ঢাক, ঢোল, শঙ্খ আর উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। আর এই উৎসব ঘিরে মৌলভীবাজার শহরের বেশকয়েকটি পূজামণ্ডপের নান্দনিক মূল ফটকসহ দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা।
শনিবার (২১ অক্টোবর) মহাসপ্তমী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পূজার মূল আনুষ্ঠিকতা। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব।
সকালে শহরের কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি, রামকৃষ্ণ মিশন, আখড়া, দুর্গাবাড়ী, সৈয়ারপুরের ত্রিণয়নী ও আবাহন এবং গীর্জাপাড়ার মহেশ্বরী পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, সময় বাড়ার সঙ্গে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছেই। পূজামণ্ডপের নান্দনিক মূল ফটকসহ দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা দেখে মুগ্ধ তারা।
শহরের ত্রিনয়নী শিববাড়িতে ভারতের মায়াপুর মন্দিরের আদলে মণ্ডপ ও মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে দেবীগঙ্গার প্রতিমা এবং আবাহন পূজামণ্ডপে ৮০ ফুট উচ্চ স্ট্যাচু অব লিবার্টির আদলে মূল ফটকের পাশাপাশি ২৫ ফুট উচ্চতার বিশ্বরূপ প্রতিমা রয়েছে। এ ছাড়া আছে কেদারনাথ মন্দিরের আদলে মহেশ্বরী পূজামণ্ডপসহ নানা ব্যতিক্রমী আয়োজন।
এদিকে কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুরের শিববাড়িতে এবার পাথরের তৈরি প্রায় ২৩ ফুট উঁচু তপ্তকাঞ্চন বর্ণের সহস্রভুজা দুর্গা প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে।
বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, এবার অন্য বছরের তুলনায় শহরের পূজামণ্ডপ গুলোতে বাঁশ, কাপড়, শোলার দ্বারা তৈরি দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা করা হয়েছে।
মহেশ্বরী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ রায় বলেন, ‘সব সময়ই নতুনত্ব কিছু করার চেষ্টা করি, এ ধারবাহিকতায় এবারও সাত্ত্বিক পূজা-অর্চনার পাশাপাশি কেদারনাথ মন্দিরের আদলে আমাদের মণ্ডপের মূল ফটক করা হয়েছে।’
আবাহন পূজামণ্ডপের আয়োজক সজল দাশ বলেন, ‘আমাদের মণ্ডপে ২৫ ফুট উচ্চতা প্রতিমা নির্মাণের মাধ্যমে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধ কাহিনির চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি ৮০ ফুট উচ্চ নান্দনিক বাঁশ ও কাপড়ের তৈরি স্ট্যাচু অব লিবার্টি এবারের থিম।’
ত্রিনয়নী পূজামণ্ডপের সভাপতি শ্রীকান্ত সূত্রধর বলেন, ‘ত্রিনয়নী শিববাড়িতে মায়াপুর মন্দিরের আদলে মণ্ডপ এবং মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে দেবীগঙ্গার প্রতিমাসহ বর্ণিলভাবে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে।’
শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব পালনের জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন বলে জানান, সদর পূজা উদযাপন কমিটির সম্পাদক সুমেশ দাস যীশু।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সম্পাদক মহিম দে মধু জানান, জেলায় এবার ১ হাজার ৩৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদরে ১১৭টি, বড়লেখায় ১৫৩, জুড়িতে ৭১, কুলাউড়ায় ২২২, কমলগঞ্জে ১৬২, রাজনগরে ১৩৮ ও শ্রীমঙ্গলে ১৭৩টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান পিপিএম (বার) জানান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নির্বিঘ্নে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা সম্পন্ন করতে সবধরনের প্রস্তুতি আছে জেলা পুলিশের।
সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ মহাসপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হলো দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান। ২২ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ২৩ অক্টোবর মহানবমী ও ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমী। এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
পুলক/ সাদিয়া/ইসরাত