বিদেশ থেকে ফেরত এসে অনেক প্রবাসী দুশ্চিন্তায় সময় পার করলেও ব্যতিক্রম রাজবাড়ীর হালিম সরদার। ৮ বছর আগে সিঙ্গাপুর যান অর্থ উপার্জন করে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু সে আশায় বিদেশ গিয়ে ১০ মাসের মাথায় তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। দেশে এসে মৌচাষে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বাদশা মিয়া নামে একজনের খামারে চাকরি নেন। বর্তমানে তার নিজের আয় বছরে ৪ লাখ টাকা।
ধামরাইয়ের সানোড়া ইউনিয়নের মহিষাসী গ্রামে শতাধিক মৌবক্স বসিয়ে মধু চাষ করছেন হালিম সরদার। আবদুল হালিম জানান, ৭ লাখ টাকা খরচ করে সিঙ্গাপুর যান। সেখানে একটা সাপ্লাইয়ার কোম্পানিতে চাকরি নেন। কিন্তু ১০ মাস পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। ফিরে এসে বাদশা মিয়া নামে এক মধু চাষির খামারে চাকরি নেন।
বাদশা মিয়ার মধু খামারে কাজ করে কীভাবে মধু চাষ করতে হয়, রানী মৌমাছির দেখাশোনাসহ নিজেই পুরোপুরি মৌ-চাষ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে হালিম সরদার তিনটি মধুর মৌবক্স কিনেন। এরপর সেগুলো বসিয়ে মধু চাষ শুরু করে বর্তমানে তিনি ১০০টি বক্সের মধু চাষ করছেন।
মধু চাষ সম্পর্কে হালিম সরদার বলেন, ‘মধু চাষে সাফল্য অর্জন করার জন্য সবার আগে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ ছাড়া এ পেশায় কেউ এলে তাকে লোকসান গুনতে হবে। এটি একটি লাভজনক পেশা। বছরে ৪ থেকে ৫ মাস মধু চাষ করা যায়, কারণ ফুলের সময় বারো মাস থাকে না। শীতে সরিষার সময় এবং লিচুগাছে ফুল আসার সময় এই ব্যবসা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘বর্ষার সময় মৌবক্সগুলো পাটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখি। বৃষ্টি হলে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। মৌবক্সগুলোর ভেতর বিভিন্ন ধরনের জাবরা পোকা, ছাই পোকা মৌমাছির ক্ষতি করে। তাই তামাকের ধোঁয়া দিলে সব পোকাই চলে যায়।’
হালিম সরদার বলেন, মধু চাষে খরচ অনেকটাই বেশি। একটি রানী মৌমাছি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় কিনতে হয়। একটি কলোনি তৈরি করতে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। একটি মৌবক্স থেকে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ বার মধু সংগ্রহ করা যায়। প্রতি কেজি মধু ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। আমার ১০০টির মতো মৌবক্স রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ৬-৭ মণ মধু সংগ্রহ করে থাকি। বছরে সব খরচ বাদ দিয়ে ৪ লাখ টাকা আয় করি।’
মধু সংগ্রহের বিষয়ে হালিম সরদার বলেন, শীতের মৌসুমে আমরা সাধারণত ঢাকার ভেতরে ধামরাই, পাশের জেলা মানিকগঞ্জে সরিষা মৌসুমের সময় আসি। তখন প্রচুর ফুল থাকে। এ ছাড়া আমাদের রাজবাড়ী এবং জামালপুর, দিনাজপুর জেলায়ও যাওয়া হয়। বিশেষ করে লিচু চাষের সময় দিনাজপুর, পাবনায় মধু সংগ্রহের কাজ করে থাকি।
তবে গ্রীষ্মের সময় খুলনা, বাগেরহাট জেলায় যাই। সেখানে ভালো মধু সংগ্রহ করা যায়।