ঢাকা ১১ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

ইবাদতে কাটুক রমজানের শেষ দশ দিন

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১০:০০ পিএম
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ১২:২৯ পিএম
ইবাদতে কাটুক রমজানের শেষ দশ দিন
নামাজের জামাতের ছবি

দেখতে দেখতে পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দুই দশক বিদায় নিচ্ছে। আগমন ঘটছে শেষ দশকের। মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত ফজিলতপূর্ণ এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে শেষ দশকের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অন্য দিনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।  ইবাদতের বসন্তকাল মাহে রমজানের শ্রেষ্ঠাংশ হচ্ছে তার শেষ দশক। যারা রমজানের প্রথম দুই দশক কাজে লাগিয়েছেন, তারা বেশ কল্যাণলাভে ধন্য হয়েছেন। আর যারা কাজে লাগাতে পারেননি, তাদের জন্য শেষ দশকে পুষিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।


মাহে রমজানের শেষ দশকের কোনো এক রাতে লাইলাতুল কদর আছে, যা হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। আর সে রাতেই পবিত্র কোরআন মাজিদ অবতীর্ণ হয়েছে। এ জন্য এই শেষ দশকের আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইবাদতে নিমগ্নতার মাধ্যমে এ রাত অন্বেষণ করা চাই। এ সময়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) ভালোভাবে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। স্ত্রীদের সঙ্গ ত্যাগ করে মসজিদে ইতেকাফে থাকতেন। তাই এই সময়ে আমাদেরও মসজিদে ইতেকাফে সার্বক্ষণিক ইবাদতে কাটানো উচিত। কিন্তু কর্মব্যস্ততার কারণে আমাদের অনেকের পক্ষে ইতেকাফে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। এ সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করার পাশাপাশি সালাতুত তারাবি ও সালাতুত তাহাজ্জুদ যথাসাধ্য আদায়ের চেষ্টা করব। কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত, জিকির-আজকারে ব্যস্ত থাকব।


রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবারের সবাইকেও জাগিয়ে দিতেন। এ প্রসঙ্গে উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন- "রমজান মাসের শেষ দশক শুরু হলেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কোমর শক্ত করে বাঁধতেন। এই সময়ের রাতগুলোতে জাগ্রত থাকতেন এবং তাঁর গৃহবাসী লোকদেরকে সজাগ করতেন।" (বুখারি ও মুসলিম)। এই হাদিস হতে জানা যায় যে, রমজান মাসের শেষ দশক এলেই আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.) চূড়ান্ত মাত্রার ইবাদতের জন্য কোমর বাঁধতেন অর্থাৎ পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। আর তিনি একাই ইবাদত-বন্দেগি করতেন এমনটি নয়, বরং নিজের গৃহবাসী আপনজনদেরকেও রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করার জন্য প্রস্তুত করতেন। 


জামে তিরমিজিতে উদ্ধৃত হাদিসে এ ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের শেষ দশকে তাঁর ঘরের লোকদেরকে ইবাদত-বন্দেগি ও নামাজ আদায়ের জন্য জাগিয়ে দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.)-এর অপর একটি বর্ণনায় আরও বলিষ্ঠ ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে তাঁর ঘরের লোকদের মধ্যে রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে এমন কাউকেই ঘুমাতে দিতেন না। বরং প্রত্যেককেই জাগ্রত থেকে ইবাদত করার জন্য প্রস্তুত করতেন। (উমদাতুল কারি, শরহে বুখারি)। 


রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও তাঁর ঘরের লোকদেরকে রমজানের শেষ দশকের সব কয়টি রাত্রিই আল্লাহপাকের ইবাদতে মশগুল হতেন ও মশগুল রাখতেন। এই রাত্রিটির বরকত ও ফজিলত যেন কোনো প্রকারে হারিয়ে না যায় এবং এটা হতে যেন বঞ্চিত থাকতে না হয়, এই উদ্দেশ্যেই তাঁর এই ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্যই বাঞ্ছনীয়। এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করার কোনোই সুযোগ নেই। তাই তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে সাহাবায়ে কিরাম ও বুজুর্গানে দ্বীন এ দশকে ইবাদতের ব্যাপারে সর্বোচ্চ যত্নবান থাকতেন।

দুঃখজনক হলেও সত্য, শেষ দশকে আমাদের অনেকেরই একটা বড় সময় কাটে শপিংমলে ঈদের কেনাকাটায়। অথচ চাইলে এই কাজগুলো আগেই সেরে রাখা যেত। রমজানের শেষ দশ দিনে সালাতুত তাহাজ্জুদ, কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত ও জিকির-আজকারসহ অন্যান্য আমলের মাধ্যমে কাটানো চাই। এ ছাড়া রমজানের শেষ দশ দিন ধনীদের জন্য দান-সদকা, অসহায়-দরিদ্রদের সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতামূলক কাজে অংশ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ইবাদতের মাধ্যমে রমজানের বাকি সময়টুকু কাটানোর তাওফিক দান করুন।

 

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

কম কথা বলা উন্নত চরিত্রের এক অপরিহার্য গুণ

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
কম কথা বলা উন্নত চরিত্রের এক অপরিহার্য গুণ
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

উন্নত চরিত্রের মাপকাঠি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মতামত থাকলেও, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং শ্রেষ্ঠ মাপকাঠি হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষ্য। তাঁর প্রতিটি কথাই সত্য এবং সঠিক। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নীতি ও শিক্ষা মানবজীবনে সর্বোত্তম পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার চরিত্র ও ব্যবহার ভালো, সে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। কেয়ামতের দিন সে আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪৭৪)।

তবে তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অনর্থক বকবক করে, উপহাস করে এবং অহংকার করে, তারা কেয়ামতের দিন আমার থেকে সবচেয়ে দূরে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১১৫)এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনটি নিন্দনীয় চরিত্রের কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলো সচ্চরিত্রবান মানুষের মধ্যে কখনো দেখা যায় না। এর মধ্যে প্রথমটি হলো— অনর্থক কথা বলা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই শিক্ষা আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অধিক কথা বলা নানা ধরনের ভুলের জন্ম দেয়। ভাষা মানুষের অন্তরের প্রতিফলন এবং তাই অপ্রয়োজনীয় বা অনর্থক কথা চরিত্রের উন্নতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।

আরো পড়ুন: রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান


বেশি কথা বলার ফলে ভুলের সুযোগও বেড়ে যায়। এই কথাটি মহা সাহাবি হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেছেন, ‘যারা বেশি কথা বলে, তাদের স্খলনও বেশি হয়।’ একজন বিখ্যাত মনীষী ফুয়াইল ইবনে ইয়ায (রহ.) বলেন, ‘মুমিনরা কথা কম বলে এবং আমল বেশি করে। কিন্তু মুনাফিকরা কথা বেশি বলে আর আমল কম করে।’ এই বাণীটি থেকে আমরা শিখি, যে সত্যিকারের মুমিনের জীবনে কথার তুলনায় কাজের গুরুত্ব অনেক বেশি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১১০)

এই হাদিসটি আমাদের শেখায়, যে ভালো কথা বলা অথবা প্রয়োজনের সময় চুপ থাকা— এ দুটি উপায়েই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার গুরুত্ব।
এখন আমাদের জীবনে এই শিক্ষা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। কম কথা বলা, সঠিক সময়ে চুপ থাকা এবং ভালো কথা বলা— এই গুণগুলো আমাদের চরিত্রকে আরও উন্নত এবং আল্লাহর কাছে প্রিয় করে তোলে।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক 

 

স্বপ্নে বানর দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে বানর দেখলে কী হয়?
বানরের ছবি। সংগৃহীত

