ঢাকা ১২ বৈশাখ ১৪৩২, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
English
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

মূলধন ছাড়াই লাখ টাকা উপার্জন

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৭ পিএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০২:৫১ পিএম
মূলধন ছাড়াই লাখ টাকা উপার্জন
ভিকি রাউলিনস ও তার মেয়ে ব্রুক রাউলিনস ।ছবিঃসিস্টার গোল্ডেনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের ভিকি রাউলিনস ও তার মেয়ে ব্রুক রাউলিনস পেশায় ‘বোটানিক্যাল আর্টিস্ট’। যারা নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দাঁড় করেছেন শূন্য মূলধনে। তাদের গল্প জানাচ্ছেন ফারজানা ফাহমি

ভিকি রাউলিনস ও তার মেয়ে ব্রুক রাউলিনস বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে। তারা গাছের নিচে পড়ে থাকা বিভিন্ন ফুল, ফল, পাতা, ডাল, শুকনো কাঠসহ প্রকৃতির নানা উপাদান দিয়ে আর্টপিস তৈরি করেন। তবে এই মা-মেয়ের ‘আর্ট’ একটু আলাদা। তারা আর্ট বা শিল্পকর্ম তৈরি করে কুড়িয়ে আনা জিনিসগুলো আবার প্রকৃতিতেই ফিরিয়ে দেন। 

সময়টা ২০১১ সাল যখন ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন ভিকি। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। চরম হতাশায় দিন কাটছিল তার। একদিন হুট করে চোখ পড়ল তার বারান্দার পাশের বাগানে গাছের নিচে পড়ে থাকা ডাল ও ফুলের দিকে। কুড়িয়ে আনা পাতা ও ফুল দিয়ে ঝটপট তার ও তার মেয়ের একটা পোর্ট্রেট তৈরি করে ফেললেন এবং সেটার ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার পর বেশ সাড়াও পেয়েছিলেন।

ছবিঃসিস্টার গোল্ডেনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে

এভাবেই তার ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়, যদিও শুরুতে তাদের উদ্দেশ্য ছিল না তারা এভাবে টাকা আয় করেন। মূলত সময় কাটানোর জন্য ভিকি ছবি আঁকা শুরু করেন। পরে তারা সিস্টার গোল্ডেন নামের একটি শপ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা শুরু করেন এবং এখান থেকে বর্তমানে কোনো ধরনের মূলধন ছাড়াই লাখ লাখ টাকা আয় করেন।

দুজনেই প্রতিদিন আশপাশের বাগান, রাস্তা বা পার্কে পড়ে থাকা লতাপাতা, ফুল, ফল, বীজ, ডাল কুড়িয়ে আনেন। তারপর প্রায় আলাদা কোনো উপকরণ ছাড়াই (ছুরি, কাঁচি, রং, তুলি, পেনসিল) ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন শিল্পকর্ম। তারপর মুঠোফোনে সেই শিল্পকর্মের ছবি তুলে জুম করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন কম্পোজিশন, অনুপাত বা অন্য সবকিছু ঠিক আছে কি না।

শিল্পকর্ম সম্পূর্ণ হলে ক্যামেরায় সেসবের ছবি তোলেন। তারপর সব উপকরণ আবার প্রকৃতিতেই ফিরিয়ে দেন। কেননা তারা ফ্রেমের সঙ্গে কিছুই আঠা দিয়ে লাগান না বা সেলাই করেন না।

শুধু কিছুক্ষণের জন্য পাশাপাশি বা একটার ওপর আরেকটা সাজিয়ে রাখেন। এই শিল্পকর্ম তৈরির সময় দরজা-জানালা সব বন্ধ করে রাখেন তারা। যাতে হাওয়ায় উড়ে না যায়। তাদের শিল্পকর্মে মূলত প্রকৃতি, নারীর মুখ, ফুল, বিভিন্ন রং ও ঘর সাজানোর আইডিয়া আসে। 

যেসব ছবি তোলেন, সেসব দিয়ে ক্যালেন্ডার; ভিউকার্ড; দেয়ালে ঝোলানোর জন্য ছবি; ভিন্টেজ পোস্টার; কাপড়, পর্দা, বিছানার চাদর, কুশন ও টাইলসে প্রিন্টসহ নানাভাবে ব্যবহার করেন। অনেকে ওয়েবসাইট থেকে এসব ছবি কিনে নিজেদের মতো ব্যবহার করেন। এসব ছবি বইয়ের প্রচ্ছদেও ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া বানানো হয় আর্টবুক। এসব কনসেপচুয়াল আর্টকে অনেকে ব্যবহার করেন পেইন্টিংয়ের অনুপ্রেরণা হিসেবে। এভাবেই তারা আয় করেন।

মূলত মা ভিকি রাউলিনসই শিল্পকর্ম তৈরি করেন। মেয়ে ব্রুক রাউলিনস মাকে সাহায্য করেন। ছবি তোলা, মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টসহ ব্যবসার নানা খুঁটিনাটি দিক সামলান।

বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতিগুলো কুড়িয়ে আনা নানা উপকরণে তৈরি করেন ভিকি। শেরিলিন, ভ্যান গগ, অড্রে হেপবার্ন, ফ্রিদা কাহলো থেকে শুরু করে বাদ যাননি ডায়ানা রস ও আলবার্ট আইনস্টাইন ও টেলর সুইফট।

ভিকি তার শিল্পকর্মগুলোতে একত্রে করে একটি বই বের করেছেন যার নাম ‘দ্য পাওয়ার অব ফ্লাওয়ারস’। যেখানে ১০০টি পেজ রয়েছে এবং আর্টগুলো কোন কনসেপ্টে তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর বর্ণনা দেওয়া আছে, যা একজন পাঠককে তার শিল্প কর্মগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেবে।

১৯৭০ দশকের জনপ্রিয় গান ‘সিস্টার গোল্ডেন হেয়ার’-এর অনুকরণে মা-মেয়ে তাদের অনলাইন শপের নাম রেখেছেন ‘সিস্টার গোল্ডেন শপ’। এ শপ থেকে সহজেই যে কেউ তাদের পেইন্ট কিংবা কাস্টমাইজ গ্রিটিং কার্ড তৈরি করে নিতে পারেন। যদিও ফুলেল শিল্পকর্ম তাদের ট্রেডমার্ক। সিস্টার গোল্ডেনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে এভাবে কোনো মূলধন ছাড়াই লাখ লাখ টাকা আয় করেন। সূত্রঃসিস্টার গোল্ডেনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে।

/ফারজানা ফাহমি

হার না মানা এক অদম্য নারী

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
হার না মানা এক অদম্য নারী
সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী। ছবিঃ আদিব আহমেদ।

দেশীয় পণ্যকে ভালোবেসে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন ‘মাধবী মার্ট’-এর স্বত্বাধিকারী সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী। হার না মানা এ নারীর উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্প কেমন ছিল তা নিয়ে এবারের আয়োজন। লিখেছেন ফারজানা ফাহমি

মাত্র ১০ হাজার টাকা নিয়ে স্বল্প পরিসরে ব্যবসা শুরু করেছিলেন উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াসমিন। শুরুতে শুধু পরিচিতজনদের কাছেই পণ্য বিক্রি করতেন সাবিনা, এখন তার পণ্য যায় বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে। সাবিনার গড়ে তোলা সেই ‘মাধবী মার্ট’-এ এখন প্রতি মাসে বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার পণ্য।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার রানাহিজল গ্রামে বেড়ে উঠেছেন সাবিনা, প্রাথমিকের পড়াশোনাও সেখানে করেছেন। মোহনগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পর উচ্চমাধ্যমিক পড়তে চলে আসেন ময়মনসিংহে। এরপর ঢাকার ইডেন কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। স্নাতক পড়তে পড়তেই ব্যবসায় হাতেখড়ি। এক নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার পণ্য নিয়ে বিক্রি করতে শুরু করেন। 

প্রথমে কিছুদিন পরিচিতদের কাছে বিক্রি করতেন। প্রায় সময় সাইকেলেই কাপড় নিয়ে চলে যেতেন বিভিন্ন ব্যাংকে, পরিচিতদের অফিসে। এভাবে ধীরে ধীরে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ২০১৮ সালে ফার্মগেটের ক্যাপিটাল সুপার মার্কেটে একটি দোকান নেন। দুই বছর চালানোর পর কোভিডের কারণে ২০২০ সালে সেই দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। কিন্তু তিনি আশাহত হননি। 

এরপর ২০২১ সালে তিনি আবার তার কাজ শুরু করেন। দেশি পণ্যে সব সময়ই আগ্রহ ছিল সাবিনার। তিনি দেখেছেন, ভালো মানের পণ্য দিতে পারলে ক্রেতারা তা লুফে নেন। তাই তিনি নকশিকাঁথা বানানো শুরু করলেন। 

সাবিনা ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। তাই একদিন জামালপুরে ঘুরতে যান। সেখানে নকশিকাঁথা কীভাবে তৈরি করা হয় তা দেখতে চলে যান সরিষাবাড়ী উপজেলায়। ভৌগোলিকভাবে নকশিকাঁথার কাজ ভালো হয় সরিষাবাড়ীতে। সেখানেই হাতের কাজের পণ্যের ব্যবসাটা আরও ভালো করে শিখেছেন সাবিনা। তার সঙ্গে এখন জামালপুরের এক হাজার নারী সরাসরি কাজ করেন। পাশাপাশি রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়ার স্থানীয় নারীরাও কাজ করছেন।

‘মাধবী মার্ট’-এর অবস্থান উত্তরা উত্তর মেট্রো স্টেশনের পাশেই। সেখানে পাওয়া যায় নানা ধরনের দেশি পণ্য। নকশিকাঁথাই মাধবীর প্রধান পণ্য। এ ছাড়া পাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জের জামদানি, টাঙ্গাইলের তাঁত, সিলেটের মণিপুরি, কুমিল্লার খাদি, রাজশাহী সিল্কের কাঁথা স্টিচ, কুমিল্লার বাটিক, ন্যাচারাল ডাইসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি শাড়ি। একই ছাদের নিচে আছে নীলফামারীর হোগলা পাতা, কচুরিপানা, সুপারির খোলের তৈরি পণ্য।
সাবিনা ক্রেতাদের কাছে সুলভ দামে পণ্য বিক্রি করেন, যাতে দেশি পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি হয় এবং সব ক্রেতা যেন তার পণ্য কিনতে পারেন। 

একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবেই তিনি থেমে থাকেননি। ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি করেন নানা সামাজিক কাজও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও পোশাক কারখানায় গিয়ে নারীদের ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন করেন। কোথায় চিকিৎসা করাতে হবে, সে তথ্যও দেন। 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাইকেল চালিয়ে প্রায় ৫১টি জেলা ঘুরেছি। অনেক নারীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। এ পর্যন্ত সাড়ে চার শর বেশি রোগীকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে এসেছি।’

কীভাবে এই কাজ সামাল দেন, তা জানতে চাইলে সাবিনা বলেন, ‘যখন কোনো নারীর স্তন বা জরায়ুমুখ ক্যানসারের কোনো লক্ষণ দেখি বা কেউ যখন ফোন করে অসুবিধার কথা জানান, তখন তাকে কাছের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। টেস্ট করার পর প্রমাণ মিললে তাকে ঢাকার মহাখালী ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাই। সেখানে পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। কারও হয়তো অস্ত্রোপচার লাগে, কারও লাগে কেমোথেরাপি। কারও আবার দুটোই লাগে।’ তিনি ‘মাধবী মার্ট’-এর লভ্যাংশের একটি অংশ থেকে ক্যানসার আক্রান্ত নারীদের চিকিৎসায় ব্যয় করেন। 

সাবিনা যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যান, তখন সেখানে নারীদের কাছে ফোন নম্বর দিয়ে আসেন। সেখানেই ফোন করে যোগাযোগ করেন নারীরা। 
ব্যতিক্রমী এই কাজের জন্য ২০২১ সালে মাধবী পেয়েছেন ‘দ্য ডেইলি স্টার-আইপিডিসি আনসাং উইমেন ন্যাশন বিল্ডার্স অ্যাওয়ার্ড’। এ ছাড়া রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, আহসানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল ও ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ থেকেও পেয়েছেন পুরস্কার।

নারীদের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য একটি ফাউন্ডেশন তৈরির কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন মাধবী। তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন নারীদের জন্য একটি বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতাল তৈরি করা। যেখানে নারীরা বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা পাবেন।’ ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা ছড়িয়ে যেমন মানুষের পাশে সব সময় দাঁড়াতে চান মাধবী। তেমনি মাধবী মার্টকেও সারা বিশ্বে নিয়ে যেতে চান মাধবী। এ প্রসঙ্গে মাধবী বলেন, ‘আমি চাই দেশের সব জেলা-উপজেলায় থাকবে মাধবী মার্টের শাখা। কেবল ৬১ দেশে নয়, বিশ্বের সব দেশে যাবে মাধবী মার্টের পণ্য।’ 

