ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের পাইকারি পোশাকের মার্কেটে চলছে কেনাবেচার ধুম। বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারা কাপড় কিনতে এখানে আসছেন। এ বছর শতকোটি টাকার পোশাকবাণিজ্য হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পোশাকের দাম কিছুটা বেশি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
৫০ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগে গড়ে ওঠে পোশাকের পাইকারি মার্কেট। এসব মার্কেটের দোকানগুলোতে তৈরি হয় বিভিন্ন ডিজাইনের জামা-কাপড়। ঢাকা থেকে কাপড় কিনে এনে বিভিন্ন ধরনের ট্রেন্ডি পোশাক তৈরি করেন এখানকার কারিগর ও ব্যবসায়ীরা। যা দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান।
শুরুতে শতাধিক দোকান ও কারখানা নিয়ে গড়ে ওঠা মার্কেটগুলোতে এখন ২ হাজারের বেশি কারখানা ও গদিঘর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেটে। ঈদকে ঘিরে জামির ও হাকিম মার্কেট, ভাইয়া সুপার মার্কেট, রহমতুল্লাহ মার্কেটসহ ১০টি মার্কেটে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক পোশাক তৈরিতে দিন-রাত কাজ করছেন। তৈরি করছেন নানা রঙ আর ডিজাইনের পোশাক। সেসব পোশাক মার্কেটের দোকানগুলোতে সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। এখানে ঈদের তিন মাস আগে থেকে পোশাক তৈরি ও কেনাবেচা শুরু হয়, চলে ২০ রমজান পর্যন্ত।
সোহরাওয়ার্দী মার্কেটের মাওলা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও দেওভোগ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেওয়ান বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার তৈরি পোশাকের কেনাবেচা বেশ ভালো হচ্ছে। ঈদকে ঘিরে আমরা আশা করছি প্রায় শতকোটি টাকার বাণিজ্য হবে। এখানে সারা দেশ থেকে পাইকারি ক্রেতারা আসেন। এমনকি ঢাকার বড় বড় মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দরে পোশাক কিনে নিয়ে যান। তবে আগের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেড়েছে। গত বছর যে জামার দাম ছিল ৭০০ টাকা, এবার সেটা ৯০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ থান কাপড়ের দাম ও করের পরিমাণ বেড়েছে।
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, সব বয়সীর পোশাকেই পাওয়া যায় এ মার্কেটে। এখানকার দোকানগুলোতে তৈরি করা ফ্রক, থিপিস, টুপিস, প্যান্ট-শার্ট, পাঞ্জাবিসহ সব ধরনের পোশাকের চাহিদা রয়েছে। এ বছর আফগান, নায়রা কাটসহ আরও কয়েকটি ডিজাইনে তৈরি করা জামার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মার্কেটে এ বছর সবচেয়ে দামি পোশাক আফগান ও নায়রা কাট। ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে এসব পোশাকের দাম। পোশাকগুলো ভারতের সিরিয়ালে অভিনয় করা শিল্পীরা পরছেন। সে ডিাজাইন দেখে এখানকার কারিগরা আফগান ও নায়রা কাট বানাচ্ছেন। এ ছাড়া এখানে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা দামের পোশাকও পাওয়া যায়। যে বছর যে পোশাকের প্রচলন বেশি থাকে, সে বছর সে পোশাক ডিজাইন করে তৈরি করেন কারিগররা। তাই ক্রেতাদের চাহিদাও বেশি থাকে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকাররাও জানান, তাদের চাহিদামতো বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক তারা সংগ্রহ করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা লোকমান মিয়া বলেন, ‘এখান থেকে পাইকারি দরে পোশাক কিনে নিয়ে আমার গ্রামের দোকানে বিক্রি করি। ঈদকে ঘিরে ৩ লাখ টাকার পোশাক কিনেছি।’
রাজশাহী থেকে আসা অপর ক্রেতা পল্লব কুমার সাহা বলেন, ‘এই মার্কেটে প্রতি বছর নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যায়। বাজারে সেসব পোশাকের চাহিদাও বেশি থাকে। এ ছাড়া দামও কম। তাই এখান থেকে জামা-কাপড় কিনে নিয়ে গ্রামের দোকানে বিক্রি করি। এ বছর পোশাকের দাম বেশি, তাই কম পোশাক কিনেছি।’
নারায়ণগঞ্জ হোসিয়ারি সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান সজল খবরের কাগজকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের তৈরি পোশাকসহ এমন হোসিয়ারি পণ্য থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে এখানে তৈরি করা হোসিয়ারি পণ্য। জেলায় সব মিলিয়ে ৪ হাজারের অধিক কারখানা ও দোকান রয়েছে। সরকার এ খাতে সহযোগিতা করলে দেশীয় বাজারে চাহিদা আরও বাড়বে।’