ঢাকা ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ডায়েরির পাজল

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৫ পিএম
ডায়েরির পাজল
আঁকা মাসুম

বাবলু আজ স্কুলে একটা ডায়েরি নিয়ে এসেছে। চামড়ার বাঁধাই করা লাল ডায়েরি। সবার সে কী উৎসাহ! এমনিতে বাবলু যাই আনে স্কুলে, সবাই উৎসাহ নিয়ে দেখে। তার ওপর ওর ব্যাগ যেন আস্ত একটা কারখানা। দুনিয়ার সব যন্ত্রপাতি ওর ব্যাগে। পুরোনো চুম্বক, জাহাজের আতশ কাঁচ, স্ক্রুড্রাইভার, পুরোনো মোটর আরও কত কী! ক্লাসে সবাই ব্যাগে যত কম আনতে পারে তত খুশি। কিন্তু বাবলু প্রতিদিন সব বই নিয়ে আসে। সাথে তার যন্ত্রপাতি। ব্যাগ তো নয় যেন আর্মির ট্রেনিং ব্যাগ!
আজ দারুণ একটা জিনিস এনেছে বাবলু। লাল চামড়ার বাঁধাই করা ডায়েরিটায় একটা লক সিস্টেম আছে। অনেকটা লাগেজ ব্যাগের পাসওয়ার্ড লকের মতোই। তবে এখানে নাম্বারের বদলে ইংরেজি অক্ষর দেওয়া। বাবলু টেবিলের নিচে লুকিয়ে সাবধানে তালাটা খুলল। আমরা দেখতে পেলাম না। ডায়েরিটার মোটা বোর্ডের কভার খুলে আমাদের সামনে ধরল বাবলু। বলল, কিছু দেখতে পাচ্ছিস তোরা?
আমরা দুটো সাদা পাতা ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না। তাই মাথা নেড়েই জানালাম কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
এখানেই লেখা আছে ডায়েরিটার পাসওয়ার্ড।
কই কিছুই দেখা যাচ্ছে না তো। - আমরা আরও ভালো করে চোখ বুলালাম। কিছুই নেই দুটো সাদা পাতা ছাড়া।
আরে বোকা, কালো কালিতে নয়, অদৃশ্য কালিতে লেখা আছে পাসওয়ার্ড। - এ কথা বলার পর বাবলু এবার সবার দিকে তাকিয়ে ঘোষণা দিল - শোন, সবাই। আমার এই ডায়েরিটা নতুন। বেশ দাম দিয়ে এই রকম দুটো কিনেছি। যে এই দুটো পাতা থেকে ডায়েরিটার পাসওয়ার্ড বের করে আবার নতুন পাসওয়ার্ড দিতে পারবে, তাকে এই ডায়েরিটা দিয়ে দেব।
সবাই হই-রই করে উঠল। দারুণ ব্যাপার তো। সবাই ডায়েরিটার পাসওয়ার্ড বের করতে চায়, কিন্তু কীভাবে? 
আমি ডায়েরিটা নিলাম। ওই পাতা দুটো তো একদম সাদা। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমি অন্য পাতাগুলোও উল্টেপাল্টে দেখলাম, কিন্তু কিছুই নেই। এখন এই অদৃশ্য কালি দৃশ্যমান করতে হবে।
বাবলুর আতশ কাচ নিয়ে কিছুক্ষণ চেষ্টা করে দেখলাম। একটা অক্ষরও দেখা যাচ্ছে না। ডায়েরির পাতা দুটো হাত দিয়ে ছুঁতেই একটা খটমটে খসখসে ভাব অনুভূত হলো। ঠিক তখনই মনে পড়ল অদৃশ্য কালি দেখার উপায়টা।
বাবলুর কাছে একটা টর্চ ছিল। সেটার দুটো অংশ। এক পাশে বড় লাইট, অন্য পাশে নীল রঙের একটা ছোট লাইট। নীল রঙের লাইটটা জ্বালিয়ে ডায়েরির কাগজের ওপর ধরলাম।
ঠিক তখনই ধীরে ধীরে অদৃশ্য লেখাগুলো ভেসে উঠল কাগজে। অদৃশ্য কালিটা লেবুর রস দিয়ে বানানো। ডায়েরির খসখসে পাতা ধরেই বুঝেছি। এই অদৃশ্য কালি সূর্যের সামনে কিংবা গরম আলোর সামনে ধরলেই দৃশ্যমান হয়। কিন্তু এ কী! এখানে তো পাসওয়ার্ড নেই। একটা ছড়া লেখা। এতক্ষণ যারা আমার চারপাশ ঘিরে পাসওয়ার্ড বের করা দেখছিল উৎসুক হয়ে, তারাও হতাশ হয়ে ফিরে গেল। আমি হতাশ হয়ে ছড়া পড়লাম। মনে হচ্ছে ছড়াতেই আছে পাসওয়ার্ডটা।

