
মো. ইসহাক খান তারুণ্য প্রকাশনের প্রকাশক। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বাড়ি। বাবার চাকরির সুবাদে বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি শেষ করেছেন। স্নাতকোত্তর করেছেন শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ থেকে। তার প্রকাশক হওয়ার গল্প, কোন ধরনের বই প্রকাশে আগ্রহী তিনি, ইসলামি বইয়ের পাঠকের চাহিদা, লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রায়হান রাশেদ
খবরের কাগজ: আপনি প্রকাশক হলেন কেন?
মো. ইসহাক খান: আমি পেশায় একজন বই বিক্রেতা। বই বিক্রেতা হিসেবে আমার তখন ছয় বছর। সেবার মনে হলো নতুন কিছু বই বাজারে আনা দরকার। বিশেষ করে ছোটদের বই। বাজারে অনেক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ছোটদের মানসম্মত বই সচরাচর চোখে পড়ছিল না আমার। সেই চিন্তা-ভাবনা থেকে করোনাভাইরাসের আগ মুহূর্তেই চাকরি-বাকরি ছেড়ে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান করলাম। প্রকাশনীর নামই ঠিক করলাম ‘তারুণ্য প্রকাশন’। প্রথম প্রকাশিত বইটি ছিল জনপ্রিয় লেখক সালাহউদ্দিন জাহাঙ্গীরের শিশুতোষ বই ‘একটি আয়াত একটি গল্প সিরিজ’। সেই বছরই বইটি রকমারি ডটকমের বেস্টসেলার বই হিসেবে ভূষিত হয়। যা আমার এই জগতের কাজের আগ্রহ দ্বিগুণ করে দেয়।
খবরের কাগজ: ইসলামি বইয়ের পাঠক দিন দিন বাড়ছে বলে কি আপনি মনে করেন?
মো. ইসহাক খান: অনেকের ধারণা, মোবাইল/ইন্টারনেটের যুগে হয়তো মানুষ বই পড়ে না। আগের মতো মানুষ বই কেনে না। এই ধারণা থাকাটা স্বাভাবিক। তবে বাস্তবতাও জানা উচিত যে, এক যুগ ধরে হুহু করে বাড়ছে ইসলামি প্রকাশনা ও বইয়ের সংখ্যা। এর কারণ হচ্ছে পাঠক মহলে জায়গা করে নিতে পেরেছে ইসলামি বইগুলো। বাড়ছে ইসলামি বইয়ের মান। পাঠকের চাহিদা মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত প্রকাশ হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ের নতুন নতুন বই। যা ইসলামি বইয়ের জগৎকে আরও সমৃদ্ধ এবং পাঠকেন্দ্রিক করতে সহায়তা করছে।
খবরের কাগজ: আপনার প্রকাশনী সম্পর্কে কিছু বলুন। কোন ধরনের বই প্রকাশে আপনারা আগ্রহী?
মো. ইসহাক খান: আমরা মূলত শিশুদের বই নিয়ে কাজ করি। পাশাপাশি বড়দেরও কিছু বই আমরা প্রকাশ করেছি। তবে আমাদের মূল টার্গেট শিশুদের কেন্দ্র করে কাজ করা। আলহামদুলিল্লাহ এবার অমর একুশে বইমেলায় তারুণ্য প্রকাশনের নিজস্ব স্টল রয়েছে। স্টল নম্বর ২২৪। এ বছর শিশুদের নিয়ে আমাদের বেশ কিছু বই প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ। এর মধ্যে ‘ছোটদের আসমাউল হুসনার গল্প সিরিজ’, ‘ছোটদের ইসলামের ইতিহাস’ ও ‘ছোটদের নবী সিরিজ’সহ বেশ কিছু বই। যা পাঠকের নতুন চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে আশা করছি।
খবরের কাগজ: মানসম্মত বই প্রকাশে আপনাদের ভূমিকা কেমন?
মো. ইসহাক খান: আমরা বরাবরই মানসম্মত বই নিয়ে কাজ করি। মানসম্মত বই প্রকাশে আমরা বদ্ধপরিকর। একটি বই প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যতগুলো ধাপ রয়েছে, যেমন লেখক নির্বাচন, বইয়ের কনটেন্ট, বইয়ের ছাপা প্রিন্টিং, প্রোডাকশন এসব কিছুতে আমরা বিশেষ ফোকাস রেখে কাজ করার চেষ্টা করি। দক্ষতার সঙ্গে বছরের ৪-৫টি বই প্রকাশ করার চেষ্টা করি। তড়িঘড়ি করে অনেক বইয়ের কাজ একত্রে শুরু করি না। এতে করে বইয়ের মান ঠিক রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। কোয়ালিটি সম্পন্ন বই করার জন্য আমরা যথেষ্ট সময় নিয়ে বই প্রকাশ করি।
খবরের কাগজ: লেখক প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
মো. ইসহাক খান: লেখক-প্রকাশকের পাশাপাশি পাঠক নিয়ে আমাদের একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠা উচিত। যেহেতু লেখক-প্রকাশকের চূড়ান্ত সফলতা পাঠকের মাধ্যমেই আমরা পেয়ে থাকি। লেখক-প্রকাশক সম্পর্কটা অনেক প্রকাশনীর ভালো থাকলেও পাঠকের সঙ্গে সুসম্পর্ক খুব কম প্রকাশনীর রয়েছে। এই দিকটা আমাদের আরও উন্নত করা উচিত। পাঠকের রুচি চাহিদার ওপর চিন্তাভাবনা করে বই প্রকাশ করা উচিত। এতে করে ইসলামি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো রুচিসম্মত এবং গতিশীল হয়ে কাজ করতে পারবে বলে বিশ্বাস করছি।