উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে চান সিলেটের বিশ্বনাথের তাহিয়া। কিন্তু শিক্ষা ভিসায় দেশের বাইরে কোনো দেশে আবেদনই করতে পারছেন না তিনি। কারণ ২০২০ সালে তিনি এইচএসসি পাস করলেও এখনো সেই সনদ হাতে পাননি।
তাহিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘২০২০ সালে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আশুগঞ্জ আদর্শ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে আমি এইচএসসি পাস করেছি। এরপর আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মার্কশিট দেওয়া হলে আমি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজে স্নাতকে ভর্তি হই। আমি চেয়েছিলাম যেহেতু এখন সুযোগ আছে তাই উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করব। কিন্তু আমার এইএসসি পাশের সনদ না থাকায় আবেদন করতে পারছি না।’
তাহিয়ার মতো আশুগঞ্জ আদর্শ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা ২০ জন শিক্ষার্থী একই ধরনের বিড়ম্বনায় পড়েছেন। জানা যায়, স্কুল থেকে কলেজে রূপ নেওয়ার পর ২০২০ সালে প্রথম আশুগঞ্জ আদর্শ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসির প্রথম ব্যাচে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করানো হয়। ওই ব্যাচে ছিলেন ২০ জন শিক্ষার্থী। তখন করোনাকাল থাকায় পরীক্ষা গ্রহণ না করে সবাইকে পাস করে দেওয়া হয়। এরপর বোর্ডের দেওয়া মার্কশিট শিক্ষার্থীদের দেয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শিক্ষার্থীদের বোর্ডের সার্টিফিকেট দিতে পারেনি আশুগঞ্জ আদর্শ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সনদ না পাওয়া এক শিক্ষার্থীর বড় ভাই রফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বহুবার আমরা প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা সার্টিফিকেট আসেনি, এলে দেব এরকম কথা বলে সময়ক্ষেপণ করছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য আমার বোনকে বিদেশে পাঠানোর চিন্তা ছিল। কিন্তু সার্টিফিকেট না পাওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি।’
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ আদর্শ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেন্টু আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের কলেজ শাখার কেন্দ্র ছিল বিশ্বনাথ সরকারি কলেজে। তাই ওই কলেজ থেকেই আমাদের শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা। কিন্তু তারা ২০২০ সালের আমাদের প্রথম ব্যাচের ২০ শিক্ষার্থীর কাউকেই সার্টিফিকেট দেয়নি। তাই আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বিশ্বনাথ কলেজ কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। কিন্তু তারা আমাদের পরিষ্কার করে কিছু বলছে না।’
বিশ্বনাথ সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক মো. রোকনুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বলতেছেন তাদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমাদের অফিস কতৃর্পক্ষ বলছে তারা দিয়েছে। এখন তারা যদি নিয়ে থাকেন তাহলেতো অবশ্যই রিসিভকপি থাকবে আমাদের কাছে। এরপর আমি অফিস সহকারীর সঙ্গে নিজেও খুঁজেছি। কিন্তু তারা যে সার্টিফিকেট রিসিভ করেছে ওই খাতাটিও পাইনি। এদিকে গত বন্যায় আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠে কোমর সমান। স্টিলের আলমেরিগুলোর তিন তাক পর্যন্ত পানি উঠেছিল। ওইসময় অনেক কাগজপত্র নষ্ট হয়েছে। তখন হয়তো এই সার্টিফিকেটগুলো নষ্ট হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য এই সার্টিফিকেটগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখন এটা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব বোর্ডে আবার আবেদন করে সার্টিফিকেটগুলো তোলা। এজন্য কিছু নিয়ম আছে। এখন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা আমি জানি না।’
বিশ্বনাথ সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মানিক মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘তাদের বলেছি আমি বিগত দুই বছর দায়িত্বে ছিলাম। আমার কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ তারা করেনি। তারা আমার অফিসে যোগাযোগ করেছে কিন্তু আমাকে জানায়নি।’