
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ মাস নিয়ে আসে বিশেষ আমেজ। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসেও রমজান মাসের আগমনে শিক্ষার্থীদের মাঝে এসেছে ইতিবাচক বেশ কিছু পরিবর্তন। ধর্মীয় চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও ইবাদতে।
শনিবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় পবিত্র রমজানের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরপরই নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের মাঝে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাম্পাসজুড়ে তৈরি হয় এক অন্য রকম পরিবেশ। সাধারণত রাতের বেলা যেখানে আড্ডা, হইহুল্লোড় বা নানাবিধ সাংস্কৃতিক কার্যক্রম দেখা যায়, সেখানে এখন অধিকাংশ শিক্ষার্থী বেশি সময় কাটাচ্ছেন ইবাদত-বন্দেগিতে।
রমজানের শুরু থেকেই নোবিপ্রবির কেন্দ্রীয় মসজিদে শিক্ষার্থীদের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রথম তারাবির নামাজ থেকেই মসজিদের প্রতিটি কাতার পূর্ণ হয়ে যায়। নামাজের পাশাপাশি কোরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন অনেকে।
রমজানে ক্যাম্পাসের চেনা দৃশ্যে পরিবর্তন এসেছে। সাধারণ সময়ের মতো সকালবেলা টং দোকানগুলোতে নাশতার আয়োজন বা শিক্ষার্থীদের আড্ডার দৃশ্য নেই। এর বদলে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ইফতার সামগ্রীর পসরা বসে। শান্তি নিকেতন, পকেট গেট ও আশপাশের দোকানে পাওয়া যায় মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি ও শরবতসহ নানা খাবার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনগুলোর কর্মচারীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন সাহরি প্রস্তুতিতে। এক ক্যান্টিনকর্মী জানান, ‘সাহরির সময় শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে খাবার প্রস্তুত করা হয়। শিক্ষার্থীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই সব আয়োজন করা হয়।’
রমজানের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সময়েও পরিবর্তন এসেছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস চলায় শিক্ষক ও কর্মচারীরা স্বস্তিতে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে পারছেন।
শান্তি নিকেতনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা ও কোলাহলের চিত্রও বদলেছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই বেশি সময় দিচ্ছেন নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও ক্লাসে। সন্ধ্যা নামলে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ময়না দ্বীপ ও হলের আঙিনায় শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে বসে ইফতার করেন। অনেক জায়গায় গণ-ইফতারের আয়োজন করা হয়, যেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শফিউল আলম হিমেল বলেন, ‘রমজানে ক্যাম্পাসের পরিবেশ পুরোপুরি বদলে যায়। সবাই নামাজ ও ইবাদতের দিকে মনোযোগী হয়। বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে ইফতার করাটা অন্যরকম অনুভূতি দেয়।’
আরেক শিক্ষার্থী রেজুয়ানা সুলতানা অনামিকা বলেন, ‘এই সময় আমাদের জন্য খুবই বিশেষ হিসেবে বিবেচিত। ক্লাস, পড়াশোনার পাশাপাশি রমজানের আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। ক্যাম্পাসেও ইবাদতের সুন্দর পরিবেশ আছে, যা আমাদের উৎসাহিত করে।’
রমজানের সংযমের শিক্ষা নিয়ে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে জীবন পরিচালনার প্রত্যয়ে শিক্ষার্থীরা ইবাদতের পরিবেশ বজায় রাখছেন। সবার একটাই প্রার্থনা—আল্লাহ যেন এই মাসের প্রতিটি সওয়াব ও বরকত দান করেন।
/রিয়াজ