জনগোষ্ঠীর এই শরের ৩৯% ডাইভার্স কমিউনিটির মানুষ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশনসহ মোট ৫২টি নন-প্রোফিট প্রতিষ্ঠান তাদের প্রোজেক্ট সরকারের কাছে জমা দেয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সির প্রকল্পটির অনুমোদন পায়।
২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ‘একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা, এনে দিবে স্বচ্ছলতা’ স্লোগানের কর্মসূচিতে সারা দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আশিক ইসলাম বলেন, গ্রিন গ্রোথ প্রজেক্টের মাধ্যমে বাজারে খাদ্য সরবরাহ বাড়বে, ফলে মুল্য হ্রাস পাবে। এ্যাসোসিয়েশনের যে সকল সদস্য এ কার্যক্রমে যুক্ত থাকবেন তারাসহ উৎপাদনকারী সকলেই বাড়তি আয়ের সুযোগ পাবেন। তাই মার্কিন সরকারের কাছে এটি একটি ইউনিক প্রোজেক্ট হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই সরকারের ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ১৩ মার্চ বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন ও এর কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন। গ্রিন গ্রোথ কার্যক্রমের অগ্রগতিতে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তারা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই, আটলান্টিক সিটি মেয়র মার্টি স্মল সিনিয়র, ফিতা কেটে গ্রিন গ্রোথ প্রকল্পের গাড়ির উদ্ভোধন করেন। প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি একটি ভিন্নধর্মী প্রকল্প। যা সমাজের তৃণমূল মানুষের কথা চিন্তা করে ডিজাইন করা হলেও সর্বস্তরের মানুষ এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন। তিনি গ্রিন গ্রোথের সাফল্য কামনা করেন
উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের তৃণমূল মানুষকে স্বনির্ভর করার উদ্দেশ্যে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয় দেশব্যাপী দারিদ্র বিমোচন ও নারী উন্নয়ন কর্মসূচি। একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা, এনে দিবে স্বচ্ছলতা, শ্লোগানের এ কর্মসূচির আওতায় গ্রামে গ্রামে হাঁস মুরগী, গরু-ছাগল, মাছের পোনা বিতরণ, বাড়ির আঙিনায় সবজি উৎপাদন, বিনামূল্যে সার, বীজ ও কৃষি উপকরন বিতরণ করা হয়। দেশ ব্যাপী প্রায় ৩ হাজার ৯৮২টি পরিবারকে সবচ্ছলতার আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৬১৩টি পরিবার, বরিশালে ৮৬৮, কক্সবাজারে ৭২০, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭০২, ঝিনাইদহে ৪৯৮, জামালপুরে ২৩৮, নোয়াখালি ২১৪, শেরপুরে ১২৯টি পরিবার।
শফিকুল ইসলাম/মাহফুজ