সম্প্রতি জ্যামিতিক হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়েনি জনসাধারণের আয়, বেড়েছে শুধু তাদের নাভিশ্বাস ও দুর্ভোগ। নিত্যপণ্যের বাজারে যেন দাবানলের আগুন! নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের মতো সীমিত আয়ের মানুষের ভোগ্যপণ্য ক্রয় করা ক্রমেই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে–সাধ্যের মধ্যে সীমিত আয় দিয়ে সংসার ও সন্তানের জন্য যাবতীয় খরচ করে মাস পার করা যাবে তো? নিত্যপণ্যের বাজারে দাবানলের এই আগুন লেগেছে মূলত অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও পণ্য মজুতদারির কারণে। এভাবে জনগণকে পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য করা কিংবা জিম্মি করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করা ইসলামে নিষেধ। জোর করে মানুষের অর্থসম্পদ ভোগ করা মানবিক দৃষ্টিতেও অন্যায় ও জুলুম।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কিন্তু তোমাদের পরস্পর সন্তুষ্টচিত্তে ব্যবসা করা বৈধ।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ২৯)
ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত লভ্যাংশ সন্তুষ্টিচিত্তে গ্রহণ করা বৈধ। এর বাইরে জোরপূর্বক, অন্যায়, সিন্ডিকেট বা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কারও অর্থসম্পদ গ্রহণ করা বৈধ নয়। মিথ্যা কথা বলে পণ্যের দাম বাড়ানো মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার নামান্তর। যার মাধ্যমে সাময়িক পণ্যের কাটতি বাড়ানোর আশা করা যায়। তবে এভাবে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার পরিণাম ভালো নয়। আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি বাজারে পণ্য আমদানি করল। এরপর আল্লাহর নামে কসম করে বলল যে, এর এত দাম বলা হয়েছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে কেউ এমন দাম বলেনি। এতে তার উদ্দেশ্য হলো, সে যেন কোনো মুসলিমকে পণ্যের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলতে পারে।’ (বুখারি)
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় গৌরবের জায়গা হলো, তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মত। এ জন্য তারা পৃথিবীর সমস্ত নবীর উম্মতদের থেকে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু যারা মানুষকে ধোঁকা দেয়, তারা নবিজির উম্মত থেকে বের হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদেরকে (মুসলমানদের) ধোঁকা দেবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৮৪)
যেসব ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বাড়তি মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবসা করে, তারা কখনো প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। তারা কখনো জান্নাতে যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো কৃপণ, ছদ্মবেশধারী ধোঁকাবাজ, খিয়ানতকারী ও অসচ্চরিত্র ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথম যারা জান্নাতের দরজার কড়া নাড়বে, তারা হবে দাস-দাসী, যদি তারা আল্লাহ ও তাদের মনিবের সঙ্গে ন্যায়ঙ্গত আচরণ করে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৩২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘প্রত্যেক ধোঁকাবাজের জন্য কিয়ামতের দিনে একটি পতাকা থাকবে আর তা তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুযায়ী উঁচু করা হবে। সাবধান! জনগণের শাসক হয়ে যে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তার চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক আর নেই।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪৪৩০)
লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর