দেশে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়া নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জীবন। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। আর ঠিক এ সময়ই ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছে সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মনুষ্যত্ব ফাউন্ডেশন’। এরই মধ্যে সংগঠনটি সুনামগঞ্জে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তারা প্রথম রোজা থেকে তেল, ডাল, পেঁয়াজ, খেজুর ও চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কম দামে বিক্রি শুরু করেছে। একই সঙ্গে রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে ভর্তুকি দিচ্ছে।
উদ্যোক্তারা জানান, মনুষ্যত্ব ফাউন্ডেশনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে যোগ দিয়েছেন একদল স্বেচ্ছাসেবী। কোনো লাভ ছাড়া, কম মূল্যে বিক্রি করছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য। ক্রেতাদের জন্য চাল, ডাল, ছোলা, মোটর, খেজুর, আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও তেলসহ পণ্যসামগ্রী বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর শহরের আলফাত উদ্দিন স্কয়ার (ট্রাফিক পয়েন্ট) আব্দুল মজিদ প্লাজার তৃতীয় তলায় মনুষ্যত্ব ফাউন্ডেশন দোকানে মানুষের প্রচুর ভিড় জমে আছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ও রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই দোকান খোলা থাকে। ক্রেতারা পণ্যের তালিকা দিলে, দোকানের স্বেচ্ছাসেবকরা ওই তালিকা অনুযায়ী ক্রেতাদের পণ্যগুলো দেন। এ দোকানে প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০ টাকা, দেশি রসুন ১৩৫ টাকা, আদা ২০০ টাকা, চিনি ১১০ টাকা, ছোলা ১০৫ টাকা, মসুরি ডাল ১০৫ টাকা। এভাবে পণ্যগুলো বাজার মূল্যের থেকে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ফাউন্ডেশনের কিছু প্রাইম কার্ডধারীরা ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কম দামে পণ্য কিনতে পারছেন। কম দামে এসব পণ্য কিনতে পেরে খুশি সাধারণ ক্রেতারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানে স্বস্তিতে পণ্য কিনে লাভবান হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
ক্রেতা সালেহীন কবির বলেন, ‘অন্য দোকান থেকে এই দোকানে কম দামে জিনিস পাওয়া যায়। তারা নিজেদের টাকা ভর্তুকি দিয়ে অন্যদের পণ্য দিচ্ছেন। এটা একটা ভালো উদ্যোগ।’
পৌরশহরের হাছননগরে বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘রমজান মাসে আরব বিশ্বে সব পণ্যের দাম কমিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। আমাদের দেশে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। এক্ষেত্রে মনুষ্যত্ব ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’
মনুষ্যত্ব ফাউন্ডেশনের সদস্য আহমেদ ইমতিয়াজ ফাহিম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত পণ্যগুলো বাজারমূল্য থেকে কম মূল্যে বিক্রি করছি। প্রাইম কার্ডধারীরা আরও কম দামে পণ্য পাচ্ছেন। আমরা প্রায়ই প্রতিটি পণ্যে ভর্তুকি দিচ্ছি।’
ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আল মাহমুদ রাহী বলেন, ‘মনুষ্যত্ব ফাউন্ডেশন একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। রক্তদান, লাশ দাফন, অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ আমরা করে থাকি। আমরা এবার রোজায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষকে সেবা দিতে চেয়েছি। এ জন্য আমরা এই দোকান দিয়েছি, যেন সব শ্রেণির মানুষ এখানে বাজার করতে পারেন। এর মধ্যে আমরা কিছু নিম্ন আয়ের পরিবার খুঁজে বের করেছি। তাদের কার্ডের আওতায় আনা হয়েছে। তারা আমাদের দোকান থেকে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কম দামে পণ্য কিনতে পারেন।’