
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নিয়ে এখন পর্যন্ত ভয়ের কিছু দেখছে না সরকার। এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। অনেক আগেই এই ভাইরাস দেশে শনাক্ত হয়েছে। প্রতিবছরই কমবেশি শনাক্ত হয়। এতে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু দেখছে না রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি তেমন ক্ষতিকারক নয়। করোনার তুলনায় মোটেও শক্তিশালী নয়। এর লক্ষণ সাধারণ নিউমোনিয়ার মতো; জ্বর-সর্দি-কাশি হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়। মৃত্যুর আশঙ্কা কম। মৃত্যুহার নেই বললেই চলে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
সম্প্রতি চীন-জাপানে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যে কারণে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও দুই শিশুর শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাই বিষয়টি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগও নজরদারিতে রেখেছে। তবে ভারতের শনাক্ত হওয়া এইচএমপি ভাইরাসের সঙ্গে চীনে মিউটেশন হওয়া এইচএমপি ভাইরাসের কোনো যোগ নেই।
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে আট মাস ও তিন মাস বয়সী দুই শিশুর শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘শীতকালে বিভিন্ন দেশে যেসব ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ে, এইচএমপিভি তাদের মধ্যে অন্যতম।’
কোভিড-১৯ মানুষের মনে অন্য রকম ভয় সৃষ্টি করেছে। তার পর থেকে কোনো দেশে কোনো ভাইরাস সংক্রমণের কথা শুনলেই মানুষ আঁতকে ওঠেন। সম্প্রতি চীন-জাপানে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবের খবরে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক-উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এতদিন উদ্বেগ কম থাকলেও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে দুই শিশুর শনাক্তের খবরে বাংলাদেশে অনেকের মনে কিছুটা ভয় দেখা দিয়েছে। তবে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স ও প্যারা ক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন ও বঙ্গবন্ধু সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘এই ভাইরাসটি তেমন ক্ষতিকর না। এটা শুধু শিশু এবং বয়স্কদের সংক্রমিত করে। মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা করে থাকে। প্রদাহ হয় বা নিউমোনিয়া হয়। এতে মৃত্যুর শঙ্কা যে খুব একটা বেশি, তা নয়। মৃত্যুহার নেই বললেই চলে। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই।’
আইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘বাংলাদেশে এই ভাইরাসটি আছে। দেশে এটা আগেও পেয়েছি। এখনো আছে নিশ্চয়ই। প্রতিবছরই পাওয়া যায়। ২০১৭ সাল থেকে কিছু পাওয়া যাচ্ছে। এক-দুই বছর পাওয়া যায়নি। চীন-জাপানে এটা আগেও ছিল। আতঙ্কের কিছু নেই। তবে সাবধানে থাকতে হবে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমরা নজর রাখছি। আমাদের যারা এই বিষয়টি মনিটরিং করেন, তাদের অ্যালার্ট করে রেখেছি। এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু দেখছি না। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুযায়ী আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।’
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। বিমান যোগাযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি ফ্লাইট আসা-যাওয়া করে। সে ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে কোনো বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের আলাদা করে স্ক্রিনিং করার সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। আমাদের কতগুলো এসওপি আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেটা মেনে চলে, সেই এসওপি অনুযায়ী এখনো ওই লেভেলে যায়নি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি আছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ সাধারণ নিউমোনিয়ার মতো। সর্দি-কাশি-জ্বর। আমরা মনে করছি যে মিউটিশন হয়েছে সেটা একটু ক্রুশিয়াল, এটার কারণে চীনে সিভিয়ার আকারে দেখা দিয়েছে। আমরা এখনো নিশ্চিত না যে আমাদের এখানে চীনের মিউটেশনটা এসেছে বা আসছে। আমরা নজরদারি করছি। কিন্তু যেহেতু জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি, সেই জন্য আমরা রেসপন্স শুরু করিনি।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সে দেশের চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এই ভাইরাসের সংক্রমণ আপনা-আপনিই পাঁচ থেকে ছয় দিনে ঠিক হয়ে যায়। সাধারণ সর্দি-কাশি হলে বা ঠাণ্ডা লাগলে, সে-ও তো কোনো না কোনো ভাইরাসের কারণেই হয়। কিন্তু তখন খুব বাড়াবাড়ি না হলে আমরা রোগটি কোন ভাইরাসের কারণে হয়েছে, তা জানতে পরীক্ষা করাতে ছুটি না। প্রতিবছর শীত পড়লে এ দেশে ভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ যে হারে বৃদ্ধি পায়, এ বছরও কিন্তু সেই হারেই বেড়েছে। খুব অস্বাভাবিক কিছু এখনো চোখে পড়েনি। চীনে এই ভাইরাস নিয়ে বেশ হইচই শুরু হয়েছে বটে, কোভিডের পর আমাদের দেশেও এখন সতর্কতা বেড়েছে। তবে এখনো এই ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনো কারণ দেখছি না।’