সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দের নির্দেশে বারকি নৌকা ডুবিয়ে দেওয়ার ঘটনার বিচার দাবি করেছেন বারকি শ্রমিকরা।
ক্ষতিগ্রস্ত বারকি নৌকার ক্ষতিপূরণ ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবিতে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়ে শ্রমিকরা বলেছেন, বন্যাকবলিত হওয়ার সময় কথিত পাথর চুরির অপবাদে বারকি নৌকা ডুবিয়ে দেওয়া চরম অমানবিকতা। এ রকম অমানবিক ঘটনার জন্য দায়ী কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওকে দুঃখ প্রকাশ করে বারকি শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে এ দাবি মানা না হলে বারকি চলাচল অধ্যুষিত এলাকা কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট-কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
রবিবার (২ জুন) বিকেলে কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদের সেতুর পূর্বপাড়ে ‘বারকি বাঁচাও’ আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
আন্দোলনের সভাপতি ও প্রবীণ বারকি শ্রমিক ফয়জুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নবগঠিত সংগঠনের উপদেষ্টা আবুল হোসেন, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি কবির হোসেন, সহসভাপতি আসাদ মিয়া, বারকি বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যসচিব মাহফুজুর রহমান মাহফুজ, গোয়াইনঘাট উপজেলা খেলাফত মজলিশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাসান আহমদ, পাথর ব্যবসায়ী মইনুদ্দিন মিলন, কোম্পানীগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের এমরান আলী, বিশিষ্ট মুরব্বি ইমাম হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের রমজান আলী, বারকি শ্রমিক সুরুজ আলী, ব্যবসায়ী ইয়াসিন আলী, আবদুল হাসিম, মালিক মিয়া, হেলাল আহমদ, রাজীব আহমদ, আমির আলী, বাবুল মিয়া, উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, যুবদল নেতা শরীফ আহমদ প্রমুখ।
সংগঠন থেকে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ধলাই নদে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দের নির্দেশে বারকি নৌকা ডুবিয়ে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বন্যাকবলিত হওয়ার মধ্যে এ রকম কাণ্ডকে অমানবিক বলে মন্তব্য করছেন অনেকে। এ ঘটনাটি নিয়ে শনিবার (১ জুন) খবরের কাগজের অনলাইন ও ছাপা সংস্করণে ‘ইউএনওর বারকি ডুবাও কাণ্ডে তোলপাড়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার বারকি শ্রমিকরা জরুরি সভা করে বারকি বাঁচাও আন্দোলন নামে একটি আঞ্চলিক আন্দোলনের নতুন সংগঠন করেন। সংগঠনটির প্রথম সমাবেশ ছিল এটি।
এর আগে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ধলাই নদের বারকি শ্রমিকসহ পেশাজীবী বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিয়ে ১০১ সদস্যের বারকি বাঁচাও আন্দোলনের কমিটি গঠন করা হয়। আন্দোলনের ব্যানারে প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ধলাই নদের এপার-ওপারে মানববন্ধনের আদলে বারকি-বন্ধন করার ঘোষণা থাকলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শুধু সমাবেশ করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, এ ঘটনার আগে ইউএনওকে বহনকারী ইঞ্জিন নৌকা আরও দুটো বারকি নৌকা ডুবিয়েছে। এর আগে আরও একাধিক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বন্যাকবলিত হওয়ার সময়ে ধলাই নদে পাহাড়ি ঢল নামার দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার মধ্যে বারকি নৌকা ডুবানোয় শ্রমিকদের মৃত্যুর শঙ্কা ছিল। আমরা এ ঘটনাটি হত্যাচেষ্টা হিসেবে দেখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাই। পাশাপাশি আগামী ৫ জুনের মধ্যে এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করছি। না হলে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’