
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একাডেমিক ভবন, হল ও বিভিন্ন দপ্তরের শৌচাগারের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা-আবর্জনায় বেহাল দশা শৌচাগারগুলোর। ব্যবহার অযোগ্য এসব শৌচাগার পরিষ্কার করার জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকট থাকলেও গত ১৮ বছরেও কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে স্বাস্থঝুঁকিতে রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক, প্রশাসনিক ভবন ও আবাসিক হলসহ মোট ১৯টি ভবন রয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, চিকিৎসাকেন্দ্র ও কেন্দ্রীয় মসজিদ রয়েছে। এসব ভবনের প্রায় প্রতিটি ভবনেই নিয়মিত পরিষ্কারের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে শৌচাগারগুলো। কিছু শৌচাগারের দরজারও ঠিক নেই। পর্যাপ্ত ট্যাপ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও নেই অনেক জায়গায়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি হলে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থী বাস করছেন। নিয়মিত শৌচাগারগুলো পরিষ্কার না করার ফলে এসব শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুমানিক ১ হাজার ৮০০-এর ওপরে শৌচাগার রয়েছে। এসব শৌচাগার পরিষ্কার করার জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন মাত্র ১২ জন। ফলে ১ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ১৫০টি শৌচাগার পরিষ্কারের কাজ করতে হয়। এ ছাড়া এসব শৌচাগার পরিষ্কার করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে বছরে মাত্র ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফলে এত কম বেতনে এতটি শৌচাগার পরিষ্কারের কাজ করা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য কষ্টসাধ্য। কম বেতনে দিয়ে এই কাজ অব্যাহত রাখা খুবই কষ্টকর বলে জানিয়েছে এস্টেট শাখা।
সংস্থাপন শাখা সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ সংখ্যা ৫৫টি। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিয়োগ হয়েছে ৩৫টিতে। এর মধ্যে অবসর ও মৃত্যুবরণ করায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ জনে। এসব পদে সর্বশেষ ২০০৬ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পর কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা সুইপার নিয়োগ দেয়নি প্রশাসন। তবে নিয়োগকৃত ২৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মধ্যে কাজ করছেন মাত্র ১২ জন। বিশ্ববিদ্যালয় এস্টেট শাখার দাবি, বাকি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দিয়ে পিয়নের কাজ করানো হচ্ছে ।
এ বিষয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী রাউফুল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলো বাহ্যিক দিক থেকে সুন্দর হলেও ভেতরের অবস্থা তেমন ভালো নয়। এসব ভবনের ভেতরের শৌচাগারগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ, যা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভূমিকা দেখি না। বিগত প্রশাসনের সময় তেমন কোনো উদ্যোগও ছিল না। নতুন প্রশাসন শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় ও বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আমির ফয়সাল বলেন, ‘হলের শৌচাগারগুলো পরিষ্কার করতে দেরি করার কারণে খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। ফলে স্বাস্থঝুঁকির আশঙ্কা থাকে এবং শৌচাগারগুলোও ব্যবহার অনুপযোগী হয়। পরিষ্কারের ক্ষেত্রে রেগুলারিটি মেইনটেইন করার জন্য হল প্রভোস্টের প্রতি অনুরোধ রইল।’
নিয়মিত পরিষ্কার ও তদারকির অভাবে এসব শৌচাগারে জন্ম নিচ্ছে নানান রকমের রোগ-জীবাণু, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. এস এম শাহেদ হাসান বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ফাঙ্গাস বা চুলকানি জাতীয় রোগে ভুগছেন। এ রোগগুলো সাধারণত শৌচাগার অপরিষ্কার থাকার কারণে হয়ে থাকে। তাই শিক্ষার্থীদের সুস্থতার জন্য শৌচাগারগুলো পরিষ্কার রাখা দরকার।’
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস প্রধান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের শৌচাগারগুলো বেহাল। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় এমন পরিস্থিতি। এ বিষয়ে ভিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রয়োজনে বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে পরিচ্ছন্নতার কাজ করানো যায় কি না, সে বিষয়ে চিন্তা আছে। তবে হলগুলোর বিষয়ে স্ব-স্ব হল এটা দেখবে। সেগুলো আমাদের আওতাধীন নয়।’
এ বিষয়ে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি ও শহিদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. এ বি এম জাকির হোসেন বলেন, ‘আটটি হলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রয়োজন ১৬ জন। সেখানে রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। ফলে নিয়মিত পরিষ্কার না করার ফলে শৌচাগারগুলোর অবস্থা বেশ খারাপ। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রতি লক্ষ্য করে এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করার জন্য স্ব-স্ব হলের প্রভোস্টদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’