লাল ডায়েরির পাসওয়ার্ড
এই ছড়াতেই লেখা,
খুঁজে নাও চোখ বুলিয়ে
চার অক্ষরে আঁকা।

ইংরেজি বর্ণের চারটি অক্ষর
মিলিয়ে নিও শব্দে,
যায় না ধরা এই জিনিসটি
হয় না কোনো জব্দে।

আকার নেই আকৃতি নেই
তবুও সে চলে,
আটকাতে কেউ পারে না,
পারে না কোনো বলে।

কেউ তাকে হাতে দেখে
কেউ দেখে দেয়ালে,
কাঁটায় চলে, সংখ্যায় চলে,
চলে আপন খেয়ালে।

ছড়ার প্রথম পঙক্তিতে বোঝা যাচ্ছে, পাসওয়ার্ডটি চার অক্ষরের হবে। পাসওয়ার্ডটা যে ইংরেজিতে, সেটা দ্বিতীয় পঙক্তিতে লেখা। আরও লেখা পাসওয়ার্ডটি এমন জিনিস যেটাকে ধরাছোঁয়া যায় না। আবার এর আকার-আকৃতিও নেই। কী হতে পারে এমন জিনিস। অনেক কিছুই তো আছে যা ধরা যায় না, কিন্তু ছড়ায় লেখা। তাকে কেউ হাতে দেখে, আবার দেয়ালেও দেখে। আকার-আকৃতি না থাকলে কীভাবে দেখবে। কী হতে পারে? কাঁটায় চলে, আবার সংখ্যায়ও চলে। ঠিক তখনই ক্লাসের দেয়াল ঘড়িটার দিকে চোখ পড়ল। টিক টিক করে কাঁটা ঘুরে সময় চলছে। সময় চলে সংখ্যায়। তাকে ধরে রাখা যায় না। আকার-আকৃতি নেই। খুশিমনে ডায়েরিটা লক করে দিলাম। এবার পাসওয়ার্ড দিলাম TIME। খুলে গেল ডায়েরি। পাসওয়ার্ডটা সঠিক। এবার নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে বাবলুকে দেখাব।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

দুরন্ত ছড়া

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পিএম
দুরন্ত ছড়া
আঁকা মাসুম


অমর তারা
সারমিন চৌধুরী

দেশের তরে অকাতরে
দিল যারা প্রাণ,
তাদের স্মৃতি হৃদয়জুড়ে 
রবে চির অম্লান।

বীরের বেশে যুদ্ধ করে
মরেও অমর তাই,
তাদের রক্তের বিনিময়ে
বিজয় জাতি পাই।

তারা শহিদ তারা গর্ব
গাই তাদের গান,
ভুলব না মোরা কভু
তাদের বলিদান।

 

 


এ দেশ পেয়ে ধন্য
মো. তাইফুর রহমান

ষড়ঋতুর এ দেশ আমার
খুবই পরিপাটি
অনেক দামি অনেক খাঁটি
মাতৃভূমির মাটি।

প্রজাপতি গল্প বলে
ফুলকলিদের কাছে
নদ-নদী আর সবুজ পাহাড়
কোথায় এমন আছে?

গাছে গাছে পাখ-পাখালি
মধুর সুরে ডাকে
খুকুমণি রংতুলিতে
দেশের ছবি আঁকে।

জ্ঞানী-গুণীর এ দেশ সেরা
এ দেশ পেয়ে ধন্য
কত মানুষ শহিদ হলো
প্রিয় দেশের জন্য।

 


বিজয়
শারমিন নাহার ঝর্ণা

বিজয় মানে খোলা আকাশ
উড়া স্বাধীন মনে,
বিজয় মানে মুক্ত পাখি
শান্তি প্রাণে প্রাণে।

