ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে রমজান কাটাতেন—১৫ যেসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:০১ পিএম
যেসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন
আরবিতে আল্লাহর নিরানব্বই নামের ছবি । সংগৃহীত

রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত বান্দার জন্য আল্লাহতায়ালার খাস রহমত। এ রহমত পেয়েও অসতর্কতাবশত বিভিন্ন মন্দ ও গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় মানুষ। ‌যারা এ মাসেও তার গোনাহ মাফ করাতে সক্ষম হয় না, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের অভিসম্পাত করেছেন। (শুয়াবুল ঈমান, ১৬৬৮)
শয়তানের ধারাবাহিক প্ররোচনার প্রভাবে, অলসতা ও অসর্তকতার কারণে এ মাসের অনেককে বিভিন্ন মন্দ ও গুনাহের কাজে লিপ্ত হতে দেখা যায়, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বিভিন্ন মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার জোর তাগিদ দিয়েছেন। 

সাহরি না খেয়ে রোজা রাখা উচিত নয় : অনেকে শেষ রাতে সাহরি খান না। কেউ কেউ আবার সন্ধ্যা রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নত পরিপন্থি। কারণ ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা সাহরি খায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো, সাহরি গ্রহণ। তোমরা কখনো সাহরি না খেয়ে রোজা রাখবে না।’ (মুসলিম, ২৬০৪) 
 
বিলম্বে ইফতার করার অবকাশ নেই: বিলম্বে ইফতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এটাও বিধর্মীদের কালচার। সন্ধ্যার আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতার করতেন। আজানের পর বিলম্বে ইফতার করা তিনি পছন্দ করতেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ ইহুদি-খ্রিষ্টানরা তা বিলম্বে করে।’ (আবু দাউদ, ২৩৫৫)

হারাম খাওয়া হারাম : রমজানের সাহরি ও ইফতারে ব্যবহৃত যাবতীয় খরচ পবিত্র ও হালাল অর্থের মাধ্যমে উপার্জিত হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই গোশত (দেহ) জান্নাতে যাবে না, যা হারাম থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী।’ (ইবনে হিব্বান, ১৭২৩, তিরমিজি, ৬১৪)
 
মিথ্যা বলা নিষিদ্ধ : মিথ্যা বলা মহাপাপ। আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.) মিথ্যা বলা মোটেও পছন্দ করেন না। তিনি গোটা জীবনে কখনো মিথ্যা বলেননি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রেখে শুধু পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি, ৬০৫৭)

গিবত ও পরনিন্দা না করা : পরনিন্দা ও অপরের দোষচর্চা নিকৃষ্টতম অভ্যাস। রোজা রেখে অন্যের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ানোও অনুচিত। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা একে অন্যের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করো না এবং পরস্পর গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণাই করে থাকো। 

তাড়াহুড়ো করে কোরআন খতম না করা : শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়লে কোরআনের হক আদায় হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) তারতীলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তিনি বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মত না।’ (বুখারি, ৭৫২৭)।
 
অহেতুক কথাবার্তা না বলা : রমজানে রোজা রেখে অশালীন কথা বলা, গালি দেওয়া নিষেধ। তাই রোজা রেখে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে, তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা ও হৈচৈ না করে।’ (বুখারি, ১৯০৪)
 
অপচয় ও অপব্যয় না করা : রমজানে একদম ব্যয়কুণ্ঠতা অবলম্বন করা যেমন উচিত নয়, তেমনি অপব্যয় করাও উচিত নয়। রমজানে ব্যয় ও খাবারেও সংযম পালন করা জরুরি। বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই), যারা অপব্যয়ও করে না, আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এ দুইয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা ফোরকান, ৬৭)
 
রোজা রেখে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়া : কিছু মানুষ এমন রয়েছেন, রোজা রাখেন, তবে নামাজের ব্যাপারে উদাসীন। অথচ নামাজ ফরজ। নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া জরুরি। সুতরাং রমজান মাসে নামাজ না পড়া রমজানের মহিমা ক্ষুণ্ন করে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া জরুরি।

 

লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

স্বপ্নে বানর দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে বানর দেখলে কী হয়?
বানরের ছবি। সংগৃহীত

স্বপ্নে প্রাণী দেখা মানুষের মানসিক অবস্থা, ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি ও নৈতিক অবস্থার ইঙ্গিত হতে পারে। ইসলামি মনীষীগণ স্বপ্নে দেখা বিভিন্ন প্রাণীর বিশেষ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এর মধ্যে বানর এমন এক প্রাণী, যার স্বপ্নে আগমন অনেক অর্থ বহন করে। ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.) ও অন্যান্য তাফসীরবিদের মতে, বানরের প্রতীকী মানে রয়েছে নৈতিক অবক্ষয়, প্রতারণা এবং শত্রুতা।

যদি স্বপ্নে দেখেন যে আপনি বানরের সাথে যুদ্ধ করছেন এবং আপনি জয়ী হয়েছেন, তবে এর অর্থ হলো আপনি অসুস্থ হবেন, তবে শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু যদি বানর জয়ী হয়, তবে বুঝতে হবে রোগমুক্তি বিলম্বিত হবে। স্বপ্নে যদি কেউ আপনাকে বানর উপহার দেয়, তবে এটি শত্রুর বিরুদ্ধে আপনার বিজয়ের পূর্বাভাস। বানরের মাংস খাওয়া কঠিন পেরেশানি বা অসুস্থতায় পতিত হওয়ার লক্ষণ।

অন্যদিকে, স্বপ্নে নিজেকে বানর হিসেবে রূপান্তরিত হতে দেখলে, চারদিক থেকে আপনার উপকার লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। বানরকে বিয়ে করতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা নির্লজ্জ কোনো কাজে লিপ্ত হতে পারে। স্বপ্নে বানরের কামড় দেখলে, আপনার ও অন্যের মধ্যে ঝগড়া বা বিবাদের আশঙ্কা থাকে।

কারও মতে, বানর কবিরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিদেরও প্রতিনিধিত্ব করে। যদি স্বপ্নে কেউ দেখে যে বানর কোনো ব্যক্তির বিছানায় প্রবেশ করেছে, তবে এর অর্থ হলো সেই ব্যক্তি ইহুদি বা নাস্তিক হয়ে তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে।

 

বি.দ্র. এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

কৃতজ্ঞতা মানবতার শ্রেষ্ঠ উপহার

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
কৃতজ্ঞতা মানবতার শ্রেষ্ঠ উপহার
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

কেউ যখন আমাদের উপকার করেন, তখন তাকে কৃতজ্ঞতা জানানো আমাদের জন্য একটি মানবিক উৎকৃষ্ট গুণ। কারণ, মানুষের সহযোগিতা, সাহায্য বা পরামর্শ পেতে গেলে সাধারণত তাকে কিছু কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হয়। এমনকি একবার সাহায্য পাওয়ার পর অনেক সময় দ্বিতীয়বার সাহায্য করা হয় না। কারণ মানুষ তার কষ্টের কথা ভাবতে থাকে। তবে যদি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, তা হলে সেই ব্যক্তি পরবর্তী সময়ে আবারও আমাদের সাহায্য করতে উৎসাহী হবে।

কৃতজ্ঞতার কথা বলতে গেলে, কেবল তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই যথেষ্ট নয়; বরং তাকে যথাযথভাবে কৃতজ্ঞতা জানানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো আমরা কৃতজ্ঞতা প্রত্যাশা না করলেও, আমাদের জন্য অপরজনের সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট শিক্ষা দিয়েছেন।

আরো পড়ুন : বাজারে যে দোয়া পড়লে ১০ লাখ নেকি পাওয়া যায়

অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো এবং এর সুন্দর প্রকাশের পদ্ধতি শেখানোর জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের পথ দেখিয়েছেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা জানায় না, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা জানায় না।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮৯) এটি স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, আমাদের আশপাশের মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো, আল্লাহর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার একটি অংশ।