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘যারা এ কাজে সংযুক্ত হতে চান তাদের প্রচুর ধৈর্য ধারণ করতে হবে। জীবনে নানা চড়াই-উতরাই আসবে তবে হার মানা যাবে না। যেকোনো কাজে সফলতা পেতে লেগে থাকতেই হবে। তবেই সফলতা আসবে।’

/ফারজানা ফাহমি

 

আলোর পথ দেখান ক্লুনি

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১০ পিএম
আলোর পথ দেখান ক্লুনি
আমাল ক্লুনি। ছবিঃ সংগৃহীত।

দুই দশক ধরে ন্যায়বিচারবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী আমাল ক্লুনি। তাই বিবিসির ১০০ নারী ২০২৩-এর তালিকায় উঠে আসে আমাল ক্লুনির নাম। 

১৯৭৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি লেবাননের রাজধানী বৈরুতে জন্ম মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী ক্লুনির। লেবাননের গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে বৈরুত ছেড়ে যুক্তরাজ্যে চলে আসে ক্লুনির পরিবার। বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রিয় স্বদেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যকেই ঠিকানা করে নেন আমাল ক্লুনি। পড়াশোনা সম্পন্ন করেন সেন্ট হিউজ কলেজ, অক্সফোর্ড ও নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে। 

নিজের কাজকে ছড়িয়ে দিতে আমাল ক্লুনি কলম্বিয়া ল স্কুলে এডজাংক্ট প্রফেসর এবং ক্লুনি ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। ফাউন্ডেশনটি বিশ্বের ৪০টি দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষকে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে। নিজের কাজের মাধ্যমে আমাল ক্লুনি অনন্য ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন বিশ্ব মঞ্চে। তেমনি নারীদের জন্যও হয়ে উঠেছেন প্রেরণার আরেক নাম। 

মালাওয়ি এবং কেনিয়ায় নারীদের সঙ্গে ঘটা যৌন সহিংসতা, আর্মেনিয়া ও ইউক্রেনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী ঘটনার মতো বড় বড় মামলা লড়েছেন তিনি। এ ছাড়া ক্লুনি মালদ্বীপে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ, অস্ট্রেলিয়ান উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া টিমোশেঙ্কোর মতো বিশেষ ব্যক্তিদের হয়ে মামলা লড়েন। 

আমাল ক্লুনির সাম্প্রতিক সাফল্যের মধ্যে রয়েছে- আইএস জঙ্গি এবং দারফুরে নির্যাতনের শিকার নারীদের হয়ে মামলা পরিচালনার কাজ। এ ছাড়া নিপীড়ক শাসকদের হাতে নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য কাজ করেন ক্লুনি। 

মানুষের মানবাধিকার আমাল ক্লুনির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ক্লুনি বিশ্বাস করেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে পৃথিবী হয়ে উঠবে মানুষের জন্য বসবাসের উপযুক্ত।

/ফারজানা ফাহমি

 

ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফটো সাংবাদিক ফাতিমা

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম
আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১০ পিএম
ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফটো সাংবাদিক ফাতিমা
ফটোসাংবাদিক ফাতিমা হাসুনা। ছবিঃসংগৃহীত।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তর অংশে নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক ফাতিমা হাসুনা।ফাতিমা হাসুনা জানতেন, মৃত্যু তার দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। গাজায় টানা ১৮ মাস ধরে যুদ্ধের ছবি তুলেছেন তিনি। মৃত্যু যেকোনো সময় আসবে জেনেও আবদার ছিলো একটাই: চুপচাপ এই পৃথিবী থেকে তিনি চলে যেতে চান না।

তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ‘আমি যদি মারা যাই, তাহলে ইচ্ছা শুধু এটাই যে আমার মৃত্যু যেন হয় কোলাহলপূর্ণ। আমি শুধু সংবাদের শিরোনাম বা একটি সংখ্যা হতে চাই না। চাই এমন এক মৃত্যু, যা বিশ্ব শুনবে; এমন এক প্রভাব, যা সময়ের সাথে রয়ে যাবে; এমন এক ছবি, যা সময় বা স্থানের গর্ভে ঢাকা পড়বে না।’যা লিখেছিলেন, তাই হয়েছে। 

