ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার সদরবেড়া গ্রামে তিন দিনব্যাপী ব্যতিক্রমধর্মী নৌকায় ভিজানো চিতই পিঠার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব শেষ হয় মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মধ্য রাতে।
ওই এলাকার তপন সাধু তার বাড়িতে তিন দশক ধরে এ আয়োজন করে আসছেন। তিনি তপন ওঝা নামেও পরিচিত। ষাটোর্ধ্ব তপন ফকিরের পরিচিতি আছে চিতই পিঠা মেলার আয়োজন করার জন্য।
জানা যায়, নিজ এলাকায় প্রায় তিন যুগ ধরে দুধ-গুড়ের রসে ভেজানো চিতই পিঠা উৎসবের আয়োজন করছেন তপন ফকির। এই উৎসবে তৈরি সব পিঠাই ভেজানো হয় নৌকায়। এই পিঠা উৎসব এলাকায় একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে। এবারের পিঠা উৎসব শুরু হয় রবিবার থেকে যা চলে মঙ্গলবার পর্যন্ত।
সরেজমিন দেখা যায়, ২০টি মাটির চুলায় মাটির পিঠার ছাঁচে গ্রামের বেশ কয়েকজন নারী তৈরি করছেন চিতই পিঠা। পাশেই বড় বড় পাতিলে জ্বাল দেওয়া হচ্ছে দুধ, আরেকটিতে ফুটানো হচ্ছে খেজুরের রস। উঠানের মাঝখানে রাখা হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রং করা একটি নৌকা। নৌকার মাঝখানে পলিথিন বিছানো, কিনারে লাগানো আছে কয়েকটি লাল নিশান। ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে একটি বৈঠা। এই উৎসবকে ঘিরে অনেক দোকানি পসরা সাজিয়েছেন রংবেরঙের নানা খেলনা, জিনিসপত্র, খাবার আর আচার দিয়ে। পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত গ্রামের নারীরা।
তপন ফকির জানান, প্রায় তিন যুগ ধরে চলছে তার এ দুধ-গুড়ে ভেজানো চিতই পিঠার মেলা। প্রতি বছর মাঘ মাসের পূর্ণিমার রাতে শুরু হয় এই উৎসব। তিন দিন ধরে নৌকার মধ্যে দুধ-খেজুরের রসে ভিজিয়ে চিতই পিঠা এলাকাবাসী ও ভক্তদের খাওয়াতে হবে। তপন ফকিরের বিশ্বাস, এতেই বাড়বে দৈবশক্তি।
তপনের ভাষায়, সেই বিশ্বাস থেকে প্রতি বছর এ সময় তিনি গ্রামবাসী ও ভক্তদের নৌকায় ভেজানো দুধ চিতই পিঠা খাওয়ানোর আয়োজন করে আসছেন।
জানা গেছে, তপন ফকিরের এই পিঠা উৎসব পরিচিত দুধ চিতইয়ের মেলা নামে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শুরু হয় পিঠা খাওয়ার আয়োজন। সন্ধ্যার পর পাতিলে দুধ আর খেজুরের রস মিশিয়ে ঢেলে দেওয়া হয় নৌকায়। এর মধ্যে ডুবিয়ে দেওয়া হয় চিতই পিঠা। বাটিতে তুলে পরিবেশন করা হয় ভক্ত ও দর্শনার্থীদের মাঝে।
লিয়াকত নামে একজন বলেন, ‘প্রতিদিন মেলায় প্রায় ৫ মণ দুধ, ১ মণ খেজুরের রস এবং ১০ হাজার পিস চিতই পিঠা ভেজানো হয়। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় খাওয়া, চলে গভীর রাত পর্যন্ত। প্রতিদিন আয়োজনের পিঠা শেষ হয়ে যায়।’
উৎসব দেখতে স্থানীয়রা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ভিড় করে।
তালমা বাজারের ব্যবসায়ী গোপাল বলেন, ‘তপন সাধুর বাড়িতে পিঠা খাওয়ার এরকম আয়োজন গত তিন দশক ধরে হয়ে চলছে। অনেকে তার কাছে এসে ভালো হয়ে যায়। আমরা যতদূর জানি তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আয়োজন করে পিঠা খাওয়ান মানুষকে।’
ওই গ্রামের বাসিন্দা হারুন বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর এখানে পিঠা খেতে আসি। একদম গরম ভেজানো পিঠা। খুবই সুস্বাদু খেতে।’
তালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি তিন দিনব্যাপী এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। স্থানীয়রা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন এই পিঠা উৎসবে যোগ দিতে।’
সঞ্জিব দাস/সাদিয়া নাহার/