বিজয় মানে খুশির হাসি
বিজয় মানে সুখ,
বিজয় মানে স্নিগ্ধ বাতাস
শীতল করে বুক।

বিজয় মানে ভোরের রবি
ছড়ায় খুশির আলো,
বিজয় মানে সুখের হাসি
কাটল আঁধার কালো।


বিজয় পতাকা 
মো. দিদারুল ইসলাম 

লাল সবুজের এই পতাকা 
পাক বাহিনীর ভয়,
জীবন বাজি লড়াই করে
বীর বাঙালির জয়।

লাল সবুজের এই পতাকা 
অপরূপের দেশ,
এই পতাকা পেয়ে আমরা
আনন্দিত বেশ।

লাল সবুজের এই পতাকা
বিজয়ের গান গাই,
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে
সুখের ছোঁয়া পাই।

লাল সবুজের এই পতাকা 
রক্তে কেনা ভাই,
এই পতাকা বুকে পুষে
দেশটা গড়ি তাই।

গোপাল ভাঁড়ের গল্প

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০০ এএম
গোপাল ভাঁড়ের গল্প
আঁকা মাসুম

হাসি যে আর ধরে না

গোপাল গ্রামের এক মহাজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন। আজ দেব, কাল দেব বলে সে টাকা আর শোধ করেননি। সেই লোক গোপালকে একদিন হাটের মধ্যে পাকড়াও করে বললেন, আমার টাকাগুলো দিয়ে দাও তো গোপাল। নইলে আজ আর তোমাকে ছাড়ব না। তোমাকে এতগুলো লোকের সামনে অপমান করব, দেখি তুমি কোথা যাও বাছাধন।

মহাজনের কাছে অপমানিত হয়ে গোপাল বললেন, টাকা কি দেব না বলছি? আগামীকালই আপনার টাকার ব্যবস্থা করছি। সকালে আমার বাড়িতে আসুন। ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সামান্য টাকার জন্য এত অপমান করার দরকার ছিল না।

গোপালের কথা শুনে মহাজন মনে মনে ভাবলেন, গোপাল যখন এত লোকের সামনে কথা দিল, তখন আগামীকাল যেভাবেই হোক টাকা পরিশোধ করবে। যাইহোক, পরের দিন মহাজন গোপালের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন। বললেন, কই হে গোপাল, টাকা দেবে বলেছিলে, দাও। আমি ঠিক সময়মতো এসেছি।

মহাজনের ডাক শুনে গোপাল বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে বললেন, কাকভোরে ছুটে এসেছেন? দয়া করে বাড়ির দাওয়ায় একটু বিশ্রাম করুন। আমি যত তাড়াতাড়ি পারি আপনার টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করছি।

মহাজন তো এখনই টাকা পাবেন মনে করে নিশ্চিত হয়ে গোপালের বাড়ির দাওয়ায় বসে হাঁটু দোলাতে লাগলেন।

ওদিকে গোপাল আর তার বড় ছেলে বাড়ির উঠানে বেশ কয়েকটি নারকেল চারা পুঁততে লাগলেন মনোযোগ সহকারে। তা দেখে মহাজন গোপালকে বললেন, এ কী করছ গোপাল? বেলা হয়ে যাচ্ছে। কাজকর্ম আছে তো। গদিতে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি আমার টাকা দাও।

গোপাল নারকেলের চারা পুঁততে পুঁততে বললেন, দেখছেন তো চারা পুঁতছি। একটু বসুন না। এখনই হয়ে যাবে পোঁতা। আপনার টাকার ব্যবস্থা করে তবে আজ জলগ্রহণ করব।

কাজ শেষ করে গোপাল কাছে এসে দাঁড়াতেই মহাজন জিজ্ঞেস করলেন, সেই থেকে তো বসিয়ে রেখেছ। একটা তামাকও দিলে না। যাক, টাকা দাও। আমার তাড়া আছে।

গোপাল মুচকি হেসে বললেন, এতক্ষণ ধরে তো আপনার টাকা শোধের ব্যবস্থাই করলাম মশাই।

মহাজন বললেন, তুমি তো এতক্ষণ নারকেলের চারা পুঁতলে। আমার টাকার ব্যবস্থা করলে কই?

গোপাল বললেন, এই যে নারকেলের চারা পুঁতলাম, তাতে নারকেল গাছ হবে। সেই গাছে শত শত নারকেল ধরবে। দুই বছরের নারকেলের টাকায় আপনার সব দেনা শোধ হয়ে যাবে। আপনাকে যখন কথা দিয়েছি আজই টাকা শোধের ব্যবস্থা করব, তাই ব্যবস্থা করে দিলাম।

গোপালের কথা শুনে পাওনাদার হাসবে না কাঁদবে ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত বেচারা হেসেই ফেললেন।

 

গোপাল ভাঁড়ের আলু কেনা

গোপাল একবার হাটে গেছেন আলু কিনতে। পথেই দেখা হলো এক বন্ধুর সঙ্গে। রসিক বন্ধুটি গোপালের আলু কেনার কথা শুনে বললেন, তুমি যদি আলু বিনা পয়সায় কিনতে পারো, তবে দশ টাকা পুরস্কার পাবে।

গোপাল মুচকি হেসে বললেন, ও এই কথা? তুমি আমার সঙ্গে হাটে চল। দেখবে দিব্যি বিনা পয়সায় আলু কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরব। কাউকে কোনো পয়সা দেব না।

হাটে গিয়ে গোপাল প্রত্যেক আলু বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই আমি যদি তোমার কাছে থেকে পাঁচ সের আলু কিনি, কটা আলু ফাউ দেবে?

শীতের সময় সেদিন বাজারে আলুর প্রচুর আমদানি। আলুওয়ালারা বললেন, পাঁচটা করে আলু ফাউ পাবেন পাঁচ সের আলু কিনলে। এর বেশি দিতে পারব না।

গোপাল তখন প্রত্যেক আলুওয়ালার ঝুড়ি থেকে পাঁচটা করে আলু তুলে নিয়ে বললেন, এই হাটে কেবল ফাউটা
নিলাম। সামনের হাটে তোমাদের সবার কাছ থেকে পাঁচ সের করে আলু কিনব।

সবাই হাঁ করে তাকিয়ে রইল গোপালের দিকে। গোপাল দিব্যি বিনা পয়সার আলু কিনে বাড়ি ফিরল। বাধ্য হয়েই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গোপালকে দশ টাকা পুরস্কার দিলেন তার বন্ধু।

কমান্ডার আবদুল হামিদ উচ্চবিদ্যালয়

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৩ পিএম
কমান্ডার আবদুল হামিদ উচ্চবিদ্যালয়
আঁকা মাসুম

