ইশ! কী সুন্দর। ঠিক যেমনটি আমি চাইতাম। চারপাশ দারুণ ফুলে সাজানো। ফুলের ঘ্রাণে সুবাসিত সবখান। এটা কি পরীর রাজ্য?
আমি ভুল দেখছি না তো? চশমাটা খুলে একটু মুছে আবার পরলাম। না, আমি ভুল দেখছি না। এটা তো সত্যিই পরীর রাজ্য। আমাকেই তো পরীরা ঘিরে আছে।
কখন পরলাম এত সুন্দর পরীর জামা!
ওমা! আমি দেখি নীলপরী। মাথায় পরীর মুকুট। সারা গায়ে ঝিকিমিকি গহনা পরানো। আমি তো নিজেই নিজেকে চিনতে পারছি না।
হঠাৎ এক পরীর ডাকে ঘোর কাটল।
ওগো নীলপরী, তোমার সকালের নাশতা রেডি। তাড়াতাড়ি খেতে এসো প্লিজ।
আমি বুঝতে পারছি না কাকে বলছে। তাই চুপচাপ বসে রইলাম। পরে পরীরা এসেই আমাকে নাশতার টেবিলে নিয়ে গেল।
ইয়াম্মি! কত মজার মজার খাবার। এগুলো সবই আমার প্রিয়।
পরীরা বলে উঠল, তুমি খাও। লাগলে আরও দেব।
খাওয়া শেষ। পরীরা আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো। কিন্তু আমার জানি কেমন কেমন লাগছে। ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল। আমি তো আজ স্কুল মিস করেছি।
আম্মু আমাকে বকা দেবে- কথাটি জোরেই বলে ফেললাম।
পরীরা শুনে হেসে উঠল।
এখানে তোমার আম্মু নেই। এখানে কেউ কাউকে বকে না। এটা হলো খুশির রাজ্য, ইচ্ছার রাজ্য। এখানে যা খুশি তাই করা যায়। এখানে কোনো শাসন-বারণ নেই।
যাক বাবা, বাঁচা গেল। থেকে থেকে আর আম্মুর ভয়ে কাঁচুমাচু হতে হবে না। এখানে আমি স্বাধীন। আমি এখন আমার খুশির রাজ্যে। আম্মু চাইলেই বকতে পারবে না। কী মজা! কী মজা!
এখানে কত ফুল! লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি, সাদা সব ফুলই আছে। দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেল। পরীরা আমাকে ফুলে ফুলে সাজাল। এখন আমি ফুলপরী!
ঘোরা শেষে পরীর রাজ্যে ফিরে এলাম। দুপুর হয়ে গেল। এখন গোসলের পালা। পরীরা আমাকে ঝর্ণায় নিয়ে গেল। ঝরনার ঝিরঝির পানি দেখে আমি নেমে পড়লাম। ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে ভিজছি তো ভিজছি। মন বলছে এখান থেকে আর যাব না। আজ আমি সারা দিন গোসল করব। আম্মু তো নেই। তাড়াতাড়ি করো, বাথরুম থেকে বের হ, ঠাণ্ডা লাগবে- এসব বলে বলে আর কেউ বকবক করবে না।
আহা কী আনন্দ কী আনন্দ!
যা খুশি তাই করব
ঝর পানি ধরব।
আজকে সারা দিন
স্বাধীন গো স্বাধীন।
গোসল শেষ। নতুন জামা পরলাম। এখন আমি লালপরী।
খাবারের গন্ধে জিহ্বায় পানি চলে এল। লোভ সামলাতে না পেরে খাবার টেবিলে গেলাম। পরীরা তো আমাকে দেখে অবাক। কেননা, সকালে জোর করে খেতে এনেছিল। এখন একাই হাজির। সবাই খুব ব্যস্ত। সব খাবার আমার সামনে রাখল। সবগুলোই আমার প্রিয়। কী যে মজা লাগছে না। কোনো সবজি-টবজি নেই। এখানে শুধু মাছ, মাংস আর ডিমের রেসিপি। বিশ্রী কোনো সবজি-টবজি নেই। আম্মুও নেই। আমাকে কেউ আর সবজি খেতেও বলছে না। ইচ্ছামতো পেট পুরে খেলাম। ইয়াম্মি টেস্ট!
খাওয়াটা বেশিই হয়েছে। এখন একটু ঘুমানো দরকার। যাক এবার আম্মু খুশি হবে। দুপুরে ঘুমানোর জন্য কত কী করে! সত্যি সত্যি বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে গেলাম। আহা কী শান্তির ঘুম!
এই সিমি ওঠ, আর কত ঘুমাবি?
-উ.....ম আম্মু, আরেকটু ঘুমাই না।
- না, আর ঘুমালে স্কুলে লেট হবে।
স্কুলের কথা শুনেই আমি লাফিয়ে উঠলাম। আমি তো পরীর রাজ্যে ছিলাম। সেখানে আম্মু, স্কুল, সবজি, শাসন-বারণ কিছুই নেই।
-কীরে, ধ্যানে বসলি কেন?
-ধ্যাৎ আম্মু, তুমি যে কী করো না। দিলে তো আমার স্বপ্নটা ভেঙে। কী সুন্দর পরীর রাজ্যে ছিলাম।
- চলো সোনামণি, আমিও তোমাকে পরীর রাজ্যে নিয়ে যাব।
-হুম, শুধু পড়া আর পড়া। এটা করো, ওটা করো, ওখানে যাস না- তোমার রাজ্যে তো এসবই।
সিমির মা হো হো করে হেসে দিলেন।
-হ্যাঁ, সোনামা। নিয়ম মেনে পড়াশোনা শিখে বড় হতে হবে। তবেই না মনের মতো রাজ্য পাবে। তখন আর স্বপ্ন দেখতে হবে না, তখন তুমি নিজেই পরীর রাজ্য বানাতে পারবে।
-সত্যি বলছ মা?
-হ্যাঁ। সত্যি বলছি আমার সিমি সোনা।
-তাহলে চলো, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে স্কুলে যাই। আমি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে পরীর রাজ্য বানাতে চাই।
মেহেদী আল মাহমুদ