বাবলু আজ স্কুলে একটা ডায়েরি নিয়ে এসেছে। চামড়ার বাঁধাই করা লাল ডায়েরি। সবার সে কী উৎসাহ! এমনিতে বাবলু যাই আনে স্কুলে, সবাই উৎসাহ নিয়ে দেখে। তার ওপর ওর ব্যাগ যেন আস্ত একটা কারখানা। দুনিয়ার সব যন্ত্রপাতি ওর ব্যাগে। পুরোনো চুম্বক, জাহাজের আতশ কাঁচ, স্ক্রুড্রাইভার, পুরোনো মোটর আরও কত কী! ক্লাসে সবাই ব্যাগে যত কম আনতে পারে তত খুশি। কিন্তু বাবলু প্রতিদিন সব বই নিয়ে আসে। সাথে তার যন্ত্রপাতি। ব্যাগ তো নয় যেন আর্মির ট্রেনিং ব্যাগ!
আজ দারুণ একটা জিনিস এনেছে বাবলু। লাল চামড়ার বাঁধাই করা ডায়েরিটায় একটা লক সিস্টেম আছে। অনেকটা লাগেজ ব্যাগের পাসওয়ার্ড লকের মতোই। তবে এখানে নাম্বারের বদলে ইংরেজি অক্ষর দেওয়া। বাবলু টেবিলের নিচে লুকিয়ে সাবধানে তালাটা খুলল। আমরা দেখতে পেলাম না। ডায়েরিটার মোটা বোর্ডের কভার খুলে আমাদের সামনে ধরল বাবলু। বলল, কিছু দেখতে পাচ্ছিস তোরা?
আমরা দুটো সাদা পাতা ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না। তাই মাথা নেড়েই জানালাম কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
এখানেই লেখা আছে ডায়েরিটার পাসওয়ার্ড।
কই কিছুই দেখা যাচ্ছে না তো। - আমরা আরও ভালো করে চোখ বুলালাম। কিছুই নেই দুটো সাদা পাতা ছাড়া।
আরে বোকা, কালো কালিতে নয়, অদৃশ্য কালিতে লেখা আছে পাসওয়ার্ড। - এ কথা বলার পর বাবলু এবার সবার দিকে তাকিয়ে ঘোষণা দিল - শোন, সবাই। আমার এই ডায়েরিটা নতুন। বেশ দাম দিয়ে এই রকম দুটো কিনেছি। যে এই দুটো পাতা থেকে ডায়েরিটার পাসওয়ার্ড বের করে আবার নতুন পাসওয়ার্ড দিতে পারবে, তাকে এই ডায়েরিটা দিয়ে দেব।
সবাই হই-রই করে উঠল। দারুণ ব্যাপার তো। সবাই ডায়েরিটার পাসওয়ার্ড বের করতে চায়, কিন্তু কীভাবে?
আমি ডায়েরিটা নিলাম। ওই পাতা দুটো তো একদম সাদা। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমি অন্য পাতাগুলোও উল্টেপাল্টে দেখলাম, কিন্তু কিছুই নেই। এখন এই অদৃশ্য কালি দৃশ্যমান করতে হবে।
বাবলুর আতশ কাচ নিয়ে কিছুক্ষণ চেষ্টা করে দেখলাম। একটা অক্ষরও দেখা যাচ্ছে না। ডায়েরির পাতা দুটো হাত দিয়ে ছুঁতেই একটা খটমটে খসখসে ভাব অনুভূত হলো। ঠিক তখনই মনে পড়ল অদৃশ্য কালি দেখার উপায়টা।
বাবলুর কাছে একটা টর্চ ছিল। সেটার দুটো অংশ। এক পাশে বড় লাইট, অন্য পাশে নীল রঙের একটা ছোট লাইট। নীল রঙের লাইটটা জ্বালিয়ে ডায়েরির কাগজের ওপর ধরলাম।
ঠিক তখনই ধীরে ধীরে অদৃশ্য লেখাগুলো ভেসে উঠল কাগজে। অদৃশ্য কালিটা লেবুর রস দিয়ে বানানো। ডায়েরির খসখসে পাতা ধরেই বুঝেছি। এই অদৃশ্য কালি সূর্যের সামনে কিংবা গরম আলোর সামনে ধরলেই দৃশ্যমান হয়। কিন্তু এ কী! এখানে তো পাসওয়ার্ড নেই। একটা ছড়া লেখা। এতক্ষণ যারা আমার চারপাশ ঘিরে পাসওয়ার্ড বের করা দেখছিল উৎসুক হয়ে, তারাও হতাশ হয়ে ফিরে গেল। আমি হতাশ হয়ে ছড়া পড়লাম। মনে হচ্ছে ছড়াতেই আছে পাসওয়ার্ডটা।
লাল ডায়েরির পাসওয়ার্ড
এই ছড়াতেই লেখা,
খুঁজে নাও চোখ বুলিয়ে
চার অক্ষরে আঁকা।
ইংরেজি বর্ণের চারটি অক্ষর
মিলিয়ে নিও শব্দে,
যায় না ধরা এই জিনিসটি
হয় না কোনো জব্দে।
আকার নেই আকৃতি নেই
তবুও সে চলে,
আটকাতে কেউ পারে না,
পারে না কোনো বলে।
কেউ তাকে হাতে দেখে
কেউ দেখে দেয়ালে,
কাঁটায় চলে, সংখ্যায় চলে,
চলে আপন খেয়ালে।
ছড়ার প্রথম পঙক্তিতে বোঝা যাচ্ছে, পাসওয়ার্ডটি চার অক্ষরের হবে। পাসওয়ার্ডটা যে ইংরেজিতে, সেটা দ্বিতীয় পঙক্তিতে লেখা। আরও লেখা পাসওয়ার্ডটি এমন জিনিস যেটাকে ধরাছোঁয়া যায় না। আবার এর আকার-আকৃতিও নেই। কী হতে পারে এমন জিনিস। অনেক কিছুই তো আছে যা ধরা যায় না, কিন্তু ছড়ায় লেখা। তাকে কেউ হাতে দেখে, আবার দেয়ালেও দেখে। আকার-আকৃতি না থাকলে কীভাবে দেখবে। কী হতে পারে? কাঁটায় চলে, আবার সংখ্যায়ও চলে। ঠিক তখনই ক্লাসের দেয়াল ঘড়িটার দিকে চোখ পড়ল। টিক টিক করে কাঁটা ঘুরে সময় চলছে। সময় চলে সংখ্যায়। তাকে ধরে রাখা যায় না। আকার-আকৃতি নেই। খুশিমনে ডায়েরিটা লক করে দিলাম। এবার পাসওয়ার্ড দিলাম TIME। খুলে গেল ডায়েরি। পাসওয়ার্ডটা সঠিক। এবার নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে বাবলুকে দেখাব।
মেহেদী আল মাহমুদ