এ ছাড়া, রাসুলুল্লাহ (সা.) কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুন্দর পদ্ধতিও আমাদের শিখিয়েছেন। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, ‘যদি কেউ আপনার উপকার করে এবং আপনি তাকে ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন) বলেন, তবে আপনি তাকে পূর্ণাঙ্গরূপে তার প্রশংসা করেছেন।’ এটি আমাদের শেখায় যে, শুধু মুখে কৃতজ্ঞতা জানানোই যথেষ্ট নয়; বরং সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক বিশেষ সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ উপায় রয়েছে, যা আল্লাহর কাছে আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে সাহায্য করে।

তা হলো, আমাদের উচিত— প্রতিটি উপকারের জন্য মানুষকে সঠিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানানো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিখানো এই দোয়া 'জাযাকাল্লাহু খাইরান' মুখস্থ করে, তা বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করা। এমনকি আমাদের ছোটো ছোটো কাজের জন্যও কৃতজ্ঞতা জানানো আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে আরও উজ্জ্বল করবে। ইনশা আল্লাহ।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

স্বপ্নে বিড়াল দেখা বন্ধু নাকি বিপদের সংকেত?

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
স্বপ্নে বিড়াল দেখা বন্ধু নাকি বিপদের সংকেত?
বিড়ালের ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্নে বিড়াল দেখা একটি বহুল জিজ্ঞাসিত বিষয়। এর ব্যাখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। কারও মতে, বিড়াল বিশ্বস্ত সেবক বা পাহারাদারের প্রতীক। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এটি পরিবারের অভ্যন্তরে চুরির প্রবণতা নির্দেশ করে। এমনকি, মাদি বিড়ালকে অসৎ ও ধোঁকাবাজ নারীর ইঙ্গিত হিসেবেও দেখা হয়।

যদি স্বপ্নে কোনো বিড়ালকে আপনার আশপাশে ঘুরতে বা পাহারা দিতে দেখেন, অথবা কোনো জিনিস আকস্মিকভাবে নিয়ে যেতে দেখেন, তবে এর অর্থ হতে পারে প্রথমে আপনার ক্ষতি হবে, এর পর উপকার লাভ করবেন। যদি বিড়াল আপনাকে কামড়ায় বা আঁচড় দেয়, তবে সম্ভবত আপনার কোনো কর্মচারী আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করবে অথবা আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

বিখ্যাত স্বপ্ন ব্যাখ্যাকার ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.) স্বপ্নে বিড়াল দেখাকে রোগের বছর হিসেবে ব্যাখ্যা করতেন। যদি স্বপ্নে কোনো বুনো বিড়াল দেখেন, তবে তা কঠিন রোগের পূর্বাভাস হতে পারে। যদি বিড়ালটি পোষা ও শান্ত প্রকৃতির হয়, তবে তা সুখ ও শান্তির বছর নির্দেশ করে। বুনো মাদি বিড়াল দেখা কষ্টের বছর আসার লক্ষণ। কারণ এ ধরনের বিড়াল দুর্যোগপূর্ণ সময়ের ইঙ্গিত দেয়।

একটি বাস্তব ঘটনার মাধ্যমে এই ব্যাখ্যার গভীরতা উপলব্ধি করা যেতে পারে। জনৈক মহিলা ইমাম ইবনে সীরীনের কাছে এসে বললেন যে তিনি স্বপ্নে দেখেছেন একটি বিড়াল তার স্বামীর পেটে মুখ ঢুকিয়ে কিছু যেন বের করে খাচ্ছে। ইমাম ইবনে সীরীন এর ব্যাখ্যায় বললেন, যদি স্বপ্ন সত্য হয়, তবে বুঝতে হবে আপনার স্বামীর দোকানে কোনো হাবশী চোর প্রবেশ করবে এবং সে তিন শত ষোলো দিরহাম চুরি করবে। আশ্চর্যজনকভাবে, বাস্তবে তেমনটিই ঘটেছিল।