স্বপ্নে প্রাণী দেখা মানুষের মানসিক অবস্থা, ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি ও নৈতিক অবস্থার ইঙ্গিত হতে পারে। ইসলামি মনীষীগণ স্বপ্নে দেখা বিভিন্ন প্রাণীর বিশেষ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এর মধ্যে বানর এমন এক প্রাণী, যার স্বপ্নে আগমন অনেক অর্থ বহন করে। ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.) ও অন্যান্য তাফসীরবিদের মতে, বানরের প্রতীকী মানে রয়েছে নৈতিক অবক্ষয়, প্রতারণা এবং শত্রুতা।

যদি স্বপ্নে দেখেন যে আপনি বানরের সাথে যুদ্ধ করছেন এবং আপনি জয়ী হয়েছেন, তবে এর অর্থ হলো আপনি অসুস্থ হবেন, তবে শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু যদি বানর জয়ী হয়, তবে বুঝতে হবে রোগমুক্তি বিলম্বিত হবে। স্বপ্নে যদি কেউ আপনাকে বানর উপহার দেয়, তবে এটি শত্রুর বিরুদ্ধে আপনার বিজয়ের পূর্বাভাস। বানরের মাংস খাওয়া কঠিন পেরেশানি বা অসুস্থতায় পতিত হওয়ার লক্ষণ।

অন্যদিকে, স্বপ্নে নিজেকে বানর হিসেবে রূপান্তরিত হতে দেখলে, চারদিক থেকে আপনার উপকার লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। বানরকে বিয়ে করতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা নির্লজ্জ কোনো কাজে লিপ্ত হতে পারে। স্বপ্নে বানরের কামড় দেখলে, আপনার ও অন্যের মধ্যে ঝগড়া বা বিবাদের আশঙ্কা থাকে।

কারও মতে, বানর কবিরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিদেরও প্রতিনিধিত্ব করে। যদি স্বপ্নে কেউ দেখে যে বানর কোনো ব্যক্তির বিছানায় প্রবেশ করেছে, তবে এর অর্থ হলো সেই ব্যক্তি ইহুদি বা নাস্তিক হয়ে তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে।

 

বি.দ্র. এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

কৃতজ্ঞতা মানবতার শ্রেষ্ঠ উপহার

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
কৃতজ্ঞতা মানবতার শ্রেষ্ঠ উপহার
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

কেউ যখন আমাদের উপকার করেন, তখন তাকে কৃতজ্ঞতা জানানো আমাদের জন্য একটি মানবিক উৎকৃষ্ট গুণ। কারণ, মানুষের সহযোগিতা, সাহায্য বা পরামর্শ পেতে গেলে সাধারণত তাকে কিছু কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হয়। এমনকি একবার সাহায্য পাওয়ার পর অনেক সময় দ্বিতীয়বার সাহায্য করা হয় না। কারণ মানুষ তার কষ্টের কথা ভাবতে থাকে। তবে যদি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, তা হলে সেই ব্যক্তি পরবর্তী সময়ে আবারও আমাদের সাহায্য করতে উৎসাহী হবে।

কৃতজ্ঞতার কথা বলতে গেলে, কেবল তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই যথেষ্ট নয়; বরং তাকে যথাযথভাবে কৃতজ্ঞতা জানানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো আমরা কৃতজ্ঞতা প্রত্যাশা না করলেও, আমাদের জন্য অপরজনের সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট শিক্ষা দিয়েছেন।

আরো পড়ুন : বাজারে যে দোয়া পড়লে ১০ লাখ নেকি পাওয়া যায়

অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো এবং এর সুন্দর প্রকাশের পদ্ধতি শেখানোর জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের পথ দেখিয়েছেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা জানায় না, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা জানায় না।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮৯) এটি স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, আমাদের আশপাশের মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো, আল্লাহর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার একটি অংশ।

এ ছাড়া, রাসুলুল্লাহ (সা.) কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুন্দর পদ্ধতিও আমাদের শিখিয়েছেন। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, ‘যদি কেউ আপনার উপকার করে এবং আপনি তাকে ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন) বলেন, তবে আপনি তাকে পূর্ণাঙ্গরূপে তার প্রশংসা করেছেন।’ এটি আমাদের শেখায় যে, শুধু মুখে কৃতজ্ঞতা জানানোই যথেষ্ট নয়; বরং সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক বিশেষ সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ উপায় রয়েছে, যা আল্লাহর কাছে আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে সাহায্য করে।