স্কুলের নাম কমান্ডার আবদুল হামিদ উচ্চবিদ্যালয়। এই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে দিপু। সবে ভর্তি হয়েছে। পড়াশোনায় তেমন মন নেই। সারা দিন শুধু টইটই করে ঘুরে বেড়ায়।
এই স্কুলের নামটা কমান্ডার কেন? কার নামেই-বা রাখা হয়েছে? হঠাৎ করেই দিপুর মাথায় ভাবনাটা চলে আসে।
প্রতিদিনের মতো আজকেও প্রাত্যহিক সমাবেশ শেষ করে সবাই নিজ নিজ ক্লাসে গেল। দিপুও আছে তার ক্লাসে। প্রথমে বাংলা ব্যাকরণ ক্লাস হলো। সমাস তো মাথার ওপর দিয়ে গেল। গণিত হলো, ওটাও দৈত্যের মতো ঘাড় মটকে চলে গেল। এরকম পরপর তিনটি ক্লাস হয়ে গেল। কিন্তু কোনো স্যারকে সে প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করতে পারল না। 
টিফিনের পর আবার ক্লাস শুরু হলো। বিজ্ঞান ক্লাস। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণতত্ত্ব পড়তে গিয়ে নিজেই মাধ্যাকর্ষিত হয়ে কল্পনায় উড়তে লাগল। শেষ পিরিয়ডে আছে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়। মতিন স্যার ক্লাসে ঢুকলেন। সবার প্রিয় শিক্ষক তিনি।
ঢুকেই দিপুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি কি আজ নতুন এসেছ?
দিপু জবাব দিল, জি স্যার।
মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করবে।
মতিন স্যারের সুন্দর করে কথা বলা দেখে এবার প্রশ্ন করার সাহস পেল দিপু। সে বলল, স্যার একটা প্রশ্ন করতে পারি?
মতিন স্যার বললেন, কী প্রশ্ন?
দিপু বলল, আচ্ছা স্যার, এই স্কুলের নামটা কমান্ডার আবদুল হামিদ উচ্চবিদ্যালয় হলো কীভাবে?
স্যার বললেন, খুব ভালো প্রশ্ন করেছ। এই স্কুলের নাম কীভাবে হলো তা সবার জানা জরুরি। তোমরা তো মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বইয়ে পড়েছ। তাহলে শোনো সবাই এই স্কুলের নামের ইতিহাস।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের ওপর অস্ত্র, গোলাবারুদ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ২৫ মার্চ রাতেই হাজার হাজার ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করল তারা। শুরু হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ। শুধু কী শহরে! শহরের পাশাপাশি দেশের আনাচে-কানাচে সবখানে।
তখন মে মাস। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ভারতের আগরতলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের এই স্কুলে এলেন। তখন এটা স্কুল ছিল না। ছোট একটা ঘর ছিল। চারদিকে ঝোপঝাড়। অনেকেরই জানা ছিল না যে এখানে একটা ঘর আছে।
সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ছোট ঘরে সবাই থাকতে শুরু করল। মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা আবদুল হামিদ। কমান্ডার আবদুল হামিদ। যেমন তার বুদ্ধি, তেমন তার অস্ত্র চালানোর দক্ষতা। এখান থেকেই কমান্ডার আবদুল হামিদের দল প্রথম মিশনে অংশ নিলেন। তিনজন রাজাকার ও দশজন মিলিটারিকে শেষ করে দিলেন সোনাতলায়। এরপর একেক করে হাটখোলারগাঁও, বিজয়পুর, নবীনগরসহও আরও কয়েকটি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা মিশন চালিয়ে পাকিস্তানিদের পরাজিত করলেন। এভাবে কেটে গেল অনেকদিন। 
তখন ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকের কথা। এখান থেকে আড়াই মাইল দূরের তিনপাড়া গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা ঘাঁটি গেড়েছে। এই খবর শুনে কমান্ডার আবদুল হামিদ তার সহযোদ্ধাদের তৈরি হতে বললেন। পরের দিন হামলা করা হলো। দীর্ঘ সময় গোলাগুলির পর একপর্যায়ে অনেক সেনা মারা গেল। এ সময় হঠাৎ একটা গুলি এসে কমান্ডার আবদুল হামিদের বুকে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। কমান্ডার আবদুল হামিদের রক্তে সবুজ ঘাস লাল হয়ে গেল। মুখে হাসি নিয়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। দেশ স্বাধীন হলো। তার বছর দুয়েক পর সেই ঘরে চালু হলো প্রাথমিক স্কুল। বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল হামিদের স্মরণে স্কুলটির নাম রাখা হলো কমান্ডার আবদুল হামিদ প্রাথমিক বিদ্যালয়। ধীরে ধীরে এটি উচ্চবিদ্যালয়ে পরিণত হলো।
মতিন স্যারের গলায় আবেগ, চোখে পানি। ক্লাসের সবার চোখ ভিজে উঠছে। 
দিপু বলল, এসব কথা আপনি কীভাবে জানলেন স্যার?
স্যার বললেন, কারণ আমার বাবা ছিলেন আবদুল হামিদের দলের একজন। বাবাই আমাকে মহান কমান্ডার আবদুল হামিদের গল্প শুনিয়েছেন।
দিপু বলল, স্যার আপনার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা! তিনি আমাদের গর্ব এবং অহংকার। 
স্যার বললেন, তোমাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প জানতে হবে। 
স্যারের কথা শেষ হতেই ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠল। হঠাৎ কী হলো কে জানে! ষষ্ঠ শ্রেণির সবাই লাইন ধরে ক্লাস থেকে বের হয়ে জাতীয় পতাকার সামনে গিয়ে স্যালুট করল। তাদের দেখাদেখি পুরো স্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও শিক্ষিকা জাতীয় পতাকাকে স্যালুট করল। লাল সবুজের পতাকা তখন আকাশে পতপত করে উড়ছে।

আশ্চর্য স্থাপনা মিসরের পিরামিড

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০০ এএম
আশ্চর্য স্থাপনা মিসরের পিরামিড
পিরামিড

পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের কথা ভাবলে প্রথমেই আসে মিসরের পিরামিডের নাম। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে নির্মাণ করা এসব বিস্ময়কর স্থাপনা। ভিনগ্রহ থেকে আসা কোনো এলিয়েন স্থাপনাগুলো বানিয়েছিল কিংবা শস্য সংরক্ষণের জন্য ফারাওরা এগুলো তৈরি করেছিল, এমন নানা ধারণা প্রচলিত আছে পিরামিডকে ঘিরে। আসলেই কেন তৈরি করা হয়েছিল পিরামিড- তা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলছে বৈজ্ঞানিক গবেষণা।

পিরামিড কী?
পিরামিড মূলত সমাধিক্ষেত্র। প্রাচীন মিসরের শাসনকর্তা ফারাওদের মৃত্যুর পর তাদের সমাহিত করা হতো এই বিশাল সমাধিক্ষেত্রে। প্রায় কয়েক দশক ধরে হাজার হাজার শ্রমিক দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন আসে ফারাওরা কেন এই স্থাপনা নির্মাণে এত সময় ও অর্থ ব্যয় করেছিল?
মূলত প্রাচীন মিসরীয় সমাজে পরকালের ধারণা প্রচলিত ছিল। সেই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই এই বিরাট আকারের সমাধিক্ষেত্র নির্মাণ করা হয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে প্রকাশিত এক প্রবন্ধের তথ্যমতে, মিসরীয়রা বিশ্বাস করত যতদিন ফারাওদের দেহ রক্ষা করা যাবে ততদিন তারা স্বর্গে বাস করবে। তবে তার জন্য পৃথিবী থেকে পরকালের যাওয়ার সময় ‘আত্মা’র নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করা জরুরি ছিল। এই আত্মাকে তারা ডাকতে ‘কা’ বলে।
এই ‘কা’ বেঁচে থাকার জন্য প্রসাদ আকারে খাবার, বিশ্রামের জন্য বিছানাসহ কিছু ব্যবস্থার দরকার ছিল বলে তারা মনে করত। আর সে কারণেই প্রয়োজন পড়ে পিরামিডের। প্রাচীন মিসরীয়রা বিশ্বাস করত, পিরামিডের ভেতরে ফারাওদের ‘কা’ বেঁচে থাকত। আর তাই ফারাওদের শরীর মমীকরণ করা হতো। তারা এটাও বিশ্বাস করত যে, পরপারের যাত্রার জন্য জাগতিক সব ধরনের জিনিসই প্রয়োজন হবে ‘কা’র। তাই ফারাওদের মরদেহের সঙ্গে প্রয়োজনমতো ধন-সম্পদ দেওয়া হতো।

পিরামিড নির্মাণের শুরু
পিরামিড নির্মাণের আগে মিসরীয়দের কবর দেওয়ার পদ্ধতি ভিন্ন ছিল। তখন সমাধি দেওয়া হতো চারকোনা ছোট আকৃতির ঘরে, যার নাম ছিল ‘মাস্তাবা’। খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৮০ অব্দের দিকে ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া আকৃতির পিরামিড নির্মাণের জন্য একটির ওপর আরেকটি- এভাবে ছয়টি ধাপে প্রথম পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল। জোসের নামের একজন ফারাওয়ের জন্য নির্মাণ করা এই পিরামিডের কোণাগুলো মসৃণ না হলেও এটাকেই প্রথম সত্যিকারের পিরামিড হিসেবে ধরা হয়। প্রচলিত আছে, এই সমাধির নকশাকারের নাম ছিল ইমহোতেপ। তাকেই পিরামিডের প্রথম নকশাকার হিসেবে ধরা হয়। প্রথম পিরামিড নির্মাণের পর পরবর্তী ফারাওরা আরও ভালো এবং বড় আকারের পিরামিড নির্মাণ শুরু করেন।

গিজার পিরামিড
পিরামিডের কথা বললে প্রথমেই যে ছবি ভেসে ওঠে তা হলো মিসরের গিজার গ্রেট পিরামিড। ৪৫০ ফুটের বেশি উচ্চতার এই পিরামিড ‘খুফুর পিরামিড’ নামেও পরিচিত। কায়রোর উপকণ্ঠ গিজায় অবস্থিত তিনটি পিরামিডের মধ্যে এটিই সবচেয়ে পুরোনো এবং বড়। তবে নির্মাণের সময় খুফুর পিরামিড আরও কিছুটা উঁচু ছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রায় ৬০ টন ওজনের ৩০ থেকে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের বিশাল আকৃতির ২০ লাখ পাথর খণ্ড দিয়ে নির্মিত এই পিরামিডটি তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে তৈরি করা হয়েছিল। জানা যায়, ২০ থেকে ৩০ হাজার কারিগর নিয়ে ২৩ বছরেরও কম সময়ে গিজার পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছে।

সূত্র বিবিসি

পিঁপড়ে ও মৌমাছির যুদ্ধ

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০০ এএম
পিঁপড়ে ও মৌমাছির যুদ্ধ
আঁকা মাসুম

