চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।
রবিবার (৬ অক্টোবর) সকাল দশটা থেকে শিক্ষার্থীরা নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা হলে হলে তালা লাগিয়ে দেয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম। আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। এ সময় আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দ্রুত জরুরি মিটিংয়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিভাসু শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্য পদে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের নিয়োগ না দেওয়ারও দাবি জানান। দাবি মেনে না নিলে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ এবং রাস্তা অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।
এর আগে এক দফা দাবিতে গত ৫ দিন ধরে টানা আন্দোলন করে আসছে সিভাসুর শিক্ষার্থীরা। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন তারা। এর আগে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর উপাচার্য নিয়োগের আবেদন জানিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন সিভাসু শিক্ষার্থীরা। সেই দাবি নিয়ে শনিবার (৫ অক্টোবর) শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সমর্থন দিয়ে আসছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের স্নাতকের শিক্ষার্থী মো. শাহরিয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দালালির সঙ্গে যুক্ত কেউ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক (ভিসি) হয়ে যেন আসতে না পারে। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিদিন নানাভাবে নানা জায়গায় আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। কেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসবে? যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে ২৯ বছর আগে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এখানে কীভাবে বাইরে থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ইন্টার্নি প্রোগ্রাম বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করে, আমাদের প্রবলেম বেইজড লার্নিংগুলো, শিক্ষকদের উদ্ভাবনীগুলো অন্য বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করে, সেখানে বাইরের অপশক্তি আমাদের ওপর প্রভাব খাটাতে চায়।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে আমাদের ভিসি হিসেবে মানবো না। আবার অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ সিভাসুর ভিসি হওয়ার পাঁয়তারা করলে তাকেও মানবো না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দিতে হবে আমাদেরই শিক্ষকদের মধ্য থেকে। আগের ভিসিরা কেবল রুটিন ওয়ার্ক করেই বিদায় নিয়েছেন, উল্লেখযোগ্য কাজ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।’
এদিকে এই পরিস্থিতিতে জরুরি সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকাল সাড়ে ১০টায় জরুরি সভা ডাকেন সিভাসুর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামাল।
উপাচার্যের সভাপতিত্বে তার অফিসকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় অনুষদীয় ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, হল প্রভোস্ট, পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ), প্রক্টরসহ সিনিয়র শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান পরিস্থিতি এবং ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠতম অধ্যাপকদের মধ্য থেকেই নতুন উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করেন শিক্ষকরা। তারা আশা করছেন সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন।
সাদিয়া নাহার/