তা হলো, আমাদের উচিত— প্রতিটি উপকারের জন্য মানুষকে সঠিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানানো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিখানো এই দোয়া 'জাযাকাল্লাহু খাইরান' মুখস্থ করে, তা বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করা। এমনকি আমাদের ছোটো ছোটো কাজের জন্যও কৃতজ্ঞতা জানানো আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে আরও উজ্জ্বল করবে। ইনশা আল্লাহ।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

স্বপ্নে বিড়াল দেখা বন্ধু নাকি বিপদের সংকেত?

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
স্বপ্নে বিড়াল দেখা বন্ধু নাকি বিপদের সংকেত?
বিড়ালের ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্নে বিড়াল দেখা একটি বহুল জিজ্ঞাসিত বিষয়। এর ব্যাখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। কারও মতে, বিড়াল বিশ্বস্ত সেবক বা পাহারাদারের প্রতীক। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এটি পরিবারের অভ্যন্তরে চুরির প্রবণতা নির্দেশ করে। এমনকি, মাদি বিড়ালকে অসৎ ও ধোঁকাবাজ নারীর ইঙ্গিত হিসেবেও দেখা হয়।

যদি স্বপ্নে কোনো বিড়ালকে আপনার আশপাশে ঘুরতে বা পাহারা দিতে দেখেন, অথবা কোনো জিনিস আকস্মিকভাবে নিয়ে যেতে দেখেন, তবে এর অর্থ হতে পারে প্রথমে আপনার ক্ষতি হবে, এর পর উপকার লাভ করবেন। যদি বিড়াল আপনাকে কামড়ায় বা আঁচড় দেয়, তবে সম্ভবত আপনার কোনো কর্মচারী আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করবে অথবা আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

বিখ্যাত স্বপ্ন ব্যাখ্যাকার ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.) স্বপ্নে বিড়াল দেখাকে রোগের বছর হিসেবে ব্যাখ্যা করতেন। যদি স্বপ্নে কোনো বুনো বিড়াল দেখেন, তবে তা কঠিন রোগের পূর্বাভাস হতে পারে। যদি বিড়ালটি পোষা ও শান্ত প্রকৃতির হয়, তবে তা সুখ ও শান্তির বছর নির্দেশ করে। বুনো মাদি বিড়াল দেখা কষ্টের বছর আসার লক্ষণ। কারণ এ ধরনের বিড়াল দুর্যোগপূর্ণ সময়ের ইঙ্গিত দেয়।

একটি বাস্তব ঘটনার মাধ্যমে এই ব্যাখ্যার গভীরতা উপলব্ধি করা যেতে পারে। জনৈক মহিলা ইমাম ইবনে সীরীনের কাছে এসে বললেন যে তিনি স্বপ্নে দেখেছেন একটি বিড়াল তার স্বামীর পেটে মুখ ঢুকিয়ে কিছু যেন বের করে খাচ্ছে। ইমাম ইবনে সীরীন এর ব্যাখ্যায় বললেন, যদি স্বপ্ন সত্য হয়, তবে বুঝতে হবে আপনার স্বামীর দোকানে কোনো হাবশী চোর প্রবেশ করবে এবং সে তিন শত ষোলো দিরহাম চুরি করবে। আশ্চর্যজনকভাবে, বাস্তবে তেমনটিই ঘটেছিল।