তবে, বাস্তবে যা ঘটেছে, তা ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক। কারণ ইসরায়েলি বিমান হামলায় ফটো জার্নালিস্ট ফাতিমা হাসুনা ও তার পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হয়েছেন।

গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) তার বিয়ের মাত্র কয়েক দিন আগে, ২৫ বছর বয়সী ফাতিমা উত্তর গাজায় তার বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন। তার গর্ভবতী বোনসহ পরিবারের আরও ১০ সদস্যও এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।


মারা যাওয়ার  ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে ঘোষণা করা হয়েছিল, ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় ফাতেমার জীবন নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে।

ইরানি পরিচালক সেপিদেহ ফারসি নির্মিত ‘পুট ইয়র সোল অন ইয়র হ্যান্ড অ্যান্ড ওয়াক’ শীর্ষক এই চলচ্চিত্রে হাসুনা ও ফারসির ভিডিও কথোপকথনের মাধ্যমে গাজায় ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবন ও যন্ত্রণার গল্প বলা হয়েছে। ফারসির বর্ণনায়, হাসুনা হয়ে উঠেছিলেন ‘গাজায় আমার একমাত্র চোখ”। 

ফাতিমার মৃত্যুর পর ফারসি বলেন, ‘আমি হারালাম আমার গাজার চোখকে। যাকে দিয়ে গাজার মানুষগুলোকে দেখতে পারতাম। ফাতিমা ছিল এক উজ্জ্বল আলো, যে গাজার বেদনা ও সংগ্রামকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছে’।

ফাতিমার প্রাণ বিসর্জনের ঘটনায় সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপে লাজারিনি বলেন, ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা বীরত্বের সঙ্গে কাজ করে চলেছে, কিন্তু এর জন্য তাদের ভয়ংকর মূল্য দিতে হচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গাজায় ২০৯ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যাদের কেউ ডিউটিতে ছিলেন, কেউ বাড়িতে।

ফাতিমা হাসোনা- একজন সাহসী চিত্রসাংবাদিক, তার চোখ দিয়ে বিশ্ব দেখেছে গাজার বাস্তবতা। আজ তিনি নেই, কিন্তু তার গল্প বেঁচে আছে এবং সেটিই পৌঁছে গেছে কানের মতো বিশ্বমঞ্চে।

ফাতিমার সেই উচ্চস্বরে মৃত্যুই হয়তো আজ বিশ্বের কানে ধ্বনিত হচ্ছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/ফারজানা ফাহমি

 

কিউবার সফল নারী ইদানিয়া দেল রিও

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৭ পিএম
কিউবার সফল নারী ইদানিয়া দেল রিও
ইদানিয়া দেল রিও। ছবিঃসংগৃহীত।

গ্রাফিক ডিজাইনার ইদানিয়া দেল রিও কিউবার প্রথম স্বাধীন ফ্যাশন ব্র্যান্ড ক্ল্যান্ডেস্টিনার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তার তৈরিকরা ব্র্যান্ড অনলাইনে বিশ্বব্যাপী পোশাক বিক্রি করে। মূলত প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর বাণিজ্যসংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করার পর এ কোম্পানির জন্ম হয়েছিল।হাভানাভিত্তিক নারীপ্রধান ডিজাইনার দলের তৈরি পণ্যগুলোতে কিউবার সংস্কৃতি প্রতিফলিত করা হয়। যার মধ্য দিয়ে দ্বীপের সৃজনশীলতাকে প্রদর্শন করা হয়। ইদানিয়া এভাবে যেন নিজের দেশপ্রেমকেই ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিশ্বজুড়ে।

প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পুনঃব্যবহৃত উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করে এর টেকসই পদ্ধতির ওপর জোর দেন ইদানিয়া দেল রিও। এটি একই সঙ্গে অপচয়ের বিরুদ্ধেও সুস্পষ্ট বার্তা বলে মনে করেন ইদানিয়া। সরকারি অনেক বিধিনিষেধের ফলে যেখানে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা কিছুটা কঠিন, সেখানে ইদানিয়া একজন নারী হয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন।

