মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার দেওয়ানদীঘি-পালপুর সড়ক। স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের পাঁচ কিলোমিটার অংশ এলাকাবাসীর ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হয়েছে। বালুবোঝাই বড় বড় ট্রাক চলাচল করায় এই সড়কের টেংরা-তারাপাশা অংশে ছোট-বড় কয়েকশ গর্ত তৈরি হয়েছে। এই গর্তের কারণে স্থানীয়রা যাতায়াত করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন। ভাঙা রাস্তার দোহাই দিয়ে অটোরিকশার ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ নারী ও বৃদ্ধদের।
স্থানীয়রা বলছেন, মনু নদের তারাপাশা বালুমহাল থেকে প্রতিদিন বালুভর্তি প্রচুর ট্রাক এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। জেলা সদরের পাশাপাশি এই ট্রাক বালু নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে। ওই বালুমহাল থেকে সরকার প্রতিবছর দেড় কোটি টাকার মতো রাজস্ব আয় করে। কিন্তু এই সড়ক সংস্কার করতে খরচ হবে অন্তত ১২ কোটি টাকা। এতে লাভের চেয়ে রাষ্ট্রের লোকসানের পরিমাণ বেশি হবে। সরকারের খরচ কমানোর পাশাপাশি এলাকাবাসীর ভোগান্তির কথা চিন্তা করে বালুমহালটি বন্ধের পাশাপাশি আঞ্চলিক সড়কে বড় ট্রাকের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাস্তার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। সংস্কারের পর রাস্তাটি যেন ভালো থাকে সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সড়ক দিয়ে রাজনগর উপজেলার কামারচাক, কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার, কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করেন। এ ছাড়াও রাজনগর-কমলগঞ্জের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক।
সম্প্রতি দেওয়ানদীঘি-পালপুর সড়কের টেংরা-তারাপাশা অংশ ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের করতল, সালন, হরিপাশা, কাচারি, তারাপাশা বাজারের মধ্যে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গর্ত। যানবাহন চলাচলের সময় সেগুলো কাত হয়ে, হেলেদুলে কোনোরকম গর্তগুলো অতিক্রম করছে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাঙাচোরা এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত বালুবোঝাই করা বড় বড় ট্রাক চলাচল করে। এতে ভেঙে যাওয়া সড়ক আরও ভেঙে যাচ্ছে। টেংরা ইউনিয়নের করতল থেকে কামারচাক ইউনিয়নের তারাপাশা বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। এতে ছোট যানবাহনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। ভাঙা সড়কের কারণে গাড়িচালকদের বাড়তি খরচ হচ্ছে।
স্থানীয় তারাপাশা বাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, সড়ক ভাঙাচোরার অজুহাতে গাড়িচালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক রিপন মিয়া বলেন, ‘এই রাস্তার অবস্থা খুবই ভয়াবহ। দিনে ও রাতে বড় বড় বালুর গাড়ি আসা-যাওয়া করায় এই রাস্তা ভেঙে গেছে। মুমূর্ষু রোগী ও গর্ভবতী নারীদেরও যাতায়াতে বেগ পেতে হয়।’
ট্রাকচালক ফয়সাল মিয়া ও তারেক জানান, প্রতিদিন রাতে ৫০ থেকে ৬০টি বালুবোঝাই গাড়ি এই সড়কে চলাচল করে। এসব গাড়িতে জেলা শহর ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় বালু নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান তারা।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর নতুন করে মনু নদের তারাপাশা বালুমহালটি আবারও ইজারা দেওয়া হবে। বালুমহাল থেকে সরকার রাজস্ব পায় এক কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, টেংরা-দেওয়ানদীঘি-তারাপাশা অংশের প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য টেন্ডার অনুমোদন হয়েছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১২ কোটি টাকা।
স্থানীয়দের মতে, তারাপাশা বালুমহাল থেকে সরকার বছরে দেড় কোটি টাকা আয় করে; কিন্তু এই বালুমহালে আসা-যাওয়া করা ভারী যানবাহনের কারণে ভেঙে যাওয়া সড়ক মেরামত করতে ব্যয় হচ্ছে ১২ কোটি টাকা। তাই সরকারি ব্যয় ও জনদুর্ভোগ কমাতে বালুমহালটি বন্ধের দাবি জানান তারা।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা জানান, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ রাস্তার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। সংস্কারের পর রাস্তাটি যেন ভালো থাকে সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক ড. ঊর্মি বিনতে সালাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বালুমহাল সরকারিভাবেই ইজারা দেওয়া হয়। এই ইজারা প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠাব এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। ওভারলোডেড কোনো ট্রাক যেন এই সড়কে চলাচল না করে, সেটা আমরা দেখব।’
মৌলভীবাজার স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘রাস্তাটির টেন্ডার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। এ রাস্তা দিয়ে বালুবোঝাই যানবাহন চলাচলের যে অভিযোগ রয়েছে, এ ব্যাপারে এলাকাবাসীকেই সোচ্চার হতে হবে।’