মহিলার বাড়ির পাশে বসবাসকারী এক হাবশীকে চুরির অভিযোগে ধরে আনা হয় এবং সে ইমাম ইবনে সীরীনের কাছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রেরিত হয়।আগন্তুক ব্যক্তি ইমাম ইবনে সীরীনকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি কীভাবে এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলেন। জবাবে ইমাম ইবনে সীরীন বলেন, স্বপ্নে বিড়াল হলো চোর, পেট হলো সম্পদ এবং বিড়ালের আহার করা হলো চুরি করা। তিনি আরবি অক্ষরের সংখ্যাগত মান ব্যবহার করে চুরি যাওয়া অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করেছিলেন। আরবিতে ‘আল-কাত্তু’ অর্থাৎ বিড়াল শব্দটি ছয়টি অক্ষর দিয়ে গঠিত, যার সংখ্যাগত মান ৬০+১০+৩০+১+৪০+১০০ = ৩১৬ দিরহাম।

বি.দ্র. এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

এতিম প্রতিপালন মানবতার এক মহান দায়িত্ব

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
এতিম প্রতিপালন মানবতার এক মহান দায়িত্ব
এতিম অসহায় শিশুর ছবি। সংগৃহীত
একটি সভ্যসমাজের অন্যতম পরিচয় হলো, সেখানে নিরাশ্রয়, হতভাগ্য, এমনকি বাবা হারানো শিশুদের প্রতি যত্নশীল মনোভাব। যে সমাজে এতিমদের প্রতি যথাযথ মনোযোগ ও সহানুভূতি নেই, সে সমাজ কখনোই উন্নত ও মানবিক হতে পারে না। যখন এমন সমাজে এতিমরা অবহেলা ও অযত্নে বেড়ে ওঠে, তখন তাদের জীবনে এক ধরনের হতাশা, অবক্ষয় এবং বিপথগামিতা প্রবাহিত হয়, যা শুধু তাদের ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, পুরো সমাজের জন্যও বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিণত বয়সে তারা হয়ে ওঠে বেপরোয়া, আইন-শৃঙ্খলার প্রতি অশ্রদ্ধাশীল এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি অবিশ্বাসী। এমনকি তাদের মধ্যে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, শান্তি এবং মানবিকতার মর্মবাণীও হারিয়ে যায়।
 
ইসলামে এতিমদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা হয়েছে। প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেও একজন এতিম ছিলেন এবং এ জন্যই তিনি এতিমদের প্রতি এক বিশেষ দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সমাজকে উৎসাহিত করেছেন যে, তারা যেন এতিমদের সঠিকভাবে যত্ন নেয় এবং তাদের প্রতি সদয় থাকে। তিনি সুসংবাদ দিয়েছেন, ‘যারা এতিমদের সঠিকভাবে পালন করবে, তাদের জন্য জান্নাতে বিশেষ উচ্চস্থান থাকবে— যেখানে সাধারণ মুমিনরা পৌঁছাতে পারবেন না।’
 
একটি হাদিসে, সাহল ইবনে সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি ও এতিমের তত্ত্বাবধানকারী জান্নাতে একসাথে থাকব।’ এ কথা বলার সময় তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল মিলিয়ে উভয়ের মাঝে কিছুটা ফাঁক রেখে ইশারা করেছিলেন, যা প্রমাণ করে এতিমদের প্রতি যত্ন নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯৯৮)
 
এতিমদের প্রতিপালন শুধুমাত্র তাদের জীবন রক্ষা করার জন্য নয়, বরং সমাজের শান্তি, সুস্থতা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের সমাজে বর্তমানে অনেক পথশিশু ও টোকাইরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, যা মূলত তাদের প্রতি অবহেলার ফল। এই এতিম শিশুদের যেহেতু পর্যাপ্ত যত্ন ও তত্ত্বাবধানের অভাব, তারা পরবর্তী সময়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে সমাজের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
 
তবে, যদি আমরা আমাদের আশপাশে থাকা এতিম শিশুদের খুঁজে বের করে তাদের সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করি এবং তাদের জীবনের সঠিক পথ প্রদর্শন করি, তবে সমাজে এক নতুন প্রভাতের সূচনা হবে। সমাজের প্রতিটি সদস্যের অংশগ্রহণ প্রয়োজন— এটি এককভাবে সম্ভব নয়, তবে একসাথে আমরা অনেক কিছু পরিবর্তন আনতে পারব। ইনশা আল্লাহ।
 
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক