
রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত বান্দার জন্য আল্লাহতায়ালার খাস রহমত। এ রহমত পেয়েও অসতর্কতাবশত বিভিন্ন মন্দ ও গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় মানুষ। যারা এ মাসেও তার গোনাহ মাফ করাতে সক্ষম হয় না, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের অভিসম্পাত করেছেন। (শুয়াবুল ঈমান, ১৬৬৮)
শয়তানের ধারাবাহিক প্ররোচনার প্রভাবে, অলসতা ও অসর্তকতার কারণে এ মাসের অনেককে বিভিন্ন মন্দ ও গুনাহের কাজে লিপ্ত হতে দেখা যায়, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বিভিন্ন মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার জোর তাগিদ দিয়েছেন।
সাহরি না খেয়ে রোজা রাখা উচিত নয় : অনেকে শেষ রাতে সাহরি খান না। কেউ কেউ আবার সন্ধ্যা রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নত পরিপন্থি। কারণ ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা সাহরি খায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো, সাহরি গ্রহণ। তোমরা কখনো সাহরি না খেয়ে রোজা রাখবে না।’ (মুসলিম, ২৬০৪)
বিলম্বে ইফতার করার অবকাশ নেই: বিলম্বে ইফতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এটাও বিধর্মীদের কালচার। সন্ধ্যার আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতার করতেন। আজানের পর বিলম্বে ইফতার করা তিনি পছন্দ করতেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ ইহুদি-খ্রিষ্টানরা তা বিলম্বে করে।’ (আবু দাউদ, ২৩৫৫)
হারাম খাওয়া হারাম : রমজানের সাহরি ও ইফতারে ব্যবহৃত যাবতীয় খরচ পবিত্র ও হালাল অর্থের মাধ্যমে উপার্জিত হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই গোশত (দেহ) জান্নাতে যাবে না, যা হারাম থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী।’ (ইবনে হিব্বান, ১৭২৩, তিরমিজি, ৬১৪)
মিথ্যা বলা নিষিদ্ধ : মিথ্যা বলা মহাপাপ। আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.) মিথ্যা বলা মোটেও পছন্দ করেন না। তিনি গোটা জীবনে কখনো মিথ্যা বলেননি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রেখে শুধু পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি, ৬০৫৭)
গিবত ও পরনিন্দা না করা : পরনিন্দা ও অপরের দোষচর্চা নিকৃষ্টতম অভ্যাস। রোজা রেখে অন্যের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ানোও অনুচিত। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা একে অন্যের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করো না এবং পরস্পর গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণাই করে থাকো।
তাড়াহুড়ো করে কোরআন খতম না করা : শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়লে কোরআনের হক আদায় হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) তারতীলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তিনি বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মত না।’ (বুখারি, ৭৫২৭)।
অহেতুক কথাবার্তা না বলা : রমজানে রোজা রেখে অশালীন কথা বলা, গালি দেওয়া নিষেধ। তাই রোজা রেখে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে, তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা ও হৈচৈ না করে।’ (বুখারি, ১৯০৪)
অপচয় ও অপব্যয় না করা : রমজানে একদম ব্যয়কুণ্ঠতা অবলম্বন করা যেমন উচিত নয়, তেমনি অপব্যয় করাও উচিত নয়। রমজানে ব্যয় ও খাবারেও সংযম পালন করা জরুরি। বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই), যারা অপব্যয়ও করে না, আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এ দুইয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা ফোরকান, ৬৭)
রোজা রেখে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়া : কিছু মানুষ এমন রয়েছেন, রোজা রাখেন, তবে নামাজের ব্যাপারে উদাসীন। অথচ নামাজ ফরজ। নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া জরুরি। সুতরাং রমজান মাসে নামাজ না পড়া রমজানের মহিমা ক্ষুণ্ন করে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া জরুরি।
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক