
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক হয়ে উঠেছে জনদুর্ভোগের প্রতীক। মুগদা বিশ্বরোড এলাকার অতীশ দীপঙ্কর সড়ক থেকে মান্ডা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের মেরামত ও ড্রেনের সংস্কারকাজ শেষ হচ্ছে না। গত বছরের শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাস্তা সংস্কার ও স্যুয়ারেজ লাইনের কাজ শুরু হলেও সরকার পরিবর্তনের পর কার্যত কাজ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা। দেড় বছর ধরে সড়ক খুঁড়ে রাখায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন লাখো মানুষ চলাচল করেন। মুগদা হাসপাতাল, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকার যোগাযোগের রুট হওয়ায় সড়কটির গুরুত্ব অত্যধিক। সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এ বিষয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। তাই দ্রুত কাজ শেষ করে সড়কটিকে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করে তোলার দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। একই সঙ্গে প্রকল্পের অগ্রগতির স্বচ্ছতা ও সময়সীমা নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিন দেখা যায়, সড়কজুড়ে খোঁড়া গর্ত, ভাঙা ইট-পাথর, নির্মাণসামগ্রী আর ধুলার আস্তরণে পথচারীদের হাঁটা দায় হয়ে উঠেছে। বর্ষায় কাদায় পিচ্ছিল হয়ে যায় সড়ক, আবার রোদে ধুলায় চোখে-মুখে অসহ্য যন্ত্রণা। রিকশা, অটোরিকশা, ঠেলাগাড়ি চলতে পারলেও অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের কোনো ব্যবস্থা নেই। এলাকার শিক্ষার্থী, অফিসগামী মানুষ, বৃদ্ধ ও রোগীরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।
দীর্ঘদিন অচল অবস্থায় পড়ে থাকায় সড়কের ওপর ত্রিপল টানিয়ে বেচাকেনা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। সড়কের মাঝখানে মাছ-মুরগি ও কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। রাস্তার মাঝে পানি জমে আছে, বসতবাড়ির ময়লা ও আবর্জনা সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। রাস্তায় মশা-মাছির ব্যাপক উপদ্রব দেখা গেছে। বৃষ্টির পর রাস্তা ও নর্দমায় পানি জমে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সড়কে।
স্থানীয় বাসিন্দা, দোকানদার, শিক্ষক, চিকিৎসক সবাই এখন একটা কথাই বলছেন- প্রতিদিনের এই দুর্ভোগ থেকে যেন দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন নিয়মিত তদারকি করে সড়কটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।
স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, গত বছরের শুরুতে অনেক আনুষ্ঠানিকতা করে ড্রেনের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছিল। কংক্রিটের পাইপ এনে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস পর কাজ ধীর হয়ে আসে, এখন একেবারে থেমে গেছে। এতে শুধু ধুলা নয়, বৃষ্টির সময় কাদা আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।
স্থানীয় শিক্ষক শিউলি আক্তার বলেন, ‘সকাল-বিকেল এখানে রিকশা উল্টে পড়ছে, লোকজন মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, কারও পা মচকাচ্ছে, কারও কোমর ভাঙছে। এতদিন ধরে খোঁড়াখুঁড়ির পরও কাজ শেষ হচ্ছে না। এটা কি উন্নয়ন না ভোগান্তি, বোঝা যাচ্ছে না।’ একই অভিযোগ করেন দোকানদার আবু সালেহ। তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে ধুলা ঢুকে সব পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিক্রিও কমে গেছে। কেউ রাস্তা দিয়ে হাঁটতেই চায় না, কেনাকাটা করবে কীভাবে?’
কাজ চলছে ধীরগতিতে, সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই
ড্রেনেজ উন্নয়নকাজের তত্ত্বাবধানে থাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কাজে কিছু কারিগরি জটিলতা এসেছে, লোকবলের অভাবও রয়েছে তাই সময় লেগে যাচ্ছে। তবে দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।’
কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রেখে দীর্ঘ সময় কোনো কাজই করা হয় না। মাঝে মাঝে কিছু শ্রমিক এসে ঘুরে দেখে চলে যান। তারা দাবি করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজটি শেষ করে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম খবরের কাগজকে বলেন, কাজ কীভাবে এগোবে? একদিকে আন্দোলন (বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের আন্দোলন), অন্যদিকে রাস্তার জায়গা স্থানীয়রা ছাড়ছেন না। মাঝে স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ শুরু হলে আন্দোলনও শুরু হয়, কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন পরিবেশ স্বাভাবিক হলে কাজ আবারও শুরু হবে।