মহিলার বাড়ির পাশে বসবাসকারী এক হাবশীকে চুরির অভিযোগে ধরে আনা হয় এবং সে ইমাম ইবনে সীরীনের কাছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রেরিত হয়।আগন্তুক ব্যক্তি ইমাম ইবনে সীরীনকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি কীভাবে এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলেন। জবাবে ইমাম ইবনে সীরীন বলেন, স্বপ্নে বিড়াল হলো চোর, পেট হলো সম্পদ এবং বিড়ালের আহার করা হলো চুরি করা। তিনি আরবি অক্ষরের সংখ্যাগত মান ব্যবহার করে চুরি যাওয়া অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করেছিলেন। আরবিতে ‘আল-কাত্তু’ অর্থাৎ বিড়াল শব্দটি ছয়টি অক্ষর দিয়ে গঠিত, যার সংখ্যাগত মান ৬০+১০+৩০+১+৪০+১০০ = ৩১৬ দিরহাম।

বি.দ্র. এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

এতিম প্রতিপালন মানবতার এক মহান দায়িত্ব

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
এতিম প্রতিপালন মানবতার এক মহান দায়িত্ব
এতিম অসহায় শিশুর ছবি। সংগৃহীত
একটি সভ্যসমাজের অন্যতম পরিচয় হলো, সেখানে নিরাশ্রয়, হতভাগ্য, এমনকি বাবা হারানো শিশুদের প্রতি যত্নশীল মনোভাব। যে সমাজে এতিমদের প্রতি যথাযথ মনোযোগ ও সহানুভূতি নেই, সে সমাজ কখনোই উন্নত ও মানবিক হতে পারে না। যখন এমন সমাজে এতিমরা অবহেলা ও অযত্নে বেড়ে ওঠে, তখন তাদের জীবনে এক ধরনের হতাশা, অবক্ষয় এবং বিপথগামিতা প্রবাহিত হয়, যা শুধু তাদের ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, পুরো সমাজের জন্যও বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিণত বয়সে তারা হয়ে ওঠে বেপরোয়া, আইন-শৃঙ্খলার প্রতি অশ্রদ্ধাশীল এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি অবিশ্বাসী। এমনকি তাদের মধ্যে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, শান্তি এবং মানবিকতার মর্মবাণীও হারিয়ে যায়।
 
ইসলামে এতিমদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা হয়েছে। প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেও একজন এতিম ছিলেন এবং এ জন্যই তিনি এতিমদের প্রতি এক বিশেষ দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সমাজকে উৎসাহিত করেছেন যে, তারা যেন এতিমদের সঠিকভাবে যত্ন নেয় এবং তাদের প্রতি সদয় থাকে। তিনি সুসংবাদ দিয়েছেন, ‘যারা এতিমদের সঠিকভাবে পালন করবে, তাদের জন্য জান্নাতে বিশেষ উচ্চস্থান থাকবে— যেখানে সাধারণ মুমিনরা পৌঁছাতে পারবেন না।’
 
একটি হাদিসে, সাহল ইবনে সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি ও এতিমের তত্ত্বাবধানকারী জান্নাতে একসাথে থাকব।’ এ কথা বলার সময় তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল মিলিয়ে উভয়ের মাঝে কিছুটা ফাঁক রেখে ইশারা করেছিলেন, যা প্রমাণ করে এতিমদের প্রতি যত্ন নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯৯৮)
 
এতিমদের প্রতিপালন শুধুমাত্র তাদের জীবন রক্ষা করার জন্য নয়, বরং সমাজের শান্তি, সুস্থতা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের সমাজে বর্তমানে অনেক পথশিশু ও টোকাইরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, যা মূলত তাদের প্রতি অবহেলার ফল। এই এতিম শিশুদের যেহেতু পর্যাপ্ত যত্ন ও তত্ত্বাবধানের অভাব, তারা পরবর্তী সময়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে সমাজের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
 
তবে, যদি আমরা আমাদের আশপাশে থাকা এতিম শিশুদের খুঁজে বের করে তাদের সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করি এবং তাদের জীবনের সঠিক পথ প্রদর্শন করি, তবে সমাজে এক নতুন প্রভাতের সূচনা হবে। সমাজের প্রতিটি সদস্যের অংশগ্রহণ প্রয়োজন— এটি এককভাবে সম্ভব নয়, তবে একসাথে আমরা অনেক কিছু পরিবর্তন আনতে পারব। ইনশা আল্লাহ।
 
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক 
 

স্বপ্নে সাপ দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে সাপ দেখলে কী হয়?
বিষধর সাপের ছবি। সংগৃহীত

স্বপ্নে সাপ দেখা অনেকেই ভয় ও উদ্বেগের সঙ্গে গ্রহণ করেন। তবে ইসলামি ব্যাখ্যায় এই স্বপ্ন বিভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে, যা সব সময় নেতিবাচক নয়। কখনো এটি শত্রুতার প্রতীক, আবার কখনো ধনসম্পদ, পারিবারিক সম্পর্ক কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। প্রখ্যাত স্বপ্ন ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘তাফসীরুল আহলাম’-এর আলোকে এর কিছু তাৎপর্য তুলে ধরা হলো:

শত্রুতা ও নিরাপত্তা: স্বপ্নে সাপ দেখলে সাধারণভাবে শত্রুর উপস্থিতি অনুভূত হতে পারে। যদি স্বপ্নে সাপ দংশন করে, তবে বুঝতে হবে যে শত্রুর দ্বারা কষ্ট বা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিপরীতে, স্বপ্নে সাপকে আঘাত বা হত্যা করতে দেখা শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ের ইঙ্গিত দেয়। সাপের মাংস ভক্ষণ করা শত্রুর সম্পদ লাভের সম্ভাবনা বহন করে।

সাপের রঙের ভিন্নতা: স্বপ্নের সাপের রং তার তাৎপর্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাদা সাপকে ধূর্ত ও শক্তিশালী শত্রুর প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। তবে যদি কেউ স্বপ্নে সাদা সাপের মালিক হয়, তবে এর অর্থ হলো তার শত্রুরা তার প্রতি অনুগত হবে এবং সে বিপদ থেকে রক্ষা পাবে। কালো সাপ সাধারণত দুর্বল শত্রুর প্রতীক। কিন্তু স্বপ্নে বড় কালো সাপের মালিক হওয়া রাজত্ব বা নেতৃত্ব লাভের পূর্বাভাস হতে পারে।

পারিবারিক ও নৈতিক বার্তা: স্বপ্নে স্ত্রীরূপী মাদি সাপকে বিছানায় মারতে দেখলে স্ত্রী হারানোর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। গলায় সাপ পেঁচিয়ে ধরে তাকে তিন টুকরো করে ফেলা স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার প্রতীক হতে পারে। এ ছাড়া, স্বপ্ন যদি মূত্রনালি অথবা লজ্জাস্থান দিয়ে সাপ বের হতে দেখা হয়, তবে তা সন্তান অথবা লজ্জাস্থানের অপব্যবহারের ইঙ্গিত বহন করে।

ধনসম্পদ ও পরিবর্তনের ইঙ্গিত: স্বপ্নে জলজ সাপ, অর্থাৎ পানিতে অথবা পকেট-আস্তিনে ছোট সাপ দেখা ধনসম্পদের প্রতীক। সাপকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হতে দেখলে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে সাপ মারতে দেখা যুদ্ধ অথবা কোনো কঠিন পরিস্থিতির ওপর বিজয়ের সংকেত দেয়। অন্যদিকে, বাগানভর্তি সাপ দেখা ফসলের প্রাচুর্য ও সম্পদের বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করে।

সমাজ ও নেতৃত্বের প্রেক্ষাপট: স্বপ্নে সাপ ওপর থেকে নিচে নামতে দেখলে কোনো প্রভাবশালী নেতার মৃত্যুর পূর্বাভাস পাওয়া যেতে পারে। আবার, মাটি থেকে সাপের উত্থান স্থানীয়ভাবে কোনো প্রকার শাস্তির আগমন বার্তা দিতে পারে। যদি কেউ স্বপ্নে দেখে যে সে একটি বড় বিষাক্ত সাপকে হত্যা করেছে, তবে এটি তার শত্রুর পরাজয় এবং সমাজে সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভের ইঙ্গিত দেয়।

 

লেখক :  আলেম ও সাংবাদিক