অনেক অনেক দিন আগে ইরানের খুজিস্তান শহরে রাজত্ব করতেন বাদশাহ শাহজামান। তার ছিল এক অতি সুন্দর ফুলের বাগান। বাগানটি যেমন সুন্দর তেমনি বড়। সেই বাগানে ফুটত অগুনতি ফুল। সেখানে দলবেঁধে বাস করত একদল কালো পিঁপড়ে। তাদের প্রধান খাবার ছিল ফুলের মধু। তারা সারা দিন খুঁজে খুঁজে মধু সংগ্রহ করত আর দিনশেষে মধু ভাণ্ডারে জমিয়ে রাখত। এভাবে দিন-রাত পরিশ্রম করে তারা তিনটি রাজকীয় মধু ভাণ্ডার গড়ে তুলল। পিঁপড়ে রাজা সংমিং এত বড় বড় মধু ভাণ্ডারের মালিক হতে পেরে খুব খুশি হলো।

খুজিস্তানের পাশের দেশ আজারবাইজান। একদা সেখানে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে গেল। দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির ফলে দেশে খরা দেখা দিল। বন-জঙ্গলের সব ফুলগাছ পানির অভাবে মারা গেল।

সে দেশে বাস করত বিশাল এক মৌমাছির ঝাঁক। গাছপালা মরে যাওয়ায় মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারল না। ফলে তাদের মধ্যে খাদ্যসংকট দেখা দিল। অবস্থায়
তারা মধু সংগ্রহের নতুন উৎস সন্ধানে দিকে দিকে গোয়েন্দা মৌমাছি পাঠাল। অবশেষে কয়েকটি গোয়েন্দা মৌমাছি
খুজিস্তানের ওই বাগানটি খুঁজে বের করল যেখানে কালো পিঁপড়েরা বাস করে।

মৌমাছিদের রানি মৌরুখু তখন দলবল নিয়ে বাগানে ঢুকে পড়ে মৌচাক বানাতে লেগে গেল। পিঁপড়েরা সবই লক্ষ করল, বিরক্ত হলো, কিন্তু নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাল না। বাগানটি বিশাল এবং মধুও পাওয়া যায় অফুরন্ত। তারা ভাবল এতে তাদের খুব বেশি অসুবিধা হবে না। কিন্তু বিপত্তি ঘটল যখন গোয়েন্দা মৌমাছিরা পিঁপড়েদের মধুর ভাণ্ডারগুলো দেখে ফেলল। তারা পিঁপড়েদের একটা মধুর ভাণ্ডার আক্রমণ করে অনেকখানি মধু লুট করে নিয়ে গেল। পিঁপড়ের রাজা সংমিং তখন একদল প্রতিনিধি পাঠিয়ে মৌমাছিদের রানি মৌরুখুর কাছে বিচার চাইল এবং লুণ্ঠিত মধু ফেরত চাইল। কিন্তু মৌমাছির রানি পিঁপড়ের দলটিকে অপমান হাসি ঠাট্টা করে ফেরত পাঠাল। পিঁপড়ের রাজা সংমিং সব শুনে খুব রেগে গেল। সেসব পিঁপড়েকে জড়ো করে মৌমাছিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল।

সেদিন গভীর রাতে যখন সব মৌমাছি মৌচাকে ঘুমিয়ে ছিল, পিঁপড়ের দল হামলা করল। তারা গাছ বেয়ে পিলপিল করে উঠে ঘুমন্ত মৌমাছিদের কামড়াতে লাগল। মৌমাছিরা কামড়ের জ্বালায় জেগে উঠল। তারা পিঁপড়েদের হুল ফোটাতে চাইল, কিন্তু পিঁপড়েরা এত ছোট যে, তারা হুল ফোটাতে পারল না। অন্যদিকে আরেক দল শ্রমিক পিঁপড়ে ততক্ষণে মৌচাক থেকে মধু নিতে লাগল।

কামড় খেতে খেতে মৌমাছিরা অসুস্থ হয়ে পড়ল। শেষমেশ পরাজিত হয়ে মৌমাছিরা পালিয়ে গেল দূর দেশে। পিঁপড়েরা সে
রাতে আতশবাজি জ্বালিয়ে, বাজি ফুটিয়ে, রং ছিটিয়ে বিজয়
উদযাপন করল।

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });