
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের ভিকি রাউলিনস ও তার মেয়ে ব্রুক রাউলিনস পেশায় ‘বোটানিক্যাল আর্টিস্ট’। যারা নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দাঁড় করেছেন শূন্য মূলধনে। তাদের গল্প জানাচ্ছেন ফারজানা ফাহমি
ভিকি রাউলিনস ও তার মেয়ে ব্রুক রাউলিনস বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে। তারা গাছের নিচে পড়ে থাকা বিভিন্ন ফুল, ফল, পাতা, ডাল, শুকনো কাঠসহ প্রকৃতির নানা উপাদান দিয়ে আর্টপিস তৈরি করেন। তবে এই মা-মেয়ের ‘আর্ট’ একটু আলাদা। তারা আর্ট বা শিল্পকর্ম তৈরি করে কুড়িয়ে আনা জিনিসগুলো আবার প্রকৃতিতেই ফিরিয়ে দেন।
সময়টা ২০১১ সাল যখন ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন ভিকি। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। চরম হতাশায় দিন কাটছিল তার। একদিন হুট করে চোখ পড়ল তার বারান্দার পাশের বাগানে গাছের নিচে পড়ে থাকা ডাল ও ফুলের দিকে। কুড়িয়ে আনা পাতা ও ফুল দিয়ে ঝটপট তার ও তার মেয়ের একটা পোর্ট্রেট তৈরি করে ফেললেন এবং সেটার ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার পর বেশ সাড়াও পেয়েছিলেন।

এভাবেই তার ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়, যদিও শুরুতে তাদের উদ্দেশ্য ছিল না তারা এভাবে টাকা আয় করেন। মূলত সময় কাটানোর জন্য ভিকি ছবি আঁকা শুরু করেন। পরে তারা সিস্টার গোল্ডেন নামের একটি শপ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা শুরু করেন এবং এখান থেকে বর্তমানে কোনো ধরনের মূলধন ছাড়াই লাখ লাখ টাকা আয় করেন।
দুজনেই প্রতিদিন আশপাশের বাগান, রাস্তা বা পার্কে পড়ে থাকা লতাপাতা, ফুল, ফল, বীজ, ডাল কুড়িয়ে আনেন। তারপর প্রায় আলাদা কোনো উপকরণ ছাড়াই (ছুরি, কাঁচি, রং, তুলি, পেনসিল) ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন শিল্পকর্ম। তারপর মুঠোফোনে সেই শিল্পকর্মের ছবি তুলে জুম করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন কম্পোজিশন, অনুপাত বা অন্য সবকিছু ঠিক আছে কি না।
শিল্পকর্ম সম্পূর্ণ হলে ক্যামেরায় সেসবের ছবি তোলেন। তারপর সব উপকরণ আবার প্রকৃতিতেই ফিরিয়ে দেন। কেননা তারা ফ্রেমের সঙ্গে কিছুই আঠা দিয়ে লাগান না বা সেলাই করেন না।
শুধু কিছুক্ষণের জন্য পাশাপাশি বা একটার ওপর আরেকটা সাজিয়ে রাখেন। এই শিল্পকর্ম তৈরির সময় দরজা-জানালা সব বন্ধ করে রাখেন তারা। যাতে হাওয়ায় উড়ে না যায়। তাদের শিল্পকর্মে মূলত প্রকৃতি, নারীর মুখ, ফুল, বিভিন্ন রং ও ঘর সাজানোর আইডিয়া আসে।
যেসব ছবি তোলেন, সেসব দিয়ে ক্যালেন্ডার; ভিউকার্ড; দেয়ালে ঝোলানোর জন্য ছবি; ভিন্টেজ পোস্টার; কাপড়, পর্দা, বিছানার চাদর, কুশন ও টাইলসে প্রিন্টসহ নানাভাবে ব্যবহার করেন। অনেকে ওয়েবসাইট থেকে এসব ছবি কিনে নিজেদের মতো ব্যবহার করেন। এসব ছবি বইয়ের প্রচ্ছদেও ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া বানানো হয় আর্টবুক। এসব কনসেপচুয়াল আর্টকে অনেকে ব্যবহার করেন পেইন্টিংয়ের অনুপ্রেরণা হিসেবে। এভাবেই তারা আয় করেন।
মূলত মা ভিকি রাউলিনসই শিল্পকর্ম তৈরি করেন। মেয়ে ব্রুক রাউলিনস মাকে সাহায্য করেন। ছবি তোলা, মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টসহ ব্যবসার নানা খুঁটিনাটি দিক সামলান।
বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতিগুলো কুড়িয়ে আনা নানা উপকরণে তৈরি করেন ভিকি। শেরিলিন, ভ্যান গগ, অড্রে হেপবার্ন, ফ্রিদা কাহলো থেকে শুরু করে বাদ যাননি ডায়ানা রস ও আলবার্ট আইনস্টাইন ও টেলর সুইফট।
ভিকি তার শিল্পকর্মগুলোতে একত্রে করে একটি বই বের করেছেন যার নাম ‘দ্য পাওয়ার অব ফ্লাওয়ারস’। যেখানে ১০০টি পেজ রয়েছে এবং আর্টগুলো কোন কনসেপ্টে তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর বর্ণনা দেওয়া আছে, যা একজন পাঠককে তার শিল্প কর্মগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেবে।
১৯৭০ দশকের জনপ্রিয় গান ‘সিস্টার গোল্ডেন হেয়ার’-এর অনুকরণে মা-মেয়ে তাদের অনলাইন শপের নাম রেখেছেন ‘সিস্টার গোল্ডেন শপ’। এ শপ থেকে সহজেই যে কেউ তাদের পেইন্ট কিংবা কাস্টমাইজ গ্রিটিং কার্ড তৈরি করে নিতে পারেন। যদিও ফুলেল শিল্পকর্ম তাদের ট্রেডমার্ক। সিস্টার গোল্ডেনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে এভাবে কোনো মূলধন ছাড়াই লাখ লাখ টাকা আয় করেন। সূত্রঃসিস্টার গোল্ডেনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে।
/ফারজানা ফাহমি