সেই সঙ্গে কিউবার অন্য নারীদের জন্যও খুলে দিচ্ছেন স্বপ্নের দ্বার।হাভানার ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন থেকে স্নাতক শেষ করে দেল রিও ফ্যাশন ব্যবসা শুরুর আগে থিয়েটার, গ্যালারি এবং উৎসবের জন্য পোস্টার ডিজাইন করতেন। এভাবেই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন ইদানিয়া। তার পথ ধরে এখন কিউবার অন্য নারীরাও এ কাজ করতে সাহস পাচ্ছেন। বিশেষ করে যারা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। ইদানিয়া তাদের রাস্তাটা সহজ করে দিয়েছেন। 

/ফারজানা ফাহমি

 

শিল্পীর কুটিরা জ্ঞানের আলো পাঠাগার

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম
আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৫ পিএম
শিল্পীর কুটিরা জ্ঞানের আলো পাঠাগার
শিল্পী খাতুন। ছবিঃসংগৃহীত।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার আছিম কুটিরা গ্রামে কুটিরা জ্ঞানের আলো পাঠাগার তৈরি করে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন শিল্পী খাতুন। মূলত নিজের উপার্জনের অর্থ দিয়ে নিজ উদ্যোগে তিনি এ পাঠাগার তৈরি করেছেন। যেখানে গ্রামের সব বয়সের মানুষ বই পড়তে আসেন।

একসময় ঢাকায় থাকলেও কোভিডের পর আছিম কুটিরা গ্রামে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন তিনি। কুটিরা ডিএস ক্যাডেট একাডেমিতে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রচুর বই পড়তেন তিনি। তার বই পড়া দেখে স্কুলে আসা অনেক অভিভাবক তার কাছ থেকে বই নিয়ে পড়তেন। আবার ফেরতও দিয়ে যেতেন। তাই মানুষের এমন আগ্রহ দেখে শিল্পী বই জমিয়ে অল্প দিনেই তৈরি করলেন একটি পাঠাগার। এরপর গ্রামের নামেই পাঠাগারের নাম দিলেন কুটিরা জ্ঞানের আলো পাঠাগার।

কুটিরা জ্ঞানের আলো পাঠাগারে ১৫ জন পাঠকের বসার ব্যবস্থা আছে। এখন এর সদস্য সংখ্যা ১৪০। যে কেউ বিনামূল্যে এ পাঠাগারের সদস্য হতে পারেন। শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, গৃহিণীসহ প্রায় সব ধরনের মানুষ পাঠাগারে বই পড়তে আসেন। নিজের উপার্জনের টাকায় কিছু বই কিনেছেন শিল্পী খাতুন। আর কিছু পেয়েছেন উপহার।

শুধু পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেই শিল্পী খাতুনের কাজ থেমে নেই। যতটা সম্ভব মানুষকে সহায়তা করার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ও বিধবাদের সহযোগিতা করেন নিয়মিত। এ ছাড়া শিল্পী খাতুন নিজের গ্রামের মানুষদের চালের কার্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যবসাও করেন শিল্পী। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি একটি মুদি ও মনিহারি দোকান চালু করেন। সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। চাকরির পাশাপাশি মুদি দোকানে বসে স্বামীকে কাজে সহায়তা করেন।

বইপ্রেমী শিল্পী খাতুনের এ উদ্যোগের ফলে গ্রামের অনেক মানুষ তার পাঠাগারে এসে বই পড়ে সময় কাটান। এ দৃশ্য দেখে শিল্পী খাতুন অনেক আনন্দিত হন। তিনি বলেন, এভাবে যদি গ্রামের প্রতিটি অঞ্চলে পাঠাগার স্থাপন করা হয় তবে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ নারীদের কাছে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।

 কুটিরা জ্ঞানের আলো পাঠাগারের প্রায় অধিকাংশ সদস্য নারী। তারা সবাই পাঠাগারে নিয়মিত আসেন এবং পাঠাগারকে কীভাবে আরও সম্প্রসারিত করা যায় সে বিষয়ে মতামত দেন। পাঠাগারের কার্যক্রম ছড়িয়ে দিয়ে আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে এ ধরনের কাজে যুক্ত করা শিল্পী খাতুনের ভবিষ্যৎ চিন্তা। এ জন্য তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

/ফারজানা ফাহমি